![৫৩ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভাষাকেন্দ্র মাত্র ৭টি](uploads/2024/02/22/1708587390.public-University.jpg)
বিশ্বায়নের যুগে দিন দিন বাড়ছে একাধিক ভাষা শেখার গুরুত্ব। মাতৃভাষার পাশাপাশি অন্য ভাষার ওপর দক্ষতা চাকরিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবারিত সুযোগ তৈরি করে দেয়। তবে এখনো বাংলাদেশে উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিদেশি ভাষা শেখার পূর্ণাঙ্গ সুযোগ গড়ে ওঠেনি। দেশে ৫৩টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ল্যাঙ্গুয়েজ সেন্টার বা ভাষাকেন্দ্র রয়েছে মাত্র সাতটিতে। কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউট (আইএমএল) থাকলেও শুধু ভাষা শেখার জন্য এ ধরনের ক্লাব বা সেন্টারের প্রয়োজনীয়তা দিন দিন বাড়ছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এ প্রসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত দায়িত্ব) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আলমগীর খবরের কাগজকে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভাগ বা ইনস্টিটিউট থাকবে, এ ক্ষেত্রে সুস্পষ্ট নির্দেশনা নেই। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এ ব্যাপারে স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নেয়। তাদের একাডেমিক কাউন্সিল আছে, সিন্ডিকেট আছে। যারা ল্যাঙ্গুয়েজ ইনস্টিটিউট চেয়েছে তাদের কাউকে ইউজিসি বিমুখ করেনি, বরং সমর্থন দিয়েছে। প্রতিটা বিশ্ববিদ্যালয়ে ল্যাঙ্গুয়েজ ইনস্টিটিউট থাকা উচিত। আমরা এ ব্যাপারে উৎসাহিত করছি। কারণ শিক্ষার্থীরা কোনো ভাষা ঠিকমতো জানে না।’
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সর্বশেষ বার্ষিক প্রতিবেদন অনুযায়ী সাতটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভাষা সেন্টার রয়েছে। সেগুলো হলো বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেরিটাইম বিশ্ববিদ্যালয়। আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউট রয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে। এর মধ্যে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি ভাষার চারটা মডিউলের ওপর কোর্স রয়েছে। এ ছাড়া ফ্রেঞ্চ, জার্মান, জাপানি, রাশিয়ান, সংস্কৃত, চায়নিজ, ফার্সি ও কোরিয়ান ভাষার ওপর জুনিয়র সার্টিফিকেট কোর্স রয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ওয়েবসাইট অনুযায়ী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি, চায়নিজ, জাপানিজ, ফ্রেঞ্চ, স্প্যানিশ ভাষা শেখার ওপর বিভিন্ন কোর্স রয়েছে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে দি ইনস্টিউটট অব ইংলিশ অ্যান্ড আদার ল্যাঙ্গুয়েজ। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে মানবিক বিভাগের অধীনে ইংরেজি ভাষার ওপর ল্যবরেটরি রয়েছে। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে কয়েকটি ভাষার ওপর কোর্স থাকলেও বর্তমানে ইংরেজি ছাড়া বাকিগুলো বন্ধ আছে। শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে সাতটি ভাষার ওপর ছয় মাস ও এক বছর মেয়াদি কোর্স রয়েছে। বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি ও আরবি ভাষার ওপর কোর্স রয়েছে।
তবে অনেক পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভাষা শেখার ওপর কোনো ধরনের সেন্টার বা ইনস্টিটিউট নেই। সে কারণে শিক্ষার্থীদের আগ্রহ থাকলেও সুযোগ না পাওয়ায় নিজেদের দক্ষতা বৃদ্ধি করতে পারছেন না। এ বিষয়ে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী খবরের কাগজকে বলেন, ‘পৃথিবীতে বিভিন্ন দেশের ভাষা আছে। বেশি ভাষা জানতে পারাটা বর্তমানে গুরুত্বপূর্ণ যোগ্যতা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। কিন্তু আমরা শুধু বাংলা ও ইংরেজি ভাষা জানি। এ ছাড়া অন্য কোনো ভাষা আমরা তেমন একটা জানি না এবং বুঝিও না। বিশ্ববিদ্যালয়ে যদি আমাদের এ সুযোগটি থাকত অনেক উপকার হতো।’
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের একটি অংশের ভাষাগত দুর্বলতা প্রকট। সেটা বাংলা কিংবা ইংরেজিতেও। তৃতীয় ভাষা হিসেবে দক্ষতা আছে এমন শিক্ষার্থীও হাতে গোনা। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ইংরেজিকে গুরুত্ব দেওয়া হলেও পূর্ণাঙ্গভাবে বিদেশি ভাষা শেখার ব্যবস্থা কোথাও নেই। সব জায়গায় প্রাথমিক পর্যায়ের ভাষা শেখা হয়, যা অনেকটা কোচিং সেন্টারের মতো।
এ জন্য বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে ভাষা শেখার পূর্ণাঙ্গ ইনস্টিটিউট থাকলে শিক্ষার্থীদের দক্ষতা বৃদ্ধিতে বিরাট ভূমিকা রাখবে।
এ প্রসঙ্গে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব ইসলামিক এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চের পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. মামুনুর রহমান খবরের কাগজকে বলেন, আইএমএলের বিষয়গুলোতে অনার্স, মাস্টার্স করারও সুযোগ থাকে। আর ল্যাগুয়েজ সেন্টার শুধু ভাষা নিয়ে কাজ করে। এখন যেহেতু সবকিছু বৈশ্বিকভাবে সংযুক্ত হচ্ছে এ ধরনের ভাষা সেন্টারের অবশ্যই দরকার আছে।
বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে ল্যাঙ্গুয়েজ সেন্টার গড়ে না ওঠার কারণ নিয়ে ইউজিসি চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত দায়িত্ব) অধ্যাপক ড. আলমগীর বলেন, যেসব বিশ্ববিদ্যালয়ে হয়নি সেখানে ধাপে ধাপে হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যাটা সাম্প্রতিক সময়ে বেড়েছে। এ কারণে অনেকে ভাবছে তাদের আরও জনবল, সক্ষমতার দরকার আছে। যেসব ভাষার কোর্স চালু করা হবে সেসব বিষয়ে অভিজ্ঞ শিক্ষকের দরকার রয়েছে।
বিদেশি ভাষার ওপর দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য পদক্ষেপ গ্রহণে একটা নীতিমালা থাকা দরকার মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক এ বি এম রেজাউল করিম ফকির। খবরের কাগজকে তিনি বলেন, ‘দেশে বিদেশি ভাষার ওপর একটা দক্ষ শ্রেণির দরকার আছে। কারণ বিদেশের সঙ্গে সম্পর্ক রাখাটা গুরুত্বপূর্ণ। এ কারণে আমাদের একটি নীতিমালার দরকার আছে।’