![বেনাপোল বন্দরে পণ্য আমদানি বাড়াতে কার্যকর ব্যবস্থা নিন](uploads/2024/05/30/Editorial-1717047059.gif)
দেশের সর্ববৃহৎ স্থলবন্দর বেনাপোল কাস্টমস হাউসে রাজস্ব আদায়ে বড় ধরনের ঘাটতি দেখা দিয়েছে। এই বন্দর দিয়ে পণ্য আমদানি প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে। সংকট কাটাতে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হলে সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব ঘাটতির মুখে পড়বে। একদিকে বৈশ্বিক মন্দা এবং ডলারসংকট, অন্যদিকে কাস্টমসের ব্যাপক কড়াকড়ি ও হয়রানির কারণে গত ১০ মাসে ৬৭ কোটি ৮৯ লাখ টাকা রাজস্ব ঘাটতি হয়েছে।
ইতোমধ্যে পচনশীল বাণিজ্যিক ও উচ্চ শুল্ককরের পণ্য এ বন্দর দিয়ে আমদানি কমে গেছে। ফেব্রিক্স, আয়রন, স্টিল, আপেল ও মোটরগাড়ির যন্ত্রাংশ আমদানিকারকরা এ বন্দর দিয়ে ব্যবসা বন্ধ করেছেন। রাজস্ব আদায়ের বড় ধসের অন্যতম কারণ হলো কাস্টমস হাউসে ডকুমেন্ট সাবমিট করার পর কর্মকর্তাদের অতিরিক্ত হয়রানি। এতে ব্যবসায়ীদের মধ্যে একধরনের আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে পণ্যের এইচএস কোড ও ভ্যালু নিয়ে জটিলতার কারণে রাজস্ব আদায় কমে গেছে।
তথ্যমতে, চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের ১০ মাসে রাজস্ব আদায় লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫ হাজার ২৮১ কোটি টাকা। তার বিপরীতে রাজস্ব আদায় হয়েছে মাত্র ৫ হাজার ২১৩ কোটি ১১ লাখ টাকা। অর্থাৎ ৬৭ কোটি ৮৯ লাখ টাকার রাজস্ব আদায় কম হয়েছে। একদিকে কাস্টম হাউসের ব্যাপক কড়াকড়ি, অন্যদিকে ডলারসংকট ও দামের ঊর্ধ্বগতি কোনোভাবে নিয়ন্ত্রণে না আসায় আমদানিকারকরা আমদানি করতে পারছেন না।
এলসি খুলতে না পারায় ব্যবসায়ীরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন এবং তাদের লোকসান গুনতে হচ্ছে। আমদানি কম হওয়ায় সরকারের রাজস্ব আয় বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। দ্রুত সংকট না কাটলে বছর শেষে আমদানির পরিমাণ কমে আরও বড় ধরনের সংকটের কবলে পড়তে হতে পারে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। গত ১৩-১৪ বছর ধরে বেনাপোল কাস্টমসে রাজস্ব আদায়ে বড় ধরনের ঘাটতি হচ্ছে।
কাস্টমস সূত্র জানায়, যেসব পণ্য ভারত থেকে আমদানি হয়, তার ওপর প্রতি মাসে নির্দিষ্ট পরিমাণ রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড। আমদানি স্বাভাবিক থাকলে লক্ষ্যমাত্রার কাছাকাছি পৌঁছায় কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। কিন্তু আমদানি কমে যাওয়ায় কয়েক বছর ধরে রাজস্ব আদায় লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারছে না বেনাপোল কাস্টমস।
বন্দরসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা বলছেন, ডলারের দাম ঊর্ধ্বগতি আর সংকটের কারণ দেখিয়ে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো কয়েক বছর ধরে এলসির সংখ্যা কমিয়েছে। এতে আমদানি কমে গেছে। দেখা দিয়েছে রাজস্ব ঘাটতি। ব্যাংকগুলো ডলারের দাম অযৌক্তিক বাড়ানোয় এলসি খুলতে পারছেন না ব্যবসায়ীরা। সরকারের নির্ধারিত ডলার রেট থাকলেও ব্যাংকগুলো বেশি রাখছে। এর বিরূপ প্রভাবে দেশে শিল্পকারখানায় উৎপাদন ব্যাহত ও আমদানি পণ্যের মূল্য লাগামহীন বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। এতে সরকারও রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
বেনাপোল কাস্টম হাউসের যুগ্ম কমিশনার শাফায়েত হোসেন খবরের কাগজকে বলেন, এ বন্দর দিয়ে প্রতিদিন যেখানে ৫০০ থেকে ৬০০ ট্রাক পণ্য আমদানি হতো, বর্তমানে ডলারসংকটের কারণে প্রতিদিন তা ৩০০ ট্রাকে এসে দাঁড়িয়েছে। ডলারসংকটের জন্য ব্যবসায়ীরা ব্যাংকে এলসি খুলতে পারছেন না। যে কারণে আমদানি কমে গেছে। আমদানি কমলে রাজস্ব আদায় কমে যাবে- এটাই স্বাভাবিক।
বেনাপোল কাস্টমসে রাজস্ব ফাঁকি রোধে জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি অনিয়ম ধরা পড়েছে। সেগুলোতে রাজস্ব পরিশোধ করে ২০০ পারসেন্ট জরিমানা আদায় করা হয়েছে। রাজস্ব ফাঁকি দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। তবে ব্যবসায়ীরা কোনো হয়রানির শিকার হচ্ছেন না।
আমদানি বাড়লে সরকারের রাজস্ব আয়ও বাড়বে, এ জন্য সরকারকে আরও কার্যকর ভূমিকা পালন করতে হবে। কাস্টমস হাউসের ডকুমেন্ট সাবমিট ব্যবস্থা সহজ এবং কর্মকর্তাদের সেবামূলক মনোভাব নিয়ে কাজ করতে হবে। বন্দরে হয়রানি বন্ধের ব্যবস্থা নিতে হবে। পণ্যের এইচএস কোড ও ভ্যালু নিয়ে জটিলতার নিরসন করতে হবে।