ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া স্থলবন্দরের ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট দিয়ে যাত্রী পারাপার বেড়েছে। প্রতিদিন গড়ে ১ হাজারের বেশি যাত্রী বন্দরের এ চেকপোস্ট দিয়ে পারাপার হচ্ছে।
উন্নত যোগাযোগব্যবস্থা ও যাতায়াতে সময় ও খরচ সাশ্রয়ী বিধায় ভারতগামী পাসপোর্টধারী যাত্রীরা এ ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট ব্যবহার করছেন। তবে যাত্রী পারাপার বাড়লেও সেবার মান বাড়েনি। জরাজীর্ণ ইমিগ্রেশন ভবনেই চলছে যাত্রী সেবার কাজ। পর্যাপ্ত যাত্রী ছাউনি না থাকায় যাত্রীদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা রোদ-বৃষ্টি উপেক্ষা করে খোলা আকাশের নিচে দাঁড়িয়ে থেকে ইমিগ্রেশন কাজ সম্পন্ন করতে হয়।
আখাউড়া স্থলবন্দর শুল্ক স্টেশন সূত্র জানায়, ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের জানুয়ারি পর্যন্ত আখাউড়া ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট দিয়ে যাত্রী পারাপার করে ১ লাখ ১৯ হাজার ৩৯০ জন। এর মধ্যে ভারতে গিয়েছে ৮১ হাজার ১৬০ জন ও বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে ৩৮ হাজার ২৩০ জন। এতে ভ্রমণ কর বাবদ সরকারের রাজস্ব আয় হয় ৮ কোটি ১১ লাখ ৬০ হাজার ৫০০ টাকা।
সিলেট থেকে আসা মীরা নামের এক যাত্রী বলেন, ‘ক্যানসারের চিকিৎসার জন্য ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে ভারত যাচ্ছি। ট্রেন যোগাযোগ ভালো হওয়ায় বাড়ি থেকে যাতায়াত সুবিধা অনেক বেশি। এ রুট ব্যবহার করলে আগরতলা থেকে অল্প সময়ের মধ্যে ভারতের অন্য রাজ্যে যাওয়া যায়। তা ছাড়া সেখানে অভ্যন্তরীণ বিমান ভাড়াও অনেক সাশ্রয়ী।
ঢাকার যাত্রী প্রবাস চৌধুরী জানান, প্রতি বছরে একবার হলেও পরিবার নিয়ে এ বন্দর দিয়ে ভারতের আগরতলায় বেড়াতে যান। আগরতলায় অভ্যন্তরীণ বিমান ভাড়া অনেক সাশ্রয়ী। সেখানে রেল ও সড়ক যোগাযোগ এখন অনেক উন্নত। তাই প্রতিবার এ পথ বেছে নেন।
চট্টগ্রাম থেকে আসা হান্নান সরকার বলেন, ‘উৎসব পার্বণে ছুটি পেলেই ভারতে ঘুরতে যাই। সময় কম লাগার কারণে বরাবরই আমরা আখাউড়া চেকপোস্ট ব্যবহার করি। সেখানে কেনাকাটা করার পাশাপাশি পাহাড়ি রাজ্যগুলোর বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান আমরা ঘুরে দেখি। তা ছাড়া আগরতলায় বাংলা ভাষাভাষীর বসবাস হওয়ায় অনেক স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি।’
অনিমেষ সরকার নামে অপর এক যাত্রী বলেন, ‘চিকিৎসার জন্য বছরে অন্তত ৩ থেকে ৪ বার ভারতে যেতে হয়। সময় ও দূরত্ব কম হওয়ায় আমি এই চেকপোস্ট দিয়ে যাতায়াত করি। তা ছাড়া আগরতলার চেয়ে আখাউড়া অনেক কম সময়ের মধ্যে ইমিগ্রেশন কাজ শেষ করা যায়। কোনো ঝামেলা পোহাতে হয় না।’
আখাউড়া স্থলবন্দরের আমদানি-রপ্তানিকারক অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘ভ্রমণ, চিকিৎসা, ব্যবসা, শিক্ষাসহ স্বজনদের সঙ্গে দেখা করতে প্রতিদিন কয়েক শ যাত্রী এই পথ দিয়ে পারাপার হচ্ছেন। এখন ঢাকা থেকে মাত্র আড়াই ঘণ্টায় ট্রেনে করে আখাউড়ায় পৌঁছানো যায়। তা ছাড়া চট্টগ্রাম ও সিলেটের সঙ্গে রেল ও সড়কপথে যাতায়াত সহজ ও অর্থ সাশ্রয়ী হওয়ায় যাত্রীরা অন্য বন্দর ও আকাশ পথ ব্যবহার না করে আখাউড়া পথে চলাচল করছেন। যাত্রীদের জন্য বন্দরে প্যাসেঞ্জার টার্মিনালসহ অন্য সুযোগ-সুবিধা আরও বাড়াতে হবে।’
আখাউড়া স্থলবন্দরের সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি হাসিবুল হাসান বলেন, ‘ভারতের উত্তর পূর্বাঞ্চলীয় পাহাড়ি রাজ্যগুলোর সঙ্গে যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম আখাউড়া স্থলবন্দর। এ বন্দরের ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট দিয়ে ক্রমেই বাড়ছে যাত্রী পারাপার। বন্দরের চেকপোস্ট পার হলেই ত্রিপুরা রাজ্যেরে রাজধানী আগরতলা। শহরের কাছেই বিমানবন্দর ও রেলস্টেশন। তা ছাড়া আমাদের তুলনায় তাদের অভ্যন্তরীণ বিমান ভাড়াও কম। তাই চিকিৎসা ও ভ্রমণপিপাসু যাত্রীরা এ বন্দরকে বেছে নেন।’
চেকপোস্টের ইমিগ্রেশন ইনচার্জ ও পুলিশ পরিদর্শক হাছান আহাম্মদ জানান, এই চেকপোস্ট দিয়ে গড়ে প্রতিদিন ৮০০ থেকে ১ হাজার যাত্রী পারাপার করেন। বাংলাদেশ ও ভারতের যাত্রীদের সুবিধার্থে ইমিগ্রেশন পুলিশের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হয়। তাই প্রতিদিনই যাত্রী পারাপার বাড়ছে। এই ইমিগ্রেশনে অবকাঠামোগত কিছু সমস্যা আছে। সমাধান হলে যাত্রী পারাপার আরও বাড়বে।
স্থলবন্দরের শুল্ক স্টেশনের রাজস্ব কর্মকর্তা আব্দুল কাইয়ুম তালুকদার বলেন, ‘বর্তমানে ভারত ভ্রমণে প্রাপ্তবয়স্কদের ১ হাজার টাকা, শিশুদের ৫০০ টাকা ভ্রমণ কর পরিশোধ করতে হয়। যা গত ১ জুলাই থেকে কার্যকর হয়েছে। সময় কম ও সাশ্রয়ের জন্য উভয় দেশের যাত্রীরা আখাউড়া চেকপোস্ট ব্যবহার করেন।’