মৃত্যুদণ্ডের আদেশ চূড়ান্ত হওয়ার পর অর্থাৎ ফাঁঁসির আসামির প্রাণভিক্ষা নাকচ হলেই কেবল তাকে কনডেম সেলে বন্দী রাখা যাবে, হাইকোর্টের এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আবেদন করবে রাষ্ট্রপক্ষ।
মঙ্গলবার (১৪ মে) অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন গণমাধ্যমকে এ কথা জানান।
বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি মো. বজলুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের একটি ডিভিশন বেঞ্চ সোমবার এ রায় ঘোষণা করেন।
আদালতে এ সংক্রান্ত রিটের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির।
রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত তালুকদার।
অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির আদালতের রায়ের বিষয়টি সাংবাদিকদের জানান।
তিনি বলেন, মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত তিনজনের উচ্চ আদালতে আপিল শুনানির পূর্বে কনডেম সেলে বন্দি রাখার বিষয়ে ২০২১ সালে হাইকোর্টে রিট পিটিশন করা হয়েছিল। ওই রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে উচ্চ আদালত রুল ও নির্দেশনা দেয়। মৃত্যুদণ্ডের সাজা চূড়ান্ত হওয়ার পূর্বে কনডেম সেলে বন্দি রাখা কেন অবৈধ হবে না রুলে তা জানতে চাওয়া হয়। পাশাপাশি কতজন নারী ও পুরুষ কনডেম সেলে বন্দি আছেন তার একটি তালিকা আদালতে দাখিল করতে আইজি প্রিজনের প্রতি নির্দেশ দেওয়া হয়।
অ্যাডভোকেট শিশির মনির জানান, ওই রুলের চূড়ান্ত শুনানি নিয়ে রায় ঘোষণা করেন হাইকোর্ট। রায়ে বলা হয়, ব্যক্তির মৃত্যুদণ্ড চূড়ান্ত হওয়ার পূর্বে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি বলা যাবে না এবং কনডেম সেলে বন্দি রাখা যাবে না। রায়ে বলা হয়, মৃত্যুদণ্ডের বিষয়ে আসামির হাইকোর্ট ও আপিল বিভাগে মামলা নিষ্পত্তি, প্রশাসনিক অন্যান্য কার্যক্রম ও রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা প্রার্থণার পরই মৃত্যুদণ্ডের রায় চূড়ান্ত হয়। এরপর নির্জন কক্ষে বন্দী রাখা যাবে।
অ্যাডভোকেট শিশির মনির বলেন, রায়ে বলা হয়েছে বিশেষ বিবেচনায় মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত কোনো ব্যক্তির সংক্রামকজনিত সমস্যা বা অন্য কোনো বিশেষ কারণে তার শুনানি নিয়ে তাকে নির্জন কক্ষে আটক রাখা বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে।
রায়ে বলা হয়েছে, অন্যান্য মামলায় যেরূপ হাইকোর্ট বিভাগে আপিল ও জামিন শুনানি হয়, শুনানি শেষে আদেশ হয়, তেমনি মৃত্যুদণ্ডের রায়ের বিরুদ্ধে সংক্ষুব্ধ ব্যাক্তি আপিলের পাশাপাশি জামিনের আবেদন করতে পারবেন। উপযুক্ত আদালত তার জামিন আবেদন বিবেচনা করতে পারবেন।
রায়ে দেশের জেল কর্তৃপক্ষকে বলা হয়েছে, মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিতের বিষয়ে তথ্য অধিকার আইনে কোনো তথ্য চাইলে তা যেন দেওয়া হয়। একই বিষয়ে সুপ্রিম কোর্ট রেজিস্ট্রির কর্মকর্তাদেরও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। মৃত্যুদণ্ড সংক্রান্ত মামলার তথ্য সুপ্রিম কোর্ট ওয়েবসাইটে পরিবেশন করার জন্যও আদেশ দেওয়া হয়েছে।
অ্যাডভোকেট শিশির মনির জানান, মামলাটির শুনানিকালে রাষ্ট্রপক্ষ জানায়, কারা আইন নতুন করে প্রণয়ন করা হচ্ছে। আজ রায়ে আদালত বলেন, রায়ের ফাইন্ডিংস ও পর্যবেক্ষণ নতুন আইনটিতে সংযুক্ত করতে যেন বিবেচনা করা হয়।
রায়ে বলা হয়, আগামী দুই বছরের মধ্যে কনডেম সেলে আটকদের সাধারণ কয়েদিদের সাথে রাখা নিশ্চিত করতে হবে।
সোমবার রাষ্ট্রপক্ষ জানায়, সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে হাইকোর্টের রায়ের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
পরে আজ আপিল আবেদন করার সিদ্ধান্তের কথা আজ জানান অ্যাটর্নি জেনারেল।
রিট আবেদনকারীরা হলেন- চট্রগ্রাম কারাগারের কনডেম সেলে থাকা সাতকানিয়ার জিল্লুর রহমান, সিলেট কারাগারে থাকা সুনামগঞ্জের আব্দুল বশির ও কুমিল্লা কারাগারে থাকা খাগড়াছড়ির শাহ আলম। সূত্র: বাসস
অমিয়/