![ধান সংগ্রহে লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি চট্টগ্রামে](uploads/2024/03/28/1711612698.Ctg.jpg)
বরাবরের মতো এবারও চট্টগ্রামে আমনের মৌসুমে ধান-চাল সংগ্রহে লক্ষ্যমাত্রা ছুঁতে পারেনি জেলা খাদ্যবিভাগ। ১০ দিন সময় বাড়ানোর পরও আতপ চালে লক্ষ্যমাত্রার ৩৯ শতাংশ ও সেদ্ধ চালে মাত্র ৫৪ শতাংশ অর্জন করা সম্ভব হয়েছে। অপরদিকে ধান সংগ্রহে লক্ষ্যমাত্রার ধারে-কাছেও যেতে পারেনি সরকারের এ দপ্তর। এ পর্যন্ত ধান সংগ্রহ হয়েছে লক্ষ্যমাত্রার মাত্র ১ দশমিক ২ শতাংশ।
২০২৩-২৪ আমনের মৌসুমে চট্টগ্রাম জেলা থেকে ১৫ হাজার ৮০৭ মেট্রিক টন আতপ চাল, ১ হাজার ৩০৬ মেট্রিক টন সিদ্ধ চাল ও ৬ হাজার ১৪৭ মেট্রিক টন ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। গত ২৮ ফেব্রুয়ারি ধান চাল সংগ্রহের সময় শেষ হয়। পরে আরও ১০ দিন সময় বাড়িয়ে ১০ মার্চ পর্যন্ত করা হয়। সময় বাড়ালেও সবমিলিয়ে মাত্র ৫ হাজার ৪২১ মেট্রিক টন আতপ চাল, ৭১১ মেট্রিক টন সেদ্ধ চাল এবং ৭০ দশমিক ৯৬০ মেট্রিক টন ধান সংগ্রহ করা সম্ভব হয়েছে।
গত বছরের ৭ ডিসেম্বর থেকে শুরু হয় ধান ও চাল সংগ্রহ কার্যক্রম। চট্টগ্রাম জেলা থেকে সংগৃহীত ধান ১৮টি সরকারি খাদ্য
গুদামে (সিএসডি ও এলএসডি) রাখা হবে। এ বছর প্রতি কেজি ধান ৩০ টাকা, সেদ্ধ চাল ৪৪ টাকা ও আতপ চাল ৪৩ টাকায় কিনেছে সরকার। জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় আতপ চাল সংগ্রহ করতে ১১৫টি মিল ও সেদ্ধ চাল সংগ্রহ করতে ৪টি মিলের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে।
জেলা খাদ্য অধিদপ্তর সূত্র জানায়, দেওয়ানহাট সিএসডিতে ১৭০ মেট্রিক টন, হালিশহর সিএসডিতে ৫০০ মেট্রিক টন, মিরসরাই এলএসডিতে ৫০ মেট্রিক টন, নাজিরহাট এলএসডিতে ২৮৫ মেট্রিক টন, হাটহাজারী এলএসডিতে ১২০ মেট্রিক টন, রাউজান এলএসডিতে ১২০ মেট্রিক টন, রাঙ্গুনিয়া এলএসডিতে ২ হাজার ২৬২ মেট্রিক টন, পটিয়া এলএসডিতে ৬৬৩ মেট্রিক টন, দোহাজারী এলএসডিতে ৬০ মেট্রিক টন, সাতকানিয়া এলএসডিতে ১৬০ মেট্রিক টন, লোহাগাড়া এলএসডিতে ৩০ মেট্রিক টন, চানপুরঘাট এলএসডিতে ৭৫৩ মেট্রিক টন ও আনোয়ারা এলএসডিতে ১০০০ মেট্রিক টন আতপ চাল সংগ্রহ করা হয়েছে।
এদিকে সীতাকুণ্ড এলএসডিতে ৫০ মেট্রিক টন, নাজিরহাট এলএসডিতে ৬১৬ মেট্রিক টন ও পটিয়া এলএসডিতে ৪৫ মেট্রিক টন সেদ্ধ চাল সংগ্রহ হয়েছে। তাছাড়া নাজিরহাট এলএসডিতে ৩৫ দশমিক ৪০০ মেট্রিক টন, রাউজান এলএসডিতে ৬ মেট্রিক টন ও বোয়ালখালী এলএসডিতে ২৯ দশমিক ৫৬০ মেট্রিক টন ধান সংগ্রহ করা হয়েছে।
জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা জানান, এ বছর লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ধান-চালের সংগ্রহের মাত্রা কম। লক্ষ্যমাত্রার মাত্র ৩৯ শতাংশ আতপ চাল, ৫৪ শতাংশ সেদ্ধ চাল সংগ্রহ করা সম্ভব হয়েছে। আর ধান সংগ্রহ হয়েছে মাত্র ১ দশমিক ২ শতাংশ। কাজেই ধান সংগ্রহের হার একেবারেই কম। কৃষকরা বাইরে বিক্রি করলে আরও ভালো দাম পান, তাই সরকার নির্ধারিত দরে ধান বিক্রি করার আগ্রহ দেখান না। এ কারণে প্রতিবছর ধান সংগ্রহ কার্যক্রম বাধা পায়।
রাইস মিল মালিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কৃষকরা ধানের দাম অনেক বাড়িয়েছেন। বছরখানেক আগেও ১ হাজার ২০০ টাকায় প্রতিমণ ধান বিক্রি করেছিলেন কৃষকরা। এখন বিক্রি করছেন ১ হাজার ৬৫০ টাকায়। কৃষকরা ভালো দাম পাচ্ছেন, তাই তারা সরকারনির্ধারিত দরে ধান বিক্রি করতে চান না। এদিকে ধানের দাম বেড়ে যাওয়ায় বর্তমানে চালের বাজারেও বস্তাপ্রতি ৬০ থেকে ১০০ টাকা হারে বেড়েছে।
চট্টগ্রাম জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ের সহকারী খাদ্য নিয়ন্ত্রক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মো. ফখরুল আলম খবরের কাগজকে বলেন, গত ২৮ মার্চ ধান-চাল সংগ্রহের সময় শেষ হওয়ার পর আরও ১০ দিন সময় বাড়ানো হয়। ফলে এ সময়টাতে আমরা ৭৫২ মেট্রিক টন আতপ চাল বেশি সংগ্রহ করতে পেরেছি। তবে ধান সংগ্রহটা কম। একদিকে ধান সংগ্রহের সময় কিছু নিয়মাবলি (যেমন- ধান পুষ্ট কি না, কত ভাগ চিটা আছে ইত্যাদি বিষয়) অনুসরণ করতে হয়। তার ওপর কৃষক যেখানে ভালো দাম পাচ্ছেন, সেখানে ধান বিক্রি করছেন। ফলে ধান সংগ্রহের পরিমাণটা কম।
চট্টগ্রাম মহানগর ও বিভিন্ন উপজেলায় এ বছর মোট ১ লাখ ৭৯ হাজার ৯৪০ হেক্টর জমিতে আমন ধানের চাষাবাদ করা হয়। সব জমির ফসলও কাটা সম্পন্ন। এসব জমিতে এবার ৫ লাখ ১৫ হাজার ৮৪৯ মেট্রিক টন ধান উৎপন্ন হয়েছে।