![মানিকগঞ্জে বছরে উৎপাদন হয় হাজার কোটি টাকার সরিষা](uploads/2024/03/18/1710749481.manukgonj.jpg)
স্বল্প খরচ ও অল্প সময়ে ফলন ভালো হওয়ায় সরিষা চাষে আগ্রহ বেড়েছে মানিকগঞ্জের কৃষকদের। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, চলতি মৌসুমে জেলায় ৭১ হাজার ২৫০ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ হয়েছে। আর সরিষা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে প্রায় ১ লাখ ১০ হাজার টন। যা থেকে তেল হবে প্রায় ৪ কোটি ৪০ লাখ লিটার। যার বাজারমূল্য প্রায় এক হাজার কোটি টাকা।
গত বছর মানিকগঞ্জে ৪৭ হাজার ৫৪৩ হেক্টর জমিতে ৭২ হাজার ২৬৫ টন সরিষা উৎপাদন হয়েছিল। এবার ৭১ হাজার ২৫০ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ হয়েছে। যা গত বছরের তুলনায় ২৩ হাজার ৭০৭ হেক্টর বেশি। সেই হিসাবে গত বছরের চেয়ে এবার জেলায় সরিয়ার আবাদ হয়েছে দেড় গুণ।
জেলায় সবচেয়ে বেশি আবাদ হয়েছে উন্নত জাতের সরিষা বারি-১৪। সরিষা উৎপাদনে সারা দেশের মধ্যে মানিকগঞ্জ জেলা তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে। সিরাজগঞ্জ প্রথম, দ্বিতীয় টাঙ্গাইল।
সম্প্রতি সরেজমিন বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, উপজেলাগুলোর অধিকাংশ খেতের সরিষা তোলার কাজ শেষ হয়েছে। তবে যারা দেরিতে আবাদ করেছিলেন তারাও খেতের সরিষা তুলে রোদে শুকিয়ে সেগুলো বিক্রির জন্য প্রস্তুত করছেন।
মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলার সট্টি গ্রামের মনোয়ার হোসেন আগের বছর তিন বিঘা জমিতে সরিষার আবাদ করলেও এ বছর তিনি করেছেন ৯ বিঘা জমিতে। নিজের জমি ও সেচ সুবিধা থাকায় বীজ, সার, কীটনাশক বাবদ বিঘাপ্রতি ব্যয় হয়েছে পাঁচ হাজার টাকার মতো। ফলনও পেয়েছেন প্রায় ৪৫ মণ। সব খরচ বাদ দিয়ে তার ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকা লাভ হবে।
ঘিওর উপজেলার মাইলাগী গ্রামের আব্বাস বেপারী বলেন, ‘এ বছর আমি সাড়ে ছয় বিঘা জমিতে বারি-১৪ জাতের সরিষা আবাদ করি। প্রথমদিকে, সরিষা গাছ অনেক সুন্দর হয়েছিল। কিন্ত কয়েকদিন টানা কুয়াশা ও বৃষ্টি হওয়ায় গাছগুলো হেলে পড়ে। যার কারণে আগের বছরের চেয়ে ফলন এই বছর কম পেয়েছি। প্রতি বিঘায় চার মণের মতো সরিষা পেয়েছি। বর্তমানে প্রতি মণ সরিষা ২ হাজার ৫০০ থেকে ২ হাজার ৮০০ টাকায় বিক্রি করছি। গত বছর যা বিক্রি করেছি প্রতি মণ ৩ হাজার থেকে ৩ হাজার ২০০ টাকায়।’
অন্যদিকে মানিকগঞ্জে সরিষার চাষ বাড়ায় সরিষা তেলের বাজারও বেশ বড় হয়েছে। সয়াবিন তেল যখন ১৭৩ টাকা লিটার বিক্রি হচ্ছে সেখানে মানিকগঞ্জে সরিষার তেল পাওয়া যাচ্ছে ২০০ টাকা লিটারে।
মানিকগঞ্জ জেলা শহরের দুধবাজার এলাকার তেলকলের মালিক দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘সয়াবিন তেলের দাম বৃদ্ধির ফলে দিন দিন সরিষার তেলের চাহিদা বাড়ছে। গত বছর প্রতিদিন গড়ে ৪০ থেকে ৫০ লিটার তেল বিক্রি হলেও এখন প্রায় ১৫০ লিটারের বেশি সরিষার তেল বিক্রি করি। তাছাড়া প্রতিদিন অনেক মানুষ আমাদের কাছে সরিষা নিয়ে আসে ভাঙানোর জন্য। এখন প্রতি লিটার সরিষার তেল ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।’
জেলা শহরের দুধবাজার এলাকার তেলকলের মালিক দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘সয়াবিন তেলের দাম বাড়ার কারণে দিন দিন সরিষার তেলের চাহিদা বাড়ছে। গত বছর প্রতিদিন গড়ে ৪০ থেকে ৫০ লিটার তেল বিক্রি হলেও এখন প্রায় ১৫০ লিটারের বেশি সরিষার তেল বিক্রি করি। প্রতি লিটার সরিষার তেল ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।’
পৌর এলাকার হিজুলী বাজারের জলিল অয়েল মিলের মালিক শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘বাজারে সয়াবিন তেলের দাম বেড়ে যাওয়ার পর থেকেই সরিষার তেলের চাহিদা বেড়েছে। এখন আমাদের মিলে প্রতিদিন মানুষ আসেন সরিষার তেল কেনার জন্য। পাইকারি বিক্রি করি ১৮০ টাকা ও খুচরা বিক্রি করি ২০০ টাকা কেজি দরে। প্রতিদিন আশপাশের গ্রাম থেকে প্রচুর মানুষ আমাদের কাছে সরিষা নিয়ে আসে ভাঙানোর জন্য।’
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আবু মো. এনায়েত উল্লাহ খবরের কাগজকে বলেন, ‘এ বছর অনাবাদি জমির পাশাপাশি চরাঞ্চলের পতিত জমিতেও সরিষার আবাদ হয়েছে। দেশে ভোজ্যতেলের আমদানি ৫০ ভাগ কমানোর জন্য কৃষি বিভাগ আমাদের নির্দেশনা দিয়েছে। সেজন্য কৃষক ভাইদের উন্নত জাতের সরিষা বিনা-১৪ রোপণের পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল। এ বছর মানিকগঞ্জে ৯৬ শতাংশ জমিতে উন্নত জাতের সরিষা আবাদ হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা এবার সরিষা আবাদের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পেরেছি। মানিকগঞ্জে গত বছরের তুলনায় ২৩ হাজার ৭০৭ হেক্টর বেশি জমিতে সরিষার আবাদ হয়েছে। আর এ বছর প্রায় ১ লাখ ১০ হাজার টন সরিষা পাওয়া যাবে। যার বাজারমূল্য প্রায় এক হাজার কোটি টাকার ওপরে।’