![ভিক্ষুক পুনর্বাসনে পদক্ষেপ নিন](uploads/2024/05/28/Editorial-1716870288.gif)
ভিক্ষুক নিয়ন্ত্রণে রাজধানীসহ সারা দেশে সরকারের উদ্যোগে চলছে বিভিন্ন কার্যক্রম ও প্রকল্প। রাজধানীতে বেশ কিছু এলাকা ভিক্ষুকমুক্ত হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। আবার ভিক্ষুক ধরে তাদের নির্দিষ্ট পুনর্বাসন কেন্দ্রে নিয়ে জীবনমানের উন্নয়নে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ দেওয়া ছাড়াও নানাভাবে সহায়তা করা হচ্ছে বলে সরকারি সূত্র থেকে জানা যায়। ভিক্ষুকের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণ এবং তাদের পুনর্বাসনের জন্য যেসব প্রকল্প নেওয়া বা বরাদ্দ দেওয়া হয় তা পর্যাপ্ত নয়। শহরে ভিক্ষুকের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ার পেছনে একটা বড় কারণ হলো জনসংখ্যা বৃদ্ধি। জনসংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় কর্মসংস্থানের সুযোগ কমে গেছে। আরও বড় কারণ ভিক্ষাবৃত্তিতে পরিশ্রমের প্রয়োজন হয় না। তাই দিন দিন এই পেশায় মানুষ বেশি জড়িয়ে পড়ছে। এই বিশাল জনগোষ্ঠীকে পুনর্বাসনের জন্য বাজেট আরও বাড়ানো দরকার বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন।
ভিক্ষাবৃত্তি রোধে প্রাথমিকভাবে সিটি করপোরেশনের কিছু এলাকা ভিক্ষুকমুক্ত ঘোষণা করা হয়েছিল। এসব এলাকায় মোবাইল কোর্ট পরিচালনার মাধ্যমে আটক ভিক্ষুকদের আশ্রয়কেন্দ্রে রাখার জন্য গ্রহণ করা হয় বিভিন্ন পুনর্বাসন কেন্দ্র নির্মাণের প্রকল্প। এর পেছনে বাজেটের বড় একটি অংশ বরাদ্দ দেওয়া হয়। এলাকাগুলো ভিক্ষুকমুক্ত রাখার লক্ষ্যে নিয়মিত মাইকিং, বিজ্ঞাপন, লিফলেট বিতরণসহ বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়। কিন্তু এ কর্মসূচি পুরোপুরি সফল হয়নি। এ নিয়ে সমাজসেবা অধিদপ্তরে রয়েছে প্রকল্পের ছড়াছড়ি।
ভিক্ষুকদের পুনর্বাসন কেন্দ্রে নিয়ে বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণ দেওয়ার মাধ্যমে উপার্জনের সুযোগ তৈরি করে দেওয়া হয়। তবে দুঃখের বিষয় তারা সেখান থেকে ছাড়া পেলে আবার পুরোনো পেশায় ফিরে যায়। ২০২২-২৩ অর্থবছরে ১২ কোটি টাকায় ৬৩ জেলার ৩ হাজার তিন এবং ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ১২ কোটি টাকায় ৩ হাজার ভিক্ষুককে পুনর্বাসন করা হয়। অর্থাৎ পুনর্বাসন কার্যক্রম শুরুর পর ১৪ বছরে এই সেক্টরে প্রায় ৮৭ কোটি ২৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ করেছে সরকার। এর মধ্যে ৫৪ কোটি ১০ লাখ ৯৪ হাজার টাকা ব্যয়ে পুনর্বাসনের সুবিধা পেয়েছে ১৭ হাজার ৭১০ জন। কিন্তু পুনর্বাসন করা হলেও কয়েক বছর না যেতেই বেশির ভাগ সুবিধাভোগী আগের পেশায় ফিরে আসে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক এবং সমাজ ও অপরাধ বিশেষজ্ঞ ড. তৌহিদুল হক খবরের কাগজকে বলেন, ভিক্ষুকদের সংখ্যা বৃদ্ধির পেছনে একটি কারণ হলো জনসংখ্যা বৃদ্ধি। এর ফলে কর্মসংস্থান কমে যাচ্ছে এবং প্রান্তিক পর্যায়ের মানুষ কাজ খুঁজে না পেয়ে এ পেশায় জড়াচ্ছে। তবে আরও একটি বড় কারণ হলো ভিক্ষাবাণিজ্য। এই বাণিজ্যে একটি সক্রিয় চক্র জড়িত।
মানুষের আবেগের সুযোগ নিয়ে ভিক্ষুকদের কাজে লাগিয়ে প্রতিদিন বড় অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে তারা। এই চক্র বিশেষ করে পথশিশুদের টার্গেট করে তাদের বিভিন্ন উপায়ে শারীরিকভাবে বিকলাঙ্গ করে। তারপর এই শিশুদের প্রশিক্ষণ দিয়ে রাস্তায় ভিক্ষা করতে পাঠায়। এসব শিশুকে নিয়মিত মনিটরিং করে একটি চক্র। এই সিন্ডিকেট প্রতিদিন ভিক্ষুকদের কাছ থেকে নির্দিষ্ট পরিমাণ চাঁদা আদায় করে। এমনকি ভিক্ষুকদের ১৫ থেকে ২০ দিন পর পর বিভিন্ন জায়গায় পাঠানো হয়। এর কারণ একই জায়গায় ভিক্ষা করলে ওই এলাকা থেকে বেশি দিন সহমর্মিতা পাওয়া যায় না।
প্রান্তিক পর্যায়ে শারীরিকভাবে অক্ষম যেসব মানুষ রয়েছে, সরকারি উদ্যোগে তাদের প্রশিক্ষণ এবং পুঁজি দিয়ে উপার্জন করার মতো কর্মসংস্থান তৈরি করতে হবে। যেসব কর্মক্ষম মানুষ ভিক্ষাবৃত্তিতে জড়িত তাদের জন্য আইনের যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। বিশেষ করে এসব কাজ নিয়ে যে সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে তা কঠোরভাবে দমন করতে হবে। ভিক্ষুকমুক্ত দেশ সবারই কাম্য। রাষ্ট্রীয়ভাবে সরকার ভিক্ষুকদের নিয়ে নানামুখী প্রকল্প গ্রহণ করেছে। এটি অবশ্যই ভালো উদ্যোগ। তবে এই উদ্যোগগুলোর সফল বাস্তবায়ন হোক, সেটিই প্রত্যাশা।