ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আনোয়ারুল আজীমকে (আনার) খুনের উদ্দেশ্য অপহরণের অভিযোগে করা মামলার প্রতিবেদন আগামী ৮ আগস্টের মধ্যে দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। বৃহস্পতিবার (৪ জুলাই) ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মাহবুবুল হক এ আদেশ দেন।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন আদালতে দায়িত্বরত শেরেবাংলা নগর থানার সাধারণ নিবন্ধন শাখার কর্মকর্তা পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) জালাল উদ্দিন। তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার এই মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য ধার্য ছিল। তবে তদন্ত সংস্থা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) সংস্থা প্রতিবেদন দাখিল করেনি। এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য নতুন তারিখ ধার্য করেন আদালত। এমপি আনারকে খুন করার উদ্দেশে অপহরণের অভিযোগে গত ২২ মে রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানায় মামলা করেন তার মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস ডরিন। মামলায় কয়েকজন আসামি ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। তাদের মধ্যে তিনজন জবানবন্দি প্রত্যাহারের আবেদন করেছেন।
তারা হলেন, ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক কাজী কামাল আহমেদ বাবু ওরফে গ্যাস বাবু, শিমুল ভুঁইয়া ওরফে শিহাব ওরফে ফজল মোহাম্মদ ভুঁইয়া ওরফে আমানুল্যাহ সাঈদ ও তানভীর ভুঁইয়া।
বৃহস্পতিবার ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. মাহবুবুল হকের আদালতে আসামিদের জবানবন্দি প্রত্যাহারের ওপর শুনানি হয়। আসামি পক্ষে আইনজীবী এহসানুল হক সমাজীসহ কয়েকজন আইনজীবী শুনানি করেন। এ সময় আসামিরা আদালতে উপস্থিত ছিলেন। শুনানি শেষে আদালত আবেদনগুলো নথিভুক্ত রাখার নির্দেশ দেন। সেই সঙ্গে আসামিরা রিমান্ডে নির্যাতনের কারণে অসুস্থ জানিয়ে চিকিৎসার আবেদন করেন। আদালত কারাবিধি অনুযায়ী কারা কর্তৃপক্ষকে চিকিৎসার নির্দেশ দেন।
এদিকে আনার হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় সর্বশেষ গ্রেপ্তার দুই আসামি ফয়সালকে হৃদরোগের রোগী ও মোস্তাফিজকে কিডনি রোগীর ভুয়া কাগজপত্র, ভুয়া ব্যাংক স্টেটমেন্ট এবং বিভিন্ন ভুয়া কাগজপত্র দেখিয়ে ভারতের ভিসা করা হয় বলে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ। বৃহস্পতিবার তিনি এক ভিডিও বার্তায় বলেন, ‘ভিসা হওয়ার পরে আক্তারুজ্জামান শাহীন ২০ হাজার টাকা দিয়েছিলেন মোস্তাফিজ ও ফয়সালকে রেলযোগে ভারতে চলে যাওয়ার জন্য। ভারতে গিয়ে তারা ১০ এপ্রিল কলকাতার সঞ্জিবা গার্ডেনসে প্রবেশ করেন। ১৩ মে বন্ধু গোপাল বিশ্বাসের বাসা থেকে বেরিয়ে লাল গাড়িতে করে এমপি আনারকে সঞ্জিবা গার্ডেনসে নিয়ে আসেন ফয়সাল। এরপর শাহীনের পিএস পিন্টুর কাছে থেকে অচেতন করার জন্য ক্লোরোফর্ম ও চাপাতি নিয়ে আসার দায়িত্ব পালন করেন মোস্তাফিজ, ফয়সাল ও জিহাদ। এ হত্যাকাণ্ডে এখন পর্যন্ত মোট সাতজন গ্রেপ্তার হয়েছে।’
ডিবি প্রধান বলেন, ‘সাতজনের মধ্যে ছয়জনই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। এ ছাড়া আরও যাদের নাম এসেছে তাদের গ্রেপ্তারে পুলিশ কাজ করছে। শিগগিরই তাদেরও গ্রেপ্তার করা হবে। আনার হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় সর্বশেষ দুর্গম পাহাড়ে অভিযান চালিয়ে মোস্তাফিজ ও ফয়সালকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারের পর আদালত তাদের ছয় দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। সেই রিমান্ডের পরিপ্রেক্ষিতে জিজ্ঞাসাবাদে মোস্তাফিজ ও ফয়সাল জানান, আক্তারুজ্জামান শাহীন তাদেরকে ভারতে যাওয়ার জন্য পাসপোর্টের ব্যবস্থা করে দেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘হত্যাকাণ্ড শেষে যখন সবাই চলে যান তখন সর্বশেষ মোস্তাফিজ ও ফয়সাল সঞ্জিবা গার্ডেনসের ওই ফ্ল্যাটে ছিলেন। সেখানেও শাহীনের সঙ্গে কথা হয় তাদের। শাহীন তাদের নির্দেশ দেন, ফ্ল্যাটটিতে যেন কোনো চুল এবং রক্তের দাগ না থাকে, সবকিছু গুছিয়ে ঠিকঠাকভাবে রাখতে বলা হয় তাদের।’
মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, ‘আনার হত্যাকাণ্ডের ঘাতক আমানুল্লাহ আমান ওরফে শিমুল ভূঁইয়া যখন ডিবির হাতে গ্রেপ্তার হন তখন শাহীনের দেওয়া ৩০ হাজার টাকা নিয়ে মোস্তাফিজ ও ফয়সাল বিভিন্ন জায়গা আত্মগোপন করেন। এরপর তারা পরিকল্পনা করেন দুর্গম পাহাড়ে কোনো মন্দিরে গিয়ে হিন্দু সেজে সেখানে লুকিয়ে থাকবেন।’