![২২ আসনে ২৬ প্রার্থীর ব্যাংকঋণ দেড় হাজার কোটি টাকা](uploads/2023/12/08/1702014356.Holofnama.jpg)
আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২২ আসনের ২৬ প্রার্থীর কাছে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পাওনা রয়েছে ১ হাজার ৫৮৭ কোটি ৬৭ লাখ ২৫ হাজার টাকা। এ বিশাল অঙ্কের টাকা প্রার্থীদের দায় হিসেবে দেখানো হলেও কতদিন ধরে এই অর্থ তাদের কাছে রয়েছে তার সঠিক হিসাব হলফনামায় উল্লেখ করা হয়নি। এ ছাড়া এসব ঋণের পুনঃতফশিলীকরণের তথ্যও পাওয়া যায়নি। প্রার্থীদের হলফনামা বিশ্লেষণ করে এসব তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে। আপিল শুনানির আগ পর্যন্ত নির্বাচন কমিশন ৩০০ আসনে ১ হাজার ৯৮৫ জনের মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করেছে।
হলফনামা অনুযায়ী, জয়পুরহাট-২ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আবু সাইদ আল মাহমুদ স্বপনের পাঁচ ব্যাংক ও দুই আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণের পরিমাণ ৭৬৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে রয়েছে ট্রাস্ট ব্যাংকে ৩৮২ কোটি ৯৩ লাখ, এনসিসি ব্যাংকে ২৭৪ কোটি ৩৮ লাখ, ইসলামী ব্যাংকে ৬৩ কোটি ৫০ লাখ, উত্তরা ব্যাংকে ২৫ কোটি ৬৪ লাখ, অ্যালাইন্স ফাইন্যান্সে ৬ কোটি ৮৫ লাখ ও ইসলামী ব্যাংকে আরেক দফায় ১০ কোটি ৯৪ লাখ টাকা। দুটি পাওয়ার প্ল্যান্টের নামে এ ঋণ নেওয়া হয়। ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় কোনো ব্যাংকঋণ ছিল না।
কুমিল্লা-৩ আসনে এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি ইউসুফ আব্দুল্লাহ হারুনের জামানতবিহীন ঋণ রয়েছে ১৮০ কোটি ১১ লাখ ৩৪ হাজার ৬৯০ টাকা। বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নেওয়া আছে মোট ৬৮ কোটি ৮৭ লাখ ৭ হাজার ৩৫৬ টাকা। সর্বমোট ঋণের পরিমাণ ২৪৮ কোটি ৯৮ লাখ ৪২ হাজার ৪৬ টাকা।
নরসিংদী-২ আসনে (পলাশ) আওয়ামী লীগের প্রার্থী কামরুল আশরাফ খান পোটনের ছয় ব্যাংক থেকে নেওয়া ঋণের পরিমাণ ২৮৪ কোটি ৯৭ লাখ ৩১ হাজার টাকা।
নরসিংদী-৩ (শিবপুর) আসনে প্রার্থী মো. সিরাজুল ইসলাম মোল্লার নিজের একক নামে ঋণের পরিমাণ ২ কোটি ১০ লাখ টাকার মতো। যৌথ মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের নামে পাঁচ ব্যাংক ও তিন আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে নেওয়া ঋণের পরিমাণ ২০৫ কোটি ৬৭ লাখ ৫৩ হাজার টাকা। একই আসনে প্রার্থী মিরানা জাফরিন চৌধুরীর ঋণের পরিমাণ ১ কোটি টাকা।
নরসিংদী-৫ আসনের প্রার্থী আলহাজ মুফতি আব্দুল কাদের মোল্লার ব্যাংকঋণের পরিমাণ ১ কোটি ৩২ লাখ টাকা।
কুমিল্লা-২ আসনে নিটল মোটরসের স্বত্বাধিকারী সাবেক এফবিসিসিআই সভাপতি আব্দুল মাতলুব আহমাদের সহধর্মিণী সেলিমা আহমাদের দায় দেখানো হয়েছে ৮ কোটি ৫৪ লাখ ৯১ হাজার ১৪০ টাকা। এ দম্পতির সম্পদের পরিমাণ ১৪০ কোটি ৮ লাখ ৪০ হাজার ৩৭৮ টাকা।
মানিকগঞ্জ-২ আসনে প্রার্থী সংগীতশিল্পী মমতাজ বেগম ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ থেকে ২ কোটি ৮১ লাখ ৫৮ হাজার টাকা ঋণ নিয়েছেন। মধু উজালা কোল্ড স্টোরেজের নামে ওই ঋণ নেওয়া হয়।
মানিকগঞ্জ-৩ আসনে প্রার্থী স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক মার্কেন্টাইল ব্যাংক ও সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার ব্যাংক থেকে ১ কোটি ৭৩ লাখ ৭৭ হাজার ৭৯ টাকা ঋণ নিয়েছেন বলে হলফনামায় উল্লেখ করেছেন।
মৌলভীবাজার-২ আসনে প্রার্থী শফিউল আলম চৌধুরীর মোট ঋণের পরিমাণ ২ কোটি ৬১ লাখ ২০ হাজার ৪৪৪ টাকা।
ময়মনসিংহ-৭ (ত্রিশাল) নির্বাচনী আসনে প্রার্থী মো. হাবিবুর রহমান খান অগ্রণী ব্যাংকে ১ কোটি ৩৬ লাখ ৬৫ হাজার ৭২২ টাকা ঋণগ্রস্ত।
নোয়াখালী-৩ আসনের প্রার্থী আক্তার হোসেন দুই ব্যাংক থেকে মোট ১৩ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছেন বলে উল্লেখ করেছেন।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ডা. সামিল উদ্দীন আহমেদ শিমুলের ৭ লাখ ১০ হাজার ৮৯৯ টাকা ব্যাংক লোন রয়েছে। একই আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী গোলাম রাব্বানীর ব্যাংকঋণ রয়েছে ৫২ লাখ ৪৪ হাজার ৬০০ টাকা।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী খুরশিদ আলমের রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের নেজামপুর শাখায় (নাচোল, চাঁপাইনবাবগঞ্জ) যৌথ ঋণ রয়েছে ৮৯ লাখ টাকা।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মো. আব্দুল ওদুদের রূপালী ব্যাংকের বিভিন্ন শাখায় বর্তমানে ঋণ রয়েছে ১২ কোটি ৫২ লাখ ৯৭ হাজার ৫৭৬ টাকা।
সিলেট-১ আসনে আওয়ামী লীগ থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী অ্যাডভোকেট মিসবাহ উদ্দীন সিরাজের ব্যক্তিগত ঋণ ৩৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা। ইসলামী ঐক্যজোটের প্রার্থী ফয়জুল হকের ইসলামী ব্যাংক আম্বরখানা সিলেট শাখায় ৫ লাখ টাকা ঋণ রয়েছে।
সিলেট-৩ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হাবিবুর রহমান অগ্রণী ব্যাংক অটো লোন হিসেবে নিয়েছেন ২৩ লাখ ৭৫ হাজার টাকা। বর্তমান স্থিতি ২০ লাখ ৫৭ হাজার ৫৯৭ টাকা।
চট্টগ্রাম-৫ আসনে আনিসুল ইসলাম মাহমুদের ক্রেডিট কার্ড ঋণ রয়েছে ২ লাখ ৪৩ হাজার ৮৬৭ টাকা।
রাজশাহী-২ (রাজশাহী সদর) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মোহাম্মদ আলীর রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক কাজীহাট শাখায় ৫ লাখ টাকার বীর মুক্তিযোদ্ধা ঋণ রয়েছে।
রাজশাহী-৩ (পবা-মোহনপুর) আসনে বিএনএম থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী এ কে এম মতিউর রহমানের ঋণ রয়েছে ১৫ লাখ ৩৩ হাজার ৪২৮ টাকা। রাজশাহীর পূবালী ব্যাংক থেকে গ্রহণ করা এ ঋণ সর্বশেষ পুনঃতফসিলীকরণ হয়েছিল চলতি বছরের ৭ জুন।
রাজশাহী-৪ (বাগমারা) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আবুল কালাম আজাদের একক ও যৌথভাবে ঋণ রয়েছে ১ কোটি ৬৯ লাখ ৮৩ টাকা। এর মধ্যে নিজের নামে যমুনা ব্যাংক ভবানীগঞ্জ বাগমারা রাজশাহীতে ঋণ রয়েছে ৫০ লাখ ৩৯ হাজার ৪৪৫ টাকা এবং পূবালী ব্যাংক রাজশাহী শাখায় রয়েছে ৫৩ লাখ টাকার ঋণ। অন্যদিকে স্ত্রীসহ যৌথভাবে যমুনা ব্যাংকের একই শাখায় ঋণ রয়েছে ৬৫ লাখ ৬০ হাজার ৬৩৮ টাকা। একই আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য এনামুল হকের এনা বিল্ডিং প্রোডাক্ট লিমিটেডের ম্যানেজিং ডিরেক্টর হওয়ার সুবাদে আইএফআইসি ব্যাংকে ঋণ রয়েছে ৩২ কোটি ৮৪ লাখ ৮০ হাজার টাকা।
রাজশাহী-৫ (পুঠিয়া-দুর্গাপুর) আসনে মো. মনসুর রহমানের বাংলাদেশ হাউস বিল্ডিং করপোরেশন রাজশাহী শাখায় দায় রয়েছে ৮ লাখ ৯৫ হাজার ১৮ টাকা। জাতীয় পার্টির আবুল হোসেনের কনজুমার ক্রেডিটের আওতায় সোনালী ব্যাংক পুঠিয়া শাখায় ঋণ রয়েছে, যার পরিমাণ ৬ লাখ টাকা।
রাজশাহী-৬ (চারঘাট-বাঘা) আসনে রিপন আলীর শাহাজালাল ইসলামী ব্যাংকে দায় রয়েছে ১৩ লাখ টাকার।