রমজানে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সরবরাহ স্বাভাবিক ও মূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে ব্যবসায়ীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে দেশের শীর্ষ বাণিজ্য সংগঠন ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই)।
আসন্ন রমজানে নিত্যপণ্যের সরবরাহ স্বাভাবিক ও দাম স্থিতিশীল রাখার বিষয়ে মতবিনিময় সভায় এফবিসিসিআই সভাপতি মাহবুবুল আলম ব্যবসায়ীদের প্রতি এই আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘যারা অনৈতিকভাবে বাজারে সংকট তৈরি করবে আমরা তাদের সঙ্গে নেই।’
সোমবার (১৮ ডিসেম্বর) রাজধানীর মতিঝিলে এফবিসিসিআইয়ের সম্মেলন কক্ষে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, ‘ব্যবসায়ীরা দেশের প্রাণ। ব্যবসায়ীরা কর্মসংস্থান সৃষ্টি করছেন, তাই দেশ এত দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। একটি ইন্ডাস্ট্রি গড়ে তোলার জন্য ৪৩টি সংস্থা থেকে লাইসেন্স নিতে হয়। তার পরও ব্যবসায়ীরা দেশের জন্য, রাষ্ট্রের জন্য ব্যবসার কার্যক্রম পরিচালনা করেন। কিন্তু দুঃখজনক ব্যাপার হলো, ব্যবসায়ীদের এত কষ্ট সত্ত্বেও দু-একজন ব্যবসায়ীর অসততার কারণে পুরো ব্যবসায়ী সমাজের বদনাম হচ্ছে। কোনো ব্যবসায়ী বাজারে নিত্যপণ্যের সরবরাহ ব্যাহত করতে চাইলে এ ব্যাপারে এফবিসিসিআইয়ের আপত্তি আছে।’
মাহবুবুল আলম আরও বলেন, ‘যারা অনৈতিকভাবে বাজারে সংকট তৈরি করবে আমরা তাদের সঙ্গে নেই। ব্যবসায়ীদের কেউ অসাধু বলুক, সিন্ডিকেট করা হচ্ছে এমন কোনো কথা উঠুক, তা আমরা শুনতে চাই না। আমরা চাই ব্যবসায়ীরা ব্যবসা করুক। কোনো সমস্যা হলে সমাধানের উদ্যোগ নেওয়া হবে। কিন্তু আমাদের কোনো বদনাম হোক, তা আমরা চাই না।’
তিনি বলেন, ‘আমরা ব্যবসায়ীদের কথা শুনেছি। এলসি খোলা নিয়ে জটিলতা আছে। এটি নিয়ে আমরা কথা বলছি। প্রয়োজনে আরও কথা বলব। মন্ত্রণালয়ের ব্যাপারে কথা উঠেছে। কিন্তু আমি মনে করি এটির আগে যেসব মন্ত্রণালয় বাজারের সঙ্গে সম্পর্কিত তাদের মধ্যে সমন্বয় হওয়াটা বেশি জরুরি।’
এ সময় খেজুরসহ ফলমূল নিয়ে ভ্যাট-ট্যাক্সজনিত সমস্যা সমাধানে এফবিসিসিআই আন্তরিকভাবে কাজ করছে বলেও জানান সভাপতি মাহবুবুল আলম। বাজার পরিস্থিতি পর্যালোচনায় জেলা প্রশাসকের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করতে জেলা চেম্বারগুলোর প্রতি আহ্বানও জানান তিনি।
এফবিসিসিআইয়ের সিনিয়র সহসভাপতি মো. আমিন হেলালী বলেন, ‘ভবিষ্যতে আরও বেশি স্টেকহোল্ডার নিয়ে এ ধরনের মতবিনিময় সভা করবে এফবিসিসিআই। প্রয়োজনে সেমিনারের আয়োজন করা হবে।’ তবে নিত্যপণ্যের মূল্য ও সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে সবাইকে দায়িত্বশীল হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
সভায় উন্মুক্ত আলোচনায় নিজ নিজ অবস্থানের কথা তুলে ধরেন মিল মালিক, আড়তদার, পাইকারি ও খুচরা প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা।
কাঁচামাল আড়তদার মালিক সমিতির সভাপতি ইমরান মাস্টার বলেন, ‘সুষ্ঠু বিপণনব্যবস্থার অভাবে বাজারে এ ধরনের অস্থিতিশীল অবস্থার সৃষ্টি হয়।’ খুচরা ব্যবসায়ীদের ওপর নিয়ন্ত্রণ রাখার জন্য তার সমিতির কাছে জবাবদিহির বিধান চান তিনি। তবে আগামী রমজান শীত মৌসুমে হওয়ায় বাজারে শাকসবজির সংকট সৃষ্টি হবে না বলে মনে করেন তিনি।
বাংলাদেশ লবণ মিল মালিক সমিতির সভাপতি নূরুল কবির জানান, কুয়াশা ও ঠাণ্ডাজনিত কারণে লবণ উৎপাদন একটু ব্যাঘাত ঘটলেও বড় কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে বাজারে লবণের সরবরাহ স্বাভাবিক থাকবে।
খাদ্যনিরাপত্তার অজুহাতে বাজারে খোলা তেল বিক্রির চেষ্টা চলছে বলে অভিযোগ করেন বাংলাদেশ পাইকারি ভোজ্যতেল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি গোলাম মাওলা। খোলা বা লুজ তেল দীর্ঘদিন ধরে চললেও হঠাৎ এখন কেন তা বন্ধের আলোচনা চলছে, সে বিষয়ে সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তিনি।
আমলা নয়, ব্যবসায়ীদের এখন পলিসি নির্ধারণ করার সময় এসেছে বলে মন্তব্য করেন বাংলাদেশ রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির মহাসচিব ইমরান হাসান।
এলসি খুলতে ঝামেলা এবং ফিডের দাম না বাড়লে ব্রয়লার মুরগির দাম বাড়ার আশঙ্কা নেই বলে জানায় বাংলাদেশ পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশন। শতভাগ মার্জিন দিয়ে হলেও এলসি খুলতে চান তারা।
বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি মো. হেলাল উদ্দিন জানান, ভোগ্যপণ্যের জন্য আলাদা মন্ত্রণালয় গঠনের প্রয়োজন।
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. আব্দুল জব্বার মণ্ডল আসন্ন রমজানে নিত্যপণ্যের সরবরাহ ঠিক রাখতে ব্যবসায়ীদের প্রতি আহ্বান জানান।
সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন এফবিসিসিআইয়ের সহসভাপতি খায়রুল হুদা চপলসহ বিভিন্ন পরিচালক ও বিভিন্ন খাতের ব্যবসায়ী নেতারা।