দেশের উত্তরাঞ্চলের অন্যতম বড় সবজি বাজার বগুড়ার মহাস্থানহাটে সরবরাহ বাড়ার পাশাপাশি সংরক্ষণের কোনো ব্যবস্থা না থাকায় কমেছে শীতকালীন সব সবজির দাম। চাষিরা বলছেন, সবজি বিক্রি করে তাদের উৎপাদন খরচই উঠছে না।
দেড় মাস আগে যে শিম প্রতি কেজি বিক্রি হয়েছে ২০০ টাকা, সে শিম এখন পাইকারি বিক্রি হচ্ছে ১৫ টাকা কেজি। মুলা বিক্রি করে চাষিদের লোকসান হচ্ছে কেজিতে ১৫ টাকা। দুই সপ্তাহ আগে প্রায় আড়াই কেজি ওজনের একটি বাঁধাকপি ১৫ থেকে ১৬ টাকা দরে বিক্রি হলেও এখন একই পরিমাণ কপি বিক্রি করতে হচ্ছে ৯ টাকায়।
মহাস্থানহাট এলাকায় বিশেষায়িত কোনো হিমাগার না থাকায় বছরের এ সময়ে সাধারণত শীতের সবজির দাম কিছুটা কমে যায়, তবে এ বছর উৎপাদন খরচের তুলনায় দাম কমেছে অনেক বেশি। সে কারণে চাষিদের লোকসানের পরিমাণ বেড়েছে।
বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার হাজরাবাড়ি গ্রাম থেকে মহাস্থানহাটে ১৪ মণ মুলা আনেন আবু হাসান। বাজারে নিয়ে আসতে প্রতিমণ মুলায় ৭০ টাকা ভ্যান ভাড়া দিতে হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার সকালে কথা হয় তার সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘১০০ টাকা মণ দাম বলেছেন একজন পাইকার। প্রথমে না বললেও পরে তাকেই দেওয়ার কথা ভাবছি; কিন্তু তার দেখা পাচ্ছি না। ভ্যান ভাড়া বাদ দিলে প্রতিমণ মুলার দাম হয় ৩০ টাকা তবুও মুলা বিক্রি করতে পারছি না। মৌসুমের শুরুর দিকে প্রতিমণ মুলা বিক্রি করেছি ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ টাকায়; কিন্তু মঙ্গলবারের বাজার অনুযায়ী প্রতিমণে তার লোকসান হবে ৫০০ টাকা।
বগুড়ার সদর উপজেলার মহিষবাথান গ্রাম থেকে প্রায় আড়াই মণ টমেটো এনেছেন জাফর মিয়া। তিনি বলেন, ‘গরম পড়ায় টমেটো দ্রুত পেকে যাচ্ছে। সেজন্য বাজারে বিক্রির জন্য নিয়ে এসেছি। কয়েকজন পাইকার ১৫ টাকা কেজি বলায় তাদের কাছে বিক্রি করিনি; কিন্তু এখন দেখছি আমার মতো আরও অনেকেই টমেটো নিয়ে আসছেন। এক মাস আগেও আমি এ হাটে প্রতিমণ টমেটো বিক্রি করেছি ১ হাজার ২০০ টাকায় আর এখন পাইকারি ব্যবসায়ীরা ৪৫০ টাকা মণের বেশি দাম দিচ্ছেন না।’
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের প্রাথমিক হিসাবে বলা হয়েছে, মহাস্থানহাট এলাকায় কোনো বিশেষায়িত হিমাগার না থাকায় শীতকালীন সবজি জাতভেদে ১০ শতাংশ পর্যন্ত নষ্ট হয়। টমেটোর মতো দ্রুত পচনশীল সবজিগুলো আরও বেশি নষ্ট হয়।
হাটে কথা হয় শিবগঞ্জ উপজেলার পুনরোটিকা গ্রামের আরেক সবজি চাষি রাশেদুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি বিক্রির জন্য দুই থেকে আড়াই কেজি ওজনের ৪০০টি বাঁধাকপি নিয়ে এসেছেন। ক্রেতা না থাকায় অন্যদের মতো তিনিও পাইকারদের অপেক্ষায় আছেন। তিনি বলেন, ‘মৌসুমের শুরুর দিকে সবজি আনার সঙ্গে সঙ্গেই বিক্রি হয়ে যেত আর এখন পাইকারদের জন্য বসে থাকতে হয়। ৪ থেকে ৫ দিন আগেও একই বাঁধাকপি বিক্রি করেছি ১৪ থেকে ১৫ টাকায় আর এখন ৮ টাকাতেও বিক্রি করতে পারছি না।
শ্রী মদন চন্দ্র দাস সদর উপজেলার ধাওয়াকোলা গ্রামে এবার এক বিঘা জমিতে ফুলকপি চাষ করেন। ফুলকপি চাষে তার ১৭ হাজার টাকা খরচ হয়। প্রায় ১ লাখ টাকায় জমির ফুলকপি বিক্রি করেন। ফুলকপি বিক্রি করে লাভবান হওয়ায় পর আবারও ওই জমিতে ১২ হাজার টাকা খরচ করে ফুলকপি চাষ করেন। কিন্তু এখন যে দাম তাতে তার লোকসান হবে কমপক্ষে ৫ হাজার টাকা এমন দাবি করে তিনি বলেন, ‘মঙ্গলবার সকালে হাটে আনার পর একজন পাইকার ২ মণ ফুলকপির দাম বলেছেন ৬০০ টাকা। এ দরেই দিতে চাই কিন্তু এখন তাকে আর পাওয়া যাচ্ছে না। মৌসুমের শুরুতে প্রতিমণ ফুলকপি ১ হাজার ৬০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে অথচ এখন সেই ফুলকপি ৩০০ টাকা মণেও বিক্রি করতে পারছি না।’
কম দামে সবজি বিক্রি করতে হচ্ছে সে হতাশায় কয়েকজন চাষিকে বাজারে নিয়ে আসা অনেক সবজি ফেলে দিতে দেখা গেছে।