![ঈদে বগুড়ায় ২৫ কোটি টাকার সেমাই বিক্রি](uploads/2024/04/17/1713343160.Bogura-business.jpg)
বগুড়ার সেমাইয়ের চাহিদা রয়েছে সারা দেশে। বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠনের সূত্র জানিয়েছে এবারে রমজান ও ঈদুল ফিতর ঘিরে এক হাজার টনের বেশি লাচ্ছা ও সাধারণ চিকন সেমাই বিক্রি হয়েছে। আর এতে কমপক্ষে ২৫ কোটি টাকার বাণিজ্য হয়েছে বলেও তারা জানিয়েছেন।
রমজানের মাস খানেক আগে থেকেই বগুড়ার ছোট-বড় দেড় শতাধিক প্রতিষ্ঠান সেমাই প্রস্তুত শুরু করে। এসব সেমাই বেশির ভাগই ঘিয়ে ভাজা। ডালডা ও সয়াবিন তেলে ভাজা সেমাইও তৈরি করা হয়।
ব্যবসায়ীরা জানান, সেমাই প্রস্তুতকারক বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানই মূলধন-সংকটে রয়েছে। এরপরও যে যার সাধ্যমতো সেমাইবাণিজ্য করেছেন।
হোটেল রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও আকবারিয়া গ্র্যান্ড হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্টের চেয়ারম্যান মো. হাসান আলী আলাল খবরের কাগজকে বলেন, ‘বগুড়ায় উৎপাদিত সেমাইয়ের চাহিদা সারা দেশেই আছে। এবারেও বগুড়াসহ সারা দেশেই এসব সেমাই বিক্রি হয়েছে। লাচ্ছা ও চিকন দুই ধরনের সেমাইয়ের চাহিদা ছিল। ভালোই বিক্রি হয়েছে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যানুসারে এবারে রমজান ও ঈদুল ফিতর ঘিরে এক হাজার টন লাচ্ছা ও সাধারণ চিকন সেমাই বিক্রি হয়েছে বলে ধারণা করা হয়েছে। এতে ২৫ কোটি টাকার বাণিজ্য হয়েছে বলে হিসাব কষা হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বগুড়ার সেমাইয়ের মান ভালো। গুণগতমানের, ভালো স্বাদের সেমাই বানাতে বিনিয়োগও বেশি করতে হয়। এখানকার বেশির ভাগ সেমাই ব্যবসায়ী মূলধন-সংকটে আছেন। এবারে পর্যাপ্ত ব্যাংক ঋণ না পাওয়ায় অনেক প্রতিষ্ঠান পরিকল্পনা অনুযায়ী সেমাই তৈরি করতে পারেনি। ঈদকে কেন্দ্র করে আমার প্রতিষ্ঠান এর আগের বছরগুলোতে সাধারণত ২০ থেকে ২৫ টন লাচ্ছা ও সাধারণ সেমাই তৈরি করে। এবার ব্যাংক থেকে সহযোগিতা না পাওয়ায় ৮ টন সেমাই তৈরি করা হয়েছে। প্রতিবছরই আকবরিয়ায় তৈরি লাচ্ছা সেমাই ঈদের আগে আমেরিকা ও মধ্যপ্রাচ্যেও যায়। গতবার ৫ টন পাঠানো হয়েছে। এবারে গেছে আড়াই টন।’
এবারে ঈদে আকবরিয়া হোটেল ও রেস্টুরেন্ট কাউন্টার থেকে লাচ্ছা সেমাই কিনেছে মো. শাহরিয়ার। তিনি খবরের কাগজকে বলেন, ‘আমি বগুড়া শহরের সূত্রপুর এলাকায় থাকি। আমার পরিবারে ঠিক কত বছর থেকে উৎসব বা পারিবারিক আয়োজনে আকবরিয়ায় তৈরি লাচ্ছা সেমাই খাওয়া হয় তা জানি না। তবে প্রতি ঈদেই লাচ্ছা কেনা হয়েছে আকবরিয়া থেকে।’
আকবরিয়ার মতোই আরেক জনপ্রিয় প্রতিষ্ঠান এশিয়া সুইটস। দই মিষ্টির পাশাপাশি এশিয়া সুইটসও প্রতিবারের মতো এবারের রমজান ও ঈদে বিভিন্ন ধরনের সেমাই তৈরি করে বিক্রি করেছে।
ক্রেতারা জানান, বগুড়ার লাচ্ছা সেমাই সুস্বাদু। বগুড়াসহ আশপাশের জেলাগুলোতেই শুধু নয়, সারা দেশেই চাহিদা আছে এশিয়ায় তৈরি লাচ্ছা সেমাইয়ের।
শহরের কবি নজরুল ইসলাম সড়কে এশিয়া সুইটসের শো-রুম থেকে সেমাই কিনেছে মঞ্জুরুল হক। তিনি বলেন, ‘দুপচাঁচিয়া উপজেলার তালোড়া এলাকা থেকে সেমাই কেনার জন্য বগুড়া শহরের কবি নজরুল ইসলাম সড়কের এশিয়া সুইটসে এসেছিলাম। আমার পরিবারের সবারই পছন্দ এশিয়ার তৈরি লাচ্ছা। মজার স্বাদের কারণে প্রতিবছরই আমি এশিয়া থেকে ঈদের আগে লাচ্ছা কিনি।’
অনেকে সেমাই নিজের পরিবারের জন্য কিনেছেন। অনেকে ঈদ উপলক্ষে অন্যকে উপহার দিতেও কিনেছেন।
এবি ব্যাংকের টঙ্গি শাখার ব্যবস্থাপক মাসুদ হোসেন রানা তার বন্ধুদের উপহার হিসেবে বগুড়ার এশিয়ার শো-রুম থেকে ৫০০ গ্রাম ওজনের ৫০ প্যাকেট লাচ্ছা কিনে দিয়েছেন।
এশিয়া সুইটসের ম্যানেজার মো. আরিফুজ্জামান বিপু জানান, ৯৫ কেজি ওজনের ১৭০ বস্তা ময়দার লাচ্ছা সেমাই তৈরি করেছে তাদের প্রতিষ্ঠান। ঘিয়ের আর ডালডায় যে লাচ্ছা তৈরি করা হয়েছে তা মান নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে কর্তৃপক্ষের বিশেষ নির্দেশনা রয়েছে।
তিনি আরও জানান, এবারে ঘিয়ের তৈরি লাচ্ছা বিক্রি হয়েছে প্রতি কেজি ১ হাজার ২০০ টাকায় আর ডালডায় তৈরি লাচ্ছার দাম ৬০০ টাকা।
ক্রেতাদের সুবিধার জন্য ৫০০ গ্রাম করে প্যাকেট তৈরি করা হয়েছে জানিয়ে আরিফুজ্জামান বিপু বলেন, এবারে রমজান ও ঈদ উপলক্ষে প্রতিদিন গড়ে ৫০০ কেজি লাচ্ছা বিক্রি করেছি। ঈদকে কেন্দ্র করে তৈরি করা লাচ্ছা ঈদের পরেও বিক্রি হচ্ছে।
আকবরিয়া, এশিয়া, শ্যামলী, রমনা, খাজাসহ ছোট বড় অন্তত ১৫০টি প্রতিষ্ঠান এবার যে লাচ্ছা তৈরি করেছে তার বেশির ভাগই গেছে উত্তরের জেলাগুলোর পাশাপাশি রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায়। যেসব প্রতিষ্ঠান পাইকারি লাচ্ছা বিক্রি করে তার মধ্যে অন্যতম শ্যামলী ও রমনা। রমনা বেকারি ম্যানেজার মো. বায়জিদ জানান, নজরুল ইসলাম সড়কে তাদের শো-রুম থেকে ঈদের আগে ৭ দিনে লাচ্ছা বিক্রি হয়েছে অন্তত ২০ কেজি। লাচ্ছার সঙ্গে সাধারণ চিকন সেমাই যেসব প্রতিষ্ঠান বিক্রি করেছে তার মধ্যে অন্যতম খাজা বেকারি। খাজা বেকারি সয়াবিনে তৈরি লাচ্ছা বিক্রি করছে ৫০০ গ্রাম ১৩০ টাকায় আর ডালডায় তৈরি ৫০০ গ্রামের প্যাকেট বিক্রি করছে ১২০ টাকায়।