ঢাকা ২১ আষাঢ় ১৪৩১, শুক্রবার, ০৫ জুলাই ২০২৪

টাঙ্গাইল শাড়ির জিআই নিবন্ধন বাতিলে ভারতকে বাংলাদেশের অনুরোধ

প্রকাশ: ১৪ মার্চ ২০২৪, ০৯:১৬ পিএম
আপডেট: ১৪ মার্চ ২০২৪, ০৯:১৬ পিএম
টাঙ্গাইল শাড়ির জিআই নিবন্ধন বাতিলে ভারতকে বাংলাদেশের অনুরোধ
ছবি : সংগৃহীত

টাঙ্গাইল শাড়ির নিবন্ধন বাতিল করতে গত ৫ মার্চ ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছে দিল্লিতে থাকা বাংলাদেশ হাইকমিশন। চিঠিতে বলা হয়, ‘টাঙ্গাইল শাড়ির নামে জিআই নিবন্ধনটি যেন যত দ্রুত সম্ভব প্রত্যাহার বা স্থগিত করা হয়। পাশাপাশি ভারতের এই উদ্যোগের বিরুদ্ধে আইনি লড়াইয়ের জন্যও তৈরি হচ্ছে বাংলাদেশ।’

এক পৃষ্ঠার ওই চিঠিতে আরও বলা হয়, ‘টাঙ্গাইল বাংলাদেশের একটি জেলা। এই জেলা ঐতিহাসিকভাবে ‘টাঙ্গাইল শাড়ি’-এর জন্য বিখ্যাত। টাঙ্গাইল শাড়ির সুনির্দিষ্ট বুননের ধরন ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কিছু অঞ্চলে ছড়িয়ে থাকতে পারে। কারণ ভারতভাগের সময় শাড়ির কিছু তাঁতি ও উৎপাদক এই অঞ্চল থেকে পশ্চিমবঙ্গে চলে যান। টাঙ্গাইল শাড়ির জিআইয়ে ‘টাঙ্গাইল’ নামটি দুটি দেশের পণ্যের ক্ষেত্রে ব্যবহার করলে ভবিষ্যতে বিভ্রান্তি ও ভুল-বোঝাবুঝি হতে পারে। দুই দেশের মধ্যে যে চমৎকার দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক আছে। তার ধারাবাহিকতা ধরে রাখার স্বার্থে এই সমস্যার মীমাংসা করা দরকার।’

বাংলাদেশের চিঠিতে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করা হয়েছে, যেন তারা যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে বিষয়টি তুলে ধরে টাঙ্গাইল শাড়ি নামে জিআই নিবন্ধনটি যত দ্রুত সম্ভব প্রত্যাহার বা স্থগিত করে। এ ছাড়া পারস্পরিক আলোচনা বা দুই দেশের বিশেষজ্ঞদের নিয়ে যৌথ কারিগরি কমিটি গঠন করে বিষয়টির উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে।

এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক মো. তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ‘ভারতীয় টাঙ্গাইল শাড়ির নিবন্ধন সনদ বাতিলের জন্য ভারতীয় জিআই রেজিস্ট্রারের কাছে এবং প্রয়োজনে তিন মাসের মধ্যে তাদের অ্যাপিলেট বোর্ডে যাওয়া যায়। তবে বর্তমানে অ্যাপিলেট বোর্ড বাতিল হওয়ায় হাইকোর্ট আপিল শুনতে পারেন। এ ছাড়া বিশ্ববাণিজ্য সংস্থার বিরোধ নিষ্পত্তি পর্ষদেও যাওয়া যেতে পারে। তবে এর পেছনে জোর কূটনৈতিক তৎপরতারও দরকার।’

বাংলাদেশ ডিপিডিটির মহাপরিচালক মো. মুনিম হাসান জানিয়েছেন, ‘টাঙ্গাইল শাড়ি আমাদের গর্বের বিষয়। এটি কোনো ক্রমেই ভারতের হতে পারে না। আমরা তাই এর জিআই নিয়ে সচেষ্ট। এর জন্য আইনিসহ সব স্তরের তৎপরতাই চলছে।’

শিল্প মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, টাঙ্গাইল শাড়ির জিআই নিয়ে সমস্যা সমাধানে কূটনৈতিক তৎপরতার পাশাপাশি সরকার আইনি লড়াইয়ের জন্য তৈরি হচ্ছে। এ জন্য গত সোমবার শিল্প মন্ত্রণালয় একটি সমন্বিত টাস্কফোর্স গঠন করে। ওই টাস্কফোর্স যে কাজ করবে, তার মধ্যে আছে টাঙ্গাইল শাড়ির ‘বিরোধ নিষ্পত্তিতে’ কূটনৈতিক সমাধানের জন্য প্রস্তাব তৈরি। এ ছাড়া ভারতে টাঙ্গাইল শাড়ি নিবন্ধনের বিরুদ্ধে আপিল ও নিবন্ধন বাতিল বিষয়ে বিশেষজ্ঞ প্যানেলের সহায়তা প্রস্তাব তৈরি। আবার আপিল ও নিবন্ধন বাতিলের বিষয়ে মামলা পরিচালনার কাজও করবে এই কমিটি। গত বুধবার এই টাস্কফোর্সের প্রথম সভা হয়।

প্রসঙ্গত, ভারতের শিল্প মন্ত্রণালয় গত ২ জানুয়ারি ‘বাংলার টাঙ্গাইল শাড়ি’ বা ‘টাঙ্গাইল শাড়ি অব বেঙ্গল’ নামে একটি শাড়িকে জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। এরপরই বাংলাদেশ সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো নড়েচড়ে বসে। দ্রুততার সঙ্গে টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে শাড়ির জিআইয়ের আবেদন হয় ৬ ফেব্রুয়ারি। তা গ্রহণ করে সেদিনই গেজেটের জন্য বিজি প্রেসে পাঠায় শিল্প মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন প্রতিষ্ঠান পেটেন্ট, ডিজাইন ও ট্রেডমার্কস অধিদপ্তর (ডিপিডিটি)। এই প্রতিষ্ঠানই পণ্যকে জিআই হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।

ইউনানী-আয়ুর্বেদ চিকিৎসাকে ‘ট্রাডিশনাল মেডিসিন’ করার দাবি

প্রকাশ: ০৫ জুলাই ২০২৪, ০৭:০৫ পিএম
আপডেট: ০৫ জুলাই ২০২৪, ০৭:০৫ পিএম
ইউনানী-আয়ুর্বেদ চিকিৎসাকে ‘ট্রাডিশনাল মেডিসিন’ করার দাবি
ছবি: বিজ্ঞপ্তি

বাংলাদেশে ইউনানী ও আয়ুর্বেদ চিকিৎসা পদ্ধতিকে  ‘অল্টারনেটিভ মেডিসিন’ এর পরিবর্তে ‘ট্রাডিশনাল মেডিসিন’ বলে অভিহিত করার দাবি জানিয়েছে প্রাচীন চিকিৎসা উন্নয়ন প্রচেষ্টা- প্রাচি। একই সঙ্গে ৫ জুলাইকে জাতীয় ইউনানী ও আয়ুর্বেদ দিবস হিসেবে স্বীকৃতির দাবিও জানিয়েছে সংগঠনটি। 

শুক্রবার (৫ জুলাই) জাতীয় প্রেসক্লাবে সাংবাদিকদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় এসব দাবি জানিয়েছে সংগঠনটির নেতৃবৃন্দ ও উপস্থিত চিকিৎসকবৃন্দ।

প্রাচি-এর জাতীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান মুহাম্মদ শফিকুর রহমানের সভাপতিত্বে আরও উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের জাতীয় কার্যকরী কমিটির সভাপতি ডা. সালেহ মোহাম্মদ আবদুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক হাকীম মোহাম্মদ কামরুজ্জামান ও কবিরাজ আবদুল মোতালেব মতিন প্রমুখ।

চিরায়ত চিকিৎসা ব্যবস্থার বিশ্লেষণ ও বাস্তবায়নের দিক নির্দেশনা সম্বলিত প্রাচি'র কার্যপত্র উপস্থাপন করেন সংগঠনটির স্থায়ী কমিটির সদস্য এবং মুখপাত্র মোখলেসুর রহমান।

মতবিনিময় সভায় চিকিৎসকগণ বলেন, ইউনানী ও আয়ুর্বেদ কলেজসমূহের সঙ্গে ১০ শয্যার হাসপাতাল স্থাপন করা জরুরি। হাসপাতাল না থাকার কারণে বিশাল জনগোষ্ঠী এ দুই চিকিৎসা পদ্ধতির সুফল লাভ হতে বঞ্চিত হচ্ছে। এছাড়া আমাদের ইউনানী ও আয়ুর্বেদ চিকিৎসকদের ইন্টার্নশিপ করতে হয় অ্যালোপ্যাথিক হাসপাতালে। এ বিষয়ে সরকারের কোন নজর ও পৃষ্ঠপোষকতা নেই, রয়েছে চরম অবহেলা।

প্রাচি মনে করে বাংলাদেশে অন্তত একটি পাবলিক ইউনানী ও আয়ুর্বেদ বিশ্ববিদ্যালয় থাকা উচিত।

সেসঙ্গে এ শিক্ষার মান নির্ধারণও জরুরি। চিকিৎসকদের দাবি বাংলাদেশ ড্রাগ এন্ড কসমেটিক অ্যাক্ট-২০২৩ অ্যালোপ্যাথি চিকিৎসার জন্য সঠিক হলেও ইউনানী ও আয়ুর্বেদের জন্য এটি প্রযোজ্য হতে পারে না। আলোচ্য আইনটি পাশের পূর্বে এই দুই চিকিৎসা পদ্ধতির মৌলিক রীতিনীতি মেনে তা চূড়ান্ত করা আবশ্যক বলে প্রাচি মনে করে। একইসঙ্গে জাতীয় ইউনানী ও আয়ুর্বেদ ফর্মুলারি নতুন করে প্রণয়নের দাবি জানায় সংগঠনটি। প্রেস বিজ্ঞপ্তি

 

মালয়েশিয়ার হাউজ অব রিপ্রেজেন্টেটিভের সঙ্গে স্পিকারের বৈঠক

প্রকাশ: ০৫ জুলাই ২০২৪, ০৬:১৯ পিএম
আপডেট: ০৫ জুলাই ২০২৪, ০৬:২৫ পিএম
মালয়েশিয়ার হাউজ অব রিপ্রেজেন্টেটিভের সঙ্গে স্পিকারের বৈঠক
ছবি: সংগৃহীত

মালয়েশিয়ার পার্লামেন্টে দেশটির হাউজ অব রিপ্রেজেন্টেটিভসের স্পিকার তান সেরি দাতো ড. জোহারি বিন আব্দুলের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেছেন বাংলাদেশের জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী।

বৈঠকে তারা দুই দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক, বাণিজ্য-বিনিয়োগ সম্পর্ক, আসিয়ানে বাংলাদেশের সদস্যপদ, রোহিঙ্গা ইস্যু, সংসদীয় মৈত্রী গ্রুপসহ শ্রমবাজার, শিক্ষা ও পর্যটন সংক্রান্ত বিষয়ে আলোচনা করেন। 

স্পিকার ড. শিরীন বলেন, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার প্রথম রাষ্ট্র হিসেবে মালয়েশিয়া বাংলাদেশকে স্বাধীনতার পরপরই স্বীকৃতি দিয়েছিলো এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৩ সালে মালয়েশিয়া সফর করেছিলেন। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের অব্যাহত উন্নয়ন অভিযাত্রার মাধ্যমে দারিদ্য বিমোচন, শিক্ষা, শতভাগ বিদ্যুতায়ন, ডিজিটালাইজেশন, তথ্য-প্রযুক্তি, নারীর ক্ষমতায়নসহ বিভিন্ন সামাজিক সূচকে বাংলাদেশের প্রশংসনীয় অগ্রগতি সাধিত হয়েছে। 

স্পিকার বলেন, বাংলাদেশ-মালয়েশিয়া পারস্পারিক সহযোগিতার ক্ষেত্র হিসেবে তথ্যপ্রযুক্তি, ব্লু ইকোনোমি, জলবায়ু পরিবর্তন, এনার্জি সেক্টর, কৃষি, খাদ্য নিরাপত্তাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে একযোগে কাজ করতে পারে। এসময় তিনি বাংলাদেশের ১০০ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগের জন্য মালয়েশিয়ার প্রতি আহ্বান জানান এবং  দু'দেশের বাণিজ্যিক সম্পর্ক আরও গতিশীল করার বিষয়ে জোর দেন।   

মালয়েশিয়া প্রায় ৫ লাখ বাংলাদেশি জনশক্তির কর্মসংস্থানের সুযোগ দেওয়ায় স্পিকার মালয়েশিয়ার সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন। তিনি বলেন, মালয়েশিয়া বাংলাদেশ থেকে যে বিপুল সংখ্যায় মানবসম্পদ তাদের উন্নয়ন কার্যক্রমে সম্পৃক্ত করেছে তা উভয় দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখছে।

এর আগে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী মালয়েশিয়ার সংসদে পৌঁছালে তাকে অভ্যর্থনা জানিয়ে গার্ড অব অনার প্রদান করা হয়। এসময় তিনি স্পিকারের কার্যালয় ঘুরে দেখেন, পরিদর্শন বইতে স্বাক্ষর করেন এবং শুভেচ্ছা স্মারক বিনিময় করেন। 

স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে আসিয়ান এর সভাপতির দায়িত্ব পাওয়ার জন্য মালয়েশিয়াকে অভিনন্দন জানান এবং আসিয়ানের ‘সেক্টরাল  ডায়ালগ পার্টনার’ হওয়ার বিষয়ে বাংলাদেশের আবেদনের বিষয়টি বিবেচনার জন্য মালয়েশিয়ার ঐকান্তিক সহযোগিতা কামনা করেন। আসিয়ান এর সভাপতি হিসেবে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে মালয়েশিয়া দৃঢ় ভূমিকা পালন করবে বলেও স্পিকার আশাবাদ ব্যক্ত করেন। 

মালয়েশিয়ার হাউজ অফ রিপ্রেজেনটেটিভের স্পিকার তান সেরি দাতো ড. জোহারি বিন আব্দুল বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের উন্নয়নের ভূয়শী প্রশংসা করেন। বাংলাদেশি কর্মীদের প্রশংসা করে তিনি বলেন, তারা অত্যন্ত পরিশ্রমী এবং মেধাবী। মালয়েশিয়ায় আসতে না পারা শ্রমিক সংকট নিরসনে তিনি মানবসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনার পরামর্শ দেন। এছাড়াও ড. জোহারি বিন আব্দুল রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সম্পর্কে মিয়ানমার সরকারের সঙ্গে সংলাপ অব্যাহত রাখার পরামর্শ দেন এবং মালয়েশিয়া আসিয়ান সভাপতি হিসেবে রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে জোরালো ভূমিকা রাখবে বলে আশ্বাস প্রদান করেন।

স্পিকার ড. শিরীন বাংলাদেশ-মালয়েশিয়া পার্লামেন্টারি ফ্রেন্ডশিপ গ্রুপ গঠনের কার্যক্রমকে চূড়ান্ত করার লক্ষ্যে মালয়েশিয়ার হাউজ অব রিপ্রেজেন্টেটিভ এর স্পিকারকে অনুরোধ জানান এবং মালয়েশিয়ার সংসদীয় মৈত্রী গ্রুপকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান।  

গতকাল স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী এমপি কুয়ালালামপুর বিমানবন্দরে পৌঁছালে মালয়েশিয়ার জাতীয় সংসদের স্পিকারের পক্ষে হেড অ্যাডমিনিস্ট্রেটর হাজী মুহাম্মদ জামানী বিন মো. আলী তাকে স্বাগত জানান।

বৈঠকে মালয়েশিয়ার পার্লামেন্টের প্রধান প্রশাসক দাতো মোহাম্মদ জামানি বিন মো. আলী, পার্লামেন্টের ব্যবস্থাপনা বিভাগের আন্ডার সেক্রেটারি রেদোয়ান বিন রহমত, মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশের হাইকমিশনার মো. শামীম আহসান, ডেপুটি হাইকমিশনার মোহাম্মদ খোরশেদ আলম খাস্তগীরসহ হাইকমিশনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

এলিস/এমএ/

আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের মেয়াদ বাড়ল

প্রকাশ: ০৫ জুলাই ২০২৪, ০৩:৫৭ পিএম
আপডেট: ০৫ জুলাই ২০২৪, ০৬:০৪ পিএম
আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের মেয়াদ বাড়ল
আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন

বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজি) হিসেবে আরও এক বছর মেয়াদ বাড়ল চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের।

শুক্রবার (৫ জুলাই) জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের চুক্তি ও বৈদেশিক শাখার উপ-সচিব ভাস্কর দেবনাথ বাপ্পি স্বক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে তার চুক্তির মেয়াদ আরও এক বছর বাড়ানো হয়।  

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮ এর ৪৯ ধারা অনুযায়ী চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনকে তার পূর্বের চুক্তির ধারাবাহিকতায় ও অনুরূপ শর্তে আগামী ১২ জুলাই অথবা যোগ দেওয়ার তারিখ থেকে পরবর্তী ১ বছর মেয়াদে বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক পদে পুনরায় চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হলো।

খাজা/সালমান/

গণপূর্তের প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে অবৈধ আয়ের অভিযোগ স্ত্রীর

প্রকাশ: ০৫ জুলাই ২০২৪, ১২:১৭ পিএম
আপডেট: ০৫ জুলাই ২০২৪, ১২:২০ পিএম
গণপূর্তের প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে অবৈধ আয়ের অভিযোগ স্ত্রীর
নীলফামারী জেলা গণপূর্ত অধিদপ্তরের উপসহকারী প্রকৌশলী আশরাফুজ্জামান

নীলফামারী জেলা গণপূর্ত অধিদপ্তরের উপসহকারী প্রকৌশলী আশরাফুজ্জামানের অবৈধ আয় নিয়ে অভিযোগ করেছেন স্ত্রী রিজওয়ানা হাসান খুশবু। মডেল মসজিদ প্রকল্পে স্বামীর দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে এসেছেন সচিবালয়ে। 

খুশবুর অভিযোগ, স্বামীর অবৈধ আয়ের প্রতিবাদ করায় তার ওপর নির্যাতন চালানো হয়েছে। খুশবু সচিবালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, ‘আগে থেকেই চাইতাম না যে এ রকম একটা পবিত্র স্থান থেকে ঘুষ নিক। আমি তাকে আগেই বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেছি। নিষেধ করতাম। তখন সে আমাকে অনেক মারধর করত। শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন  করত।’ 

লিখিত অভিযোগে স্ত্রী খুশবু বলেন, দুই বছর আগে একটি গুদামঘর নির্মাণ করেন তার স্বামী। তারপর ভুট্টা কিনে গুদামজাত করা হয়। তারপর সেখান থেকে বিপুল টাকা লাভ দেখানো হয়েছে। এভাবে ঘুষের টাকা সাদা করেন তিনি। 

খুশবু আরও বলেন, ‘আমি তাকে ব্যবসা নিয়ে কথা বলি। কিন্তু সে আমাকে বলে যে একটা প্রতিষ্ঠান থাকলে তো সমস্যা নেই। সেখানে অনেক ধরনের লেনদেন হয়। আমি তখনই অভিযোগ দিতে পারতাম, কিন্তু করিনি কারণ তখন আমি প্রেগনেন্ট ছিলাম। ভেবেছিলাম হয়তোবা সন্তান হওয়ার পর সে ভালো হয়ে যাবে। কিন্তু সন্তান হওয়ার পরও সে পরিবর্তন হয়নি।’

এ বিষয়ে অভিযুক্ত প্রকৌশলী আশরাফুজ্জামান বলেন, ‘অভিযোগকারী আমার সাবেক স্ত্রী। বিপদে ফেলার জন্যই সত্য গোপন করে গণমাধ্যমে এমন খবর দিচ্ছেন। আমার বিরুদ্ধে নারী নির্যাতনের মামলা করেছেন তিনি। আমাকে হত্যারও হুমকি দিয়েছেন।’

আইসিডিডিআরবি কলেরা হাসপাতালে প্রতিদিন ৬০০ রোগী ভর্তি

প্রকাশ: ০৫ জুলাই ২০২৪, ১১:১০ এএম
আপডেট: ০৫ জুলাই ২০২৪, ১১:২১ এএম
আইসিডিডিআরবি কলেরা হাসপাতালে প্রতিদিন ৬০০ রোগী ভর্তি
ছবি: খবরের কাগজ

শিশু আব্দুল্লাহ্‌র বয়স ছয় মাস দশদিন। ক্লান্ত চাহনি আর দুর্বল শরীর নিয়ে মা সুরাইয়া বেগমের কোলে জড়সড়ো হয়ে বসে আছে। সামনে রাখা লাল রঙের বাটিতে খাবার স্যালাইন। সুরাইয়া বেগমের দিশেহারা অবস্থা। টলটলে চোখ, যেকোনো সময় বাঁধ ভেঙে ছুটবে অশ্রুধারা। সারাক্ষণ উশখুশ করে যেন খুঁজছে কিছু, বা কাউকে।

দৃশ্যটি বৃহস্পতিবার (৪ জুলাই) মহাখালী আন্তর্জাতিক উদরাময় রোগ গবেষণা কেন্দ্র বা আইসিডিডিআরবি কলেরা হাসপাতালের। 

সুরাইয়া বেগম জানান, গত পরশু রাত থেকে বমি আর পাতলা পায়খানা শুরু হয় আব্দুল্লাহ্‌র। সঙ্গে রয়েছে জ্বর। এত ছোট বাচ্চার ঘন ঘন পাতলা পায়খানা আর বমি হওয়ায় শরীর দুর্বল হয়ে পড়েছে। দিশা না পেয়ে সকালেই ছেলেকে নিয়ে ছুটে এসেছেন এখানে। ডাক্তার দেখার পর বারবার স্যালাইন খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। কিন্তু শুধু স্যালাইন খাওয়ালেই ঠিক হয়ে যাবে, ব্যাপারটিতে ঠিক ভরসা পাচ্ছেন না সুরাইয়া।

রিসেপশন এরিয়ার বিপরীত দিকের একটি কক্ষে সারি দেওয়া চেয়ার-টেবিল রাখা। সেখানেই মায়েদের কোলে থেকে চিকিৎসা নিচ্ছে ডায়রিয়া আক্রান্ত শিশুরা। প্রতিটি শিশু রোগীর সামনে একটি বাটিতে রাখা আছে খাবার স্যালাইন। মায়েরা সেখান থেকে চামচে তুলে কোলের শিশুদের স্যালাইন খাওয়াচ্ছেন। 

হাসপাতালের রিসেপশন পেরিয়ে ওয়ার্ডে গেলে দেখা মেলে সত্তরোর্ধ্ব ভর্তি রোগী আক্তার নাজনীনের। নারায়ণগঞ্জের দেউলী চৌড়াপাড়ার বাসিন্দা। বয়সের ভারে ন্যুব্জ। গত তিন দিন ধরে পাতলা পায়খানা আর বমি হচ্ছে। এই বয়সে শরীরে এত ধকল কাবু করে ফেলেছে বৃদ্ধাকে। গত দুদিন ধরে হাসপাতালে ভর্তি তিনি। বললেন, ‘আমি তো ভাবছি মইরাই যামু। উইঠ্যা বহার শক্তি আছিল না। এইহানে আহার পর সুই দিয়া স্যালাইন দিল হাতের মইধ্যে। আস্তে আস্তে এহন অবস্থা ঠিক অইছে। সকালে স্যালাইন খুইল্যা দিছে।’ সঙ্গে থাকা পুত্রবধূ পপি আক্তার কিছুক্ষণ পরপর বাটি থেকে চামচ ভর্তি স্যালাইন তুলে দিচ্ছেন শাশুড়ির মুখে। 

হাসপাতাল ঘুরে প্রতিটি কোণেই দেখা যায় ডায়রিয়া আর কলেরা আক্রান্ত রোগীর হাহাকার। একই সঙ্গে দেখা যায় সাদা অ্যাপ্রোন পরা ডাক্তার আর নার্সদের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে অক্লান্ত ছুটে চলা। এত কর্মব্যস্ততা আর ছুটোছুটির ভেতরেও সবকিছু যেন সিস্টেমেটিক। ডায়রিয়া রোগীতে ঠাসা হাসপাতালে কোথাও নেই একটু কটু গন্ধ, না আছে কোথাও এতটুকু ময়লার চিহ্ন। রোগীদের ভাষ্যানুযায়ী আইসিডিডিআরবির ব্যবস্থাপনা, চিকিৎসা ও সংশ্লিষ্ট সব কর্মীর ব্যবহার ও সেবা তাদের মন ছুঁয়ে গেছে। 

আইসিডিডিআরবির নির্বাহী পরিচালক ড. তাহমিদ আহমেদ বলেন, ডায়রিয়া ও কলেরার চিকিৎসায় আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র বাংলাদেশের (আইসিডিডিআরবি) কলেরা হাসপাতালে রোগী ও স্বজনদের কাছে এক আস্থার জায়গা। এখানে সেবা নিতে আসা সিংহভাগ মানুষই অতি দরিদ্র পরিবার থেকে আসেন। আমরা রোগীদের শুধুমাত্র রোগী নয়, বরং সহমর্মিতার দৃষ্টিতে দেখি। এখান থেকে বছরে আড়াই লাখের মতো রোগী বিনা খরচে চিকিৎসা নেয়। গত ছয় দশকের বেশি সময় ধরে বিজ্ঞানভিত্তিক উদ্ভাবন, চিকিৎসা, রোগী ব্যবস্থাপনা ও রোগ প্রতিরোধে অগণিত সাফল্য অর্জন করে চলেছে আইসিডিডিআরবি। ওরস্যালাইন আবিষ্কার, মুখে খাওয়া কলেরার টিকা আবিষ্কার, ডায়রিয়া চিকিৎসায় জিংকের ব্যবহার, শিশুদের তীব্র অপুষ্টির চিকিৎসাপদ্ধতিসহ দেশের স্বাস্থ্য খাতের অর্জনে এই প্রতিষ্ঠান ভূমিকা রেখে চলেছে।

হাসপাতাল শাখার প্রধান ডা. বাহারুল আলম খবরের কাগজকে বলেন, ‘যেসব রোগী ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিতে আসেন, তাদের ৬০ শতাংশ রোগীই পাঁচ বছরের কমবয়সী শিশু। যারা ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হন, তাদের শরীরে প্রচুর পরিমাণ পানিশূন্যতা দেখা দেয়। এক্ষেত্রে যত দ্রুত সম্ভব রোগীর ফ্লুইড রিপ্লেসমেন্টের প্রয়োজন হয়। সাধারণ খাবার স্যালাইনই রোগীকে সুস্থ করে তোলার জন্য যথেষ্ট।’ 

তিনি জানান, হাসপাতালে প্রতিদিন গড়ে তিন থেকে চারশ জন রোগীর সেবা দেওয়া হয়। তবে মে থেকে জুন এবং নভেম্বর থেকে জানুয়ারি, বছরের এই দুই সময় ডায়রিয়ার প্রকোপ বেশি থেকে। প্রতি বছরই এই সময়টাতে দিনে প্রায় ১২শ থেকে ১৩শ রোগীর সেবা দেওয়ার রেকর্ড রয়েছে। এ ছাড়া গত দুই মাসে হাসপাতালের রেকর্ড অনুযায়ী মে মাসে সেবা পেয়েছেন মোট ১৮ হাজার ১৪১ এবং জুন মাসে মোট ১৮ হাজার ৬৩৪ জন রোগী। সে হিসাবে দুই মাসে দিনে ৬শ জনেরও বেশি ডায়রিয়া রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন এই হাসপাতাল থেকে। 

হাসপাতালের নার্সিং অফিসার ক্যাথরিন কস্তা বলেন, ‘আগের দিন রাতের হিসাব অনুযায়ী হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ২১২। এদের মধ্যে অনেকেই যাদের অবস্থা আজ শঙ্কামুক্ত, তাদের ডিসচার্জ করে দেওয়া হবে। তিনি আরও জানান, এখানে চিকিৎসা নিতে আসা বেশির ভাগ রোগীকেই আমরা শুধু খাবার স্যালাইন খেতে বলি। বেশির ভাগ রোগীই কয়েক ঘণ্টার মধ্যে সুস্থ হয়ে বাসায় ফিরে যেতে পারেন। যাদের অবস্থা একটু বেশি খারাপ, তাদেরকেই শুধু ভর্তি রাখা হয়। এসব রোগীও সর্বোচ্চ তিন দিনের ভেতর সুস্থ হয়ে যায়। তিন দিনের বেশি ভর্তি রোগীর সংখ্যা তুলনামূলকভাবে অনেক কম।’ 

ডা. বাহারুল আলম জানান, এখানে শুধু ডায়রিয়া রোগের চিকিৎসাই হয় না, গবেষণাও হয়। আমাদের সেবা এখন শুধুমাত্র দেশের গণ্ডিতেই সীমাবদ্ধ নেই, ছড়িয়ে গেছে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলেও। বিশেষ করে উন্নয়নশীল দেশসমূহে, এই প্রতিষ্ঠানের গবেষণালব্ধ ফলাফল কাজে লাগিয়ে আর্তমানবতার সেবার জন্য গৃহীত নানা কার্যক্রম ক্রমাগত সমৃদ্ধ হয়ে চলেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুরোধে হাইতি, ইয়েমেন, ইরাক, সিরিয়াসহ পৃথিবীর যে দেশেই কলেরার প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে, সেখানেই আইসিডিডিআরবির চিকিৎসক ও গবেষকরা ছুটে গিয়েছেন এবং স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্মীদের কার্যকরভাবে কলেরা চিকিৎসা এবং নিয়ন্ত্রণে প্রশিক্ষণ দিয়েছেন।