টাঙ্গাইল শাড়ির নিবন্ধন বাতিল করতে গত ৫ মার্চ ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছে দিল্লিতে থাকা বাংলাদেশ হাইকমিশন। চিঠিতে বলা হয়, ‘টাঙ্গাইল শাড়ির নামে জিআই নিবন্ধনটি যেন যত দ্রুত সম্ভব প্রত্যাহার বা স্থগিত করা হয়। পাশাপাশি ভারতের এই উদ্যোগের বিরুদ্ধে আইনি লড়াইয়ের জন্যও তৈরি হচ্ছে বাংলাদেশ।’
এক পৃষ্ঠার ওই চিঠিতে আরও বলা হয়, ‘টাঙ্গাইল বাংলাদেশের একটি জেলা। এই জেলা ঐতিহাসিকভাবে ‘টাঙ্গাইল শাড়ি’-এর জন্য বিখ্যাত। টাঙ্গাইল শাড়ির সুনির্দিষ্ট বুননের ধরন ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কিছু অঞ্চলে ছড়িয়ে থাকতে পারে। কারণ ভারতভাগের সময় শাড়ির কিছু তাঁতি ও উৎপাদক এই অঞ্চল থেকে পশ্চিমবঙ্গে চলে যান। টাঙ্গাইল শাড়ির জিআইয়ে ‘টাঙ্গাইল’ নামটি দুটি দেশের পণ্যের ক্ষেত্রে ব্যবহার করলে ভবিষ্যতে বিভ্রান্তি ও ভুল-বোঝাবুঝি হতে পারে। দুই দেশের মধ্যে যে চমৎকার দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক আছে। তার ধারাবাহিকতা ধরে রাখার স্বার্থে এই সমস্যার মীমাংসা করা দরকার।’
বাংলাদেশের চিঠিতে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করা হয়েছে, যেন তারা যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে বিষয়টি তুলে ধরে টাঙ্গাইল শাড়ি নামে জিআই নিবন্ধনটি যত দ্রুত সম্ভব প্রত্যাহার বা স্থগিত করে। এ ছাড়া পারস্পরিক আলোচনা বা দুই দেশের বিশেষজ্ঞদের নিয়ে যৌথ কারিগরি কমিটি গঠন করে বিষয়টির উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক মো. তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ‘ভারতীয় টাঙ্গাইল শাড়ির নিবন্ধন সনদ বাতিলের জন্য ভারতীয় জিআই রেজিস্ট্রারের কাছে এবং প্রয়োজনে তিন মাসের মধ্যে তাদের অ্যাপিলেট বোর্ডে যাওয়া যায়। তবে বর্তমানে অ্যাপিলেট বোর্ড বাতিল হওয়ায় হাইকোর্ট আপিল শুনতে পারেন। এ ছাড়া বিশ্ববাণিজ্য সংস্থার বিরোধ নিষ্পত্তি পর্ষদেও যাওয়া যেতে পারে। তবে এর পেছনে জোর কূটনৈতিক তৎপরতারও দরকার।’
বাংলাদেশ ডিপিডিটির মহাপরিচালক মো. মুনিম হাসান জানিয়েছেন, ‘টাঙ্গাইল শাড়ি আমাদের গর্বের বিষয়। এটি কোনো ক্রমেই ভারতের হতে পারে না। আমরা তাই এর জিআই নিয়ে সচেষ্ট। এর জন্য আইনিসহ সব স্তরের তৎপরতাই চলছে।’
শিল্প মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, টাঙ্গাইল শাড়ির জিআই নিয়ে সমস্যা সমাধানে কূটনৈতিক তৎপরতার পাশাপাশি সরকার আইনি লড়াইয়ের জন্য তৈরি হচ্ছে। এ জন্য গত সোমবার শিল্প মন্ত্রণালয় একটি সমন্বিত টাস্কফোর্স গঠন করে। ওই টাস্কফোর্স যে কাজ করবে, তার মধ্যে আছে টাঙ্গাইল শাড়ির ‘বিরোধ নিষ্পত্তিতে’ কূটনৈতিক সমাধানের জন্য প্রস্তাব তৈরি। এ ছাড়া ভারতে টাঙ্গাইল শাড়ি নিবন্ধনের বিরুদ্ধে আপিল ও নিবন্ধন বাতিল বিষয়ে বিশেষজ্ঞ প্যানেলের সহায়তা প্রস্তাব তৈরি। আবার আপিল ও নিবন্ধন বাতিলের বিষয়ে মামলা পরিচালনার কাজও করবে এই কমিটি। গত বুধবার এই টাস্কফোর্সের প্রথম সভা হয়।
প্রসঙ্গত, ভারতের শিল্প মন্ত্রণালয় গত ২ জানুয়ারি ‘বাংলার টাঙ্গাইল শাড়ি’ বা ‘টাঙ্গাইল শাড়ি অব বেঙ্গল’ নামে একটি শাড়িকে জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। এরপরই বাংলাদেশ সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো নড়েচড়ে বসে। দ্রুততার সঙ্গে টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে শাড়ির জিআইয়ের আবেদন হয় ৬ ফেব্রুয়ারি। তা গ্রহণ করে সেদিনই গেজেটের জন্য বিজি প্রেসে পাঠায় শিল্প মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন প্রতিষ্ঠান পেটেন্ট, ডিজাইন ও ট্রেডমার্কস অধিদপ্তর (ডিপিডিটি)। এই প্রতিষ্ঠানই পণ্যকে জিআই হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।