![রান উৎসবের বিশ্বকাপে অধরা হ্যাটট্রিক](uploads/2023/11/01/1698816088.Hat-trick-11.jpg)
বলে-কয়ে অর্জন করা সম্ভব নয় ক্রিকেটের এক বিরলতম রেকর্ডের নাম হ্যাটট্রিক। বোলার পরপর তিন বলে তিন উইকেট (রানআউট বাদে) শিকার করতে পারলে সেটি চলে যায় হ্যাটট্রিকের খাতায়। ১৯৮২ ওডিআই ক্রিকেট প্রথম সাক্ষী হয়েছিল হ্যাটট্রিকের। রেকর্ডটি গড়েছিলেন পাকিস্তানের সিমার জালালউদ্দিন। সিন্ধু প্রদেশের হায়দ্রবাদের নিয়াজ স্টেডিয়ামে অস্ট্রেলিয়ার তিন ব্যাটসম্যানকে পরপর তিন বলে নিজের শিকারে পরিণত করে ওডিআই ক্রিকেটের ইতিহাসে প্রথম হ্যাটট্রিক ম্যান হিসেবে নিজের নাম তোলেন রেকর্ড বুকে। জালালউদ্দিনের হ্যাটট্রিক ছিল দ্বিপক্ষীয় সিরিজে। এর ঠিক পাঁচ বছর পর ১৯৮৭ সালে বিশ্বকাপের মঞ্চে আসে প্রথম হ্যাটট্রিক। ভারত ও পাকিস্তানে আয়োজিত সে বিশ্বকাপে ভারতীয় অলরাউন্ডার চেতন শর্মা নিউজিল্যান্ডের রাদারফোর্ড, ইয়ান স্মিথ ও ইভেন চ্যাটফিল্ডকে বোল্ড করে বিশ্বকাপে প্রথম হ্যাটট্রিক ম্যান হিসেবে ইতিহাসের পাতায় যুক্ত করে নেন নিজের নাম।
ওয়ানডে ক্রিকেটে এখন পর্যন্ত হ্যাটট্রিক হয়েছে ৫০টি। এর মাঝে বিশ্বকাপে হয়েছে ১১টি। একমাত্র বোলার হিসেবে শ্রীলঙ্কার লাসিথ মালিঙ্গা ২০০৭ ও ২০১১ সালে পরপর দুই বিশ্বকাপে হ্যাটট্রিক করেন। কিন্তু এবারের বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত কোনো হ্যাটট্রিক হয়নি। একেকটি দল (বাংলাদেশ-পাকিস্তান ম্যাচ ব্যতীত) ছয়টি করে খেলা শেষ করেছে। প্রতিটি দলের খেলা বাকি আছে তিনটি করে। এরপর দুই সেমিফাইনাল ও ফাইনাল হবে।
বিশ্বকাপের চতুর্থ আসরের প্রথম হ্যাটট্রিকের পর দ্বিতীয় হ্যাটট্রিকের জন্য অপেক্ষা করতে হয় এক যুগ। ১৯৯৯ সালে সপ্তম আসর বসে ইংল্যান্ডে। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে হ্যাটট্রিক করেন পাকিস্তানের অফ স্পিনার সাকলায়েন মুশতাক। এরপর ২০১৯ সাল পর্যন্ত প্রতি আসরেই অন্তত একটি করে হলেও হ্যাটট্রিক হয়েছে। কোনো আসরে দুটিও হয়েছে।
২০০৩ বিশ্বকাপের হ্যাটট্রিকটি ছিল শুধু বিশ্ব আসরে নয়, ওয়ানডে বিশ্বকাপের ইতিহাসেও সবচেয়ে অবাক করা হ্যাটট্রিক। ইতিহাসের প্রথম বোলার হিসেবে চামিন্দা ভাস ইনিংসের প্রথম তিন বলেই নেন তিন উইকেট। প্রতিপক্ষ ছিল বাংলাদেশ। তিন ব্যাটার ছিলেন হান্নান সরকার, মোহাম্মদ আশরাফুল ও এহসানুল হক সেজান। সেই বিশ্বকাপে হ্যাটট্রিক হয়েছিল পরে আরও একটি। ভাসের হ্যাটট্রিকের ১১ দিন পর হ্যাটট্রিক করেন অস্ট্রেলিয়ার কিংবদন্তি গতিতারকা ব্রেট লি। কেনিয়ার ওপেনার কেনেডি ওটিয়েনো, ব্রিজাল প্যাটেল ও ডেভিড ওবোয়ার উইকেট নিয়েছিলেন ব্রেট লি।
শ্রীলঙ্কানদের হ্যাটট্রিকগুলো বিশ্বকাপে অন্য রকম রেকর্ডময়। চামিন্দা ভাসের পর দ্বিতীয় লঙ্কান বোলার হিসেবে বিশ্বকাপে হ্যাটট্রিক করেন লাসিথ মালিঙ্গা। তিনি শুধু হ্যাটট্রিকই করেননি। চার বলে নেন টানা চার উইকেট। প্রোটিয়াদের তখন জিততে প্রয়োজন চার রান আর হাতে পাঁচ উইকেট। এ সময় মালিঙ্গার হাতে বল তুলে দেন অধিনায়ক মাহেলা জয়াবর্ধনে। শন পলক, অ্যান্ড্র হল, জ্যাক ক্যালিসকে ফিরিয়ে হ্যাটট্রিক করে জয়ের সম্ভাবনা জাগিয়ে তোলেন মালিঙ্গা। পরের বলে মাখায়া এন্টিনিকে বোল্ড করে চার বলে চার উইকেট নিয়ে এক বিরল রেকর্ড গড়েন মালিঙ্গা। যদিও দক্ষিণ আফ্রিকার জয়রথ আটকাতে পারেনি লঙ্কানরা।
শ্রীলঙ্কার হ্যাটট্রিক মানেই ভিন্ন রকম কিছু। ২০১১ সালে ঘরের মাঠে কেনিয়ার বিপক্ষে বিশ্বকাপে মালিঙ্গার দ্বিতীয় হ্যাটট্রিকও ছিল সে রকম কিছু। দুটি ভিন্ন ওভারে তিনি এই হ্যাটট্রিক করেন। নিজের সপ্তম ওভারের শেষ বলে তন্ময় মিশ্রাকে এলবিডব্লিউ করেন। অষ্টম ওভারে প্রথম দুই বলে পিটার অনগন্দো ও শেম নাসকে বোল্ড করে পূরণ করেন। ওডিআইতে একমাত্র বোলার হিসেবে তার আছে তিনটি হ্যাটট্রিক। টি-টোয়েন্টিতে আছে দুটি।
২০১১ বিশ্বকাপের দ্বিতীয় হ্যাটট্রিকটি করেন কেমার রোচ। নেদারল্যান্ডসের শেষ তিন ব্যাটসম্যান পিটার সিলার, বার্নার্ড লুটস ও বারেনড ওয়েস্টডিজক্সকে আউট করে ডাচদের ইনিংসের ইতি টেনে দেন। হ্যাটট্রিকসহ ২৭ রানে ছয় উইকেট নিয়ে ম্যাচসেরা হন রোচ।
২০১৫ ও ২০১৯ সালের বিশ্বকাপেও আসে দুটি করে হ্যাটট্রিক। ২০১৫ সালে প্রথমটি করেন ইংলিশ পেসার স্টিফেন ফিন ও পরেরটি করেন দক্ষিণ আফ্রিকার জেপি ডুমিনি। ফিনের হ্যাটট্রিক আসে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে। শেষ তিন বলে হাডিন, ম্যাক্সওয়েল ও জনসনকে ফিরিয়ে আর রান বাড়াতে দেননি। ফিন হ্যাটট্রিকসহ পাঁচ উইকেট পেলেও জিততে পারেনি ইংল্যান্ড। ১১১ রানে হেরেছিল তারা। একই বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে হ্যাটট্রিক করেন দক্ষিণ আফ্রিকার ডুমিনি। নিজের অষ্টম ওভারের শেষ বলে অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুসকে আউট করার পর নবম ওভারে প্রথম দুই বলে কুলাসেকারা ও থারিন্দু কৌশলকে আউট করে তুলে নেন হ্যাটট্রিক।
২০১৯ বিশ্বকাপে প্রথম হ্যাটট্রিকটি করেন মোহাম্মদ শামি। প্রতিপক্ষ ছিল আফগানিস্তান। এটি ছিল বিশ্বকাপের দশম হ্যাটট্রিক। আফগানিস্তানের জিততে প্রয়োজন ছিল ছয় বলে ১৬। একে একে আউট করেন মোহাম্মদ নবী, আফতাব ও মুজিবকে। সপ্তাহখানেক বাদে কিউই বোলারদের মধ্যে প্রথম বিশ্বকাপ হ্যাটট্রিক করেন ট্রেন্ট বোল্ট। লর্ডসে অস্ট্রেলিয়ার ওসমান খাজাকে ও স্টার্ককে বোল্ড করে বেহেরেন্ড্রফকে এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলে করেন হ্যাটট্রিক। ক্রিকেটের মক্কা বলে খ্যাত লর্ডসে এটি ছিল ওয়ানডেতে প্রথম হ্যাটট্রিক।
এবারের আসরে জসপ্রিত বুমরাহ, শাহিন শাহ আফ্রিদিসহ আরও কয়েকজন বোলার পরপর দুই বলে দুই উইকেট নিলেও করতে পারেননি হ্যাটট্রিক। এর মাঝে শাহিন শাহ ভারতের বিপক্ষেই দুই-দুইবার এই সুযোগ তৈরি করেছিলেন। এখন দেখার বিষয় ১৯৯৯ বিশ্বকাপ থেকে নিয়মিত