![তলব সত্ত্বেও কমছে না আচরণবিধি লঙ্ঘন](uploads/2023/12/15/1702619599.Election.jpg)
ভোটের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে, ততই বাড়ছে প্রার্থীদের নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গের ঘটনা। প্রার্থিতা চূড়ান্ত হওয়ার আগেই এসব ঘটনায় সারা দেশে বৃহস্পতিবার (১৪ ডিসেম্বর) পর্যন্ত ১২০ জনের বেশি প্রার্থীকে শোকজ ও তলব করেছে ইসির নির্বাচনী তদন্ত কমিটি। তাদের মধ্যে কয়েকজনকে একাধিকবার শোকজ করা হয়েছে। আবার কোনো কোনো প্রার্থীর শোকজের জবাব ‘সন্তোষজনক নয়’ জানিয়েছে কমিশন। এ ছাড়া প্রতীক বরাদ্দের আগেই অনেক প্রার্থীর ব্যানার-পোস্টারে সয়লাব নির্বাচনী এলাকা।
নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গের দায়ে তলব ও শোকজের তালিকায় আছেন মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, এমপিরাও। ইসির পক্ষ থেকে একের পর এক ‘কঠোর’ হুঁশিয়ারি বার্তা দেওয়া হলেও আচরণবিধিকে আমলে নিচ্ছেন না অভিজ্ঞ রাজনীতিবিদরাও। তাদের মধ্যে ইসির পক্ষ থেকে সশরীরে কারণ দর্শাতে তলব করা হয়েছে কয়েকজনকে। গত ১৩ ডিসেম্বর ইসি তলব করেছে ফরিদপুর-৪ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী কাজী জাফর উল্যাকে। একই দিন শোকজ করা হয় পানিসম্পদ উপমন্ত্রী ও শরীয়তপুর-২ আসনে প্রার্থী এ কে এম এনামুল হক শামীমকে।
নির্বাচনী আচরণবিধির নির্দেশনা না মানায় গত ৯ ডিসেম্বর তলবের চিঠি পাঠানো হয় সাবেক শিল্পমন্ত্রী ও ঝালকাঠি-২ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আমির হোসেন আমুকে। একই সঙ্গে অভিযোগের কারণ দর্শাতে তাকে আজ সশরীরে ইসিতে উপস্থিত হয়ে ব্যাখ্যা দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। একই দিন ঢাকা-৮ আসন থেকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিমকে শোকজ করে নির্বাচন অনুসন্ধান কমিটি। নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের ঘটনায় ইসির অনুসন্ধান কমিটির আদালতে হাজিরা দেন মাদারীপুর-৩ আসনের আওয়ামী লীগের প্রার্থী, দলটির প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আব্দুস সোবহান গোলাপ।
নির্বাচন কমিশনের শোকজ নোটিশের তালিকায় আছেন মেহেরপুর-১ (সদর-মুজিবনগর) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ও জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন, রাজশাহী-৬ (বাঘা-চারঘাট) আসনের সংসদ সদস্য ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম, ঝালকাঠি-১ (কাঁঠালিয়া-রাজাপুর) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত নেতা ব্যারিস্টার এম শাহজাহান ওমর বীর উত্তম, নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী এ কে এম শামীম ওসমান। ১১ ডিসেম্বর শোকজ করা হয় বরগুনা-১ আসনের আওয়ামী লীগের প্রার্থী ও বর্তমান সংসদ সদস্য ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভুসহ আরও ৯ আওয়ামী লীগ নেতাকে।
এর আগে নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটির আদালতে শোকজ নোটিশের জবাব দিয়েছেন মাগুরা-১ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান, ঢাকা-৬ আসনের প্রার্থী জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ, চট্টগ্রাম-১৬ (বাঁশখালী) আসনের আওয়ামী লীগ প্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী, ফরিদপুর-৪ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী মজিবুর রহমান চৌধুরী ওরফে নিক্সন চৌধুরী, নারায়ণগঞ্জ-১ (রূপগঞ্জ) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী, নাটোর-৩ আসনের প্রার্থী তথ্য ও যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, নাটোর-২ আসনের আওয়ামী লীগের প্রার্থী সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম শিমুল ও মুন্সীগঞ্জ-৩ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মৃণাল কান্তি দাস।
এ বিষয়ে ইসির পদক্ষেপ ও ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে জানতে চাইলে সংস্থাটির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ খবরের কাগজকে বলেন, ‘আইনি ব্যবস্থা হিসেবে আমরা যেখান থেকেই আচরণবিধি ভঙ্গের অভিযোগ ও প্রমাণ পাচ্ছি শোকজ করছি। কাউকে কাউকে তলবও করছি। আমাদের পদক্ষেপের কোনো ঘাটতি নেই। কয়েকজন প্রার্থীকে আমরা তলবও করেছি। সেই চিঠিতে তাদের সশরীরে ইসিতে এসে কারণ দর্শানোর ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে। জবাবে কারও ব্যাখ্যা সন্তোষজনক না হলে প্রার্থিতা বাতিলও করা হচ্ছে। আর ব্যানার-পোস্টার সরানোর ব্যাপারে স্থানীয় সরকার বিভাগে চিঠি দেওয়া হয়েছে। এ কাজে তাদের বিশেষ বরাদ্দ দিয়ে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে বেশ কিছু জেলায় অভিযান চালিয়ে ব্যানার-পোস্টারগুলো সরানো হয়েছে বলেও জানতে পেরেছি।’
ইসির তফসিল অনুযায়ী, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের বাকি আর মাত্র ২২ দিন। ভোট প্রস্তুতির এ পর্যায়ে আজ প্রার্থীদের আপিল আবেদন নিষ্পত্তির শেষে চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করবে নির্বাচন কমিশন। ১৭ ডিসেম্বর প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিন। পরদির ১৮ ডিসেম্বর প্রার্থীদের প্রতীক বরাদ্দ করবেন রিটার্নিং অফিসার। প্রতীক পাওয়ার পর থেকেই প্রার্থীদের প্রচারে নামতে আইনি কোনো বাধা নেই।
এদিকে গত ১২ ডিসেম্বর ইসির প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, ভোটের প্রতীক বরাদ্দের পর প্রার্থীদের প্রচার ছাড়া কোনো ধরনের সভা-সমাবেশ করার ব্যাপারে নিষেধজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। আর নির্বাচন কমিশনের সেই নির্দেশনা বাস্তবায়নে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে প্রস্তুতি নিচ্ছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।