উৎপাদন খরচের তুলনায় লাভ বেশি হওয়ায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলায় উচ্ছের চাষ বেড়েছে। উপজেলার ধরখার ইউনিয়নের বনগজ গ্রামে ৪০ হেক্টর জমিতে এবার সবজির আবাদ হয়েছে। তার মধ্যে ৩০ হেক্টর জমিতে উচ্ছে চাষ হয়েছে।
তিতাস নদীর তীরে ৩০ শতকের জমিতে অন্য সবজির পাশাপাশি উচ্ছে চাষ করেছেন কৃষক হানিফ মিয়া। অনুকূল আবহাওয়া ও রোগবালাই না থাকায় তার জমিতে এবার উচ্ছের ভালো ফলন হয়েছে।
হানিফ মিয়া জানান, উচ্ছে চাষ করতে তার সব মিলিয়ে খরচ হয়েছে ২২ হাজার টাকা। পাইকারদের কাছে প্রতি কেজি উচ্ছে ৪৫ থেকে ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছেন। এখন পর্যন্ত ৪৫ হাজার টাকা বিক্রি করেছেন। আরও ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকার উচ্ছে বিক্রি করতে পারবেন বলে তিনি আশাবাদী।
অপর এক কৃষক শানু মিয়া বলেন, ‘লাভবান হওয়ায় শীতকালে এখানকার সবাই তাদের ফসলি মাঠে নানা ধরনের সবজি চাষ করেন। হানিফের মতো গ্রামের অনেকই এবার সবজির পাশাপাশি উচ্ছে চাষ করেছেন। উচ্ছের ফলন ভালো হওয়ায় সবাই লাভবান হয়েছেন। চাহিদা বেশি থাকায় পাইকাররা খেত থেকেই উচ্ছে কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। কুমিল্লা, হবিগঞ্জ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকেও পাইকাররা এখানে আসছেন।’
পৌর শহরের সড়ক বাজারের আড়তদার লোকমান মিয়া জানান, বনগজসহ আশপাশের এলাকায় নানা ধরনের সবজির পাশাপাশি উচ্ছে চাষ করেন স্থানীয় কৃষকরা। স্থানীয় বাজার ছাড়াও বাইরে থেকেও পাইকাররা এসে খেত থেকেই উচ্ছে কিনে নিয়ে যাচ্ছেন।
উপজেলার ধরখার ইউনিয়নের সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মুহাম্মদ হুমায়ুন কবির বলেন, ‘ধরখার ইউনিয়নের বনগজ গ্রামের ৩০ হেক্টর জমিতে উচ্ছে চাষ করা হয়। এখানে উচ্ছে চাষ করতে প্রতি বিঘা জমিতে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা খরচ হয়। এতে ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকার উচ্ছে উৎপাদিত হয়। খরচ বাদ দিয়ে প্রতি বিঘা জমি থেকে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা লাভ করতে পারেন কৃষকরা। এখানকার কৃষকরা উন্নত জাতের উচ্ছে বীজ জমিতে রোপণ করেন। জমিতে প্রথমে চার থেকে পাঁচটি চাষ দিতে হয়। তারপর টিএসপি সার, জিপসাম, বোরন সার প্রয়োগ করে সেচ দিয়ে জমিটি প্রস্তুত করা হয়। তারপর আবার চাষ দিয়ে বীজ বপন করতে হয়। আমরা কৃষি অফিস থেকে পরামর্শ দিয়ে তাদের সহযোগিতা করি। নভেম্বরে জমিতে উচ্ছের বীজ বপন করতে হয়। তারপর জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত উচ্ছের ফলন হয়।’
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তানিয়া তাবাসুম বলেন, ‘উপজেলার ধরখার ইউনিয়নের বনগজ ব্লকে ৪০ হেক্টর জমিতে এবার সবজির আবাদ হয়েছে। তার মধ্যে কৃষকরা ৩০ হেক্টর জমিতে উচ্ছে চাষ করেছেন। প্রতি বিঘা জমি থেকে কৃষকরা ৬০ মণ উচ্ছে পেয়ে থাকেন। স্থানীয় বাজারে উচ্ছের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। যে কারণে পাইকাররা জমি থেকেই ৪৫ টাকা কেজি দরে কৃষক থেকে উচ্ছে কিনে নিচ্ছেন। আমাদের সহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেওয়া আছে সব সময় কৃষকদের পাশে থেকে সার্বিক সহযোগিতা করার জন্য।’
আখাউড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. হিমেল খান বলেন, ‘উচ্ছে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। নিয়মিত এ সবজি খেলে ওজন কমার পাশাপাশি শরীরের হৃদযন্ত্র ভালো থাকে। ডায়াবেটিসও দূর করতেও সাহায্য করে। চর্মরোগের জন্য উপকারী। খাদ্যের ভারসাম্য বজায় রাখতেও সাহায্য করে এ তেঁতো সবজি।’