ঘূর্ণিঝড় রিমালের তাণ্ডবে লণ্ডভণ্ড হয়েছে দেশের দক্ষিণ উপকূলীয় ছয় জেলা। সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাস ও প্রবল বর্ষণে পটুয়াখালীর বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। টানা বৃষ্টির প্রভাবে রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে পানি জমে দুর্ভোগও কম হয়নি নগরবাসীর। বিদ্যুৎস্পর্শে কয়েকজন মারাও গেছেন। ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের বরিশাল, খুলনা, চট্টগ্রাম বিভাগে অন্তত ১৪ জনের প্রাণহানি ঘটেছে।
তাদের অধিকাংশেরই গাছ ও ঘরধসে মৃত্যু হয়েছে। তবে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে ১০ জনের মৃত্যুর খবর দিয়েছে। সব মিলিয়ে মোট ১৯ জেলার ৩৭ লাখের বেশি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মো. মহিববুর রহমান এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে ১ লাখ ৫০ হাজার ৪৭৫ ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে ৩৬ হাজারের বেশি ঘরবাড়ি সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়েছে। নিচু এলাকাগুলোয় পানি জমে সৃষ্টি হয়েছে জলাবদ্ধতার।
ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে ভারী বর্ষণে রাঙামাটিতে পাহাড়ধসের শঙ্কা দেখা দিয়েছে। পানির নিচে বন্দরনগরী চট্টগ্রাম। বিদ্যুৎ-বিচ্ছিন্ন হয়েছে বরগুনা জেলা। এবারও ঢাল হয়ে খুলনা অঞ্চলকে রক্ষা করেছে সুন্দরবন। বন বিভাগের তথ্যমতে, ৩০টি হরিণের মৃতদেহ পাওয়া গেছে। জলোচ্ছ্বাসে বনের প্রায় ৮৫টি মিষ্টি পানির পুকুরে লবণ পানি ঢুকেছে। বাগেরহাটে ঘূর্ণিঝড় রিমালের তাণ্ডব এবং জলোচ্ছ্বাসে জেলার বিভিন্ন এলাকার নদীপাড়ের ৬১ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ভেঙে গেছে।
জেলার বিভিন্ন এলাকায় ১০ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। পুকুর ও ঘেরের মাছ ভেসে যাওয়ায় চরম দুর্ভোগে পড়েছেন এসব গ্রামের বাসিন্দারা। তথ্যমতে, রিমালের প্রভাবে ২ কোটি ৩৫ লাখ গ্রাহকের বিদ্যুৎ ভোগান্তি হয়েছে। ১২ হাজারের বেশি টাওয়ারে নেটওয়ার্ক সংযোগ ব্যাহত হয়েছে। অন্যদিকে মোবাইল নেটওয়ার্ক ছাড়া প্রায় ৩ লাখ ব্রডব্যান্ড গ্রাহক ইন্টারনেট সেবা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)।
ঘূর্ণিঝড়-পরবর্তী পরিস্থিতির জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কাজ করছে। প্রবণ ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় সরকারের সহযোগী প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করছে বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি। ঘূর্ণিঝড়-পরবর্তী জানমালের নিরাপত্তায় উপকূলীয় অঞ্চলজুড়ে ৮০ হাজার স্বেচ্ছাসেবকের সঙ্গে কাজ করতে মাঠে আছে বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির ২ হাজারের বেশি স্বেচ্ছাসেবক।
ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে যেকোনো ধরনের পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। এ সময় দেখা যাবে তীব্র খাওয়ার পানির সংকট। ডায়রিয়া, কলেরা দেখা দিতে পারে। পানিবাহিত রোগগুলো ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। স্বাস্থ্য বিভাগকে তাদের কার্যক্রম যথাযথভাবে পালন করতে হবে। ইতোমধ্যে উপকূলবর্তী এলাকার মানুষের খাবারসংকট দেখা দিয়েছে।
ঘরবাড়িহীন মানুষ খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবনযাপন করছে। ঘূর্ণিঝড়-পরবর্তী সময়ে অনেক সময় লুটপাটের ঘটনা ঘটতে পারে, এ জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা তৎপর থাকবেন। বিদ্যুৎ-বিচ্ছিন্ন হয়ে আছে উপকূলীয় জেলাগুলো। বিদ্যুৎ বিভাগকে ওই এলাকাগুলোয় দ্রুত সমস্যার সমাধান করতে হবে। পানি উন্নয়ন বোর্ডকে বেড়িবাঁধ দ্রুত সংস্কার করতে হবে। পরিস্থিতি উত্তরণে স্ব স্ব বিভাগকে তাদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করতে হবে। সরকারের পাশাপাশি দেশের বিত্তবানদের অসহায় দুর্গত মানুষের পাশে থেকে তাদের সাহাযার্থে এগিয়ে আসতে হবে।