![দুদকের ১০ সুপারিশ বাস্তবায়ন করুন](uploads/2024/01/31/1706678900.Editorial.jpg)
আইন মন্ত্রণালয়ের অধীন নিবন্ধন অধিদপ্তরের সাবরেজিস্ট্রার অফিসগুলোতে অনিয়ম-দুর্নীতির উৎস হিসেবে চিহ্নিত করে তা প্রতিরোধে ২০২২ সালে ১০টি সুপারিশসহ নিবন্ধন অধিদপ্তরকে একটি প্রতিবেদন দেয় দুদক। কিন্তু দুদকের দেওয়া ১০ দফা সুপারিশ বাস্তবায়ন করেনি নিবন্ধন অধিদপ্তর। সুপারিশগুলো প্রায় দুই বছর ধরে ফাইলবন্দি রয়েছে। তবে চিহ্নিত অপরাধগুলোর মধ্য থেকে বিভিন্ন অভিযোগের ভিত্তিতে ইতোমধ্যে কয়েকটি মামলা করেছে দুদক। কয়েকজনের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, দলিল নিবন্ধনের পর সময়মতো বালাম বইয়ে কপি না হওয়ায় মূল দলিল সরবরাহে কয়েক বছর দেরি করা হয় এবং সার্টিফায়েড কপি সরবরাহেও জটিলতার সৃষ্টি হয়। এ ক্ষেত্রে সেবাগ্রহীতারা দালালের খপ্পরে পড়েন এবং দ্রুত সেবা পাওয়ার জন্য উৎকোচ দিতে বাধ্য হন। এ ছাড়া দলিল রেজিস্ট্রেশনের সময় রাজস্ব হিসেবে সরকারি কোষাগারে জমা করা পে-অর্ডার, ব্যাংক ড্রাফট, চেক ইত্যাদি সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের হিসাবে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে জমা হয় না। এতে ব্যাংক ড্রাফট, পে-অর্ডার, চেকগুলো সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে গায়েব হয় এবং জালিয়াতির মাধ্যমে অর্থ আত্মসাতের সুযোগ সৃষ্টি হয়। দলিল রেজিস্ট্রেশন হওয়ার পর নোটিশ সংশ্লিষ্ট এসিল্যান্ড অফিসে পাঠানোর কথা থাকলেও তা হচ্ছে না। দাতা-গ্রহীতার মধ্যে জমির প্রকৃত বিনিময়মূল্য বেশি হলেও তা দলিল লেখক ও সাবরেজিস্ট্রারের সহায়তায় কম দেখিয়ে রেজিস্ট্রেশন করার কারণে প্রকৃত ফি পাওয়া থেকে সরকার বঞ্চিত হচ্ছে। সাবরেজিস্ট্রি অফিসে অধিকাংশ ক্ষেত্রে অবৈধ লেনদেন এসব উমেদারের মাধ্যমে হয়ে থাকে। ফলে অনিয়ম-দুর্নীতি অবিলম্বে রোধ করা প্রয়োজন।
দাতা-গ্রহীতাকে এক কপি করে দলিল দেওয়া হয় এবং এক কপি বালাম বইয়ে অনুলিপির মাধ্যমে সংরক্ষণ করা হয়। প্রতিটি দলিল ডেটাবেইজে সংরক্ষণ করা যেতে পারে। রেজিস্ট্রেশন ‘ফি’ হিসেবে প্রাপ্ত পে-অর্ডার, ব্যাংক ড্রাফট, রেজিস্ট্রারে অ্যান্ট্রিসহ সময়মতো সংশ্লিষ্ট ব্যাংকে জমা দেওয়া এবং সিটিআর রিপোর্ট সংগ্রহ করা প্রয়োজন। জমির হালনাগাদ খতিয়ানের কপি সংশ্লিষ্ট সাবরেজিস্ট্রার অফিসে সংরক্ষণ নিশ্চিত করা এবং সে অনুযায়ী দলিল নিবন্ধনের আগে জমির মালিকানা সংক্রান্ত বিষয় নিশ্চিত হওয়া প্রয়োজন। কোনো দলিল নিবন্ধনের জাল দলিল হিসেবে প্রতীয়মান হলে দেওয়ানি আদালত ছাড়া ওই দলিল বাতিল করা সম্ভব হয় না। এটি একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়া। যদি এ ক্ষেত্রে আইন সংশোধনের মাধ্যমে আপিল ও রিভিউ ক্ষমতা জেলা রেজিস্ট্রার ও তার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে (এআইজিআর) দেওয়া যায়, তাহলে দেওয়ানি আদালতে মামলাজট হ্রাস পাবে এবং জমির প্রকৃত মালিক দীর্ঘমেয়াদি হয়রানি থেকে রেহাই পাবেন।
সুপারিশ দুই বছরে বাস্তবায়ন না হলেও গত বছর রেজিস্ট্রেশন ফি, আয়করের পে-অর্ডার, ব্যাংক ড্রাফটসহ বিভিন্ন খাতের প্রায় ৩ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে একজন সাবরেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক, যা এখনো আদালতে বিচারাধীন। এদিকে একই ধরনের অভিযোগে গত বছর কয়েকজন সাবরেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নিয়েছে নিবন্ধন অধিদপ্তর।
দুদক সচিব মাহবুব হোসেন খবরের কাগজকে বলেন, দুদকের পক্ষ থেকে দেওয়া সুপারিশ বাস্তবায়ন না করা দুঃখজনক। তবে দুদকের স্বাভাবিক কার্যক্রম থেমে নেই। অভিযোগ এলেই আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
সরকারি রাজস্ব আদায়ের স্বার্থে ভূমি জরিপ অধিদপ্তরের জরিপ তথ্যের সঙ্গে নিবন্ধন অধিদপ্তরের সব পর্যায়ে ডিজিটালাইজেশন/অটোমেশন পদ্ধতি চালুর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা দরকার। সেই সঙ্গে সাবরেজিস্ট্রার ও স্টাফ বদলির ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট বদলি নীতিমালা গ্রহণ করা প্রয়োজন। এক কথায়, দুর্নীতিমুক্ত জনসেবা নিশ্চিত করতে দুদকের দেওয়া সুপারিশের ভিত্তিতে উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।