ঢাকা ২১ আষাঢ় ১৪৩১, শুক্রবার, ০৫ জুলাই ২০২৪

মাথাপিছু আয় বেড়ে ২৭৮৪ ডলার, প্রবৃদ্ধি ৫.৮২ শতাংশ

প্রকাশ: ২১ মে ২০২৪, ০৯:০২ পিএম
আপডেট: ২১ মে ২০২৪, ০৯:০২ পিএম
মাথাপিছু আয় বেড়ে ২৭৮৪ ডলার, প্রবৃদ্ধি ৫.৮২ শতাংশ
ছবি : সংগৃহীত

বছরের ব্যবধানে চলতি অর্থবছরে (২০২৩-২৪) মাথাপিছু গড় আয় ৩৫ ডলার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৭৮৪ ডলার। গত অর্থবছরে (২০২২-২৩) মাথাপিছু আয় ছিল ২ হাজার ৭৪৯ ডলার। ডলারের দাম ১০৯ টাকা ৯৭ পয়সা ধরে টাকার অঙ্কে এই বছরে আয় হচ্ছে ৩ লাখ ৬ হাজার ১৪৪ টাকা। 

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) সর্বশেষ চলতি অর্থবছরের সাময়িক হিসাবে এই তথ্য প্রকাশ করেছে। 

একই সঙ্গে চলতি অর্থবছরের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) সাময়িক হিসাবও দেওয়া হয়েছে। এতে প্রবৃদ্ধি ৫ দশমিক ৮২ শতাংশ হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। গত অর্থবছরে জিডিপির প্রকৃত প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ৫ দশমিক ৭৮ শতাংশ। সেই হিসাবে বেড়েছে দশমিক ০৪ শতাংশ। 

কোনো একটি দেশের অভ্যন্তরের আয়ের সঙ্গে রেমিট্যান্সসহ যত আয় হয়, তাই হচ্ছে একটি দেশের মোট জাতীয় আয়। সেই জাতীয় আয়কে মাথাপিছু ভাগ করে এই হিসাব করা হয়। মাথাপিছু আয় কোনো ব্যক্তির একক আয় নয়। এ আয় হলো কোনো নির্দিষ্ট সময়ে কোনো দেশের নাগরিকদের গড় আয়। অর্থাৎ কোনো নির্দিষ্ট সময়ে কোনো দেশের মোট জাতীয় আয়কে সে দেশের মোট জনসংখ্যা দ্বারা ভাগ করলে মাথাপিছু আয় পাওয়া যায়। বিবিএস সাধারণত বাজেটের আগে ৯ মাসের প্রকৃত আয় ও প্রবৃদ্ধি এবং বাকি ৩ মাসের একটা সম্ভাব্য প্রাক্কলন করে মাথা পিছু আয় ও জিডিপির প্রবৃদ্ধির তথ্য প্রকাশ করে। অর্থবছর শেষ হলে সব কিছু হিসাব করে প্রকৃত তথ্য প্রকাশ করে জানায়।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) প্রকাশিত প্রতিবেদনে দেখা যায়, সেবা খাতকে ভর করেই সাময়িক হিসাবে চলতি অর্থবছর প্রবৃদ্ধি দাঁড়িয়েছে ৫ দশমিক ৮২ শতাংশ। কারণ গত অর্থবছর চূড়ান্ত হিসাবে এ হার ছিল ৫ দশমিক ৭৮ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে কৃষি ও শিল্প খাতে প্রবৃদ্ধি কমে হয়েছে ৩ দশমিক ২১ শতাংশ ও ৬ দশমিক ৬৬ শতাংশ। বিবিএস তা দেখিয়েছে। সেবা খাতে প্রবৃদ্ধি বাড়লেও তা খুবই সামান্য। তারপরও বেড়ে গেছে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার।

বিবিএসের তথ্যমতে, চলতি অর্থবছর সাময়িক হিসাবে কৃষি খাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩ দশমিক ২১ শতাংশ, যা গত অর্থবছরে ছিল ৩ দশমিক ৩৭ শতাংশ। অর্থাৎ প্রবৃদ্ধি কমেছে শূন্য দশমিক ১৬ শতাংশ। ২০২১-২২ অর্থবছরে ছিল ৩ দশমিক ০৫ শতাংশ।

একইভাবে চলতি অর্থবছর শিল্প খাতে প্রবৃদ্ধি কমে দাঁড়িয়েছে ৬ দশমিক ৬৬ শতাংশ, যা গত অর্থবছরে ছিল ৮ দশমিক ৩৭ শতাংশ। অর্থাৎ শিল্প খাতে প্রবৃদ্ধি কমেছে ১ দশমিক ৭১ শতাংশ। শিল্প খাতের এ প্রবৃদ্ধি চার বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। কারণ ২০২০-২১ অর্থবছর শিল্প খাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ১০ দশমিক ২৯ শতাংশ ও ২০২১-২২ অর্থবছর ৯ দশমিক ৮৬ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে সেবা খাতে প্রবৃদ্ধি বেড়েছে মাত্র শূন্য দশমিক ৪৩ শতাংশ। কারণ গত অর্থবছর এ খাতে প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৫ দশমিক ৩৭ শতাংশ। ২০২১-২২ অর্থবছরে ছিল ৬ দশমিক ২৬ শতাংশ। 

চলতি অর্থবছরে সাময়িক হিসাবে প্রবৃদ্ধি দাঁড়িয়েছে ৫ দশমিক ৮২ শতাংশ। কৃষি ও শিল্পে প্রবৃদ্ধি হ্রাস পাওয়ার পরও সার্বিকভাবে জিডিপি প্রবৃদ্ধি কীভাবে বাড়ল তার কোনো ব্যাখ্যা বিবিএসের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়নি। এ ছাড়া চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই প্রান্তিকে সেবা খাতে প্রবৃদ্ধি কমানোর পরও সাময়িক হিসাবে চলতি অর্থবছরে এ খাতের প্রবৃদ্ধি কেন বাড়ল তারও কোনো ব্যাখ্যা দেওয়া হয়নি। গত অর্থবছরের শুরু থেকে চলা ডলারসংকট আরও প্রকট আকার ধারণ করা, আমদানিতে বড় ধরনের ধসের ফলে শিল্প খাতে প্রবৃদ্ধি কমে যাওয়া, সরকারের উন্নয়ন বাজেট বাস্তবায়নে ধীরগতিসহ নানা কারণে চলতি অর্থবছর প্রবৃদ্ধি আরও কমবে বলেই প্রাক্কলন করেছিল বিশ্বব্যাংক।

এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ও অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. আতিউর রহমান খবরের কাগজকে বলেন, ‘বিবিএস চলতি অর্থবছরের প্রবৃদ্ধির যে তথ্য ৫ দশমিক ৮২ শতাংশ প্রকাশ করেছে, তা মোটামুটি ঠিক আছে। কারণ আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলও (আইএমএফ) আগেই এ রকম তথ্য প্রাক্কলন করেছে। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকও (এডিবি) কাছাকাছি ৬ শতাংশের বেশি প্রাক্কলন করেছে। শুরুতে কমলেও শেষ পর্যায়ে ভালোই করেছে প্রবৃদ্ধি। প্রথমে মূল্যস্ফীতি খারাপ অবস্থায় ছিল। তাই নতুন বাজেটে কৃষিতে আরও বরাদ্দ বাড়াতে হবে।’

এই অর্থনীতিবিদ আরও বলেন, ‘কৃষি ও শিল্প খাতের চেয়ে সেবা খাত ভালো করেছে। এটা খারাপ কিছু না। তবে শিল্পেও ভালো করতে হবে। কারণ শিল্পায়নের বিকল্প নেই। ডলারের অবমূল্যায়ন, আমদানি কমে যাওয়ায় এই অবস্থা হয়েছে। নতুন বাজেটে তাই এসব বিষয় বিবেচনা করতে হবে। যাতে কৃষি ও শিল্পের প্রবৃদ্ধি হয়। সেবা খাতের প্রবৃদ্ধি বেশি হয়েছে এটা খারাপ না। ভারতও সেবা খাতকে ভর করে এগিয়ে গেছে। কারণ সেবা খাতে অনেক কিছু জড়িত। ভারতে যা হচ্ছে বাংলাদেশেও তা দেখা যাচ্ছে।’

সম্প্রতি ডলারের রেকর্ড পরিমাণ অবমূল্যায়ন হয়েছে। তা ৩০ শতাংশ ছাড়িয়েছে। তারপরও সাময়িক হিসাবে চলতি অর্থবছর মাথাপিছু আয় বেড়েছে ৩৫ ডলার বা ১ দশমিক ১২ শতাংশ। কারণ মাথাপিছু আয় ধরা হয়েছে ২ হাজার ৭৮৪ ডলার। যা গত অর্থবছর ছিল ২ হাজার ৭৪৯ ডলার। তার আগের ২০২১-২২ অর্থবছরে ২ হাজার ৭৯৩ ডলার ছিল।

বিবিএসের প্রতিবেদনে দেখা যায়, শিল্প খাতের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ অবস্থা ছিল বিদ্যুৎ ও গ্যাস খাতে। এ খাতে গত অর্থবছর প্রবৃদ্ধি ছিল ২ দশমিক ৪৬ শতাংশ, যা চলতি অর্থবছর কমে দাঁড়িয়েছে শূন্য দশমিক ৩৩ শতাংশ ঋণাত্মক। এর মধ্যে বিদ্যুৎ খাতে প্রবৃদ্ধি ৩ দশমিক ৪০ শতাংশ থেকে কমে দাঁড়িয়েছে শূন্য দশমিক ২১ শতাংশ ঋণাত্মক বা নেতিবাচক। আর গ্যাসের প্রবৃদ্ধি ১ দশমিক ৮৪ শতাংশ ঋণাত্মক থেকে কমে দাঁড়িয়েছে শূন্য দশমিক ৯৩ শতাংশ ঋণাত্মক।

বিবিএসের তথ্যমতে, ২০২৩-২৪ অর্থবছর বৃহৎশিল্পে প্রবৃদ্ধি অনেকখানি কমে গেছে। এ শিল্পে প্রবৃদ্ধির হার ২০২২-২৩ অর্থবছর ছিল ৮ দশমিক ৫৩ শতাংশ, যা চলতি অর্থবছর হ্রাস পেয়ে হয়েছে ৬ দশমিক ৬০ শতাংশ। একইভাবে চলতি অর্থবছর ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে প্রবৃদ্ধির হারও হ্রাস পেয়েছে। গত অর্থবছর এ হার ছিল ৯ দশমিক ১৫ শতাংশ, চলতি অর্থবছর দাঁড়িয়েছে ৬ দশমিক ৮৪ শতাংশ। এ ছাড়া গত অর্থবছর কুটিরশিল্পে প্রবৃদ্ধি দাঁড়ায় ১০ দশমিক ০১ শতাংশ, যা চলতি অর্থবছর দাঁড়িয়েছে ৬ দশমিক ০৮ শতাংশ।

তবে সেবা খাতে আগের অর্থবছরে ৫ দশমিক ৩৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হলে চলতি অর্থবছরে বেড়ে ৫ দশমিক ৮০ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। এর মধ্যে ইন্স্যুরেন্সে বড় লাফ দেয়। গত অর্থবছরে এ খাতে ১ দশমিক ০৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হলেও চলতি অর্থবছরে ৫ দশমিক ৩১ শতাংশে ঠেকেছে। মানব স্বাস্থ্য ও সামাজিক কার্যক্রমেও ব্যাপকভাবে ১০ দশমিক ০৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। গত অর্থবছরে এটা হয়েছিল ৭ দশমিক ২২ শতাংশ।

লাখ টাকার লটকন বিক্রির স্বপ্ন শ্রীপুরের জাকারিয়ার

প্রকাশ: ০৪ জুলাই ২০২৪, ০২:২০ পিএম
আপডেট: ০৪ জুলাই ২০২৪, ০২:২০ পিএম
লাখ টাকার লটকন বিক্রির স্বপ্ন শ্রীপুরের জাকারিয়ার
গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার তেলিহাটীর তালতলা গ্রামে লটকন বাগানে ডা. আবুল অফা জাকারিয়া। ছবি: সংগৃহীত

গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার তেলিহাটীর তালতলা গ্রামের চাষি ডা. আবুল অফা জাকারিয়া এবার লাখ টাকার লটকন বিক্রির স্বপ্ন দেখছেন। তার বাগানে ঘন সবুজ পাতার ভেতরে ডালপালা ফেটে বের হওয়া বোঁটায় ঝুলছে অসংখ্য রসালো লটকন। কোনো গাছে ঝুলছে সবুজ লটকন, আবার কোনো গাছে ঝুলছে হলুদ বর্ণের পাকা লটকন। স্থানীয়রা বলছেন, তাকে দেখে অনেকেই এলাকায় লটকনের বাগান করেছেন। আগামীতে তেলিহাটীর তালতলা লটকনের গ্রাম হিসেবে পরিচিতি লাভ করবে।

তিনি হোমিও চিকিৎসকের পাশাপাশি একজন সফল চাষি হিসেবেও এলাকায় তার পরিচিতি রয়েছে। নিজ জমিতে দুই যুগের বেশি সময় লেবু চাষ করেছেন। লেবুর ফলন ভালো হলেও উৎপাদন ব্যয়ের বিপরীতে ভালো দামে বিক্রি না হওয়ায় সাত বছর আগে লেবুগাছ কেটে ফেলেন। এরপর শুরু করেন লটকনের চাষ। নরসিংদী থেকে লটকনের চারা সংগ্রহ করে পরিচর্যা শুরু করেন। চার বছরের মাথায় ৫০০ কেজি লটকন উৎপাদন হয়। পরের বছর ৭০০ কেজি এবং চলতি বছর ১ হাজার কেজি ফলনের স্বপ্ন দেখছেন তিনি।

চলতি বছর প্রায় ১০০ লটকনগাছ থেকে লক্ষাধিক টাকা আয় করার স্বপ্ন দেখছেন আবুল অফা জাকারিয়া। পরিশ্রম ও পরিচর্যায় চার বছরের মাথায় ফলন পেতে শুরু করেন। এ বছর তিনি তৃতীয়বারের মতো ফলন পেতে যাচ্ছেন। তার বাগান দেখে আশপাশের এলাকার শতাধিক চাষি ইতোমধ্যে লটকনের চাষ শুরু করেছেন। লটকনচাষিরা মনে করেন, আগামীতে তেলিহাটীর তালতলা গ্রাম লটকনের গ্রাম হিসেবে পরিচিতি লাভ করবে।

এ বিষয়ে চাষি আবু ইউসুফ জানান, ডা. জাকারিয়ার বাগান দেখে উৎসাহিত হয়ে তিনি নিজেও লটকনের বাগান করেছেন। তালতলা গ্রামে লটকনের চাষ ভালো হয়। একসময় তালতলা গ্রাম লটকনের গ্রাম হিসেবে চিহ্নিত হবে।

কৃষি শ্রমিক রহমত আলী বলেন, ‘জাকারিয়া ভাই লটকনগাছ লাগানোর পর থেকে পরিচর্যা করছেন। ফলনের পর গাছের পাতা ফেলে দেন। তারপর সার, ওষুধ সব প্রয়োগ করেন। ফলনের আগে ডালপালা কাপড় দিয়ে ঘষামাজা করে দেন। এতে ভালো ফলন হয়।’

চাষি সাফায়েত হোসেন বলেন, ‘বাগানটা খুব সুন্দর। আমরা দেখতে আসি। এলাকা ও আশপাশের অনেকে দেখতে আসেন। অনেকে উৎসাহিত হয়ে বাগান করেছেন। অনেকে চাষের পদ্ধতি সম্পর্কেও জানতে আসেন।’

চাষি ডা. আবুল অফা জাকারিয়া বলেন, ‘আমি প্রথমে এ বাগানে ২৫০টি লেবুর গাছ লাগিয়েছিলাম। যখন দেখলাম ১০০ বস্তা লেবু বিক্রি করে বস্তাপ্রতি ১০০ টাকাও পাই না, তখন আমি লেবুগাছ কেটে লটকনগাছ লাগিয়েছি। এখন আমি লাভবান হচ্ছি। এ বছর ইতোমধ্যে একটি গাছ থেকে ২০ কেজি লটকন নামিয়ে ২ হাজার টাকায় বিক্রি করেছি। আগামী ১৫ দিন পর পুরোদমে লটকন পাকা শুরু হবে।’

তিনি বলেন, ‘সাত বছর আগে নরসিংদী থেকে লটকনের চারা নিয়ে আসি। প্রথমে ১০০, পরের বছর আরও ১০০ এবং সর্বশেষ আরও ১০০টি চারা আনি। এ বছর ১ হাজার কেজি ফল বিক্রি করতে পারব। দিন যত যাবে, ফলন তত বাড়বে। গাছ পরিপক্ব করতে যত্ন নিতে হয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘এ পর্যন্ত আমাকে দেখে কমপক্ষে ১০০ লোক লটকনের বাগান করেছেন। অনেকে পরামর্শ নেন। তারা বেশির ভাগ নরসিংদী থেকে লটকনের চারা নিয়ে এসেছেন। পরিশ্রম কম হলেও শিডিউল মেনে বাগানের পরিচর্যা, সার ও কীটনাশক প্রয়োগ করলে ভালো ফলন আসে।’

শ্রীপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ সুমাইয়া সুলতানা বলেন, ‘শ্রীপুর লটকন চাষের জন্য উপযোগী। এবার উপজেলায় ৮ একর জমিতে লটকনের চাষ হয়েছে। কৃষকদের পরামর্শ ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে লটকন চাষে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। কলমের মাধ্যমে চারা রোপণের জন্য উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে।’ সূত্র: বাসস

সোনারগাঁয়ে সবজি চাষে আগ্রহ বাড়ছে কৃষকদের

প্রকাশ: ০৪ জুলাই ২০২৪, ০২:১১ পিএম
আপডেট: ০৪ জুলাই ২০২৪, ০২:১১ পিএম
সোনারগাঁয়ে সবজি চাষে আগ্রহ বাড়ছে কৃষকদের
উৎপাদন খরচ কম হওয়ায় নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে চাষিরা ঝুঁকছেন সবজি চাষে, হচ্ছেন স্বাবলম্বী। ছবি: খবরের কাগজ

নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে বেড়েছে সবজি চাষ। গত বছরের চেয়ে এবার ৭ হাজার ৪২৭ টন বেশি সবজি উৎপাদিত হয়েছে এ উপজেলায়। উপজেলার ১০টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় কৃষিজমি বাদেও শিল্পকারখানার আঙিনায়, বাড়ির আঙিনায়, ভবনের ছাদেও চাষ হচ্ছে লাউ, জালি কুমড়া, ফুলকপি, পাতাকপি, পুঁইশাক, লালশাক, ঝিঙে, বেগুন, টমেটো, মরিচ, শিম, কলাসহ নানা প্রকারের সবজি। উৎপাদন খরচ কম হওয়ায় চাষিরা ঝুঁকছেন সবজি চাষে, হচ্ছেন স্বাবলম্বী।

কৃষক শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘সাত শতাংশ জমিতে ১ হাজার টাকা খরচ করে পুঁইশাক লাগিয়েছি। পরে সেগুলো ১০ হাজার টাকায় বিক্রি করেছি। এরপর লালশাক, ঢ্যাঁড়স, ফুলকপি, বাঁধাকপি চাষ করব। জমির আইলে পেঁপেগাছ ও কলাগাছ লাগিয়েছি। ১ হাজার টাকা খরচ করে ১০টি কলাগাছ লাগিয়েছি। এখন আর খরচ নেই, এখন প্রতিবছর ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা আসে।’

হামসাদি এলাকার কৃষক আব্দুল সালাম বলেন, ‘দুই বিঘা জমিতে সবজি চাষ করতে ৪০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে।‌ বিক্রি করেছি ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা। পুঁইশাক লাগিয়েছি আড়াই বিঘায়। এতে খরচ হয়েছে ৫০ হাজার টাকা। এখন পর্যন্ত বিক্রি করেছি ১ লাখ টাকারও বেশি। যদি জমিতে এক-দুই মাস দেরিতে পানি আসে, তবে আরও ৪০-৫০ হাজার টাকা বিক্রি করতে পারব। এর পরে আমন ধান চাষ করব।’

সনমান্দি এলাকার কৃষক জামান মিয়া বলেন, ‘সাড়ে চার বিঘা জমিতে পুঁইশাক চাষ করে এখন শাক কাটায় ব্যস্ত সময় পার করছি। যাত্রাবাড়ী পাইকারি কাঁচাবাজার আড়তে পুঁইশাক বিক্রি করতে নিয়ে যাব। সবজি চাষে প্রতি বিঘা জমিতে সিজনে ৪০-৫০ হাজার টাকা আসে। সবজির বাজার ভালো হলেও সবজির বীজ ও সারের দামে নিয়ন্ত্রণ নেই।’

বাড়িমজলিশ এলাকায় ছাদে কৃষিবাগান করেছেন জবরুল ইসলাম মন্টু। তিনি বলেন, ‘শখের বশে ড্রাগন ফলসহ বিভিন্ন প্রকার সবজি চাষ করেছি। এখন বাসায় সবজি কেনা লাগে না। আশপাশের ফ্ল্যাটগুলোতেও বিক্রি করতে পারি।’ 

সোনারগাঁ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আফরোজা সুলতানা জানান, উপজেলায় ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৪ হাজারে ৫৩৯ হেক্টর জমিতে সবজি উৎপাদন হয়েছিল ৭৭ হাজার ১৭৩ মেট্রিক টন। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৪ হাজার ৭০০ হেক্টর জমিতে সবজি উৎপাদন হয়েছে ৮৪ হাজার ৬০০ মেট্রিক টন। লাউ, ঝিঙে, জালি কুমড়া, টমেটো, বেগুন, করলা, পুঁইশাকসহ অন্য সবজিজাতীয় ফসল অল্প খরচেই চাষ করা যায়। তাই পারিবারিক চাহিদা মিটিয়েও ব্যবসায়িকভাবে সফল হন কৃষক। আর এ জন্যই সোনারগাঁয়ে বেড়েছে সবজি চাষ।

তিনি বলেন, ‘আমরা পারিবারিক পুষ্টিবাগান প্রকল্প থেকে সবজি চাষিদের সহযোগিতা করে থাকি। সরকার সারের বিক্রি মূল্য নির্ধারণ করে দিয়েছে। যদি কোনো দোকানদার বেশি দামে সার বিক্রি করেন, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমরা কৃষকদের নতুন নতুন জাতের সবজির উন্নত জাতের বীজ এনে দিই ও চাষের পরামর্শ দিয়ে থাকি।’

চট্টগ্রামে ভোগ্যপণ্যে অস্থিরতা: ব্যবসায়ীদের নানা ধরনের অজুহাত

প্রকাশ: ০৪ জুলাই ২০২৪, ০২:০৪ পিএম
আপডেট: ০৪ জুলাই ২০২৪, ০২:০৪ পিএম
চট্টগ্রামে ভোগ্যপণ্যে অস্থিরতা: ব্যবসায়ীদের নানা ধরনের অজুহাত
চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে মসলার আড়ত। ছবি: খবরের কাগজ

করোনা কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই শুরু হয় ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ। এর প্রভাব পড়ে বাংলাদেশসহ বিশ্ব অর্থনীতির ওপর। বাংলাদেশের বৈদেশিক বাণিজ্য ঘাটতি বেড়ে যাওয়ায় ডলারের বিপরীতে টাকার দরপতন হতে থাকে। মূল্যস্ফীতির কারণে লাগাম ছাড়া হয় ভোগ্যপণ্যের দাম। লাগামছাড়া হয় ভোগ্যপণ্যের বাজার। সেই থেকে বছরের পর বছর ভোগ্যপণ্যে বাড়তি দরের ঘানি টানছেন সাধারণ ভোক্তারা। আর ব্যবসায়ীরা রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, ডলারসংকট, ডলার রেটে তারতম্য, বিশ্ববাজারে মূল্যবৃদ্ধি, পরিবহন খরচ বৃদ্ধি, মজুরি বৃদ্ধি, কৃষকের মূল্যবৃদ্ধি, সরবরাহ কম, ভারত থেকে পণ্য আমদানি বন্ধ এবং আমদানিকারকের বাড়তি দরে পণ্য বিক্রি করায় দাম বাড়ে- এমন কিছু সুনির্দিষ্ট অজুহাতে ভোগ্যপণ্যের বাজার অস্থির করে রেখেছেন। 

এদিকে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন বলেছেন, ‘সুনির্দিষ্ট কিছু অজুহাতের ওপর ভিত্তি করে দাঁড়িয়ে আছে ভোগ্যপণ্যে অস্থিরতা। আমদানি মূল্যের চেয়ে কয়েক গুণ বাড়তি দামে পণ্য বিক্রি হয়েছে। সম্প্রতি ১ হাজার ৬০০ টাকার এলাচ ৩ হাজার টাকার বেশি দামে বিক্রি করার প্রমাণ মিলেছে খাতুনগঞ্জে। পেঁয়াজে ভালো ফলন হয়েছে। তবুও ভারত থেকে পেঁয়াজ আসছে না, সরবরাহ কম- এমন অজুহাতে দাম বাড়ানো হচ্ছে। আবার পেঁয়াজ আমদানির খবরে খাতুনগঞ্জে দাম কমে যাওয়ার চিত্রও দেখা গেছে। তখন আমদানি খরচ বাড়ার অজুহাত কোথায় যায়? তখন কী লোকসান হয় না? ভরা মৌসুমেও কেন চালের দাম বাড়তি থাকে। আলু, গম, চিনি, ডিমের দাম কেন বাড়তি? মুরগি, সবজি তো আমদানি হয় না। কেন বছরের পর বছর এসব পণ্যের দামে অস্থিরতা থাকে- সেটা খতিয়ে দেখা প্রয়োজন।’

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হতে না হতেই ২০২২ সালে খাতুনগঞ্জে মণপ্রতি সয়াবিন তেলে ৪০০ টাকা বেড়ে ৭ হাজার টাকায় বিক্রি হয়। পাশাপাশি মণপ্রতি ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা বেড়ে পামতেল ৬ হাজার ও সুপার পামতেল ৬ হাজার ৩০০ টাকায় বিক্রি হয়। অন্যদিকে গম মণপ্রতি ৫০ টাকা বেড়ে ১ হাজার ১৫০ টাকায়, চিনি মণপ্রতি ৪০ টাকা বেড়ে ২ হাজার ৬৮০ টাকায় বিক্রি হয়। বস্তাপ্রতি চাল আগের তুলনায় ১৫০ থেকে ২০০ টাকা বাড়তি দরেই বিক্রি হয়। খাতুনগঞ্জে দেশি মসুর ডাল ১১২ টাকা, পেঁয়াজ বিক্রি হয় ৪৮ টাকা, আদা ১৭০ টাকা, প্রতি মণ চিনি বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৬০০ থেকে ২ হাজার ৭০০ টাকায়। 

২০২৩ সালে ডলারসংকট, আমদানি খরচ বাড়ার অজুহাতে খাতুনগঞ্জে প্রতি মণ চিনিতে ৮০০ টাকা বাড়িয়ে ৪ হাজার ৬০০ টাকায় বিক্রি হয়। ওই বছর বাণিজ্য মন্ত্রণালয় খুচরা বাজারে প্রতি কেজি প্যাকেটজাত চিনি ১০৯ টাকা এবং খোলা চিনি ১০৪ টাকা নির্ধারণ করে দেয়। কিন্তু ব্যবসায়ীরা তা মানেননি। উল্টো সে সময় খুচরা বাজারে প্রতি কেজি চিনি ১৪০ টাকায় বিক্রি হয়। ওই বছর সরকার বোতলজাত তেলে লিটারপ্রতি ১২ টাকা বাড়ায়। তখন বোতলজাত প্রতি লিটার তেল ১৯৯ টাকায় বিক্রি হয়। 

চলতি বছরের ১ মার্চ থেকে সয়াবিন তেলের দাম লিটারপ্রতি ১০ টাকা কমানোর সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। কিন্তু এর প্রভাব ছিল না বাজারে। প্রতি লিটার সয়াবিন তেল ১৬৩ টাকায় বিক্রি হওয়ার কথা থাকলেও বিক্রি হয়েছে ১৭০ টাকার বেশি দামে। বর্তমানে পাইকারি বাজারে প্রতি মণ গম বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৩৮০ টাকা, প্রতি কেজি ভারতীয় চোরাই চিনি ১০৫ টাকা ও পরিশোধিত চিনি বিক্রি হচ্ছে ১১৮ টাকায়। চায়না আদা ২৪৫ টাকা, রসুন ১৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সব ধরনের চালে বস্তাপ্রতি দাম বাড়ে ১৫০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত। প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ ৮০ থেকে ৮৫, ভারতীয় পেঁয়াজ ৮০ থেকে ৯০ টাকায়। 

খুচরায় প্রতি কেজি চিনি মিলছে ১২২ থেকে ১২৫ টাকায়। খুচরায় প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৯৫ টাকায়। খুচরায় মোটা দানার মসুর ১১০ টাকা, চিকন মসুর ১৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অন্যদিকে প্রতি ডজন ডিম ১৬০ টাকায়, সব ধরনের সবজি ৫০ থেকে ৮০ টাকায় ও ব্রয়লার মুরগি মিলছে ১৭৫ টাকায়। 

চাক্তাই খাতুনগঞ্জ আড়তদার সাধারণ ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মহিউদ্দিন বলেন, ‘ভোগ্যপণ্যের বাজার তো ব্যবসায়ীরা ইচ্ছা করে বাড়িয়ে রাখেন না। আমরাও চাই বাজারদর নিয়ন্ত্রণে থাকুক, স্বাভাবিক থাকুক। বাজার দর ওঠা-নামা করলে আমাদের ব্যবসায় সমস্যা হয়। কিন্তু অনেক সময় আমদানি খরচ বাড়লে বাড়তি দরে পণ্য বিক্রি করেন, কৃষকরা দাম বাড়িয়ে দেন, পরিবহন মালিকরা ভাড়া বাড়িয়ে দেন। এসব কারণে ভোগ্যপণ্যের দাম বাড়ে।’ 

খাতুনগঞ্জের ভোগ্যপণ্য আমদানিকারক ও বিএসএম গ্রুপের স্বত্বাধিকারী আবুল বশর বলেন, ‘বিশ্ববাজারে ভোগ্যপণ্যের দর কমতির দিকে। যেমন: বর্তমানে গমের দাম নিম্নমুখী। তার ওপর ডলার রেটের প্রভাবটা এখন তেমন একটা দেখছি না। তার ওপর পণ্যের বেচাবিক্রিও তেমন নেই। কাজেই এখন পণ্যের দাম বাড়তি থাকার কথা না।’ 

ভোক্তারা বলছেন, করোনার আগেও পণ্যের দাম বাড়ত। কিন্তু তখন একটা সুনির্দিষ্ট পণ্যে সিন্ডিকেট বা দাম বাড়ানো হতো। কিন্তু করোনার পর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হয়। সে সুযোগে ডলারসংকট ও ডলার রেটের তারতম্যকে পুঁজি করে সব ধরনের ভোগ্যপণ্যে দাম বাড়ানোর অনুশীলন তৈরি হয়েছে। বর্তমানে ভোগ্যপণ্যের দাম বাড়ার পেছনে সিন্ডিকেটকেই দায়ী করছেন তারা। 

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয়ের উপপরিচালক ফয়েজ উল্যাহ বলেন, ‘আমরা প্রতিনিয়ত বাজার তদারকি করছি। অভিযোগের ভিত্তিতেও অভিযান পরিচালনা করছি। ব্যবসায়ীদের মধ্যে কারচুপি আছে। আমরা অভিযানে গেলে কাগজপত্র ঠিকমতো পাই না। আমাদের অভিযান অব্যাহত আছে। সবকিছু খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’

সৌদির গাড়িশিল্পে গতি বাড়ছে

প্রকাশ: ০৪ জুলাই ২০২৪, ০১:৪৩ পিএম
আপডেট: ০৪ জুলাই ২০২৪, ০১:৪৫ পিএম
সৌদির গাড়িশিল্পে গতি বাড়ছে
সৌদি আরবের দাম্মামের আইকনিক খোবার ওয়াটার টাওয়ার। ছবি: সংগৃহীত

সৌদি আরবের গাড়ি নির্মাণশিল্প উল্লেখযোগ্য প্রবৃদ্ধি অর্জন করছে। সরকারি উদ্যোগ, কৌশলগত ভৌগোলিক অবস্থান এবং উৎপাদন কেন্দ্র হয়ে ওঠার উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনায় ভর করে দেশটির অটোমোবাইল খাতের এই প্রবৃদ্ধি হয়েছে। এসব কারণ সৌদি আরবকে বিশ্ববাজারে গাড়ি নির্মাণশিল্পের একটি গুরুত্বপূর্ণ দেশে পরিণত করছে। খবর আরব নিউজের। 

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ব্যবস্থাপনা পরামর্শক সংস্থা বেইন অ্যান্ড কোম্পানির অংশীদার করিম হেনাইনের মতে, সৌদি আরবের এই প্রবৃদ্ধির পেছনের মূল কারণ হলো দেশটির একটি তরুণ জনসংখ্যা, বেশিসংখ্যক নারীচালক এবং প্রচুর প্রবাসীর আগমন। এর ফলে দেশটিতে বার্ষিক ৬ লাখের বেশি নতুন গাড়ি বিক্রি হয়।

হেনাইন আরব নিউজকে বলেন, বাজারটি দ্রুত বৃদ্ধির জন্য প্রস্তুত, অনেক পশ্চিমা প্রতিপক্ষকে ছাড়িয়ে গেছে। তিনি আরও বলেন, সৌদি আরবে যানবাহনের মালিকানার হার পশ্চিমা বাজারের তুলনায় বেশি। পরিবারের বৃহৎ আকার, কম উন্নত গণপরিবহন পদ্ধতি এবং ব্যক্তিগত গাড়ির ওপর নির্ভরতার মতো একটি শক্তিশালী সংস্কৃতির কারণে এই দেশটিতে গাড়িশিল্পের বিকাশ হচ্ছে।

অটোমোবাইলের আন্তর্জাতিক প্রদর্শনী অটোমেকানিকা রিয়াদ ও মেসে ফ্রাঙ্কফুর্ট মিডল ইস্টের শো ম্যানেজার অ্যালি হেফনির মতে, প্রধান বাণিজ্য রুটের সংযোগস্থলে সৌদি আরবের কৌশলগত ভৌগোলিক অবস্থান একটি আঞ্চলিক অটোমোবাইল হাব হিসেবে দেশটির মর্যাদাকে আরও বাড়িয়ে তুলছে। অ্যালি হেফনি আরব নিউজকে বলেন, সৌদি আরবের সরকার গাড়িশিল্পে সরাসরি বিনিয়োগের উদ্যোগ হিসেবে একটি অনন্য পদ্ধতি গ্রহণ করছে।

অ্যালি হেফনির মতে, সৌদি আরবের গাড়িশিল্পের অংশীজনেরা তাদের আন্তর্জাতিক সহযোগীদের মতো সক্রিয়ভাবে উদ্ভাবনী কার্যক্রম গ্রহণ, গবেষণা ও উন্নয়নে বিনিয়োগ এবং শিল্পের স্থায়িত্বকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে। বৈশ্বিক বাজারে দীর্ঘমেয়াদি কার্যকারিতা ও প্রতিযোগিতা নিশ্চিত করতে সৌদি সরকার এই গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপগুলো নিচ্ছে।

সৌদি আরবভিত্তিক সংবাদমাধ্যমটির খবরে বলা হয়, নকশা, উন্নয়ন ও উৎপাদন, সেই সঙ্গে বিতরণ, রক্ষণাবেক্ষণ ও মেরামত এবং কাস্টমাইজেশনকে অন্তর্ভুক্ত করে অটোমোবাইল খাত। খাতটি সৌদি আরবের উচ্চাভিলাষী লক্ষ্য ‘ভিশন ২০৩০’ অর্জনে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। হেনাইন উল্লেখ করেন, সৌদি আরব অটোমোবাইল উৎপাদন কেন্দ্র গড়ে তোলার একটি উচ্চাভিলাষী লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। এই লক্ষ্যে মূল সরঞ্জাম প্রস্তুতকারকদের পাশাপাশি টায়ার-১ (গাড়ির প্রধান উপাদান) সরবরাহকারীদের স্থানীয়ভাবে কার্যক্রম শুরু করার ক্ষেত্রে কীভাবে সুবিধা দেওয়া যায় সে বিষয়ে ইতোমধ্যেই চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে।

হেনাইন বলেন, শিল্পটি এখনো নবজাতক এবং এটি অন্যান্য প্রতিষ্ঠিত অটোমোবাইল উৎপাদন ক্লাস্টারগুলোর পরিপক্ব হতে কিছুটা সময় নেবে। তিনি আরও বলেন, স্বচালিত যানবাহন প্রযুক্তিতে প্রচুর বিনিয়োগ করছে সৌদি আরব। অদূর ভবিষ্যতে রোবোট্যাক্সি ও রোবোশাটল চালু করার পরিকল্পনা রয়েছে।

বেইন অ্যান্ড কোম্পানির নির্বাহী আরও বলেন, এই উদ্যোগগুলো অত্যাধুনিক অটোমোবাইল প্রযুক্তি গ্রহণ এবং একীভূত করার জন্য সৌদি আরবের আত্মত্যাগের দৃষ্টান্ত প্রদর্শন করে। এই উদ্যোগ দেশটিকে গাড়িশিল্পের ভবিষ্যতে বিশ্বব্যাপী নেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করছে।

ফক্সওয়াগেন মিডল ইস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ম্যাথিয়াস জিগলারের মতে, সৌদি আরবের মোটরগাড়িশিল্প উল্লেখযোগ্য পরিবর্তনের সম্মুখীন হচ্ছে। এই খাতের গতিশীলতাকে প্রভাবিত করে এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো বৈশ্বিক এসইউভি পছন্দের সঙ্গে সৌদি গ্রাহকদের বড় আকারের পরিবার কেন্দ্রিক সাত সিটের গাড়ির প্রতি আগ্রহের মিল। 

আরও সহজ করে বলতে গেলে, এসইউভি গাড়িগুলো মধ্যপ্রাচ্যের অনেক দেশেই জনপ্রিয়, কারণ এগুলো বালুময় রাস্তায় চলার জন্য উপযুক্ত এবং বড় পরিবারের জন্য পর্যাপ্ত জায়গা থাকে এসব গাড়িতে।

জিগলার আরব নিউজকে বলেন, পারিবারিক পরিবহনের ওপর এই ফোকাসটি শক্তিশালী অবকাঠামো এবং বিস্তৃত সড়ক নেটওয়ার্ক দ্বারা আরও প্রসারিত হয়েছে। তিনি বিশদভাবে বলেন, আরামদায়ক বিষয়টি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনা হিসেবে গাড়ির গ্রাহকদের মধ্যে আবির্ভূত হয়। উন্নত আরাম ও সুরক্ষা বৈশিষ্ট্যগুলোর পাশাপাশি ইন-কার কানেক্টিভিটির কারণে মানুষের গাড়ি কেনায় আগ্রহ বাড়ে। প্রসঙ্গত, যাত্রীদের স্মার্টফোন, ট্যাবলেট ও অন্যান্য ডিভাইসের সঙ্গে সংযুক্ত হতে সুযোগ দেয় ইন-কার কানেক্টিভিটি।

তিন মাসের মধ্যে টয়ো নিটেক্সের উৎপাদন কার্যক্রম শুরুর নির্দেশ

প্রকাশ: ০৪ জুলাই ২০২৪, ০১:৪০ পিএম
আপডেট: ০৪ জুলাই ২০২৪, ০১:৪০ পিএম
তিন মাসের মধ্যে টয়ো নিটেক্সের উৎপাদন কার্যক্রম শুরুর নির্দেশ

পুঁজিবাজারে বস্ত্র খাতের তালিকাভুক্ত টয়ো নিটেক্সের উৎপাদন কার্যক্রম তিন মাসের মধ্যে শুরু করার নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। একই সঙ্গে নতুন মালিকানা বা মালিকানা হস্তান্তরের পর যেকোনো অমীমাংসিত সমস্যার সমাধান করতে বলা হয়েছে।

দেনার দায়ে ২০১৯ সালে বন্ধ হয়ে যাওয়া মিথুন নিটিং অ্যান্ড ডায়িং লিমিটেডের নাম পরিবর্তন করে টয়ো নিটেক্স নামকরণ করা হয়। একই সঙ্গে মালিকানা পরিবর্তন করা হয়। নতুন মালিককে তিন মাসের মধ্যে আবার উৎপাদন কাজ শুরু করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

সম্প্রতি চীনভিত্তিক কোম্পানি ডেস্টিনেশন এক্সপ্রেস ইন্টারন্যাশনাল ডেক্স-আই কোম্পানিকে শর্ত সাপেক্ষে মিথুন নিটিংয়ের মালিকানা অধিগ্রহণের অনুমোদন দেয় বিএসইসি। বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষা এবং ব্যবসায়িক কার্যক্রম পুনরায় শুরু করার জন্য কমিশন এই অনুমোদন দিয়েছে। ডেস্টিনেশন এক্সপ্রেস ইন্টারন্যাশনাল (ডিইএক্স-১) লিমিটেড একটি চীনভিত্তিক কুরিয়ার পরিষেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান।

শর্তানুসারে প্রয়াত মো. মোজাম্মেল হকের কাছে থাকা ৫৪ লাখ ৪৯ হাজার ৫৮টি শেয়ার তার আইনি উত্তরাধিকারীদের মাধ্যমে এবং অন্যদের মাধ্যমে শেয়ার ক্রয় চুক্তি অনুযায়ী ডিইএক্স-১-এ হস্তান্তর করা হবে। আইনগত উত্তরাধিকারীদের মধ্যে রয়েছেন মিসেস রাবেয়া খাতুন, মো. রফিকুল হক, মো. মাহবুব-উল-হক, মো. আতিকুল হক, মো. রবিউল হক, মিসেস সৈয়দা হাসিনা হক, মাহবুবা হক, মাহমুদা হক, মাহফুজা হক ও মনসুরা হক।

জানা গেছে, কোম্পানি হস্তান্তরের জন্য নতুন মালিককে কোম্পানিতে ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণ করতে হবে। একই সঙ্গে বেসিক ব্যাংকের ঋণ পরিশোধের জন্য দায়ী থাকবেন, যা প্রথমে ৩ কোটি টাকা ছিল, এখন সেটা বেড়ে প্রায় ৫ কোটি টাকা হয়েছে। বিএসইসি কর্তৃক আরোপিত জরিমানাও তাদের পরিশোধ করতে হবে।

তথ্যে দেখা যায়, পরিচালক এবং বিনিয়োগকারীদের হাতে থাকা শেয়ারগুলো আরও তিন বছরের জন্য ব্লক মডিউলে লক করা হবে। সিকিউরিটিজ আইন অনুসারে এই শেয়ারগুলো আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণের জন্য জামানত বা বন্ধক হিসাবে ব্যবহার করা যাবে না।
শেয়ার স্থানান্তর নিষ্পত্তি অবশ্যই একটি ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে করতে হবে। ক্রেতা এবং বিক্রেতাদের হস্তান্তর সম্পাদনের সাত দিনের মধ্যে কমিশনের কাছে একটি কমপ্লায়েন্স রিপোর্ট জমা দিতে হবে। 

ডিএসই থেকে প্রাপ্ত সর্বশেষ তথ্যমতে, টয়ো নিটেক্সের অনুমোদিত মূলধন ৮০ কোটি টাকা এবং পরিশোধিত মূলধন ৩২ কোটি ৪৯ লাখ টাকা। এর শেয়ার সংখ্যা প্রায় ৩ কোটি ২৫ লাখ। মোট শেয়ারের মধ্যে উদ্যোক্তা বা পরিচালকদের কাছে ১৭ দশমিক ২০ শতাংশ, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে ১৫ দশমিক ৪৯ শতাংশ, বিদেশি বিনিয়োগকারীদের কাছে শূন্য দশমিক ১৬ শতাংশ এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে ৬৭ দশমিক ১৫ শতাংশ শেয়ার রয়েছে।

২০১৭ সাল থেকে লোকসানে থাকা কোম্পানিটির কাছে বেপজাসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পাওনা ছিল প্রায় ২০ কোটি টাকা। বিদেশি ক্রেতাদের সংগঠন অ্যাকর্ডের নির্দেশনা অনুযায়ী সংস্কার করতে না পারায় কোম্পানিটিকে কালো তালিকাভুক্ত করা হয়। ফলে বিদেশি ক্রেতারা ক্রয়াদেশ বন্ধ করে দেন।

এরপর গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানির বিল এবং প্লটের লিজ বাবদ বকেয়া কয়েক কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাওয়ায় ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে বেপজা টয়ো নিটেক্সের সব ধরনের সেবা সংযোগ বন্ধ করে দেয়। যার ফলে কোম্পানিটির কারখানা বন্ধ হয়ে যায়। এরপর শ্রমিকদের মজুরিসহ বেশ কিছু বকেয়া ঋণ আদায়ের জন্য বেপজা কারখানার সম্পদ নিলাম করে।

বস্ত্র খাতের এ কোম্পানিটি ১৯৯৪ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়ে বর্তমানে ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে অবস্থান করছে। ৮০ কোটি টাকা অনুমোদিত মূলধনের বিপরীতে পরিশোধিত মূলধন ৩২ কোটি ৪৯ লাখ ১০ হাজার টাকা। রিজার্ভের ঘাটতির পরিমাণ ১৪ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। কোম্পানিটির ৩ কোটি ২৪ লাখ ৯১ হাজার ১৬২টি শেয়ার রয়েছে।

টয়ো নিটেক্সের আর্থিক প্রতিবেদন বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০১৬ সালে ৬ কোটি ৯৯ লাখ ২০ হাজার টাকা কর-পরবর্তী মুনাফা করেছিল কোম্পানিটি। পরের বছর, অর্থাৎ ২০১৭ সালে ৫ কোটি ৯৭ লাখ ২০ হাজার টাকা লোকসান করে কোম্পানিটি। ২০১৮ সালে লোকসান আরও বেড়ে হয় ৭ কোটি ২৭ লাখ ২০ হাজার টাকা।

সর্বশেষ ২০১৯ সালের মার্চে তৃতীয় প্রান্তিকের যে অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়, তাতে কোম্পানিটির লোকসান দেখানো হয় ৩ কোটি ৯৯ লাখ ৩০ হাজার টাকা। এরপর আর কোনো আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশই করা হয়নি।