![টাঙ্গাইল শাড়ির জিআই স্বীকৃতি, জেলাবাসীর মিশ্র প্রতিক্রিয়া](uploads/2024/02/08/1707407759.Tangail.jpg)
শিল্প মন্ত্রণালয় থেকে টাঙ্গাইল শাড়িকে জিআই পণ্য হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। এতে টাঙ্গাইলের মানুষ উচ্ছ্বসিত। তবে মিশ্র প্রতিক্রিয়াও দেখা গেছে কিছু শাড়ি ব্যবসায়ীর মাঝে। কারণ হিসেবে তারা বলছেন, এটা আরও অনেক আগেই করা উচিত ছিল সরকারের। তাহলে নিজেদের জিনিস অন্য দেশ নিয়ে যাওয়ার পর উঠে পড়ে লাগতে হতো না। তবে তার পরও তারা খুশি যে, সরকার এই শাড়ির জিআই স্বীকৃতি দিয়েছে।
টাঙ্গাইল জেলা শাড়ি ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি রঘুনাথ বসাক বলেন, কাউকে দোষী করতে চাই না, তবে যখনই ভারত সরকার টাঙ্গাইল শাড়িকে জিআই স্বীকৃতি পাওয়ার খবর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তুলে ধরেছে তখনই বাংলাদেশ সরকারের টনক নড়েছে। এই টনক নড়া আরও আগে হওয়া উচিত ছিল, যখন অন্য দেশ স্বীকৃতি পেয়েছে তখনই কেন আবেদন করতে হবে। এই আবেদন তো সবার আগে আমাদের করার কথা। এখনো আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি পাইনি আমরা। আমাদের চাওয়া সরকার যেমন এক দিনের ব্যবধানে জিআই স্বীকৃতি দিয়েছে, তেমনি আন্তর্জাতিকভাবে যেন অতি দ্রুত স্বীকৃতি পায়।
টাঙ্গাইল চেম্বার অব কমার্সের পরিচালক পলাশ বসাক বলেন, বাংলাদেশ সরকার টাঙ্গাইল শাড়িকে জিআই স্বীকৃতি দেওয়ায় ধন্যবাদ জানাই। তবে এই স্বীকৃতি আরও আগে আমাদের পাওয়ার কথা ছিল, প্রশাসনের গাফিলতির কারণে আমরা এই স্বীকৃতি পাওয়ার ক্ষেত্রে পিছিয়ে গেছি। যদি প্রশাসন আগে আবেদন করত তাহলে আরও আগে স্বীকৃতি পেতাম। যেহেতু বাংলাদেশ সরকার স্বীকৃতি দিয়েছে এখন আন্তর্জাতিকভাবে যেন শিগগিরই স্বীকৃতি পাই সে ব্যবস্থা সরকারকে করতে হবে।
শিশুদের জন্য ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা ও জিআই স্বীকৃতি ভারতের হওয়ার প্রতিবাদে মানববন্ধন করার সমন্বয়ক মুঈদ হোসেন তড়িৎ বলেন, সরকার এই স্বীকৃতি কতটুকু আন্তর্জাতিকভাবে আদায় করতে পারবে তা বলা মুশকিল, সরকার শুধু এই জিআই স্বীকৃতি দিলেই হবে না, তাঁতিদের জন্য বিশেষ কিছু করতে হবে। তাঁতিদের জন্য পেনশনব্যবস্থা চালু করতে হবে। শুধু জিআই স্বীকৃতি পেয়ে কী হবে যদি তাঁতিরা না খেয়ে থাকেন? আসলে এই স্বীকৃতি আরও আগে পেতাম। যখন ভারত সব পণ্যের জিআই স্বত্ব নিচ্ছে ঠিক তখনই বাংলাদেশ সরকারের টনক নড়েছে। জেলা প্রশাসন কোনো গুরুত্ব দেয়নি। যার ফলে স্বীকৃতি পেতে সময় লেগে গেছে।
টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার আকুয়া গ্রামের তাঁত শাড়ি ব্যবসায়ী শহিদুল ইসলাম বলেন, জিআই স্বীকৃতি পাওয়ায় আমরা আনন্দিত। কিন্তু স্বীকৃতি ভারত আগে পেয়েছে, এটা সব থেকে বড় কষ্ট। ভারতের টাঙ্গাইল শাড়ির জিআই স্বত্ব বাতিলের দাবি জানাই।
দেলদুয়ার উপজেলার পাথরাইলের রিতু বসাক বলেন, ‘আমার বাব-দাদারা এই ব্যবসার সঙ্গে জড়িত, সেই ছোটকাল থেকে দেখে আসছি এই টাঙ্গাইলের শাড়ি তৈরি করতে। এখন ভারত তার জিআই স্বত্ব নিচ্ছে। আর আমাদের দেশের সরকার ন্যায্য অধিকার আদায় করতে অনেক সময় নিয়ে ফেলছে। তাই দাবি জানাই যেহেতু বাংলাদেশ সরকার স্বীকৃতি দিয়েছে, এখন আন্তর্জাতিকভাবে যেন অতি দ্রুত স্বীকৃতি পায় সে ব্যবস্থা করতে।’
টাঙ্গাইল জেলা প্রশাসক কায়ছারুল ইসলাম বলেন, ‘জিআই স্বত্ব পাওয়ার আবেদন করার যে প্রক্রিয়া তাতে অনেক সময় লাগে। যার কারণে আমাদের আবেদন করতে সময় লেগে গেছে। আমরা গত ৬ ফেব্রুয়ারি আবেদন করেছি আর আজকে ৮ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ সরকার জিআই স্বীকৃতির জন্য গেজেট প্রকাশ করেছে। আমরা এখনো জিআই স্বত্ব পাইনি। এখন আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি পাওয়ার জন্য অপেক্ষা করছি।’
এমএ/