ঢাকা ২১ আষাঢ় ১৪৩১, শুক্রবার, ০৫ জুলাই ২০২৪

‘চীনের জন্য উন্মুক্ত’ নীতিতে হাঙ্গেরি

প্রকাশ: ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ০১:০৩ পিএম
আপডেট: ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ০১:০৩ পিএম
‘চীনের জন্য উন্মুক্ত’ নীতিতে হাঙ্গেরি
পূর্ব হাঙ্গেরির ডেব্রেসেন এখন একাধিক নতুন কারখানার আবাসস্থল। ছবি: সংগৃহীত

হাঙ্গেরি তাদের দেশে চীনের বৈদ্যুতিক গাড়ির ব্যাটারি উৎপাদনের পরিকল্পনা করছে। চীনা প্রযুক্তির জন্য নিজেদের মনখোলা হওয়ার বিষয়ে খোদ দেশের ভেতরে প্রতিবাদ থাকলেও এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে চাইছে দেশটির সরকার। খবর বিবিসির।

বৈদ্যুতিক যানবাহনের ব্যাটারি তৈরির জন্য তার দেশের উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনা সম্পর্কে গত বছরের অক্টোবর মাসে চীনের রাজধানী বেইজিংয়ে হাঙ্গেরির পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, ‘আমরা বিশ্বনেতা হতে চাই না, কারণ বিশ্বনেতা চীন।’

বিবিসির খবরে বলা হয়, লিথিয়াম-আয়ন গ্লোবাল ব্যাটারি উৎপাদনে চীনের অবদান ৭৯ শতাংশ। এটি যুক্তরাষ্ট্রের ৬ শতাংশের তুলনায় অনেক এগিয়ে। হাঙ্গেরি বর্তমানে ৪ শতাংশ নিয়ে তৃতীয় স্থানে রয়েছে এবং শিগগিরই যুক্তরাষ্ট্রকে অতিক্রম করার লক্ষ্য রয়েছে দেশটির। বড় ধরনের কর্মপরিকল্পনার অংশ হিসেবে ইতোমধ্যে নির্মিত, নির্মাণাধীন রয়েছে অথবা নির্মাণের পরিকল্পনা করা হয়েছে- এমন কারখানার সংখ্যা ৩৬টি। সে কারণে হাঙ্গেরির পরিকল্পনা বা কথাগুলো অহেতুক গর্বের কোনো বিষয় ছিল না।

ভিক্টর অরবানের ফিডেজ (হাঙ্গেরিয়ান নাগরিক জোট) সরকার তাদের ‘প্রাচ্যের জন্য উন্মুক্ত’ নীতির কারণে প্রশংসা কুড়িয়েছে। যদিও রাশিয়ার সঙ্গে শক্তিশালী অর্থনৈতিক সম্পর্ক বজায় রাখার ক্ষেত্রে বুদাপেস্ট ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছে। তবে অর্থনৈতিক দিক থেকে আরও গুরুত্বপূর্ণ হলো চীন ও দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে দেশটির ক্রমবর্ধমান সম্পর্ক। বৈদ্যুতিক গাড়ি এই উদ্যোগের ভিত্তি এবং এ ক্ষেত্রে হাঙ্গেরি অন্য ইউরোপীয় ইউনিয়ন সদস্যদের অনুমোদনের পরিবর্তে তাদের ঈর্ষা লাভ করছে।

এই গ্রীষ্মের মধ্যে বুদাপেস্ট ও চীনা শহরগুলোর মধ্যে সপ্তাহে ১৭টি ফ্লাইট চলবে। ২০২৩ সালে ১ হাজার ৭০ কোটি (১০ দশমিক ৭০ বিলিয়ন) ইউরো বিনিয়োগের মাধ্যমে হাঙ্গেরিতে একক বৃহত্তম বিনিয়োগকারী হয়ে উঠেছে চীন।

হাঙ্গেরিতে চীনা বিনিয়োগের দিকে ইঙ্গিত দিয়ে বিবিসি বলছে, ডেব্রেসেনের রিফর্মড গ্রেট চার্চের টাওয়ার থেকে দক্ষিণে তাকালে দেখা যায়, চীনের সিএটিএল (কনটেম্পোরারি অ্যামপেরেক্স টেকনোলজি কোম্পানি লিমিটেড) কারখানার ধূসর বিল্ডিং ব্লকগুলো দিগন্ত বিস্তৃত হয়ে রয়েছে। বিশ্বের বৃহত্তম ব্যাটারি নির্মাতা প্রতিষ্ঠানটি পূর্ব হাঙ্গেরিতে একটি বিশাল প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছে।

গত বছর পর্যন্ত সূর্যমুখী ও পাকা তৈলবীজ, খেতগুলোকে সবুজ ও হলুদ রঙে রাঙিয়ে দিত। বর্তমানে সেখানে চীনের সেমকর্পের সেপারেটর ফয়েল কারখানা এবং চীনা ইকোপ্রো ক্যাথোড প্ল্যান্টও গড়ে উঠেছে।

ডেব্রেসেনের নতুন অল ইলেকট্রিক বিএমডব্লিউ কারখানার নির্মাণ সাইটে গেলে দেখা যাবে, আরেকটি চায়নিজ ব্যাটারি নির্মাতা ইভ এনার্জির কারখানা। ইতোমধ্যে দক্ষিণ হাঙ্গেরিতে বুলডোজার দিয়ে ৩০০ হেক্টর এলাকার মাটি তুলে ফেলা হয়েছে, যাতে করে অঞ্চলটিতে বিওয়াইডির বৈদ্যুতিক গাড়ির জন্য একটি চীনা ‘গিগাফ্যাক্টরি’ তৈরি করা যায়।

অন্যদিকে দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপানের কারখানাগুলো ইতোমধ্যেই এখানে গাড়ির ব্যাটারি বা ব্যাটারির যন্ত্রাংশ তৈরি করা শুরু করেছে।
সিএটিএলের হাঙ্গেরিয়ান বিভাগের নয়েমি সিডলো বলেছেন, ইউরোপের কেন্দ্র এবং স্বয়ংচালিত শিল্পের বৃহত্তম শিল্প কোম্পানিগুলোর কেন্দ্রে রয়েছে হাঙ্গেরি। তিনি আরও বলেন, হাঙ্গেরির একটি সুস্পষ্ট লক্ষ্য ছিল এবং স্থানীয় ও আশপাশের জাতীয় সরকারগুলোও তাকে সাহায্য করতে আগ্রহী ছিল। যে কারণে সেখানে বিশাল বিনিয়োগ সম্ভব হয়েছে।

খবরে বলা হয়, অরবানের ফিডেজ সরকার চীনা বিনিয়োগকে আকৃষ্ট করতে চাচ্ছে। চুক্তিটি সম্পন্ন করার জন্য সিএটিএল ৮০ কোটি (৮ বিলিয়ন) ইউরো কর প্রণোদনা এবং পরিকাঠামোগত সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, যা মোট ৭৩০ কোটি (৭ দশমিক ৩০ বিলিয়ন) ইউরোর বিনিয়োগের ১০ শতাংশেরও বেশি।

অন্যদিকে মধ্য ইউরোপকে থেসালোনিকি ও পাইরাস বন্দরের সঙ্গে সংযুক্ত করার উদ্দেশ্যে একটি দ্রুতগতির রেলপথে চীনা বিনিয়োগ যোগ করা এবং চীনা বিনিয়োগের জন্য বুদাপেস্টের উৎসাহ আরও স্পষ্ট।

এই সম্পর্কে দেশগুলোর পারস্পরিক অনুভূতি প্রায় একই বলে মনে হচ্ছে। চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং মে মাসে যখন ইউরোপে আসবেন, তখন তিনি ফ্রান্স, সার্বিয়া ও হাঙ্গেরি- মাত্র এই তিন দেশ সফর করবেন।

ভিক্টর অরবানের পরিকল্পনা কি ভুল?
এই কারখানা স্থাপন নিয়ে অনেকে ভিক্টর অরবানের সমালোচনাও করেছেন। সম্ভাব্য সমস্যা সম্পর্কে ফিডেজ নিয়ন্ত্রিত গণমাধ্যমগুলো প্রায় নীরব হলেও কারখানাগুলোর স্বচ্ছতার বিরুদ্ধে পরিবেশগত প্রতিবাদ বাড়ছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডেব্রেসেনের মেয়র লাসজলো পাপ বিবিসির সঙ্গে কথা বলতে রাজি হননি। অন্যদিকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও হাঙ্গেরিয়ান ইনভেস্টমেন্ট প্রমোশন এজেন্সির কাছে বারবার ই-মেইল করেও কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি।

বিরোধীদের অভিযোগ যে, প্রকল্পগুলোকে ‘বর্ধিত জাতীয় স্বার্থ’-এর মর্যাদা দেওয়া হয়েছে বলে স্থানীয়ভাবে সেগুলোকে চ্যালেঞ্জ করার কোনো উপায় নেই।

খবরে বলা হয়, ডেব্রেসেনের দক্ষিণে রয়েছে মাইকপারক্সের সুন্দর গ্রাম, যা নির্মাণের স্থানগুলোর দ্বারা ক্রমেই ছোট হয়ে উঠেছে।

স্থানীয় ক্যাম্পেইনার ইভা কোজমা বলেছেন, ‘আমাদের মধ্যে কেউই সবুজ (পরিবেশবান্ধব) গাড়ির বিরুদ্ধে নই, কিন্তু এটা অবিশ্বাস্যভাবে অন্যায় যে, তারা স্থানীয় লোকদের জিজ্ঞাসা না করেই এখানে এত বড় কারখানা তৈরি করেছে।’

হাঙ্গেরির অন্যান্য স্থানে ব্যাটারি কারখানার কারণে পরিবেশগত সমস্যাগুলোর দিকে ইঙ্গিত করে কোজমা বলেন, ‘এখানে প্রত্যেকে ক্যানসারে আক্রান্ত হলে এটিকে আমরা একটি সবুজ ভবিষ্যৎ বলতে পারি না, কারণ অন্যান্য শহরে যারা আমাদের চেয়ে ভাগ্যবান তারা তাদের সুন্দর সবুজ গাড়িতে ঘুরে বেড়াতে পারে।’

তবে সিএটিএলের নয়েমি সিডলো জোর দিয়ে বলেছেন যে, তার (ইভা কোজমা) ভয় ভিত্তিহীন।

এদিকে পানি সরবরাহও ডেব্রেসেনে একটি প্রধান সমস্যা। খবরে বলা হয়, গ্রেট হাঙ্গেরিয়ান সমভূমিতে অবস্থিত হওয়ায় ডেব্রেসেনে বৃষ্টিপাত হ্রাস পাচ্ছে, ভূগর্ভস্থ জলের সরবরাহ কমে গেছে এবং দানিয়ুব ও টিসজা নদীর মধ্য দিয়ে প্রবাহিত আরও বেশি পানি ধরে রাখার জন্য সরকারি পরিকল্পনা এখন পর্যন্ত যৎসামান্যই রয়ে গেছে।

ইলেক্ট্রোমোবিলিটি পরাশক্তি হয়ে ওঠার জন্য হাঙ্গেরি জলের পরাশক্তি হিসেবে তার মর্যাদা বিক্রি করে দেওয়ার ঝুঁকি নিয়েছে। এর আগে ১৯ শতকের মানচিত্রগুলোতে দেখা যায়, দেশের বেশির ভাগ অংশ পানিতে আচ্ছাদিত ছিল।

হাঙ্গেরির আরেকটি সমস্যা হলো শ্রম, যেখানে দেশটির বেকারত্ব হার ৫ শতাংশের নিচে রয়েছে।

সিএটিএলের একাই ৯ হাজার কর্মী প্রয়োজন, কিন্তু হাঙ্গেরির সরকার ‘অভিবাসীদের দূরে রাখুন’ স্লোগানে নির্বাচনে ক্ষমতায় আসে।

ডানপন্থি আওয়ার হোমল্যান্ড মুভমেন্ট সম্প্রতি ডেব্রেসেনে বিএমডব্লিউ কারখানা নির্মাণে নিযুক্ত তুর্কি শ্রমিকের সংখ্যা বৃদ্ধি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। অন্যদিকে সমালোচকরা আরও একটি বিষয়ে উদ্বিগ্ন। তাদের আশঙ্কা হলো সস্তা শ্রমিক, সস্তা জমি এবং সরকারের উদার প্রণোদনার কারণে হাঙ্গেরি চীনা ও দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় কোম্পানিগুলোর ‘দাস রাষ্ট্রে’ (সার্ভেন্ট স্টেট) পরিণত হবে।

এদিকে হাঙ্গেরির সরকারও স্বীকার করে, একটি ঝুঁকি রয়েছে যে মজুরি কম পাওয়া যাবে এবং দেশীয় গবেষণা ও উন্নয়ন প্রভাবিত হবে।

তবে দেশটির প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের রাজনৈতিক পরিচালক বালাজ অরবান বিবিসিকে বলেন, ‘আমাদের বিনিয়োগকারীদের বোঝাতে হবে, এখানে শুধু উৎপাদন করলে হবে না, গবেষণাও করতে হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা কীভাবে হাঙ্গেরিয়ান কোম্পানিগুলোর সঙ্গে তাদের গবেষণা একত্র করব, আগামী ১০ বছরের জন্য এটি আমাদের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।’

লাখ টাকার লটকন বিক্রির স্বপ্ন শ্রীপুরের জাকারিয়ার

প্রকাশ: ০৪ জুলাই ২০২৪, ০২:২০ পিএম
আপডেট: ০৪ জুলাই ২০২৪, ০২:২০ পিএম
লাখ টাকার লটকন বিক্রির স্বপ্ন শ্রীপুরের জাকারিয়ার
গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার তেলিহাটীর তালতলা গ্রামে লটকন বাগানে ডা. আবুল অফা জাকারিয়া। ছবি: সংগৃহীত

গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার তেলিহাটীর তালতলা গ্রামের চাষি ডা. আবুল অফা জাকারিয়া এবার লাখ টাকার লটকন বিক্রির স্বপ্ন দেখছেন। তার বাগানে ঘন সবুজ পাতার ভেতরে ডালপালা ফেটে বের হওয়া বোঁটায় ঝুলছে অসংখ্য রসালো লটকন। কোনো গাছে ঝুলছে সবুজ লটকন, আবার কোনো গাছে ঝুলছে হলুদ বর্ণের পাকা লটকন। স্থানীয়রা বলছেন, তাকে দেখে অনেকেই এলাকায় লটকনের বাগান করেছেন। আগামীতে তেলিহাটীর তালতলা লটকনের গ্রাম হিসেবে পরিচিতি লাভ করবে।

তিনি হোমিও চিকিৎসকের পাশাপাশি একজন সফল চাষি হিসেবেও এলাকায় তার পরিচিতি রয়েছে। নিজ জমিতে দুই যুগের বেশি সময় লেবু চাষ করেছেন। লেবুর ফলন ভালো হলেও উৎপাদন ব্যয়ের বিপরীতে ভালো দামে বিক্রি না হওয়ায় সাত বছর আগে লেবুগাছ কেটে ফেলেন। এরপর শুরু করেন লটকনের চাষ। নরসিংদী থেকে লটকনের চারা সংগ্রহ করে পরিচর্যা শুরু করেন। চার বছরের মাথায় ৫০০ কেজি লটকন উৎপাদন হয়। পরের বছর ৭০০ কেজি এবং চলতি বছর ১ হাজার কেজি ফলনের স্বপ্ন দেখছেন তিনি।

চলতি বছর প্রায় ১০০ লটকনগাছ থেকে লক্ষাধিক টাকা আয় করার স্বপ্ন দেখছেন আবুল অফা জাকারিয়া। পরিশ্রম ও পরিচর্যায় চার বছরের মাথায় ফলন পেতে শুরু করেন। এ বছর তিনি তৃতীয়বারের মতো ফলন পেতে যাচ্ছেন। তার বাগান দেখে আশপাশের এলাকার শতাধিক চাষি ইতোমধ্যে লটকনের চাষ শুরু করেছেন। লটকনচাষিরা মনে করেন, আগামীতে তেলিহাটীর তালতলা গ্রাম লটকনের গ্রাম হিসেবে পরিচিতি লাভ করবে।

এ বিষয়ে চাষি আবু ইউসুফ জানান, ডা. জাকারিয়ার বাগান দেখে উৎসাহিত হয়ে তিনি নিজেও লটকনের বাগান করেছেন। তালতলা গ্রামে লটকনের চাষ ভালো হয়। একসময় তালতলা গ্রাম লটকনের গ্রাম হিসেবে চিহ্নিত হবে।

কৃষি শ্রমিক রহমত আলী বলেন, ‘জাকারিয়া ভাই লটকনগাছ লাগানোর পর থেকে পরিচর্যা করছেন। ফলনের পর গাছের পাতা ফেলে দেন। তারপর সার, ওষুধ সব প্রয়োগ করেন। ফলনের আগে ডালপালা কাপড় দিয়ে ঘষামাজা করে দেন। এতে ভালো ফলন হয়।’

চাষি সাফায়েত হোসেন বলেন, ‘বাগানটা খুব সুন্দর। আমরা দেখতে আসি। এলাকা ও আশপাশের অনেকে দেখতে আসেন। অনেকে উৎসাহিত হয়ে বাগান করেছেন। অনেকে চাষের পদ্ধতি সম্পর্কেও জানতে আসেন।’

চাষি ডা. আবুল অফা জাকারিয়া বলেন, ‘আমি প্রথমে এ বাগানে ২৫০টি লেবুর গাছ লাগিয়েছিলাম। যখন দেখলাম ১০০ বস্তা লেবু বিক্রি করে বস্তাপ্রতি ১০০ টাকাও পাই না, তখন আমি লেবুগাছ কেটে লটকনগাছ লাগিয়েছি। এখন আমি লাভবান হচ্ছি। এ বছর ইতোমধ্যে একটি গাছ থেকে ২০ কেজি লটকন নামিয়ে ২ হাজার টাকায় বিক্রি করেছি। আগামী ১৫ দিন পর পুরোদমে লটকন পাকা শুরু হবে।’

তিনি বলেন, ‘সাত বছর আগে নরসিংদী থেকে লটকনের চারা নিয়ে আসি। প্রথমে ১০০, পরের বছর আরও ১০০ এবং সর্বশেষ আরও ১০০টি চারা আনি। এ বছর ১ হাজার কেজি ফল বিক্রি করতে পারব। দিন যত যাবে, ফলন তত বাড়বে। গাছ পরিপক্ব করতে যত্ন নিতে হয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘এ পর্যন্ত আমাকে দেখে কমপক্ষে ১০০ লোক লটকনের বাগান করেছেন। অনেকে পরামর্শ নেন। তারা বেশির ভাগ নরসিংদী থেকে লটকনের চারা নিয়ে এসেছেন। পরিশ্রম কম হলেও শিডিউল মেনে বাগানের পরিচর্যা, সার ও কীটনাশক প্রয়োগ করলে ভালো ফলন আসে।’

শ্রীপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ সুমাইয়া সুলতানা বলেন, ‘শ্রীপুর লটকন চাষের জন্য উপযোগী। এবার উপজেলায় ৮ একর জমিতে লটকনের চাষ হয়েছে। কৃষকদের পরামর্শ ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে লটকন চাষে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। কলমের মাধ্যমে চারা রোপণের জন্য উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে।’ সূত্র: বাসস

সোনারগাঁয়ে সবজি চাষে আগ্রহ বাড়ছে কৃষকদের

প্রকাশ: ০৪ জুলাই ২০২৪, ০২:১১ পিএম
আপডেট: ০৪ জুলাই ২০২৪, ০২:১১ পিএম
সোনারগাঁয়ে সবজি চাষে আগ্রহ বাড়ছে কৃষকদের
উৎপাদন খরচ কম হওয়ায় নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে চাষিরা ঝুঁকছেন সবজি চাষে, হচ্ছেন স্বাবলম্বী। ছবি: খবরের কাগজ

নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে বেড়েছে সবজি চাষ। গত বছরের চেয়ে এবার ৭ হাজার ৪২৭ টন বেশি সবজি উৎপাদিত হয়েছে এ উপজেলায়। উপজেলার ১০টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় কৃষিজমি বাদেও শিল্পকারখানার আঙিনায়, বাড়ির আঙিনায়, ভবনের ছাদেও চাষ হচ্ছে লাউ, জালি কুমড়া, ফুলকপি, পাতাকপি, পুঁইশাক, লালশাক, ঝিঙে, বেগুন, টমেটো, মরিচ, শিম, কলাসহ নানা প্রকারের সবজি। উৎপাদন খরচ কম হওয়ায় চাষিরা ঝুঁকছেন সবজি চাষে, হচ্ছেন স্বাবলম্বী।

কৃষক শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘সাত শতাংশ জমিতে ১ হাজার টাকা খরচ করে পুঁইশাক লাগিয়েছি। পরে সেগুলো ১০ হাজার টাকায় বিক্রি করেছি। এরপর লালশাক, ঢ্যাঁড়স, ফুলকপি, বাঁধাকপি চাষ করব। জমির আইলে পেঁপেগাছ ও কলাগাছ লাগিয়েছি। ১ হাজার টাকা খরচ করে ১০টি কলাগাছ লাগিয়েছি। এখন আর খরচ নেই, এখন প্রতিবছর ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা আসে।’

হামসাদি এলাকার কৃষক আব্দুল সালাম বলেন, ‘দুই বিঘা জমিতে সবজি চাষ করতে ৪০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে।‌ বিক্রি করেছি ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা। পুঁইশাক লাগিয়েছি আড়াই বিঘায়। এতে খরচ হয়েছে ৫০ হাজার টাকা। এখন পর্যন্ত বিক্রি করেছি ১ লাখ টাকারও বেশি। যদি জমিতে এক-দুই মাস দেরিতে পানি আসে, তবে আরও ৪০-৫০ হাজার টাকা বিক্রি করতে পারব। এর পরে আমন ধান চাষ করব।’

সনমান্দি এলাকার কৃষক জামান মিয়া বলেন, ‘সাড়ে চার বিঘা জমিতে পুঁইশাক চাষ করে এখন শাক কাটায় ব্যস্ত সময় পার করছি। যাত্রাবাড়ী পাইকারি কাঁচাবাজার আড়তে পুঁইশাক বিক্রি করতে নিয়ে যাব। সবজি চাষে প্রতি বিঘা জমিতে সিজনে ৪০-৫০ হাজার টাকা আসে। সবজির বাজার ভালো হলেও সবজির বীজ ও সারের দামে নিয়ন্ত্রণ নেই।’

বাড়িমজলিশ এলাকায় ছাদে কৃষিবাগান করেছেন জবরুল ইসলাম মন্টু। তিনি বলেন, ‘শখের বশে ড্রাগন ফলসহ বিভিন্ন প্রকার সবজি চাষ করেছি। এখন বাসায় সবজি কেনা লাগে না। আশপাশের ফ্ল্যাটগুলোতেও বিক্রি করতে পারি।’ 

সোনারগাঁ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আফরোজা সুলতানা জানান, উপজেলায় ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৪ হাজারে ৫৩৯ হেক্টর জমিতে সবজি উৎপাদন হয়েছিল ৭৭ হাজার ১৭৩ মেট্রিক টন। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৪ হাজার ৭০০ হেক্টর জমিতে সবজি উৎপাদন হয়েছে ৮৪ হাজার ৬০০ মেট্রিক টন। লাউ, ঝিঙে, জালি কুমড়া, টমেটো, বেগুন, করলা, পুঁইশাকসহ অন্য সবজিজাতীয় ফসল অল্প খরচেই চাষ করা যায়। তাই পারিবারিক চাহিদা মিটিয়েও ব্যবসায়িকভাবে সফল হন কৃষক। আর এ জন্যই সোনারগাঁয়ে বেড়েছে সবজি চাষ।

তিনি বলেন, ‘আমরা পারিবারিক পুষ্টিবাগান প্রকল্প থেকে সবজি চাষিদের সহযোগিতা করে থাকি। সরকার সারের বিক্রি মূল্য নির্ধারণ করে দিয়েছে। যদি কোনো দোকানদার বেশি দামে সার বিক্রি করেন, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমরা কৃষকদের নতুন নতুন জাতের সবজির উন্নত জাতের বীজ এনে দিই ও চাষের পরামর্শ দিয়ে থাকি।’

চট্টগ্রামে ভোগ্যপণ্যে অস্থিরতা: ব্যবসায়ীদের নানা ধরনের অজুহাত

প্রকাশ: ০৪ জুলাই ২০২৪, ০২:০৪ পিএম
আপডেট: ০৪ জুলাই ২০২৪, ০২:০৪ পিএম
চট্টগ্রামে ভোগ্যপণ্যে অস্থিরতা: ব্যবসায়ীদের নানা ধরনের অজুহাত
চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে মসলার আড়ত। ছবি: খবরের কাগজ

করোনা কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই শুরু হয় ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ। এর প্রভাব পড়ে বাংলাদেশসহ বিশ্ব অর্থনীতির ওপর। বাংলাদেশের বৈদেশিক বাণিজ্য ঘাটতি বেড়ে যাওয়ায় ডলারের বিপরীতে টাকার দরপতন হতে থাকে। মূল্যস্ফীতির কারণে লাগাম ছাড়া হয় ভোগ্যপণ্যের দাম। লাগামছাড়া হয় ভোগ্যপণ্যের বাজার। সেই থেকে বছরের পর বছর ভোগ্যপণ্যে বাড়তি দরের ঘানি টানছেন সাধারণ ভোক্তারা। আর ব্যবসায়ীরা রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, ডলারসংকট, ডলার রেটে তারতম্য, বিশ্ববাজারে মূল্যবৃদ্ধি, পরিবহন খরচ বৃদ্ধি, মজুরি বৃদ্ধি, কৃষকের মূল্যবৃদ্ধি, সরবরাহ কম, ভারত থেকে পণ্য আমদানি বন্ধ এবং আমদানিকারকের বাড়তি দরে পণ্য বিক্রি করায় দাম বাড়ে- এমন কিছু সুনির্দিষ্ট অজুহাতে ভোগ্যপণ্যের বাজার অস্থির করে রেখেছেন। 

এদিকে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন বলেছেন, ‘সুনির্দিষ্ট কিছু অজুহাতের ওপর ভিত্তি করে দাঁড়িয়ে আছে ভোগ্যপণ্যে অস্থিরতা। আমদানি মূল্যের চেয়ে কয়েক গুণ বাড়তি দামে পণ্য বিক্রি হয়েছে। সম্প্রতি ১ হাজার ৬০০ টাকার এলাচ ৩ হাজার টাকার বেশি দামে বিক্রি করার প্রমাণ মিলেছে খাতুনগঞ্জে। পেঁয়াজে ভালো ফলন হয়েছে। তবুও ভারত থেকে পেঁয়াজ আসছে না, সরবরাহ কম- এমন অজুহাতে দাম বাড়ানো হচ্ছে। আবার পেঁয়াজ আমদানির খবরে খাতুনগঞ্জে দাম কমে যাওয়ার চিত্রও দেখা গেছে। তখন আমদানি খরচ বাড়ার অজুহাত কোথায় যায়? তখন কী লোকসান হয় না? ভরা মৌসুমেও কেন চালের দাম বাড়তি থাকে। আলু, গম, চিনি, ডিমের দাম কেন বাড়তি? মুরগি, সবজি তো আমদানি হয় না। কেন বছরের পর বছর এসব পণ্যের দামে অস্থিরতা থাকে- সেটা খতিয়ে দেখা প্রয়োজন।’

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হতে না হতেই ২০২২ সালে খাতুনগঞ্জে মণপ্রতি সয়াবিন তেলে ৪০০ টাকা বেড়ে ৭ হাজার টাকায় বিক্রি হয়। পাশাপাশি মণপ্রতি ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা বেড়ে পামতেল ৬ হাজার ও সুপার পামতেল ৬ হাজার ৩০০ টাকায় বিক্রি হয়। অন্যদিকে গম মণপ্রতি ৫০ টাকা বেড়ে ১ হাজার ১৫০ টাকায়, চিনি মণপ্রতি ৪০ টাকা বেড়ে ২ হাজার ৬৮০ টাকায় বিক্রি হয়। বস্তাপ্রতি চাল আগের তুলনায় ১৫০ থেকে ২০০ টাকা বাড়তি দরেই বিক্রি হয়। খাতুনগঞ্জে দেশি মসুর ডাল ১১২ টাকা, পেঁয়াজ বিক্রি হয় ৪৮ টাকা, আদা ১৭০ টাকা, প্রতি মণ চিনি বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৬০০ থেকে ২ হাজার ৭০০ টাকায়। 

২০২৩ সালে ডলারসংকট, আমদানি খরচ বাড়ার অজুহাতে খাতুনগঞ্জে প্রতি মণ চিনিতে ৮০০ টাকা বাড়িয়ে ৪ হাজার ৬০০ টাকায় বিক্রি হয়। ওই বছর বাণিজ্য মন্ত্রণালয় খুচরা বাজারে প্রতি কেজি প্যাকেটজাত চিনি ১০৯ টাকা এবং খোলা চিনি ১০৪ টাকা নির্ধারণ করে দেয়। কিন্তু ব্যবসায়ীরা তা মানেননি। উল্টো সে সময় খুচরা বাজারে প্রতি কেজি চিনি ১৪০ টাকায় বিক্রি হয়। ওই বছর সরকার বোতলজাত তেলে লিটারপ্রতি ১২ টাকা বাড়ায়। তখন বোতলজাত প্রতি লিটার তেল ১৯৯ টাকায় বিক্রি হয়। 

চলতি বছরের ১ মার্চ থেকে সয়াবিন তেলের দাম লিটারপ্রতি ১০ টাকা কমানোর সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। কিন্তু এর প্রভাব ছিল না বাজারে। প্রতি লিটার সয়াবিন তেল ১৬৩ টাকায় বিক্রি হওয়ার কথা থাকলেও বিক্রি হয়েছে ১৭০ টাকার বেশি দামে। বর্তমানে পাইকারি বাজারে প্রতি মণ গম বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৩৮০ টাকা, প্রতি কেজি ভারতীয় চোরাই চিনি ১০৫ টাকা ও পরিশোধিত চিনি বিক্রি হচ্ছে ১১৮ টাকায়। চায়না আদা ২৪৫ টাকা, রসুন ১৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সব ধরনের চালে বস্তাপ্রতি দাম বাড়ে ১৫০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত। প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ ৮০ থেকে ৮৫, ভারতীয় পেঁয়াজ ৮০ থেকে ৯০ টাকায়। 

খুচরায় প্রতি কেজি চিনি মিলছে ১২২ থেকে ১২৫ টাকায়। খুচরায় প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৯৫ টাকায়। খুচরায় মোটা দানার মসুর ১১০ টাকা, চিকন মসুর ১৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অন্যদিকে প্রতি ডজন ডিম ১৬০ টাকায়, সব ধরনের সবজি ৫০ থেকে ৮০ টাকায় ও ব্রয়লার মুরগি মিলছে ১৭৫ টাকায়। 

চাক্তাই খাতুনগঞ্জ আড়তদার সাধারণ ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মহিউদ্দিন বলেন, ‘ভোগ্যপণ্যের বাজার তো ব্যবসায়ীরা ইচ্ছা করে বাড়িয়ে রাখেন না। আমরাও চাই বাজারদর নিয়ন্ত্রণে থাকুক, স্বাভাবিক থাকুক। বাজার দর ওঠা-নামা করলে আমাদের ব্যবসায় সমস্যা হয়। কিন্তু অনেক সময় আমদানি খরচ বাড়লে বাড়তি দরে পণ্য বিক্রি করেন, কৃষকরা দাম বাড়িয়ে দেন, পরিবহন মালিকরা ভাড়া বাড়িয়ে দেন। এসব কারণে ভোগ্যপণ্যের দাম বাড়ে।’ 

খাতুনগঞ্জের ভোগ্যপণ্য আমদানিকারক ও বিএসএম গ্রুপের স্বত্বাধিকারী আবুল বশর বলেন, ‘বিশ্ববাজারে ভোগ্যপণ্যের দর কমতির দিকে। যেমন: বর্তমানে গমের দাম নিম্নমুখী। তার ওপর ডলার রেটের প্রভাবটা এখন তেমন একটা দেখছি না। তার ওপর পণ্যের বেচাবিক্রিও তেমন নেই। কাজেই এখন পণ্যের দাম বাড়তি থাকার কথা না।’ 

ভোক্তারা বলছেন, করোনার আগেও পণ্যের দাম বাড়ত। কিন্তু তখন একটা সুনির্দিষ্ট পণ্যে সিন্ডিকেট বা দাম বাড়ানো হতো। কিন্তু করোনার পর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হয়। সে সুযোগে ডলারসংকট ও ডলার রেটের তারতম্যকে পুঁজি করে সব ধরনের ভোগ্যপণ্যে দাম বাড়ানোর অনুশীলন তৈরি হয়েছে। বর্তমানে ভোগ্যপণ্যের দাম বাড়ার পেছনে সিন্ডিকেটকেই দায়ী করছেন তারা। 

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয়ের উপপরিচালক ফয়েজ উল্যাহ বলেন, ‘আমরা প্রতিনিয়ত বাজার তদারকি করছি। অভিযোগের ভিত্তিতেও অভিযান পরিচালনা করছি। ব্যবসায়ীদের মধ্যে কারচুপি আছে। আমরা অভিযানে গেলে কাগজপত্র ঠিকমতো পাই না। আমাদের অভিযান অব্যাহত আছে। সবকিছু খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’

সৌদির গাড়িশিল্পে গতি বাড়ছে

প্রকাশ: ০৪ জুলাই ২০২৪, ০১:৪৩ পিএম
আপডেট: ০৪ জুলাই ২০২৪, ০১:৪৫ পিএম
সৌদির গাড়িশিল্পে গতি বাড়ছে
সৌদি আরবের দাম্মামের আইকনিক খোবার ওয়াটার টাওয়ার। ছবি: সংগৃহীত

সৌদি আরবের গাড়ি নির্মাণশিল্প উল্লেখযোগ্য প্রবৃদ্ধি অর্জন করছে। সরকারি উদ্যোগ, কৌশলগত ভৌগোলিক অবস্থান এবং উৎপাদন কেন্দ্র হয়ে ওঠার উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনায় ভর করে দেশটির অটোমোবাইল খাতের এই প্রবৃদ্ধি হয়েছে। এসব কারণ সৌদি আরবকে বিশ্ববাজারে গাড়ি নির্মাণশিল্পের একটি গুরুত্বপূর্ণ দেশে পরিণত করছে। খবর আরব নিউজের। 

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ব্যবস্থাপনা পরামর্শক সংস্থা বেইন অ্যান্ড কোম্পানির অংশীদার করিম হেনাইনের মতে, সৌদি আরবের এই প্রবৃদ্ধির পেছনের মূল কারণ হলো দেশটির একটি তরুণ জনসংখ্যা, বেশিসংখ্যক নারীচালক এবং প্রচুর প্রবাসীর আগমন। এর ফলে দেশটিতে বার্ষিক ৬ লাখের বেশি নতুন গাড়ি বিক্রি হয়।

হেনাইন আরব নিউজকে বলেন, বাজারটি দ্রুত বৃদ্ধির জন্য প্রস্তুত, অনেক পশ্চিমা প্রতিপক্ষকে ছাড়িয়ে গেছে। তিনি আরও বলেন, সৌদি আরবে যানবাহনের মালিকানার হার পশ্চিমা বাজারের তুলনায় বেশি। পরিবারের বৃহৎ আকার, কম উন্নত গণপরিবহন পদ্ধতি এবং ব্যক্তিগত গাড়ির ওপর নির্ভরতার মতো একটি শক্তিশালী সংস্কৃতির কারণে এই দেশটিতে গাড়িশিল্পের বিকাশ হচ্ছে।

অটোমোবাইলের আন্তর্জাতিক প্রদর্শনী অটোমেকানিকা রিয়াদ ও মেসে ফ্রাঙ্কফুর্ট মিডল ইস্টের শো ম্যানেজার অ্যালি হেফনির মতে, প্রধান বাণিজ্য রুটের সংযোগস্থলে সৌদি আরবের কৌশলগত ভৌগোলিক অবস্থান একটি আঞ্চলিক অটোমোবাইল হাব হিসেবে দেশটির মর্যাদাকে আরও বাড়িয়ে তুলছে। অ্যালি হেফনি আরব নিউজকে বলেন, সৌদি আরবের সরকার গাড়িশিল্পে সরাসরি বিনিয়োগের উদ্যোগ হিসেবে একটি অনন্য পদ্ধতি গ্রহণ করছে।

অ্যালি হেফনির মতে, সৌদি আরবের গাড়িশিল্পের অংশীজনেরা তাদের আন্তর্জাতিক সহযোগীদের মতো সক্রিয়ভাবে উদ্ভাবনী কার্যক্রম গ্রহণ, গবেষণা ও উন্নয়নে বিনিয়োগ এবং শিল্পের স্থায়িত্বকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে। বৈশ্বিক বাজারে দীর্ঘমেয়াদি কার্যকারিতা ও প্রতিযোগিতা নিশ্চিত করতে সৌদি সরকার এই গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপগুলো নিচ্ছে।

সৌদি আরবভিত্তিক সংবাদমাধ্যমটির খবরে বলা হয়, নকশা, উন্নয়ন ও উৎপাদন, সেই সঙ্গে বিতরণ, রক্ষণাবেক্ষণ ও মেরামত এবং কাস্টমাইজেশনকে অন্তর্ভুক্ত করে অটোমোবাইল খাত। খাতটি সৌদি আরবের উচ্চাভিলাষী লক্ষ্য ‘ভিশন ২০৩০’ অর্জনে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। হেনাইন উল্লেখ করেন, সৌদি আরব অটোমোবাইল উৎপাদন কেন্দ্র গড়ে তোলার একটি উচ্চাভিলাষী লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। এই লক্ষ্যে মূল সরঞ্জাম প্রস্তুতকারকদের পাশাপাশি টায়ার-১ (গাড়ির প্রধান উপাদান) সরবরাহকারীদের স্থানীয়ভাবে কার্যক্রম শুরু করার ক্ষেত্রে কীভাবে সুবিধা দেওয়া যায় সে বিষয়ে ইতোমধ্যেই চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে।

হেনাইন বলেন, শিল্পটি এখনো নবজাতক এবং এটি অন্যান্য প্রতিষ্ঠিত অটোমোবাইল উৎপাদন ক্লাস্টারগুলোর পরিপক্ব হতে কিছুটা সময় নেবে। তিনি আরও বলেন, স্বচালিত যানবাহন প্রযুক্তিতে প্রচুর বিনিয়োগ করছে সৌদি আরব। অদূর ভবিষ্যতে রোবোট্যাক্সি ও রোবোশাটল চালু করার পরিকল্পনা রয়েছে।

বেইন অ্যান্ড কোম্পানির নির্বাহী আরও বলেন, এই উদ্যোগগুলো অত্যাধুনিক অটোমোবাইল প্রযুক্তি গ্রহণ এবং একীভূত করার জন্য সৌদি আরবের আত্মত্যাগের দৃষ্টান্ত প্রদর্শন করে। এই উদ্যোগ দেশটিকে গাড়িশিল্পের ভবিষ্যতে বিশ্বব্যাপী নেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করছে।

ফক্সওয়াগেন মিডল ইস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ম্যাথিয়াস জিগলারের মতে, সৌদি আরবের মোটরগাড়িশিল্প উল্লেখযোগ্য পরিবর্তনের সম্মুখীন হচ্ছে। এই খাতের গতিশীলতাকে প্রভাবিত করে এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো বৈশ্বিক এসইউভি পছন্দের সঙ্গে সৌদি গ্রাহকদের বড় আকারের পরিবার কেন্দ্রিক সাত সিটের গাড়ির প্রতি আগ্রহের মিল। 

আরও সহজ করে বলতে গেলে, এসইউভি গাড়িগুলো মধ্যপ্রাচ্যের অনেক দেশেই জনপ্রিয়, কারণ এগুলো বালুময় রাস্তায় চলার জন্য উপযুক্ত এবং বড় পরিবারের জন্য পর্যাপ্ত জায়গা থাকে এসব গাড়িতে।

জিগলার আরব নিউজকে বলেন, পারিবারিক পরিবহনের ওপর এই ফোকাসটি শক্তিশালী অবকাঠামো এবং বিস্তৃত সড়ক নেটওয়ার্ক দ্বারা আরও প্রসারিত হয়েছে। তিনি বিশদভাবে বলেন, আরামদায়ক বিষয়টি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনা হিসেবে গাড়ির গ্রাহকদের মধ্যে আবির্ভূত হয়। উন্নত আরাম ও সুরক্ষা বৈশিষ্ট্যগুলোর পাশাপাশি ইন-কার কানেক্টিভিটির কারণে মানুষের গাড়ি কেনায় আগ্রহ বাড়ে। প্রসঙ্গত, যাত্রীদের স্মার্টফোন, ট্যাবলেট ও অন্যান্য ডিভাইসের সঙ্গে সংযুক্ত হতে সুযোগ দেয় ইন-কার কানেক্টিভিটি।

তিন মাসের মধ্যে টয়ো নিটেক্সের উৎপাদন কার্যক্রম শুরুর নির্দেশ

প্রকাশ: ০৪ জুলাই ২০২৪, ০১:৪০ পিএম
আপডেট: ০৪ জুলাই ২০২৪, ০১:৪০ পিএম
তিন মাসের মধ্যে টয়ো নিটেক্সের উৎপাদন কার্যক্রম শুরুর নির্দেশ

পুঁজিবাজারে বস্ত্র খাতের তালিকাভুক্ত টয়ো নিটেক্সের উৎপাদন কার্যক্রম তিন মাসের মধ্যে শুরু করার নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। একই সঙ্গে নতুন মালিকানা বা মালিকানা হস্তান্তরের পর যেকোনো অমীমাংসিত সমস্যার সমাধান করতে বলা হয়েছে।

দেনার দায়ে ২০১৯ সালে বন্ধ হয়ে যাওয়া মিথুন নিটিং অ্যান্ড ডায়িং লিমিটেডের নাম পরিবর্তন করে টয়ো নিটেক্স নামকরণ করা হয়। একই সঙ্গে মালিকানা পরিবর্তন করা হয়। নতুন মালিককে তিন মাসের মধ্যে আবার উৎপাদন কাজ শুরু করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

সম্প্রতি চীনভিত্তিক কোম্পানি ডেস্টিনেশন এক্সপ্রেস ইন্টারন্যাশনাল ডেক্স-আই কোম্পানিকে শর্ত সাপেক্ষে মিথুন নিটিংয়ের মালিকানা অধিগ্রহণের অনুমোদন দেয় বিএসইসি। বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষা এবং ব্যবসায়িক কার্যক্রম পুনরায় শুরু করার জন্য কমিশন এই অনুমোদন দিয়েছে। ডেস্টিনেশন এক্সপ্রেস ইন্টারন্যাশনাল (ডিইএক্স-১) লিমিটেড একটি চীনভিত্তিক কুরিয়ার পরিষেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান।

শর্তানুসারে প্রয়াত মো. মোজাম্মেল হকের কাছে থাকা ৫৪ লাখ ৪৯ হাজার ৫৮টি শেয়ার তার আইনি উত্তরাধিকারীদের মাধ্যমে এবং অন্যদের মাধ্যমে শেয়ার ক্রয় চুক্তি অনুযায়ী ডিইএক্স-১-এ হস্তান্তর করা হবে। আইনগত উত্তরাধিকারীদের মধ্যে রয়েছেন মিসেস রাবেয়া খাতুন, মো. রফিকুল হক, মো. মাহবুব-উল-হক, মো. আতিকুল হক, মো. রবিউল হক, মিসেস সৈয়দা হাসিনা হক, মাহবুবা হক, মাহমুদা হক, মাহফুজা হক ও মনসুরা হক।

জানা গেছে, কোম্পানি হস্তান্তরের জন্য নতুন মালিককে কোম্পানিতে ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণ করতে হবে। একই সঙ্গে বেসিক ব্যাংকের ঋণ পরিশোধের জন্য দায়ী থাকবেন, যা প্রথমে ৩ কোটি টাকা ছিল, এখন সেটা বেড়ে প্রায় ৫ কোটি টাকা হয়েছে। বিএসইসি কর্তৃক আরোপিত জরিমানাও তাদের পরিশোধ করতে হবে।

তথ্যে দেখা যায়, পরিচালক এবং বিনিয়োগকারীদের হাতে থাকা শেয়ারগুলো আরও তিন বছরের জন্য ব্লক মডিউলে লক করা হবে। সিকিউরিটিজ আইন অনুসারে এই শেয়ারগুলো আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণের জন্য জামানত বা বন্ধক হিসাবে ব্যবহার করা যাবে না।
শেয়ার স্থানান্তর নিষ্পত্তি অবশ্যই একটি ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে করতে হবে। ক্রেতা এবং বিক্রেতাদের হস্তান্তর সম্পাদনের সাত দিনের মধ্যে কমিশনের কাছে একটি কমপ্লায়েন্স রিপোর্ট জমা দিতে হবে। 

ডিএসই থেকে প্রাপ্ত সর্বশেষ তথ্যমতে, টয়ো নিটেক্সের অনুমোদিত মূলধন ৮০ কোটি টাকা এবং পরিশোধিত মূলধন ৩২ কোটি ৪৯ লাখ টাকা। এর শেয়ার সংখ্যা প্রায় ৩ কোটি ২৫ লাখ। মোট শেয়ারের মধ্যে উদ্যোক্তা বা পরিচালকদের কাছে ১৭ দশমিক ২০ শতাংশ, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে ১৫ দশমিক ৪৯ শতাংশ, বিদেশি বিনিয়োগকারীদের কাছে শূন্য দশমিক ১৬ শতাংশ এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে ৬৭ দশমিক ১৫ শতাংশ শেয়ার রয়েছে।

২০১৭ সাল থেকে লোকসানে থাকা কোম্পানিটির কাছে বেপজাসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পাওনা ছিল প্রায় ২০ কোটি টাকা। বিদেশি ক্রেতাদের সংগঠন অ্যাকর্ডের নির্দেশনা অনুযায়ী সংস্কার করতে না পারায় কোম্পানিটিকে কালো তালিকাভুক্ত করা হয়। ফলে বিদেশি ক্রেতারা ক্রয়াদেশ বন্ধ করে দেন।

এরপর গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানির বিল এবং প্লটের লিজ বাবদ বকেয়া কয়েক কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাওয়ায় ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে বেপজা টয়ো নিটেক্সের সব ধরনের সেবা সংযোগ বন্ধ করে দেয়। যার ফলে কোম্পানিটির কারখানা বন্ধ হয়ে যায়। এরপর শ্রমিকদের মজুরিসহ বেশ কিছু বকেয়া ঋণ আদায়ের জন্য বেপজা কারখানার সম্পদ নিলাম করে।

বস্ত্র খাতের এ কোম্পানিটি ১৯৯৪ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়ে বর্তমানে ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে অবস্থান করছে। ৮০ কোটি টাকা অনুমোদিত মূলধনের বিপরীতে পরিশোধিত মূলধন ৩২ কোটি ৪৯ লাখ ১০ হাজার টাকা। রিজার্ভের ঘাটতির পরিমাণ ১৪ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। কোম্পানিটির ৩ কোটি ২৪ লাখ ৯১ হাজার ১৬২টি শেয়ার রয়েছে।

টয়ো নিটেক্সের আর্থিক প্রতিবেদন বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০১৬ সালে ৬ কোটি ৯৯ লাখ ২০ হাজার টাকা কর-পরবর্তী মুনাফা করেছিল কোম্পানিটি। পরের বছর, অর্থাৎ ২০১৭ সালে ৫ কোটি ৯৭ লাখ ২০ হাজার টাকা লোকসান করে কোম্পানিটি। ২০১৮ সালে লোকসান আরও বেড়ে হয় ৭ কোটি ২৭ লাখ ২০ হাজার টাকা।

সর্বশেষ ২০১৯ সালের মার্চে তৃতীয় প্রান্তিকের যে অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়, তাতে কোম্পানিটির লোকসান দেখানো হয় ৩ কোটি ৯৯ লাখ ৩০ হাজার টাকা। এরপর আর কোনো আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশই করা হয়নি।