![বাবা মায়ের সঙ্গে ঈদ করতে অপেক্ষার প্রহর গুণছে সাজিদ!](uploads/2024/04/07/1712467246.sajid.jpg)
আর কয়েকদিন পরই মুসলমানদের ঘরে ঘরে খুশির বার্তা নিয়ে হাজির হবে পবিত্র ঈদুল ফিতর। ইতোমধ্যেই অনেকের বাবা-মা তাদের আদরের সন্তানদের নতুন পোশাক কিনে দিয়েছেন। ঈদের দিন সন্তানরা কি খাবে, আবার কি কি খেতে পছন্দ করে, সে প্রস্তুতিও সম্পন্ন করেছেন কেউ কেউ।
কিন্তু এবার ঈদে এখনো নতুন জামা কেনা হয়নি তিন বছরের শিশু সাজিদের! সে অপেক্ষায় রয়েছে তার বাবা কবে নতুন জামা কিনে নিয়ে আসবে, সঙ্গে আনবে লাচ্ছা সেমাই। আর মা আনবে খেলনা। সেই আশায় অপেক্ষায় পথ চেয়ে আছে ছেলে শিশু সাজিদ। কিন্তু তার সেই আশা পূরণ হওয়ার নয়। কারণ চলতি বছরের ১৭ মার্চ গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলায় গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে মারা যান তার বাবা মইদুল খাঁ ও মা নার্গিস খাতুন।
ছোট শিশুটি এখনো বাড়ির অঙিনায় গাড়ির শব্দ পেলে ছুটে চলে, এই বুঝি এলো তার মা-বাবা। কিন্তু তারা যে ফিরবেন না, জানে না শিশু সাজিদ। সাজিদ সিরাজগঞ্জ জেলার শাহজাদপুর উপজেলার বেড়াকোল গ্রামের খাঁ পাড়ায় ভাঙা ঘরে দাদি সাহানা খাতুনের সংসারে রয়েছে।
জানা যায়, সাজিদের মা-বাবা ঢাকায় পোশাক শ্রমিকের কাজ করতেন। সাজিদের দাদা বৃদ্ধ সাবেদ খাঁ ছেলের উপার্জনের টাকাতেই নাতিকে নিয়ে সংসার চালাতেন। বয়সের ভারে নুয়ে পড়া মানুষটি কর্মক্ষমতা হারিয়েছেন অনেক আগেই। বৃদ্ধ বয়সে নিজের সংসার আর নাতিকে পালার জন্য আবারও নতুন করে কাজ শুরু করেছেন। অন্যের জমিতে দিনমজুরের কাজ করে এখন সংসার চালাচ্ছেন।
সরেজমিনে, শাহজাদপুর উপজেলার গালা ইউনিয়নের খাঁ পাড়ায় গিয়ে দেখা হয় সাজিদের সঙ্গে। টিনের একটি ঘরে দাদির সঙ্গে রয়েছে সাজিদ। ঘরের চাল থাকলেও নেই জানালা। ঘরে আসবাবপত্র বলতে একটি মাত্র চৌকি। দাদির কোলে মন ভার করে আছে সাজিদ। সাজিদের দাদা কাজের খোঁজে বাইরে গেছে।
কথা হয় দাদি সাহানা খাতুনের সঙ্গে। তিনি জানান, নাতি বারবার শুধু বাবা-মার কথা বলে। ও বলে ‘ঈদে বাবা আসবে, আমার জন্য মাংস নিয়ে আসবে, মা আমার জন্য খেলনা আনবে আরও কত কি।’ আমি তখন মুখ লুকিয়ে কাঁদি। ছোট ছেলেটি তাই দেখে আমার থেকে দূরে গিয়ে মন ভার করে বসে থাকে। প্রতিবেশী অনেক ছোট ছেলেমেয়েরা সাজিদকে বলে তোর বাবা-মা মারা গেছে। কিন্তু এগুলো সে বুঝতেই চায় না। ছোট এই অবুঝ শিশুকে নিয়ে আমি কি করব। আমার দুই সন্তানের মধ্যে মইদুল ছোট। বড় ছেলে নিজের সংসার নিয়েই থাকেন, আমাদের দেখে না। গত তিন বছর ধরে ছোট ছেলেই আমাদের খরচ যুগিয়েছে। কোনো উপায় না পেয়ে এখন সংসার চালাতে বৃদ্ধ মানুষটি আবারও মাঠে ঘাটে কাজ শুরু করেছে।
প্রতিবেশী রমজান খাঁ বলেন, ‘এই পরিবার খুবই অসচ্ছল। ছেলের মৃত্যুর পর নাতিকে নিয়ে কোনোমতে দিন পার করছে। ঈদের আনন্দ আর কি, ঠিকমতো ইফতারি করতে পারেন না। গতকাল পানি দিয়ে ইফতারি করেছেন।’
সাজিদের দাদা সাবেদ খাঁ বলেন, ‘ছেলে ও ছেলের বউয়ের মৃত্যুর পর কোনো সহযোগিতা পাইনি। কয়েকদিন আগে একটি দলের পক্ষ থেকে কিছু টাকা পেয়েছি। সরকারিভাবে কোনো সহযোগিতা আসেনি। সরকার যদি আমাদের পাশে দাঁড়ায়, তাহলে নাতিকে নিয়ে এই বয়সে একটু বাঁচতে পারতাম।’
এ বিষয়ে শাহজাদপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. কামরুজ্জামান খবরের কাগজকে বলেন, ‘গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে নিহতদের পরিবারের বিষয়ে আমরা অবগত রয়েছি। ঈদ উপলক্ষে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রত্যেক পরিবারকে সহয়তা করা হবে।’
গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ দুর্ঘটনায় নিহত ১৪ জনের মধ্যে সিরাজগঞ্জ জেলারই পাঁচজন। শুধু মইদুল ও নার্গিসের পরিবারের অবস্থাই এমন নয়, নিহতদের সবার পারিবার অসচ্ছল। অসহায় এ মানুষগুলোর পাশে সরকার এগিয়ে আসবে এমনটাই প্রত্যাশা করছেন স্থানীয়রা।