![মাথাপিছু আয় বেড়ে ২৭৮৪ ডলার, প্রবৃদ্ধি ৫.৮২ শতাংশ](uploads/2024/05/21/Dollar-1716303744.jpg)
বছরের ব্যবধানে চলতি অর্থবছরে (২০২৩-২৪) মাথাপিছু গড় আয় ৩৫ ডলার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৭৮৪ ডলার। গত অর্থবছরে (২০২২-২৩) মাথাপিছু আয় ছিল ২ হাজার ৭৪৯ ডলার। ডলারের দাম ১০৯ টাকা ৯৭ পয়সা ধরে টাকার অঙ্কে এই বছরে আয় হচ্ছে ৩ লাখ ৬ হাজার ১৪৪ টাকা।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) সর্বশেষ চলতি অর্থবছরের সাময়িক হিসাবে এই তথ্য প্রকাশ করেছে।
একই সঙ্গে চলতি অর্থবছরের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) সাময়িক হিসাবও দেওয়া হয়েছে। এতে প্রবৃদ্ধি ৫ দশমিক ৮২ শতাংশ হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। গত অর্থবছরে জিডিপির প্রকৃত প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ৫ দশমিক ৭৮ শতাংশ। সেই হিসাবে বেড়েছে দশমিক ০৪ শতাংশ।
কোনো একটি দেশের অভ্যন্তরের আয়ের সঙ্গে রেমিট্যান্সসহ যত আয় হয়, তাই হচ্ছে একটি দেশের মোট জাতীয় আয়। সেই জাতীয় আয়কে মাথাপিছু ভাগ করে এই হিসাব করা হয়। মাথাপিছু আয় কোনো ব্যক্তির একক আয় নয়। এ আয় হলো কোনো নির্দিষ্ট সময়ে কোনো দেশের নাগরিকদের গড় আয়। অর্থাৎ কোনো নির্দিষ্ট সময়ে কোনো দেশের মোট জাতীয় আয়কে সে দেশের মোট জনসংখ্যা দ্বারা ভাগ করলে মাথাপিছু আয় পাওয়া যায়। বিবিএস সাধারণত বাজেটের আগে ৯ মাসের প্রকৃত আয় ও প্রবৃদ্ধি এবং বাকি ৩ মাসের একটা সম্ভাব্য প্রাক্কলন করে মাথা পিছু আয় ও জিডিপির প্রবৃদ্ধির তথ্য প্রকাশ করে। অর্থবছর শেষ হলে সব কিছু হিসাব করে প্রকৃত তথ্য প্রকাশ করে জানায়।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) প্রকাশিত প্রতিবেদনে দেখা যায়, সেবা খাতকে ভর করেই সাময়িক হিসাবে চলতি অর্থবছর প্রবৃদ্ধি দাঁড়িয়েছে ৫ দশমিক ৮২ শতাংশ। কারণ গত অর্থবছর চূড়ান্ত হিসাবে এ হার ছিল ৫ দশমিক ৭৮ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে কৃষি ও শিল্প খাতে প্রবৃদ্ধি কমে হয়েছে ৩ দশমিক ২১ শতাংশ ও ৬ দশমিক ৬৬ শতাংশ। বিবিএস তা দেখিয়েছে। সেবা খাতে প্রবৃদ্ধি বাড়লেও তা খুবই সামান্য। তারপরও বেড়ে গেছে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার।
বিবিএসের তথ্যমতে, চলতি অর্থবছর সাময়িক হিসাবে কৃষি খাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩ দশমিক ২১ শতাংশ, যা গত অর্থবছরে ছিল ৩ দশমিক ৩৭ শতাংশ। অর্থাৎ প্রবৃদ্ধি কমেছে শূন্য দশমিক ১৬ শতাংশ। ২০২১-২২ অর্থবছরে ছিল ৩ দশমিক ০৫ শতাংশ।
একইভাবে চলতি অর্থবছর শিল্প খাতে প্রবৃদ্ধি কমে দাঁড়িয়েছে ৬ দশমিক ৬৬ শতাংশ, যা গত অর্থবছরে ছিল ৮ দশমিক ৩৭ শতাংশ। অর্থাৎ শিল্প খাতে প্রবৃদ্ধি কমেছে ১ দশমিক ৭১ শতাংশ। শিল্প খাতের এ প্রবৃদ্ধি চার বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। কারণ ২০২০-২১ অর্থবছর শিল্প খাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ১০ দশমিক ২৯ শতাংশ ও ২০২১-২২ অর্থবছর ৯ দশমিক ৮৬ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে সেবা খাতে প্রবৃদ্ধি বেড়েছে মাত্র শূন্য দশমিক ৪৩ শতাংশ। কারণ গত অর্থবছর এ খাতে প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৫ দশমিক ৩৭ শতাংশ। ২০২১-২২ অর্থবছরে ছিল ৬ দশমিক ২৬ শতাংশ।
চলতি অর্থবছরে সাময়িক হিসাবে প্রবৃদ্ধি দাঁড়িয়েছে ৫ দশমিক ৮২ শতাংশ। কৃষি ও শিল্পে প্রবৃদ্ধি হ্রাস পাওয়ার পরও সার্বিকভাবে জিডিপি প্রবৃদ্ধি কীভাবে বাড়ল তার কোনো ব্যাখ্যা বিবিএসের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়নি। এ ছাড়া চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই প্রান্তিকে সেবা খাতে প্রবৃদ্ধি কমানোর পরও সাময়িক হিসাবে চলতি অর্থবছরে এ খাতের প্রবৃদ্ধি কেন বাড়ল তারও কোনো ব্যাখ্যা দেওয়া হয়নি। গত অর্থবছরের শুরু থেকে চলা ডলারসংকট আরও প্রকট আকার ধারণ করা, আমদানিতে বড় ধরনের ধসের ফলে শিল্প খাতে প্রবৃদ্ধি কমে যাওয়া, সরকারের উন্নয়ন বাজেট বাস্তবায়নে ধীরগতিসহ নানা কারণে চলতি অর্থবছর প্রবৃদ্ধি আরও কমবে বলেই প্রাক্কলন করেছিল বিশ্বব্যাংক।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ও অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. আতিউর রহমান খবরের কাগজকে বলেন, ‘বিবিএস চলতি অর্থবছরের প্রবৃদ্ধির যে তথ্য ৫ দশমিক ৮২ শতাংশ প্রকাশ করেছে, তা মোটামুটি ঠিক আছে। কারণ আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলও (আইএমএফ) আগেই এ রকম তথ্য প্রাক্কলন করেছে। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকও (এডিবি) কাছাকাছি ৬ শতাংশের বেশি প্রাক্কলন করেছে। শুরুতে কমলেও শেষ পর্যায়ে ভালোই করেছে প্রবৃদ্ধি। প্রথমে মূল্যস্ফীতি খারাপ অবস্থায় ছিল। তাই নতুন বাজেটে কৃষিতে আরও বরাদ্দ বাড়াতে হবে।’
এই অর্থনীতিবিদ আরও বলেন, ‘কৃষি ও শিল্প খাতের চেয়ে সেবা খাত ভালো করেছে। এটা খারাপ কিছু না। তবে শিল্পেও ভালো করতে হবে। কারণ শিল্পায়নের বিকল্প নেই। ডলারের অবমূল্যায়ন, আমদানি কমে যাওয়ায় এই অবস্থা হয়েছে। নতুন বাজেটে তাই এসব বিষয় বিবেচনা করতে হবে। যাতে কৃষি ও শিল্পের প্রবৃদ্ধি হয়। সেবা খাতের প্রবৃদ্ধি বেশি হয়েছে এটা খারাপ না। ভারতও সেবা খাতকে ভর করে এগিয়ে গেছে। কারণ সেবা খাতে অনেক কিছু জড়িত। ভারতে যা হচ্ছে বাংলাদেশেও তা দেখা যাচ্ছে।’
সম্প্রতি ডলারের রেকর্ড পরিমাণ অবমূল্যায়ন হয়েছে। তা ৩০ শতাংশ ছাড়িয়েছে। তারপরও সাময়িক হিসাবে চলতি অর্থবছর মাথাপিছু আয় বেড়েছে ৩৫ ডলার বা ১ দশমিক ১২ শতাংশ। কারণ মাথাপিছু আয় ধরা হয়েছে ২ হাজার ৭৮৪ ডলার। যা গত অর্থবছর ছিল ২ হাজার ৭৪৯ ডলার। তার আগের ২০২১-২২ অর্থবছরে ২ হাজার ৭৯৩ ডলার ছিল।
বিবিএসের প্রতিবেদনে দেখা যায়, শিল্প খাতের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ অবস্থা ছিল বিদ্যুৎ ও গ্যাস খাতে। এ খাতে গত অর্থবছর প্রবৃদ্ধি ছিল ২ দশমিক ৪৬ শতাংশ, যা চলতি অর্থবছর কমে দাঁড়িয়েছে শূন্য দশমিক ৩৩ শতাংশ ঋণাত্মক। এর মধ্যে বিদ্যুৎ খাতে প্রবৃদ্ধি ৩ দশমিক ৪০ শতাংশ থেকে কমে দাঁড়িয়েছে শূন্য দশমিক ২১ শতাংশ ঋণাত্মক বা নেতিবাচক। আর গ্যাসের প্রবৃদ্ধি ১ দশমিক ৮৪ শতাংশ ঋণাত্মক থেকে কমে দাঁড়িয়েছে শূন্য দশমিক ৯৩ শতাংশ ঋণাত্মক।
বিবিএসের তথ্যমতে, ২০২৩-২৪ অর্থবছর বৃহৎশিল্পে প্রবৃদ্ধি অনেকখানি কমে গেছে। এ শিল্পে প্রবৃদ্ধির হার ২০২২-২৩ অর্থবছর ছিল ৮ দশমিক ৫৩ শতাংশ, যা চলতি অর্থবছর হ্রাস পেয়ে হয়েছে ৬ দশমিক ৬০ শতাংশ। একইভাবে চলতি অর্থবছর ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে প্রবৃদ্ধির হারও হ্রাস পেয়েছে। গত অর্থবছর এ হার ছিল ৯ দশমিক ১৫ শতাংশ, চলতি অর্থবছর দাঁড়িয়েছে ৬ দশমিক ৮৪ শতাংশ। এ ছাড়া গত অর্থবছর কুটিরশিল্পে প্রবৃদ্ধি দাঁড়ায় ১০ দশমিক ০১ শতাংশ, যা চলতি অর্থবছর দাঁড়িয়েছে ৬ দশমিক ০৮ শতাংশ।
তবে সেবা খাতে আগের অর্থবছরে ৫ দশমিক ৩৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হলে চলতি অর্থবছরে বেড়ে ৫ দশমিক ৮০ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। এর মধ্যে ইন্স্যুরেন্সে বড় লাফ দেয়। গত অর্থবছরে এ খাতে ১ দশমিক ০৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হলেও চলতি অর্থবছরে ৫ দশমিক ৩১ শতাংশে ঠেকেছে। মানব স্বাস্থ্য ও সামাজিক কার্যক্রমেও ব্যাপকভাবে ১০ দশমিক ০৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। গত অর্থবছরে এটা হয়েছিল ৭ দশমিক ২২ শতাংশ।