![এমপি আনার হত্যাকাণ্ডে তানভীরের দায় স্বীকার](uploads/2024/06/04/Tanvir-1717514744.jpg)
ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনারকে হত্যার উদ্দেশ্যে অপহরণের মামলার অন্যতম আসামি ফয়সাল আলী সাজী ওরফে তানভীর ভূঁইয়া আদালতে দোষ স্বীকারমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
মঙ্গলবার (৪ জুন) ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট তোফাজ্জল হোসেনের আদালতে জবানবন্দি দেন। জবানবন্দি রেকর্ড শেষে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন আদালত।
এ ছাড়া সংসদ সদস্য এমপি আনার হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী আক্তারুজ্জামান শাহীনকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করা হবে বলে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।
ঢাকা মহানগর পুলিশের অপরাধ ও তথ্য বিভাগের উপপরিদর্শক (এসআই) জালাল উদ্দিন খবরের কাগজকে জানান, তানভীরের রিমান্ড চলাকালে মঙ্গলবার তাকে আদালতে হাজির করে পুলিশ। এরপর তিনি স্বেচ্ছায় জবানবন্দি দিতে রাজি হলে তা রেকর্ড করার আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও ডিবি পুলিশের জ্যেষ্ঠ সহকারী কমিশনার মাহফুজুর রহমান। একইভাবে আগের দিন গতকাল সোমবারও আদালতে এই মামলায় দোষ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন মামলার আরেক আসামি শিলাস্তি রহমান।
এদিকে সংসদ সদস্য এমপি আনার হত্যাকাণ্ডের মাস্টারমাইন্ড আক্তারুজ্জামান শাহীনকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করা হবে বলে জানিয়েছেন ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।
তিনি বলেন, ‘হত্যাকাণ্ডের পর তাৎক্ষণিকভাবে এনসিবির মাধ্যমে তথ্যউপাত্ত দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে চিঠি দিয়েছি। শাহীন যেহেতু যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক তাই আমরা ইন্টারপোলকেও জানিয়েছি। ভারতের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বন্দি বিনিময় চুক্তি রয়েছে। ভারতও শাহীনকে ফেরাতে ভূমিকা রাখবে। কারণ ভারতের কাছেও শাহীন একজন মোস্ট ওয়ান্টেড আসামি।’
মঙ্গলবার নেপালের কাঠমান্ডু থেকে ফেরার পর ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন।
হারুন অর রশীদ বলেন, ‘শাহীনকে ফেরাতে বাংলাদেশের মার্কিন দূতাবাসে গিয়ে কর্মকর্তাদের সঙ্গে মিটিং করব। তাকে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করব। বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন সময় অপরাধ করে নেপালে চলে যায় অনেকে। আবার ভারত থেকেও অনেক বাংলাদেশি অপরাধী নেপালে চলে যায়। রুট হিসেবে অনেক অপরাধী নেপালকে ব্যবহার করে। এমপি আনার হত্যাকাণ্ডের মাস্টারমাইন্ড শাহীনও ভারত থেকে নেপালের কাঠমান্ডু গিয়ে অবস্থান করেন। শাহীনের সহযোগী সিয়ামও কাঠমান্ডু গিয়ে আত্মগোপন করেন। সিয়াম কাঠমান্ডুতে অবস্থান করছেন, এমন খবর পেয়ে বাংলাদেশ পুলিশ সদর দপ্তরের এনসিবি শাখা থেকে নেপালের এনসিবিতে একটি চিঠি পাঠাই। আমাদের তথ্যউপাত্তের ভিত্তিতে সিয়ামকে কাঠমান্ডু পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে।’
সিয়ামকে ফেরত আনার বিষয়ে কোনো জটিলতা আছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে ডিবি কমিশনার বলেন, ‘বাংলাদেশের সঙ্গে নেপালের বন্দি বিনিময় চুক্তি নেই। তবে এ বিষয়েও আমরা কাঠমান্ডু পুলিশের সঙ্গে কথা বলেছি। সিয়াম ভারতের পুলিশের কাছেও মোস্ট ওয়ান্টেড। ভারতের সঙ্গে নেপালের বন্দি বিনিময় চুক্তি রয়েছে। নেপাল যদি ভারত কিংবা বাংলাদেশের কাছে সিয়ামকে হস্তান্তর করে তবে তদন্তে কোনো সমস্যা হবে না। যদি একই অপরাধের ক্ষেত্রে দুটি দেশ দাবি করে, তবে হোস্ট কান্ট্রি হিসেবে নেপাল বিবেচনায় আনবে অপরাধের ধরনটা কী। নেপাল বিভিন্ন বিবেচনা করার পর সিদ্ধান্ত নেবে সিয়ামকে তারা কোন দেশের কাছে হস্তান্তর করবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘সিয়ামকে ভারতের পুলিশের কাছে দিলে আমাদের তদন্তে কোনো সমস্যা হবে না। শাহীনের ঘনিষ্ঠ ও কাছের মানুষ সিয়াম। তাকে যদি ভারতীয় পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে তাহলে আলামত উদ্ধারের ক্ষেত্রে ভালো ভূমিকা রাখতে পারবে। আমরাও সিয়ামকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারব।’
আনারের ডিএনএ টেস্টের ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এমপি আনারের পরিবার যাবেন কলকাতায়। এরপর ডিএনএ স্যাম্পল টেস্ট করার পর নিশ্চিত হওয়া যাবে।’
তদন্তকারী কর্মকর্তাদের বদলির বিষয় ডিবি কমিশনার জানান, এমপি আনার অপহরণ মামলার তদারকি কর্মকর্তা শাহিদুর রহমানকে বদলির বিষয়টি তদন্তের ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা হবে না। এটি পুলিশ সদর দপ্তরের একটি রুটিন ওয়ার্ক।