উচ্চ মূল্যস্ফীতি কমাতে ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে সরকারকে সহযোগিতা করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। অবৈধ মজুতদারি ঠেকাতে বাজার ব্যবস্থাপনা ও সরবরাহ চেইন ঠিক রাখতে নিয়মিত নীতিনির্ধারণী পরামর্শ দিয়ে সরকারকে সহযোগিতা করার কথা বলেছেন তারা।
বুধবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর চেম্বার ভবনে মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ (এমসিসিআই) আয়োজিত মধ্যাহ্ন ভোজপূর্ব আলোচনায় বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু এমপিকে সহযোগিতার কথা জানান ব্যবসায়ীরা।
প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের চেয়ারম্যান ও সিইও আহসান খান চৌধুরী মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সরকারকে সহযোগিতার কথা বলেন। এ বিষয়ে ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে কোনো সহযোগিতা চাইলে দিতে প্রস্তুত আছেন বলে জানান তিনি।
জবাবে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘বড় ব্যবসায়ী এবং ভোগ্যপণ্য আমদানিকারকরা নিজেরা ন্যায্যমূল্যে বিক্রির ব্যবস্থা করতে পারেন। এ ক্ষেত্রে সরকার ব্যবসায়ীদের আর্থিক নীতি সহায়তাসহ নানা সহযোগিতা দেবে। এ ছাড়া করপোরেট সোশ্যাল রেসপন্সিবিলিটি বা সিএসআর তহবিল ব্যবহার করেও ব্যবসায়ীরা মূল্যস্ফীতি কমাতে সরকারকে সহযোগিতা করতে পারেন।’
প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, ‘আসছে রমজান মাসে ব্যবসায়ীরা ন্যায্যমূল্যে নিত্যপণ্য সরবরাহ করতে পারেন, এক প্যাকেট খেজুর বা ইফতার বিতরণ করতে পারেন। সারা দেশে না হলেও রাজধানী ও আশপাশের শ্রমঘন এলাকাগুলোতে এটি করা যেতে পারে। তা হলেও মূল্যস্ফীতির নেতিবাচক প্রভাব স্বল্প আয়ের মানুষগুলোকে খুব একটা ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারবে না বলে মনে করেন মন্ত্রী।’
এমসিসিআই কর্তৃক আয়েজিত এই অনুষ্ঠানে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রীর কাছে ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ ব্যবসার পরিবেশ আরও সহজীকরণের দাবি জানান। ব্যবসায়ীরা এ সময় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বিভিন্ন দপ্তরের সমস্যাগুলোও প্রতিমন্ত্রীর নজরে দিয়ে সেগুলো সমাধানের প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন।
বেসরকারি খাতের শীর্ষ ব্যবসায়ীদের নিয়ে গঠন করা ‘কাউন্সিল’ পুনরায় সক্রিয় করার প্রস্তাব করেন ছোট ও মাঝারি শিল্প উদ্যোক্তাদের সংগঠন নাসিবের সভাপতি মির্জা নুরুল গনি শোভন। তিনি বলেন, সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদের সময় এ ধরনের কাউন্সিল গঠন করা হয়েছিল। তিনি এটি পরে আর কাজ করেনি। ওই কমিটি এখন থেকে যাতে সক্রিয় ভাবে কাজ করতে পারে সে জন্য বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তিনি।
এমসিসিআই সভাপতি কামরান টি রহমান তার বক্তব্যে বলেন, ব্যবসা আরও সহজীকরণের উদ্যোগ নিতে হবে। ট্রেড লাইসেন্স নবায়ন এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে নীতি সহায়তা উদারীকরণ করা দরকার। তা না হলে অনেক ব্যবসায়ী চলমান অর্থনৈতিক সংকট থেকে বেরুতে পারবে না।
এমসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি ব্যারিস্টার নিহাদ কবির অভিযোগ করে বলেন, একটি ব্যবসায়ী গ্রুপকে ট্রাইব্যুনাল থেকে একটি রায়ে সামান্য কর অব্যাহতি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সংশ্লিষ্ট এনবিআর কর্মকর্তারা সেটিও মানতে চান না।
এমসিসিআইর জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি হাবিবুল্লাহ এন করিম বলেন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ডব্লিউওটিও সেল আরও শক্তিশালী করার প্রয়োজন। শুধু আমলা বা সিভিল সার্ভেন্ট দিয়ে হবে না। এই সংস্থায় বাইরে থেকে দক্ষ লোক নিয়োগ করা যেতে পারে।
তিনি বলেন, কিছু দেশ আমাদের রপ্তানিতে ডাম্পিং ও অ্যান্টি ডাম্পিং শুল্ক আরোপ করায় স্থানীয় অনেক শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে ব্যবসায়ী ও এমসিসিআই পরিচালক শামীম এ হক বলেন, এন্টি ডাম্পিং শুল্কের কারণে পাট ও পাটজাত পণ্যের স্থানীয় শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এটি রোধে ব্যবস্থা করতে হবে।
বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (বেসিস) সভাপতি আলমাস কবির বলেন, রপ্তানি আয় নিয়ে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যে বড় গরমিল রয়েছে। এ ছাড়া অনেক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান উচ্চ করের ভয়ে রপ্তানি আয় দেশে আনেন না। তারা এ অর্থ বিদেশেই রেখে দেন।
তিনি জানান, এখাতে ১৫ শতাংশ কর আদায় করে সরকার। এই কর অব্যাহতি দেওয়া হলে আরও রপ্তানি আয় দেশে আসবে বলেও তিনি জানান। আলমাস কবির বলেন, আইটি ও আইটি সার্ভিস খাতে আরও কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা সম্ভব হবে।