কিশোর গ্যাং ভয়ংকর হয়ে উঠছে। মাদক থেকে শুরু করে চাঁদাবাজি, চুরি, ছিনতাই, যৌন হয়রানিসহ নানা ধরনের মারাত্মক অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে তারা। কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা ফেসবুক পেজ খুলে গ্রুপের কার্যক্রম চালালেও তারা এখন অনেক সতর্ক। এখন তারা হোয়াটসআপ, ইমো, সিগন্যালসহ বিভিন্ন অ্যাপসে গ্রুপ খুলে নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ রক্ষা ও দল ভারী করছে। প্রতিনিয়ত তারা সদস্য সংগ্রহ করছে। এভাবে তারা সদস্য বৃদ্ধি করছে। উত্তরার ডিসকো বয়েজ ও নাইন স্টার গ্রুপের আগেকার ফেসবুকের একাধিক ছবি ও কিছু নথি খবরের কাগজের কাছে এসেছে, যা রীতিমতো ভয়ংকর।
রাজধানীর উত্তরায় ২০১৭ সালের ৬ জানুয়ারি দুই কিশোর গ্যাংয়ের দ্বন্দ্বে খুন হয়েছিল স্কুলছাত্র আদনান কবির (১২)। সম্প্রতি কারাগার থেকে বের হওয়ার পর থেকে এই কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা প্রতিনিয়ত হুমকি দিচ্ছে আদনানের পরিবারকে। সম্প্রতি এ ঘটনায় উত্তরা ছাড়তে বাধ্য হয়েছে আদনানের পরিবার। আলোচিত চাঞ্চল্যকর সেই ঘটনার ছয় বছর পেরিয়ে গেলেও বিচার পায়নি আদনানের পরিবার। উত্তরায় কিশোর গ্যাং দৌরাত্ম্য এতটুকুও কমেনি, বরং বেড়েছে। যারা আদনানকে হত্যা করেছে তারা এখন ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের ছত্রচ্ছায়ায় আরও বেপরোয়া।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ২০২২ সালের শেষের দিকে একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, উত্তরা বিভাগে সক্রিয় রয়েছে ১১টি কিশোর গ্যাং। এ ছাড়া ২০২৩ সালে কিশোর গ্যাংয়ের মধ্যকার দ্বন্দ্বে ২৫টি খুনের ঘটনা ঘটেছে। পুলিশ ও অপরাধ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মূলত কিছু রাজনৈতিক নেতার পৃষ্ঠপোষকতাই কিশোর গ্যাং সংস্কৃতি ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য দায়ী।
মাদক বাণিজ্য, চাঁদাবাজি এবং স্থানীয় পর্যায়ে কর্তৃত্ব তৈরির জন্য এলাকার শিশু-কিশোরদের নিয়ে গ্যাং তৈরি করে নিজ নিজ স্বার্থে ব্যবহার করেন নেতারা। ডিএমপির তথ্যমতে, কিশোর গ্যাং এখনো আছে। তবে আগের তুলনায় কম। তাদের দমনে পুলিশ কাজ করছে। পুলিশ প্রতিনিয়ত ব্যবস্থা নিচ্ছে। বছরে ৪০০ থেকে ৫০০ জন আটক হচ্ছে। মামলা হচ্ছে। সংশোধনাগারে দেওয়া হচ্ছে অনেককে। তারপরও কিশোর গ্যাং তৎপরতা বন্ধ হচ্ছে না। এলাকার কথিত কিছু বড় ভাই ও রাজনৈতিক নেতার ছত্রচ্ছায়ায় কিশোর গ্যাংয়ের তৎপরতা বাড়ছে।
সমাজ ও অপরাধ বিশেষজ্ঞ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ড. তৌহিদুল হক খবরের কাগজকে বলেন, শুধু উত্তরায় আদনান হত্যা নয়, রাজনৈতিক ছত্রচ্ছায়ায় কিশোর গ্যাংয়ের সদস্য বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা অনেক সময় এদের গ্রেপ্তার করলেও রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতায় যারা রয়েছে তারা গ্রেপ্তার হয় না। রাজনৈতিক গডফাদারদের আইনের আওতায় আনতে পারলে এটি কমে আসবে। এর সঙ্গে কিশোর গ্যাং দমন করতে হলে সামাজিকভাবে সবাইকে সচেতন হতে হবে। এ জন্য সমাজের দায়িত্বশীলদের এগিয়ে আসতে হবে।
রাজনৈতিক দলের ছত্রচ্ছায়ায় শিশু-কিশোররা বেশি অপরাধপ্রবণতায় ঝুঁকে পড়ে। মূলত গডফাদাররা তাদের নিজ স্বার্থেই ব্যবহার করে। কিশোর গ্যাংয়ের দৌরাত্ম্য প্রতিরোধে রাজনৈতিক গডফাদারদের আইনের আওতায় আনতে হবে। তাদের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। শিশু-কিশোররা যাতে অপরাধে ঝুঁকে না পড়ে, সে জন্য পারিবারিকভাবে নীতি-নৈতিকতার শিক্ষা জোরালো করতে হবে। সর্বোপরি সমাজ থেকে কিশোর গ্যাং অপরাধ নিয়ন্ত্রণে জনসচেতনতা বাড়াতে হবে।