ব্যাংকিং ও আর্থিক খাতে শৃঙ্খলা ও সুশাসন নিশ্চিত করতে সংস্কার প্রয়োজন। ব্যাংক ডাকাতি এবং ঋণ নিয়ে যারা আত্মসাৎ করেছে তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য সহায়ক পরিবেশকে আরও সুদৃঢ় ও জোরদার করা জরুরি হয়ে পড়েছে। কারণ অর্থনীতি সঠিক গতিতে চললেই সরকার তার কাঙ্ক্ষিত রাজস্ব আহরণ করতে পারবে। করমুক্ত আয় সীমা বাড়াতে হবে।
বৃহস্পতিবার (৪ এপ্রিল) রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁওয়ে অনুষ্ঠিত জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) পরামর্শক কমিটির ৪৪তম সভায় ব্যবসায়ীরা এসব দাবি করেন। তারা রাজস্ব আদায়-সংক্রান্ত নীতির কঠোর সমালোচনা করে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। আগামী অর্থবছরের বাজেটে বিনিয়োগবান্ধব রাজস্ব নীতি প্রণয়নের দাবি জানান।
প্রধান অতিথির বক্তৃতায় ব্যবসায়ীদের দাবি বিবেচনার আশ্বাস দিয়ে অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী বলেন, ‘বর্তমান সরকার ব্যবসায়ীবান্ধব। আগামী অর্থবছরের বাজেটে ব্যবসায়ীদের দাবির প্রতিফলন থাকবে। বাজেট একটি চলমান প্রক্রিয়া। এ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সরকার ব্যবসা ও বিনিয়োগ বাড়াতে নীতি প্রণয়ন করবে।’
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াসিকা আয়শা খানও আগামী বাজেটে ব্যবসায়ীদের দাবি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনার আশ্বাস দিয়ে বলেন, ‘আন্তর্জাতিক বাজারে টিকে থাকতে হলে রপ্তানি খাত উৎসাহিত করতে হবে।’ তিনি কর ন্যায়পাল নিয়োগের প্রস্তাব করেন।
এনবিআর এবং দেশের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন এফবিসিসিআই সভাপতি মাহবুবুল হক। উদ্বোধনী বক্তব্যে বর্তমান মূল্যস্ফীতি এবং নিম্ন আয়ের মানুষের প্রকৃত আয় বিবেচনায় নিয়ে আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে ব্যক্তি শ্রেণির করমুক্ত আয়ের সীমা বাড়িয়ে ৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা উন্নীত করার দাবি করেন মাহবুবুল হক। তিনি সিনিয়র সিটিজেন ও নারীদের জন্য করমুক্ত আয়ের সীমা ৫ লাখ টাকা নির্ধারণের সুপারিশ করেছেন।
লিখিত বক্তব্যে এফবিসিসিআই সভাপতি বৈশ্বিক প্রতিযোগিতা সক্ষমতা সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান দৃঢ় করতে ব্যবসায়িক খরচ (কস্ট অব ডুয়িং বিজনেস) কমিয়ে আনা, বিনিয়োগ সুরক্ষা, বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধি, সুষম বিনিয়োগ সহায়ক মুদ্রা ও শুল্ক ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা, শিপিং খরচসহ সব ধরনের পরিবহন খরচ হ্রাসের আহ্বান জানান।
সভাপতি বলেন, ‘ইকোনমিক ডিপ্লোমেসি তথা বাংলাদেশের বৈদেশিক মিশনগুলোকে দেশের রপ্তানি বাজার সম্প্রসারণে আরও কার্যকর ভূমিকা রাখতে হবে। এ ক্ষেত্রে কমার্শিয়াল কাউন্সিলরদের দায়িত্ব পালনের বিষয়ে জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে। পাশাপাশি রপ্তানি বাজারে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে নগদ সহায়তার বিকল্প সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। বিকল্প সহায়তা হিসেবে বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানি ও পরিবহন খাতে প্রণোদনা বা বিশেষ সুবিধা দিতে হবে।’
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) সভাপতি মোহাম্মদ আলী খোকন বলেন, ‘ব্যবসায়ীদের স্বার্থে এক্সপোর্ট ডেভেলপমেন্ট ফান্ডের (রপ্তানি উন্নয়ন তহবিল বা ইডিএফ) অর্থ বরাদ্দ বন্ধ রয়েছে। অবিলম্বে এ ফান্ড চালুর আহ্বান জানাই।’
বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন অনেক ব্যবসায়ী ডিসকাউন্ট রেটের ওপর থেকে ভ্যাট অব্যাহতি চান। ওমেন অ্যান্ড ই-কমার্স ফোরাম (উই) প্রেসিডেন্ট নাসিমা আক্তার নিশা দেশে ই-কমার্স খাত সম্প্রসারণের স্বার্থে ভ্যাট প্রত্যাহারের দাবি জানান।
রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (রিহ্যাব) সভাপতি ওয়াহিদুজ্জামান নিবন্ধন হার কমানোর দাবি জানিয়ে বলেন, ‘দেশে আবাসন শিল্প অনেক সমস্যার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এ খাতে জমি বা ফ্লাট নিবন্ধন ফি ১২ দশমিক ৫০ শতাংশ। যা প্রতিবেশী দেশের তুলনায় অনেক বেশি।’
বাংলাদেশ রিকন্ডিশন্ড ভেহিক্যালস ইম্পোটার্স অ্যান্ড ডিলার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বারভিডা) মোহাম্মদ হাবিব উল্লাহ ডন গাড়ি আমদানিকারকদের স্বার্থে অবচয় ব্যয় ৫০ শতাংশ করার দাবি জানান।
বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএ) চেয়ারম্যান মো. শাহীন আহমেদ ট্যানার্স মালিকদের জন্য ভ্যাট ৭ দশমিক ৫ শতাংশ এবং কর ২ দশমিক ৫০ শতাংশ করার দাবি জানান।
গাজীপুর মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (জিএমসিসিআই) সভাপতি মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম দেশে এখন সোনা রিফাইন করা যাচ্ছে উল্লেখ করে আন্তর্জাতিক দরে সোনা বিক্রির আহ্বান জানান।
এসিআই গ্রুপের চেয়ারম্যান এম আনিস উদ দৌলা এইচএস কোর্ড সঠিকভাবে নির্ধারণ করার আহ্বান জানান।
উত্তরা গ্রুপের চেয়ারম্যান মতিউর রহমান শিল্প মালিকদের চাহিদামতো গ্যাস সরবরাহের অনুরোধ জানান।
বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফেকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম ব্যবসাবান্ধব কর পদ্ধতি চালুর আহ্বান জানান।
এসিআই গ্রুপের চেয়ারম্যান এম আনিস উদ দৌলা পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে অনেক পণ্যের এইচএস কোর্ড সমস্যা রয়েছে। তিনি এইচএস কোর্ড সঠিকভাবে নির্ধারণ করার আহ্বান জানান।