আমন মৌসুম শেষ হলেও ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ধান ও আতপ চাল সংগ্রহ করতে পারেনি সরকার। ফলে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আতপ চালের ঘাটতি ২ হাজার ৫০০ টনেরও বেশি এবং ধানের প্রায় ১ হাজার ৫০০ টন।
সরকারের বেঁধে দেওয়া দামের থেকে খোলাবাজারে ধানের দাম বেশি থাকায় সরকারি খাদ্যগুদামে ধান দিতে কৃষকদের অনাগ্রহ এবং বাজার থেকে বেশি দামে চাল কিনে কম দামে সরকারি গুদামে সরবরাহ করতে গিয়ে চালকল মালিকদের লোকসান গোনাকে লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হওয়ার মূল কারণ বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এবার আমন মৌসুমে প্রতি কেজি সিদ্ধ চালের দাম ৪৪ টাকা, আতপ চাল ৪৩ টাকা এবং ধান প্রতি কেজি ৩০ টাকা নির্ধারণ করে সরকার। ২০২৩ সালের ২৩ নভেম্বর আমন মৌসুমের ধান-চাল সংগ্রহ অভিযান শুরু হয়ে ২৮ ফেব্রুয়ারি শেষ হয়েছে। এ সময় ১৯ হাজার ৫৯ টন সিদ্ধ চাল সংগ্রহ করে খাদ্য বিভাগ। যা লক্ষ্যমাত্রার সমান। তবে ১ হাজার ৯৯৪ টন ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে সংগ্রহ হয়েছে মাত্র ৪৬৩ টন। আতপ চাল সংগ্রহের জন্য জেলার ৩০টি চালকলের সঙ্গে চুক্তি করে খাদ্য বিভাগ। তবে চালকল মালিকদের অনীহায় অভিযানের শুরতেই ভাটা পড়ে আতপ চাল সংগ্রহ কার্যক্রম। লোকসানের অজুহাতে তারা খাদ্য বিভাগে চাল দেয়নি।
আশানুরূপ চাল সংগ্রহ না হওয়ায় গত ১০ মার্চ পর্যন্ত আতপ চাল সংগ্রহের সময় বাড়ানো হয়। শেষ পর্যন্ত আতপ চাল সংগ্রহের পরিমাণ দাঁড়ায় ৬ হাজার ৮৬ টন। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২ হাজার ৬১৭ টন কম। অভিযান চলাকালে খোলাবাজারে আতপ চাল কেনাবেচা হয়েছে ৪৭ থেকে ৪৮ টাকা কেজি দরে।
আশুগঞ্জের মেঘনা নদীর তীরে অবস্থিত ধানের মোকাম থেকে ধান সংগ্রহ করে চাল তৈরি করেন চালকল মালিকরা। এই মোকামই জেলার ২৫০টি চালকলে ধানের জোগান দেয়। তবে পুরো আমন মৌসুমে মোকামে পর্যাপ্ত ধানের আমদানি না হওয়ায় দাম ছিল চড়া। ফলে চাহিদামতো ধান সংগ্রহ করতে পারেননি চালকল মালিকরা। আর খোলাবাজারে দাম বেশি হওয়ায় কৃষকরাও খাদ্যগুদামে ধান কম দিয়েছেন।
চালকল মালিকরা জানান, আমন মৌসুমের ধান থেকে ভালো আতপ চাল হয় না। ধান থেকে চালও পাওয়া যায় কম। এ ছাড়া এবার বাজারে পর্যাপ্ত ধানও পাওয়া যায়নি। ফলে আতপ চালের সংকট দেখা দেয়। এ ছাড়া ধানের দাম বেশি থাকায় সরকারি দরে খাদ্যগুদামে আতপ চাল দিতে গিয়ে চালকল মালিকদের লোকসান গুনতে হয়েছে। তাই চুক্তির সম্পূর্ণ চাল দিতে পারেনি চালকলগুলো।
হাসান ইমরান নামের এক চাল ব্যবসায়ী জানান, প্রায় ৪ হাজার টন আতপ চাল খাদ্যগুদামে সরবরাহের জন্য চুক্তি করেছিলেন তিনি। কিন্তু প্রায় ৫৫ শতাংশ চাল দেওয়ার পর বাকি চাল আর দিতে পারেননি। আশুগঞ্জ মোকামে ধান না পেয়ে উত্তরবঙ্গ থেকে ধান এনে আতপ চাল তৈরি করে গুদামে সরবরাহ করেছেন। তবে ধানের দর বেশি থাকায় সরকারের বেঁধে দেওয়া দামে চাল দিতে গিয়ে কেজিতে ৩ থেকে ৪ টাকা করে লোকসান গুনতে হয়েছে তাকে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া চালকল মালিক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ওবায়দুল্লাহ বলেন, ‘আশুগঞ্জ মোকামে ধান সংকটের কারণে অনেক চালকল বন্ধ রাখা হয়েছে। গুদামে চাল সরবরাহের জন্য আমাদের মোকাম থেকে চড়া দামে ধান কিনতে হয়েছে। লোকসান দিয়ে যতটুকু পেরেছি চাল সরবরাহ করেছি। তাই যেসব চালকল মালিক লোকসান দিয়ে চাল সরবরাহ করেছেন, তাদের প্রণোদনা দেওয়ার দাবি জানাই।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মুহাম্মদ আলমগীর কবির বলেন, ‘ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আতপ চালের ভোক্তা তেমন নেই। ফলে সংগ্রহ করা চাল চট্টগ্রাম অঞ্চলে পাঠানো হয়। এবার সময় বাড়িয়েও আমরা লক্ষ্যমাত্রার পুরো চাল সংগ্রহ করতে পারিনি। তবে যেটুকু ধান আমরা সংগ্রহ করেছি, সে ধান থেকে আতপ চাল তৈরি করা হচ্ছে। সাধারণত ধান থেকে আতপ চাল করা হয় না। তবে ঘাটতি পূরণের জন্য এমনটি করা হচ্ছে। এ ছাড়া সরকার উত্তরবঙ্গ থেকে অতিরিক্ত বরাদ্দ দিয়ে আতপ চাল সংগ্রহ করায় আমাদের বিতরণ কার্যক্রমে কোনো প্রভাব পড়বে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ধান সংগ্রহ না হওয়ায় কোনো সমস্যা হবে না। কারণ আমরা ধান সংগ্রহ করে সেগুলো থেকে চালই তৈরি করি। যেহেতু সিদ্ধ চাল লক্ষ্যমাত্রার শতভাগ সংগ্রহ হয়েছে- তাই কোনো সমস্যা হবে না। এ ছাড়া আমরা ধান সংগ্রহ করি মূলত কৃষককে ন্যায্যমূল্য দেওয়ার জন্য।’
সরকার প্রতি বোরো ও আমন মৌসুমে সারা দেশ থেকে সিদ্ধ ও আতপ চাল এবং ধান সংগ্রহ করে থাকে। চাল সংগ্রহের জন্য সংশ্লিষ্ট জেলার চালকলগুলোর সঙ্গে খাদ্য বিভাগের চুক্তি হয়। আর কৃষকদের থেকে নেওয়া হয় ধান।