নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজার স্থিতিশীল রাখতে মাঠপর্যায়ের ব্যবসায়ীদের সক্রিয় থাকার আহ্বান জানিয়েছেন ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন দি ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) সভাপতি মাহবুবুল আলম।
শনিবার (৩০ মার্চ) রাজধানীর পুরান ঢাকার মৌলভীবাজার ব্যবসায়ী সমিতির কার্যালয়ে নিত্যপণ্য নিয়ে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এই কথা বলেন এফবিসিসিআই সভাপতি মাহবুবুল আলম।
তিনি বলেন, ‘আমরা ট্রিলিয়ন ডলারের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। দেশ হিসেবে ছোট হলেও আমাদের বাজার অনেক বড়। পার্শ্ববর্তী অনেক দেশ ও অঞ্চলের সঙ্গে আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্য রয়েছে। ব্যবসায়ীদের ঐক্যবদ্ধ থেকে দেশের অর্থনীতিকে এগিয়ে নিতে হবে।’
এবারের রমজানে পেঁয়াজ, আলু ইত্যাদি নিত্যপণ্যের দাম অনেকটা সহনীয় রয়েছে উল্লেখ করে কোরবানির ঈদ পর্যন্ত ডিউটি কমিয়ে রাখতে এনবিআরের সহযোগিতা চান মাহবুবুল আলম। সরবরাহ শৃঙ্খলা ঠিক রাখতে সঠিক ডাটাবেজ তৈরি অত্যন্ত জরুরি বলে মনে করেন তিনি।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে এফবিসিসিআইর সিনিয়র সহসভাপতি ও এফবিসিসিআই বাজার মনিটরিং কমিটির আহ্বায়ক মো. আমিন হেলালী বলেন, প্রতিবছর ২২ লাখ লোকের কর্মসংস্থান হয় দেশে, যার বেশির ভাগই বেসরকারি খাতের মাধ্যমে। দেশের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করার পাশাপাশি কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে বেসরকারি খাত। নিয়ম মেনে ব্যবসা বাণিজ্য পরিচালনা এবং নৈতিকভাবে ব্যবসা কার্যক্রম সম্পন্ন করার জন্য ব্যবসায়ীদের প্রতি আহ্বান জানান মো. আমিন হেলালী।
এফবিসিসিআইর সহসভাপতি রাশেদুল হোসেন চৌধুরী (রনি) বলেন, ব্যবসায়ীরা বিনিয়োগ করে ব্যবসা করার জন্য, চুরি করার জন্য না। ছোট ব্যবসায়ীরা অনেক সময় নীতিমালা বোঝেন না। কিন্তু ঢালাওভাবে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার আগে তাদের বুঝাতে হবে, আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দিতে হবে।
জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক বিকাশ চন্দ্র দাস বলেন, ‘আমরা আইনের দ্বারা পরিচালিত হই। ব্যবসায়দের হয়রানি করা উদ্দেশ্য নয়।’
এ সময় ব্যবসার যাবতীয় তথ্য ও কাগজপত্র সংরক্ষণ করতে ব্যবসায়ীদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক আবদুল জব্বার মণ্ডল বলেন, ক্যাশ ম্যামো ব্যবস্থা চালু করা গেলে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি অনেকাংশেই কমে আসবে।
ব্যবসায়ীরা সচেতন ও সোচ্চার হলে পণ্যে ভেজাল রোধ এবং দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখা যাবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
মৌলভীবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি হাজী মো. বশির উদ্দিনের সভাপতিত্বে এ সময় অন্যান্যের মধ্যে আরও উপস্থিত ছিলেন, এফবিসিসিআইয়ের পরিচালকরা, বাজার মনিটরিং কমিটির সদস্যরা, পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, সরকারি কর্মকর্তা ও ব্যবসায়ী নেতারা।
রাষ্ট্রদূত ও কূটনীতিকদের সম্মানে ইফতার মাহফিল
এদিকে রাজধানীর একটি হোটেলে বাংলাদেশে নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত ও কূটনীতিকদের সম্মানে ইফতার ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করেছে এফবিসিসিআই।
বাংলাদেশে নিয়োজিত বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূতদের উদ্দেশ্যে এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, ‘বাংলাদেশের সঙ্গে আপনার দেশের সেতুবন্ধন নির্মাণ এবং পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধির অনন্য সুযোগ রয়েছে। বাংলাদেশের ব্যবসায়ী সম্প্রদায় সমৃদ্ধ হচ্ছে। আমরা বিনিয়োগ ও বাণিজ্যের ক্রমবর্ধমান সুযোগ দেখতে পাচ্ছি। একসঙ্গে কাজ করার মাধ্যমে আমরা আমাদের অর্থনৈতিক সম্পর্ক জোরদারে এবং সমৃদ্ধ ভবিষ্যৎ গড়ে তুলতে সক্ষম হবো বলে আমি বিশ্বাস করি।’
বাংলাদেশে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্ভাবনার কথা তুলে ধরে বিদেশি বিনিয়োগ নিয়ে আসার ক্ষেত্রে বিভিন্ন দেশের অ্যাম্বাসেডর ও কূটনৈতিকদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে মাহবুবুল আলম বলেন, ‘বাংলাদেশে বিনিয়োগের বিশাল সম্ভাবনা কাজে লাগিয়ে লাভবান হতে পারেন বিদেশি বিনিয়োগকারীরা। কেউ বিনিয়োগ করতে চাইলে এফবিসিসিআই তাদের সব ধরনের সহযোগিতা প্রদান করবে বলেও আশ্বাস প্রদান করেন এফবিসিসিআই সভাপতি।’
ইফতার মাহফিলে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম (টিটু), বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ, পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন, এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি মাহবুবুর রহমান, কাজী আকরাম উদ্দিন আহমেদ, মীর নাসির হোসেন, এ কে আজাদ, শেখ ফজলে ফাহিম, মো. জসিম উদ্দিন, এফবিসিসিআইয়ের সিনিয়র সহসভাপতি মো. আমিন হেলালী, সহসভাপতি খায়রুল হুদা চপল, শমী কায়সার, রাশেদুল হোসেন চৌধুরী (রনি), মো. মুনির হোসেন ছাড়াও ভারত, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, নরওয়ে, শ্রীলঙ্কা, আর্জেন্টিনা, ডেনমার্কসহ বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত ও কূটনৈতিক অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।