দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনার ক্ষেত্রে বড় বাধা দুর্নীতি। দুর্নীতির কারণে একজন ব্যবসায়ীকে পদে পদে বাধার সম্মুখীন হতে হয়। এতে বেড়ে যাচ্ছে ব্যবসা পরিচালনা ব্যয়।
বুধবার (১৭ জানুয়ারি) বাংলাদেশ ব্যবসায় পরিবেশ-২০২৩-এর উদ্যোক্তা জরিপের ফলাফল প্রকাশ করেছে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। এ উপলক্ষে ধানমন্ডিতে সিপিডির কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ প্রতিবেদনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন সংস্থাটির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম।
জরিপের ফলাফলে জানানো হয়, শতভাগ বড় ব্যবসায়ীর জন্য প্রধান সমস্যা দুর্নীতি, মাঝারি ৬১ শতাংশ ব্যবসায়ী দুর্নীতিকে সমস্যা মনে করছেন। একই সঙ্গে ৫৬ শতাংশ ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী দুর্নীতিকে সমস্যা বলে চিহ্নিত করেছেন।
ছোট ছোট সরকারি সেবার ক্ষেত্রে ৮৫ শতাংশ ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন। এ ক্ষেত্রে বড় ব্যবসায়ীদের সমস্যা কিছুটা কম। একই সঙ্গে অদক্ষ আমলাতন্ত্রকে দ্বিতীয় সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করেছেন ব্যবসায়ীরা।
ব্যবসায়ীদের মতামতের ভিত্তিতে জরিপটি করেছে সিপিডি। মূলত, ২০২৩ সালে ব্যবসায় পরিবেশ কেমন ছিল, সেটা বিশ্লেষণ করার জন্য এই জরিপ পরিচালনা করা হয়। ২০২৩ সালের মে-জুলাই সময়ে চলেছে এই জরিপ কাজ।
এ জরিপ পরিচালনার ক্ষেত্রে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ এবং গাজীপুরের বিভিন্ন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের ৭১ জন শীর্ষ কর্মকর্তার মতামত নেওয়া হয়। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের (ডব্লিউইএফ) সহায়তায় এ জরিপ চালানো হয়। এ ছাড়া ডব্লিউইএফের ফিউচার অব গ্রোথ রিপোর্ট-২০২৩-এর বাংলাদেশ অংশের জন্য সিপিডি তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করেছে। এ জরিপে ব্যবসা-বাণিজ্যে পরিচালনার ক্ষেত্রে ১৭টি সমস্যার কথা বলা হয়। এসব সমস্যা বিশ্বের অন্য দেশগুলোর জন্যও প্রযোজ্য। তবে কোনো কোনো দেশে এসব সমস্যার মাত্রা কমবেশি হয়ে থাকে।
সংবাদ সম্মেলনে খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, একজন ব্যবসায়ী জানিয়েছেন, তিনি একটি পরিষেবা সংযোগ নিতে আবেদন করলে তার কাছে বিপুল পরিমাণ ঘুষ চাওয়া হয়। এত বেশি পরিমাণ ঘুষ চাওয়া হয়েছিল, সেটা তার পরিকল্পিত বিনিয়োগের সমপরিমাণ। বড় ব্যবসায়ীরা কোনো না কোনোভাবে ঘুষ-দুর্নীতি সামলে নিতে পারলেও ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের কাছে এটি বড় একটি সমস্যা।
খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেমের মতে, ঘুষ-দুর্নীতি বন্ধসহ ব্যবসা-বাণিজ্যের সমস্যা সমাধানে রাজনৈতিক শীর্ষ পর্যায়ে সদিচ্ছার প্রতিফলন আছে। নির্বাচনি ইশতেহারেও এ বিষয়ক অঙ্গীকার করা হয়েছে। এর বাস্তবায়ন দরকার।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ব্যবসা-বাণিজ্যের পরিবেশ বিচারে দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশ তলানিতে আছে। ভিয়েতনাম, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ডসহ এশিয়ার প্রতিদ্বন্দ্বী দেশগুলোর তুলনায়ও বেশ পিছিয়ে আছে দেশটি।
ব্যবসা-বাণিজ্যের পরিবেশের উন্নতি করতে সিপিডি ১০টি সুপারিশ করেছে। এগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো ব্যবসা-বাণিজ্যের পরিবেশের উন্নতিতে বিভিন্ন সরকারি কার্যালয়ের ১০০ দিন, ১ বছর, ৩ বছর ও ৫ বছরের পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করতে হবে। একই সঙ্গে ন্যায়পাল কার্যালয় স্থাপন, সীমিত সময়ের জন্য খাতভিত্তিক কিছু কমিশন গঠন, যেমন ব্যাংক, শেয়ারবাজার, নিয়ন্ত্রক সংস্থার সংস্কার; একটি সমন্বিত আর্থিক লেনদেন খাত প্রতিষ্ঠা; সরকারি কেনাকাটা ব্যবস্থা আধুনিক করা ইত্যাদি।