![বাল্যবিবাহ থেকে মুক্তি মিলছে না](uploads/2023/11/20/1700470263.Child_married.jpg)
বাল্যবিবাহের ক্ষেত্রে এখন এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে শীর্ষে রয়েছে বাংলাদেশ। বলছে জাতিসংঘের জনসংখ্যাবিষয়ক সংস্থা ইউএনএফপিএর সর্বশেষ প্রতিবেদন। জনসংখ্যা পরিস্থিতির নতুন প্রতিবেদন অনুসারে, বিশ্বে বাল্যবিবাহের হারের দিক দিয়ে এক ধাপ উন্নতি হয়ে বাংলাদেশের অবস্থান এখন পঞ্চমে।
এমন অবস্থায় বেড়েই চলেছে বাল্যবিবাহ। করোনাকালের অজুহাতে এ সংখ্যা আগের থেকে বাড়লেও করোনা-পরবর্তী সময়েও কমেনি বাল্যবিবাহ। ১৮ বছর বয়সের আগে বিয়ে হচ্ছে ৪০ দশমিক ৯ শতাংশ নারীর। ২০২১ সালে এ হার ছিল ৩২ দশমিক ৪ শতাংশ। আর ১৫ বছরের আগে নারীদের বিয়ের হার ৪ দশমিক ৭ শতাংশ থেকে ২০২২ সালে বেড়ে হয়েছে ৬ দশমিক ৫ শতাংশ।
শহরের তুলনায় গ্রামে বাল্যবিবাহের প্রবণতা বেশি। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) বাংলাদেশ স্যাম্পল ভাইটাল স্ট্যাটিসটিকস ২০২২ শীর্ষক প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে।
দেশে ১৮ বছরের নিচের বয়সী মেয়েদের বিয়ে হলে তা বাল্যবিবাহ হিসেবে ধরা হয়। সে অনুযায়ী জাতিসংঘের জনসংখ্যা তহবিলের (ইউএনএফপিএ) এক জরিপ প্রতিবেদন বলছে, করোনা মহামারির দুই বছরে ১৫-১৯ বছর বয়সী ২৭ শতাংশ মেয়ের বিয়ে হয়েছে। আর তাদের মধ্যে প্রথম বছরে (২০২০) বিয়ে হয়েছে প্রায় ২৪ শতাংশের ও দ্বিতীয় বছরে (২০২১) বিয়ে হয়েছে প্রায় ৩৪ শতাংশের। অন্যদিকে ১৮ বছর বয়স পর্যন্ত আন্তর্জাতিক ও জাতীয় নীতিমালা আইন অনুসারে শিশুকালই স্বীকৃত রয়েছে। দেশে এমন বাল্যবিবাহের পরিস্থিতির মধ্যেই আজ সোমবার পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক শিশু দিবস।
বাংলাদেশ ডেমোগ্রাফিক হেলথ সার্ভে ২০২২-এর তথ্য বলছে, প্রায় ৫০ শতাংশ মেয়ের বিয়ে হয়ে যায় ১৮ বছর বয়সের আগেই। এ ছাড়া ২৭ শতাংশ মেয়ের বিয়ে হয় ১৬ বছর বয়সের আগেই। বাল্যবিবাহের হারে এগিয়ে আছে রাজশাহী, খুলনা, রংপুর ও বরিশাল এবং তুলনামূলকভাবে কম বাল্যবিবাহ হচ্ছে সিলেট, চট্টগ্রাম, ঢাকা ও ময়মনসিংহে। যদিও বেসরকারি হিসাবে দেশে ১৮ বছরের আগে বিয়ে হয়ে যায় প্রায় ৫২ শতাংশ নারীর।
এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বাল্যবিবাহ হয় রাজশাহীতে, ৬৩ দশমিক ৭ শতাংশ মেয়ের বিয়ে হয়ে যায় ১৮ বছর বয়সের আগেই। ৪২ দশমিক ২ শতাংশ মেয়ের বিয়ে হয় ১৬ বছর বয়সের আগেই। রংপুরে ৫৭ দশমিক ৭ শতাংশ মেয়ের বিয়ে হয়ে যায় ১৮ বছর বয়সের আগেই। এ ছাড়া ৩৩ দশমিক ৩ শতাংশ মেয়ের বিয়ে হয় ১৬ বছর বয়সের আগেই।
বরিশালে ৫৬ শতাংশ মেয়ের বিয়ে হয়ে যায় ১৮ বছর বয়সের আগেই। এ ছাড়া ২৯ দশমিক ৭ শতাংশ মেয়ের বিয়ে হয় ১৬ বছর বয়সের আগেই। খুলনায় ৫৫ দশমিক ৫ শতাংশ মেয়ের বিয়ে হয় ১৮ বছর বয়সের আগেই। এ ছাড়া ৩১ দশমিক ৯ শতাংশ মেয়েকে স্বামীর ঘরে যেতে হয় ১৬ বছর বয়সের আগেই।
বাল্যবিবাহ বৃদ্ধির কারণ জানতে চাইলে ওয়ার্ল্ডভিশন বাংলাদেশের সিনিয়র ডিরেক্টর অপারেশন্স চন্দন জেড গোমেজ খবরের কাগজকে বলেন, বাল্যবিবাহ বাড়ার অন্যতম কারণ ফিল্ড লেভেলে মনিটরিং না থাকা। করোনা-পরবর্তী সময়েও যেসব মেয়ে করোনায় পড়াশোনা থেকে ঝরে পড়েছিল, তাদের ফিরিয়ে আনার উদ্যোগে অনেক ধীরগতি ছিল। বাল্যবিবাহ হওয়ার অন্যতম কারণ হলো সামাজিক নিরাপত্তার অভাব। কিন্তু মেয়েদের সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার কার্যকর উদ্যোগ কম। অন্যদিকে আরেকটি বড় কারণ হলো পরিবারের অসহনীয় দারিদ্র্য।
বাল্যবিবাহের প্রভাব সম্পর্কে জানতে চাইলে ইউএনডিপির জেন্ডার টিম লিডার শারমিন ইসলাম খবরের কাগজকে বলেন, বাল্যবিবাহের ফলে নারীর উন্নয়ন অনেকভাবেই বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। বাল্যবিবাহের কারণে তারা জীবনের শুরুতেই স্বামী-সংসার নিয়ে ব্যস্ততা ও কম বয়সে মা হয়ে পড়াশোনা থেকেই ঝরে পড়ে। পাশাপাশি এসব পেরিয়ে কর্মক্ষেত্রে যেতেও তাদের অনেক বাধা মোকাবিলা করতে হয়। কিন্তু তাদের যদি বাল্যবিবাহ না হতো, তাহলে তারা আরও দক্ষতার সঙ্গে পড়াশোনা ও কাজ করতে পারত। দারিদ্র্য ও সামাজিক নিরাপত্তার অভাবকে দায়ী করে তিনি বলেন, বাল্যবিবাহ কমাতে হলে আইনের সুষ্ঠু প্রয়োগ যেমন থাকতে হবে, তেমনি আইনের ফাঁকফোকর অর্থাৎ বিশেষ পরিস্থিতিতে মেয়েদের ১৮ বছর না হলেও বিয়ে দেওয়ার বিধান রাখা উচিত কি না, তা নিয়ে আমাদের ভাবতে হবে। কারণ এই সুযোগ নিচ্ছে অনেকে।
বাল্যবিবাহ রোধে করণীয় জানতে চাইলে চন্দন জেড গোমেজ খবরের কাগজকে বলেন, দরিদ্র পরিবারগুলোর মেয়েদের আর্থিকভাবে সহযোগিতার আওতায় আনলে এ সমস্যা কমতে পারে। তিনি এ সমস্যা সমাধানে আরও উদ্যোগী হওয়া প্রয়োজন বলেও উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, এ সমস্যা সমাধানের জন্য দরিদ্র পরিবারগুলোতে ১২ থেকে ১৮ বছর বয়সী মেয়েদের লেখাপড়ার জন্য একটা বড় ইনসেনটিভ দেওয়া দরকার, যাতে তাদের পরিবার বোঝা মনে না করে।
ঢাকার বাইরে বাল্যবিবাহের অবস্থা
বাল্যবিবাহ রোধে প্রতিটি জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়েই রয়েছে স্টিয়ারিং কমিটি। আছে আইনও। খবরের কাগজের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, অনেক সময় রক্ষকের সহায়তায় হচ্ছে ভক্ষণ। আইনের ফাঁকফোকরকে কাজে লাগিয়েও অনেক সময় চুপিসারে বৈধভাবে হয়ে যাচ্ছে বাল্যবিবাহ। এর পাশাপাশি বাল্যবিবাহ দিতে এলাকার প্রভাবশালী ব্যক্তি ও জন্মসনদ প্রদানকারীদের সহায়তাও রয়েছে কোনো কোনো জায়গায়।
খুলনা
চলতি বছরেই খুলনার ফুলতলা গাড়াখোলা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে অষ্টম ও নবম শ্রেণিপড়ুয়া পাঁচ ছাত্রীর বিয়ে হয়ে গেছে। এদের বয়স ১৩ থেকে ১৫ বছরের মধ্যে। নকল জন্মনিবন্ধন সনদে ‘প্রাপ্তবয়স্ক’ দেখিয়ে এসব বিয়ের আয়োজন করা হয়। স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তি, জনপ্রতিনিধি ও পরিচিত কাজিরা এসব কাজে সহায়তা করেছেন।
খুলনার মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানান, ২০২২-এর নভেম্বর থেকে ২০২৩ সালের অক্টোবর পর্যন্ত বাল্যবিবাহের বিষয়ে তথ্য পেয়ে খুলনায় ৭৫টি বাল্যবিবাহ ঠেকানো গেছে। তবে এর চেয়ে কয়েক গুণ বেশি কম বয়সী মেয়ের গোপনে বিয়ে হয়ে গেছে। আবার কোনো একটি মেয়ের বাল্যবিবাহ বন্ধ করা হলে পরে তাকে অন্য স্থানে নিয়ে বিয়ে দেওয়ারও ঘটনা ঘটেছে।
রাজশাহী
গত ২৫ আগস্ট রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলার জানে আলম জনি (২৫) নামে এক যুবক তার বোনের বাল্যবিবাহ ঠেকাতে মা-বাবাকে বুঝিয়ে ফল না পেয়ে থানায় গিয়ে অভিযোগ করেন। উপজেলার পৌর এলাকার চৌবাড়িয়া মাঝিপাড়া গ্রামের ওই যুবকের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশ গিয়ে বাল্যবিবাহের সেই আয়োজন বন্ধ করে দেয়।
মাত্র ১১ বছর বয়সী ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ুয়া বোনের জীবন নষ্ট হওয়ার শঙ্কায় থানায় ছুটে যাওয়া জানে আলম জনি বলেন, ‘এলাকায় অল্প বয়সে বিয়ে হওয়া চার-পাঁচটি মেয়ের জীবনে আনন্দ বলে আর কিছু নেই। তাদের জীবন নষ্ট হয়ে গেছে। আমার বোনটাও একেবারেই ছোট। এত কম বয়সে বিয়ে হলে তার জীবনও নষ্ট হয়ে যাবে, এটা মানতে পারছিলাম না। তাই বাধ্য হয়ে থানায় অভিযোগ জানিয়ে বিয়ে বন্ধ করেছি।’
কুমিল্লা
২০১৮ সালের ডিসেম্বরে কুমিল্লাকে ‘বাল্যবিবাহ মুক্ত’ ঘোষণা করেছিলেন তৎকালীন জেলা প্রশাসক আবুল ফজল মীর। কিন্তু তার সেই ঘোষণার পর এ জেলায় বাল্যবিবাহ বন্ধ হওয়া তো দূরের কথা, বরং দিন দিন এ প্রবণতা আরও বেড়েছে। জেলা মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, গত পাঁচ বছরে জেলাজুড়ে ৪০১টি বাল্যবিবাহ বন্ধ করা হয়েছে। আর বাল্যবিবাহ হয়ে গেছে এ সংখ্যার কয়েক গুণ বেশি। যদিও আইনে সিদ্ধ বাল্যবিবাহ সম্পাদনসংক্রান্ত কোনো তথ্য এ কার্যালয়ে নেই।
নড়াইল
নড়াইলে দিন দিন বাড়ছে বাল্যবিবাহের সংখ্যা। করোনার অজুহাতে তা বেড়ে বর্তমানে বাল্যবিবাহের হারে দেশের মধ্যে দ্বিতীয় অবস্থানে নড়াইল জেলা। জেলায় বাল্যবিবাহের হার ৭১ শতাংশ। ভয়াবহ এই অবস্থায় কোনো উদ্যোগই যেন কাজে আসছে না। তেমন কোনো তথ্য নেই মহিলা অধিদপ্তরের কাছে। তাদের কাছে গত দেড় বছরে সম্পন্ন ১৫টি বাল্যবিবাহের তথ্য রয়েছে মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তরে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক সূত্র জানায়, জন্মসনদ জালিয়াতি কিংবা নোটারি করে বয়স বাড়িয়ে বাল্যবিবাহ দেওয়া হয়।
রংপুর
রংপুরে বেড়েই চলেছে বাল্যবিবাহ। এর মূল কারণ হিসেবে দায়ী করা হয়েছে বাল্যবিবাহ আইনের সঠিক প্রয়োগ না হওয়া করোনাকালীন রংপুর অঞ্চলের মানুষের পিছিয়ে পড়া, দারিদ্র্য, মা-বাবার অসচেতনতাকে দায়ী করা হয়েছে। মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তর রংপুরের তথ্যমতে, ২০২১ সালে ১৪টি বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ করা হয়েছে। ২০২২ সালে ৯টি ও ২০২৩ সালে ২৪টি বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ করা হয়েছে। পরিসংখ্যানই বলছে, বাল্যবিবাহের প্রবণতা বাড়ছে এই অঞ্চলে।
সিরাজগঞ্জ
সিরাজগঞ্জ জেলার কয়েকটি উপজেলা চরাঞ্চল হওয়ায় ওই সব জায়গায় শিক্ষার আলো তেমন ভালোভাবে পৌঁছেনি। নেই প্রশাসনের তৎপর নজরদারি, অভাব রয়েছে সামাজিক সচেতনতারও। এ ছাড়া শিক্ষার আলো থেকে দূরে ও সামাজিক কুসংস্কারসহ বিভিন্ন কারণে ওই অঞ্চলে বাল্যবিবাহের পরিমাণ বেশি হয়ে থাকে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
জেলা মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তরের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, এ বছর সিরাজগঞ্জ জেলার বাল্যবিবাহের হার ৬১ শতাংশ। বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে জেলা মহিলা অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে ২০২০ সালে ১২০টি, ২০২১ সালে ৪৮টি, ২০২২ সালে ৪৫টি ও ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ২৭টি বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ করা হয়েছে বলে জানানো হয়।
পটুয়াখালী
বছরে বাল্যবিবাহ বা অপ্রাপ্তবয়স্কদের কতটি বিয়ে সম্পন্ন হয়েছে, সে তথ্য নেই সংশ্লিষ্ট সরকারি দপ্তরের কাছে। আইনটি বাস্তবায়নে দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থা মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বলছেন, ইউনিয়ন পর্যায় থেকে শুরু করে উপজেলা ও জেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা যে ছক পূরণ করে অধিদপ্তরে তথ্য পাঠান, তাতে আইনের বিশেষ বিধানে বিয়ের বিষয়টি উল্লেখ নেই।
মৌলভীবাজার
মৌলভীবাজার চা-বাগান, হাওর ও প্রবাসী অধ্যুষিত অঞ্চল হওয়ায় অল্প বয়সে এখানে বিয়ের প্রবণতা আছে। সর্বশেষ গত ২৫ অক্টোবর জেলার কুলাউড়া উপজেলার পৃথিমপাশা ইউনিয়নের রাজনগর গ্রামে বাল্যবিবাহের ঘটনা ঘটে। জানা গেছে, ভুয়া প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষার সনদ তৈরি করে বয়স লুকিয়ে গত ২৫ অক্টোবর তার ছেলে সাদেক মিয়াকে (২০) বিয়ে করান। পরে গত ১ নভেম্বর বিকেলে গোপন তথ্যের ভিত্তিতে খবর পেয়ে বাল্যবিবাহের সত্যতা যাচাইয়ের জন্য সেখানে যান নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। কাগজপত্র যাচাইয়ের পর বাল্যবিবাহের সত্যতা পাওয়ায় সাদেকের বাবা লিয়াকত মিয়াকে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
বগুড়া
অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে পড়া বগুড়ার সোনাতলা, সারিয়াকান্দি ও ধুনটের মতোই ব্যবসা-বাণিজ্যে এগিয়ে থাকা শাহজাহানপুর উপজেলার অনেক বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ে করোনা-পূর্ব ও করোনাকালীন ছাত্রীর অভাবে ক্লাস বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়। কিন্তু এ অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে অনেকটাই। সারিয়াকান্দি উপজেলার সারিয়াকান্দি পাইলট উচ্চবালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সাকি মোহাম্মাদ জাকিউল আলম জানান, অনেক দিন আর এসব বিদ্যালয়ের কোনো ছাত্রীর বিয়ে হয়েছে এ রকম তথ্য তার কাছে নেই।
বরগুনা
বরগুনায় গত তিন বছরে ‘জাগো নারী’র কাছে প্রায় ২৫টির মতো অভিযোগ এসেছে। এর মধ্যে বর্তমান বছরেই এসেছে আটটি, জানালেন বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা জাগো নারীর প্রধান নির্বাহী হোসনে আরা হাসি। ইউনিয়ন পরিষদের সঙ্গে নিবিড়ভাবে তারা বাল্যবিবাহ রোধ করছেন জানিয়ে তিনি বলেন, উপকূলীয় অঞ্চলে বাল্যবিবাহ বন্ধ করার প্রধান অন্তরায় হলো দারিদ্র্য ও মেয়েশিশুদের প্রতি বৈষম্য। একই সঙ্গে দুর্গম এলাকায় বাল্যবিবাহ বন্ধ করতে এলাকার জনপ্রতিনিধি ও স্কুলশিক্ষকদের আরও জোরালো ভূমিকা পালন করতে হবে।
নেত্রকোনা
নেত্রকোনায় বাল্যবিবাহের পরিমাণ দিন দিন কমে আসছে। সরকারি তদারকি, পদক্ষেপ ও প্রতিরোধসহ জনসচেতনতা বৃদ্ধি এর সবচেয়ে বড় কারণ। এ জেলা বাল্যবিবাহমুক্ত ঘোষণা এখন সময়ের অপেক্ষা, এমনটি দাবি করেছেন মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তর, নেত্রকোনার কর্মচারী ও কর্মকর্তারা। জেলা মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, গত তিন বছরে পুরো জেলায় বাল্যবিবাহের ঘটনা ঘটতে যাচ্ছিল ১০টি। তার মধ্যে ২০২১ সালে পাঁচটি, ২০২২ সালে তিনটি ও ২০২৩ সালে দুটি। তবে এসব বিয়ের সব কয়টি সংবাদ পাওয়ামাত্র সরকারিভাবে পণ্ড করে দেওয়া হয়েছে।
প্রতিবেদনটি তৈরিতে সহযোগিতা করেছেন খুলনা থেকে মাকসুদ রহমান, রাজশাহীর এনায়েত করিম, কুমিল্লার জহির শান্ত, নড়াইলের শরিফুল ইসলাম, রংপুরের সাইফুর রহমান রানা, সিরাজগঞ্জের সিরাজুল ইসলাম, পটুয়াখালীর মো. হাসিবুর রহমান, মৌলভীবাজারের পুলক পুরকায়স্থ, বগুড়ার হাসিবুর রহমান বিলু, বরগুনার মহিউদ্দিন অপু এবং নেত্রকোনার বিজয়চন্দ্র দাস।