![বেনজীরের বেনামি সম্পদ খুঁজছে এনবিআরের টাস্কফোর্স](uploads/2024/05/31/Benzir_Ahmed-1717151212.jpg)
পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদের বেনামি সম্পদের খোঁজে নেমেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। বেনজীরের চলতি এবং গত চার করবর্ষের আয়কর রিটার্নে দেওয়া তথ্য যাচাই করা হচ্ছে। খতিয়ে দেখা হচ্ছে সম্পদ বৃদ্ধির পরিমাণ। স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ এবং আয়-ব্যয়ের সঙ্গে সমন্বয় আছে কি না তা বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে। তার স্ত্রী ও সন্তানদের আয়, ব্যয় ও সম্পদের প্রকৃত পরিমাণও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
গত কয়েকদিন ধরে দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে বেনজীরের অবৈধ সম্পদ অর্জন নিয়ে একের পর এক প্রতিবেদন প্রকাশিত হচ্ছে। গণ্যমাধ্যমের এসব তথ্য আমলে এনে এনবিআরের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা শাখা সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স সেল (সিআইসি), ভ্যাট নিরীক্ষা গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর এবং শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের নিয়ে গঠিত টাস্কফোর্স তদন্ত শুরু করেছে।
সূত্র জানিয়েছে, বেনজীর আহমেদের দেশ-বিদেশে বিভিন্ন ব্যক্তির সঙ্গে গোপনে বৈধ-অবৈধ ব্যবসা আছে, এমন গোয়েন্দা তথ্য সামনে রেখে টাস্কফোর্স তদন্ত শুরু করেছে। এসব ব্যবসা থেকে আয় করা অর্থ কোথায় গচ্ছিত রাখা হয়েছে তারও খোঁজ নেওয়া হচ্ছে।
তদন্ত করে দেখা হচ্ছে, ব্যাংকিং চ্যানেলের বাইরে গিয়ে বেনজীর লেনদেন করেছেন কি না, বা করে থাকলে লেনদেনের পরিমাণ কত, তার প্রকৃত আয়, ব্যয় ও স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ, অর্থপাচার করা হয়েছে কি না, অর্থ পাচার করা হলে তা কোন দেশে, পাচারকৃত অর্থের পরিমাণ এবং রাজস্ব ফাঁকির পরিমাণ। ভুয়া কাগজপত্র দেখিয়ে নিজে আড়ালে থেকে অন্য কারও নামে আমদানি-রপ্তানি সংক্রান্ত ব্যবসা বেনজীর পরিচালনা করেছেন কি না তাও গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে। এসব ব্যবসা থেকে অবৈধভাবে প্রণোদনা নেওয়া এবং পাচারকৃত অর্থ দিয়ে বিদেশে সম্পদ কেনার বিষয়টিও খতিয়ে দেখছে টাস্কফোর্স কমিটি।
অর্থ পাচার রোধে গঠিত সরকারের উচ্চ পর্যায়ের কমিটির নির্দেশে এনবিআর এসব পদক্ষেপ নিয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), সিআইডিও অর্থ পাচার, অবৈধ সম্পদ অর্জনসহ অন্যান্য অপকর্ম সম্পর্কে খতিয়ে দেখছে। এনবিআর তদন্তের প্রয়োজনে সরকারের এসব প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে সহযোগিতা নেবে। বিভিন্ন সূত্রে এসব জানা যায়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এনবিআরের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা খবরের কাগজকে বলেন, ‘বিভিন্ন গণমাধ্যমে বেনজীরের যেসব সম্পদের তথ্য প্রকাশ পেয়েছে বা পাচ্ছে তা আমলে নিয়ে এনবিআর বেনজীরের কর ফাইলের সঙ্গে মিলিয়ে দেখছে। এ ছাড়া নিজেকে আড়ালে রেখে অনেকের সঙ্গে ব্যবসা করার তথ্যও পাওয়া গিয়েছে। এসবের সত্যতা যাচাই করতে কাজ শুরু করেছেন এনবিআরের কর্মকর্তারা। এসব ব্যবসা থেকে আয় করা অর্থ কোথায় গচ্ছিত রাখা হয়েছে বা অর্থ পাচার করা হয়েছে কি না তাও তদন্ত করা হচ্ছে।’
সূত্র জানায়, এনবিআরের তদন্তে আলোচিত আরাভ ওরফে রবিউল ওরফে হৃদয়ের সঙ্গে যৌথভাবে সোনা পাচারে বেনজীরের জড়িত থাকার অভিযোগের বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। আরও আগে আরাভের সঙ্গে বেনজীরের ব্যবসার বিষয়টি আলোচনায় আসে। সে সময়ে বেনজীর নিজের ফেসবুকে আরাভের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ নেই বলে দাবি করেছিলেন।
সূত্র জানায়, এনবিআরের রিটার্ন ফাইলে নিজের, স্ত্রী ও সন্তানদের নামে ফ্ল্যাট, গাড়ি, ব্যাংকে গচ্ছিত অর্থের উল্লেখ আছে। তিনজনের ফাইলে সোনা আছে বলেও দেখানো হয়েছে। কৃষি জমি এবং মাছের খামারে করে লাভ হয়েছে বলেও জানানো হয়েছে। এখানে বেনজীরের নামে গ্রামে বাড়ি, আবাদি জমি আছে বলেও জানানো হয়েছে। ৩৩টি ব্যাংক হিসাব উল্লেখ করা হয়েছে।
এনবিআরের টাস্কফোর্স থেকে বেনজীরের ব্যাংক হিসাবের খোঁজ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আগামী সপ্তাহে সব ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে এনবিআর থেকে চিঠি পাঠানোর কথা আছে। এনবিআর থেকে পাঠানো চিঠি গতকাল প্রস্তুত করা হয়েছে। চিঠিতে বেনজীর আহমেদের একক বা যৌথ নামে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে এফডিআর, যেকোনো মেয়াদি আমানতের হিসাব, যেকোনো ধরনের বা মেয়াদের সঞ্চয়ী হিসাব, চলতি হিসাব, ঋণ হিসাব, ফরেন কারেন্সি অ্যাকাউন্ট, ক্রেডিট কার্ড বা ডেবিট কার্ড, ভল্ট, সঞ্চয় পত্র বা যেকোনো সেভিংস ইন্সট্রুমেন্ট হিসাব সংক্রান্ত তথ্য চাওয়া হবে। বর্তমানে বন্ধ আছে বা চলমান সব হিসাবের তথ্যই চাওয়া হবে।