![বেনজীরের দলিলের খোঁজে রেজিস্ট্রি অফিসে ব্যস্ততা](uploads/2024/05/30/IGP-1717043375.jpg)
পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজি) বেনজীর আহমেদ ও তার পরিবারের সদস্যদের সম্পদের তথ্য খুঁজতে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন রাজধানীর গুলশান সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের কর্মীরা। একইভাবে তেজগাঁও রেজিস্ট্রেশন কমপ্লেক্সে থাকা ১১টি সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের কর্মীরাও ব্যস্ত আছেন এ কাজে। শুধু ঢাকায় নয়, সারা দেশের সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের কর্মকর্তারাই এখন সাবেক আইজিপির সম্পদের খোঁজে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। ইনডেক্স ও বালাম বইয়ের পাতার পর পাতা ওল্টাচ্ছেন, এ রকম কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
রেজিস্ট্রেশন অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, দুদকের পাঠানো চিঠির ভিত্তিতে বিভিন্ন রেজিস্ট্রি অফিসের পিয়ন, ওমেদার ও তল্লাশকারকরা এখন দলিল খুঁজছেন। তারা দুদক থেকে পাঠানো নোটিশ মোতাবেক তাদের নাম-ঠিকানা অনুযায়ী রেজিস্ট্রি অফিসের রেকর্ড রুম থেকে দলিলের ক্ষুদ্র বিবরণের নেম ইনডেক্স ও বালাম বই খুঁজে দেখছেন। জেলায় জেলায় এই নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে আরও দুই থেকে তিন সপ্তাহ আগে।
রাজধানীর তেজগাঁও রেজিস্ট্রেশন কমপ্লেক্সে গুলশানসহ ১১টি সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের কর্মীরা বেশ কয়েক দিন ধরে দলিল খুঁজতে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। এ ছাড়া ঢাকা জেলার অধীন সাভার রেজিস্ট্রি অফিস, গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া, কোটালীপাড়া, কক্সবাজারের টেকনাফ, উখিয়া, মাদারীপুর সদর ও মাদারীপুরের রাজৈর সাব-রেজিস্ট্রি অফিসসহ দেশের সব সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে একই প্রক্রিয়ায় বেনজীর আহমেদ ও তার পরিবারের সদস্যদের সম্পত্তির দলিল খুঁজতে তল্লাশি চালানো হচ্ছে।
তাদের নামে দলিল খুঁজতে দুদক থেকে ৬১ জেলার জেলা রেজিস্ট্রার এবং ৩ পার্বত্য জেলা বান্দরবান, খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটি জেলা প্রশাসকের কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে। পার্বত্য জেলাগুলোতে সাব-রেজিস্ট্রি অফিস না থাকায় সহকারী কমিশনারের (ভূমি) মাধ্যমে দলিল রেজিস্ট্রি হয়ে থাকে। এ জন্য সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসকদের কাছে এ চিঠি পাঠানো হয়েছে। ইতোমধ্যে বিভিন্ন সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে খুঁজে পাওয়া অনেক দলিলের তথ্য দুদকে পাঠানো হয়েছে। পাঠানো এসব দলিল যেন কোনোভাবে পরবর্তী সময়ে ‘নিখোঁজ’ না হয়, সে জন্য স্থানীয় কর্মকর্তারা বাড়তি সতর্কতামূলক পদক্ষেপ নিয়ে রেখেছেন।
এ ব্যাপারে গতকাল বুধবার মানিকগঞ্জের জেলা রেজিস্ট্রার ও ঢাকার অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা জেলা রেজিস্ট্রার জাহিদ হোসেন খবরের কাগজকে বলেন, ‘বেনজীর আহমেদ ও তার পরিবারের সম্পত্তিসংক্রান্ত দুটি নোটিশ দেশের সব জেলা রেজিস্ট্রারের কাছে পাঠানো হয়েছে। একটি আদালত থেকে আসা ক্রোকের আদেশ।
আরেকটি দুদক থেকে এসেছে তাদের নামে দলিলের তথ্য চেয়ে। আমি মানিকগঞ্জ ও ঢাকা জেলা রেজিস্ট্রার হিসেবে দুদকের দুটি চিঠি পেয়েছি। সেই চিঠি সব সাব-রেজিস্ট্রারকে ফরোয়ার্ড করে দিয়েছি। সব সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে তল্লাশি চলছে। পিয়ন ও অফিস স্টাফদের তল্লাশির কাজে লাগানো হয়েছে। তারা নিরলসভাবে কাজ করছেন। ইতোমধ্যে কোনো কোনো সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে কিছু দলিলের তথ্য পাওয়া গেছে। তবে কতসংখ্যক পাওয়া গেছে তা সংশ্লিষ্ট সাব-রেজিস্ট্রাররা বলতে পারবেন।’
এদিকে দুদকের একটি সূত্র জানিয়েছে, চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে বেনজীর আহমেদ ও তার পরিবারের সদস্যদের নামে সম্পদ কেনাবেচাসহ হস্তান্তরের যাবতীয় তথ্য চেয়ে তেজগাঁও রেজিস্ট্রেশন কমপ্লেক্সসহ দেশের সব জেলা রেজিস্ট্রার অফিসে নোটিশ পাঠিয়েছেন দুদকের অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা উপপরিচালক হাফিজুল ইসলাম।
ইতোমধ্যে বিভিন্নভাবে আসা তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে ২০২টি দলিলে ৬২১ বিঘা জমি ও চারটি ফ্ল্যাট ক্রোকের আদেশ দিয়েছেন মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ আস-শামস জগলুল হোসেনের আদালত। বেনজীর বেনামেও অনেক সম্পদ গড়েছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। দুদকের অনুসন্ধান টিম এই অভিযোগও গুরুত্বের সঙ্গে খতিয়ে দেখছে।
অবৈধ উপায়ে বিপুল পরিমাণ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধানে গত ২৩ এপ্রিল উপপরিচালক হাফিজুল ইসলামকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি টিম গঠন করে দুদক। টিমের অন্য সদস্যরা হলেন সহকারী পরিচালক নিয়ামুল হাসান গাজী ও জয়নাল আবেদীন। এ বিষয়ে ১৮ এপ্রিল কমিশনের সভায় বেনজীরের অবৈধ সম্পদ অনুসন্ধানের বিষয়টি অনুমোদন দেওয়া হয়।
দায়িত্ব পেয়েই দ্রুত অনুসন্ধান কাজ শুরু করেন দুদক কর্মকর্তারা। তারা শুক্র ও শনিবার বন্ধের দিনেও কাজ করছেন বলে জানা গেছে।
আরও পড়ুন...
দুর্নীতির ক্ষত: বিশেষজ্ঞ অভিমত