![বেনজীরের বিদেশ যাওয়ায় নিষেধাজ্ঞা আসতে পারে](uploads/2024/05/31/Benzir_Ahmed2-1717136053.jpg)
অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক বেনজীর আহমেদ ও তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান চলছে। মামলা হয়নি কোনো। মামলা না হলেও বিদেশে যেতে নিষেধাজ্ঞায় পড়তে পারেন তিনি। অনুসন্ধান চলমান থাকা অবস্থায় এবং আদালতের নিষেধাজ্ঞা জারির আগেই বেনজীর আহমেদ তার বিভিন্ন ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা উঠিয়েছেন। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহের পর নিষেধাজ্ঞা জারির উদ্যোগ নিতে পারেন দুদক কর্মকর্তারা।
এদিকে বেনজীর আহমেদের অবস্থান সম্পর্কে খোঁজখবর নিচ্ছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এ জন্য সরকারি একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত রাখা হয়েছে। বেনজীর আহমেদ বিভিন্ন ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা উঠিয়ে নেওয়ার খবরে দুদক কর্মকর্তারা তাদের তৎপরতা বাড়িয়ে দিয়েছেন। তবে তিনি দেশে নাকি চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে বিদেশ গেছেন, তা নিয়ে একাধিক মহলে চলছে নানা রকম আলোচনা। তবে কেউই নিশ্চিত করতে পারেননি বেনজীর আহমেদের অবস্থান। ফলে বেনজীর আহমেদ দেশে নাকি বিদেশ আছেন, তাও জানার চেষ্টা করছেন দুদক কর্মকর্তারা। তিনি বিদেশ গেলেও দুদকের হাতে উপযুক্ত তথ্য না থাকলে আইন অনুযায়ী তার বিদেশ যাওয়ায় নিষেধাজ্ঞা চাইতে পারবেন দুদক কর্মকর্তারা। গতকাল বৃহস্পতিবার দুদকের একাধিক কর্মকর্তা ও আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
এ ব্যাপারে দুদকের আইনজীবী মাহমুদ হোসেন জাহাঙ্গীর খবরের কাগজকে বলেন, ‘দুর্নীতির অভিযোগ সংশ্লিষ্ট কোনো ব্যক্তি অনুসন্ধান-তদন্তে অসহযোগিতা করলে বা বাধার সৃষ্টি করলে তার বিদেশ যাওয়ায় নিষেধাজ্ঞা চাইতে পারেন দুদক কর্মকর্তারা। একইভাবে অবৈধ সম্পদের অনুসন্ধান পর্যায়ে অথবা আদালতের নির্দেশে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ (অবরুদ্ধ) থাকা অবস্থায় টাকা উঠিয়ে নিলে অভিযোগসংশ্লিষ্ট ব্যক্তির বিদেশ যাওয়ায় নিষেধাজ্ঞা চাইতে পারেন অনুসন্ধান কর্মকর্তা। একই কারণে ইতোমধ্যে পুলিশের একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার বিদেশ যাওয়ায় নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন আদালত। তবে এ ক্ষেত্রে কমিশনের অনুমোদন সাপেক্ষে আদালতে আবেদন করতে হবে। আদালত সন্তুষ্ট হলে নিষেধাজ্ঞার আদেশ দিয়ে থাকেন।’
আদালতের ফ্রিজ আদেশের কপি ব্যাংকে যাওয়ার আগেই বেনজীর আহমেদ তার বিভিন্ন অ্যাকাউন্ট থেকে সমুদয় টাকা উঠিয়ে নিয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে, এ ক্ষেত্রে কী হতে পারে? এমন প্রশ্নের উত্তরে অ্যাডভোকেট মাহমুদ হোসেন জাহাঙ্গীর বলেন, ‘আদালতের আদেশ জারির আগে অনুসন্ধান শুরু হয়েছে। এ ছাড়া আদালতের নিষেধাজ্ঞার আদেশের খবরটি জাতীয়ভাবে প্রকাশ হয়েছে। এখন দেখতে হবে, ব্যাংক কর্তৃপক্ষ কখন এবং কোন পরিস্থিতিতে টাকা ছাড় করেছে। সর্বোপরি দুদকের অনুসন্ধান কর্মকর্তা যদি মনে করেন যে অভিযোগ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির বিদেশ যাওয়ায় নিষেধাজ্ঞার আদেশ প্রয়োজন, তাহলে তিনি এ বিষয়ে আদালতে আবেদন করবেন।’
এদিকে দুদকের একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দুদকের নিজস্ব গোয়েন্দা ইউনিট আছে। নতুন কোনো অনুসন্ধান শুরু করার আগে গোপনে খোঁজখবর নিয়ে থাকে এই ইউনিট। বেনজীর আহমেদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরুর আগে দুদকের গোয়েন্দা ইউনিট একই কাজ করেছে। তবে ইমিগ্রেশন এনফোর্সমেন্ট গোয়েন্দাসহ দেশের একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে বেনজীর আহমেদ ও তার পরিবারের সদস্যদের খোঁজখবর নেওয়া শুরু হয়েছে। সংস্থাগুলোর উচ্চপর্যায়ে দুদকের যোগাযোগ অব্যাহত আছে। ফলে অনুসন্ধানাধীন কোনো ব্যক্তির বিদেশে পালিয়ে যাওয়ার আশঙ্কার ক্ষেত্রে উপযুক্ত সময়ে ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব। তবে বেনজীর আহমেদের ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম কোনো পরিস্থিতি তৈরি না হলে আগামী ৬ জুন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হতে পারে। ৬ জুন দুদকে তার হাজিরা নির্ধারিত আছে। তিনি দুদকের ডাকে সাড়া না দিলে, জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি না হলে অথবা দুদকের অনুসন্ধানে অসহযোগিতা করলে তার বিদেশ যাওয়ায় নিষেধাজ্ঞা চাওয়া হবে।
ইতোমধ্যে বেনজীর আহমেদ বিদেশ গেছেন- এমন খবর প্রসঙ্গে দুদকের এক কর্মকর্তা জানান, তার অবস্থান নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত বিশ্বাস করতে হবে তিনি আছেন এবং দুদকের অনুসন্ধানে সহযোগিতা করবেন। যদি তার অবস্থান না জানা যায় এবং দুদকের ডাকে সাড়া না দেন, তখন ধরে নিতে হবে তিনি অসহযোগিতা করছেন। সে ক্ষেত্রে তার বিদেশ গমনে নিষেধাজ্ঞাসহ পরবর্তী আইনি প্রক্রিয়া গ্রহণ করা হবে।