![মধ্যপ্রাচ্যে সেনা সমস্যায় যুক্তরাষ্ট্র](uploads/2024/04/21/1713669368.us-army.jpg)
ইসরায়েলকে গত সপ্তাহে ইরানি ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিহত করতে সহায়তা করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এ বিষয়টির মধ্য দিয়ে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে যে তারা ইরানের যেকোনো হামলা ঠেকাতে এবং ইসরায়েল যদি প্রত্যক্ষভাবে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে, সেক্ষেত্রে সহযোগিতা করতে সক্ষম।
তবে বর্তমান ও সাবেক মার্কিন কর্মকর্তারা বলছেন, মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সেনারা বড় ও দীর্ঘমেয়াদি কোনো সংঘাত সামাল দেওয়ার মতো অবস্থানে নেই। এ রকম কোনো পরিস্থিতি তৈরি হলে সামরিক প্রয়োজনীয়তার বিষয়টি নিয়ে ভাবতে হবে পেন্টাগনকে। ট্রাম্প প্রশাসনে মধ্যপ্রাচ্যের প্রতিরক্ষাবিষয়ক উপ-সহকারী সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী মাইকেল মালরয় বলেন, ‘আমার মনে হয় না, ইরানের সঙ্গে প্রত্যক্ষ যুদ্ধ শুরু হলে ইসরায়েলকে সমর্থন দেওয়ার মতো যথেষ্ট বাহিনী সেখানে আছে।’
তেহরান অবশ্য আগেভাগেই ইঙ্গিত দিয়ে রেখেছে, তাদের এ মুহূর্তে পাল্টা আঘাত হানার কোনো ইচ্ছা নেই। মধ্যপ্রাচ্যে অনেক দিন থেকেই সেনাসংখ্যা কমিয়ে আনছিল যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু ছয় মাস আগে শুরু হওয়া গাজা যুদ্ধের বাস্তবতায় আবারও ওই অঞ্চলে সামরিক উপস্থিতি বাড়াতে দেখা যায় তাদের। সেখানে নিয়োজিত হওয়া বেশির ভাগ সেনাকেই অবশ্য সাময়িকভাবে পাঠানো হয়েছিল। ইরান-ইসরায়েল উত্তজনায় সমীকরণ আবারও পাল্টে গেছে। নতুন করে প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে।
এক সময় মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনীর নেতৃত্ব দেওয়া অবসরপ্রাপ্ত সামরিক জেনারেল জোসেফ ভোটেল বলেন, ‘ওই অঞ্চলে প্রয়োজনীয় ও দীর্ঘমেয়াদি সক্ষমতা ঠিক রাখার জন্য কী করা প্রয়োজন, সে বিষয়টি খতিয়ে দেখতে হবে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনীকে।’
ভোটেল ও অন্য সাবেক মার্কিন কর্মকর্তারা বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনী গত শনিবার গোয়েন্দা তথ্যের কারণে সফলভাবে ড্রোন ভূপাতিত করতে পেরেছে। পেন্টাগন আগে থেকেই হামলার সময় ও লক্ষ্যবস্তু সম্পর্কে জানতে পেরেছিল।
ভোটেল বলেন, ‘আমার মনে হয়, বড় উদ্বেগটি হলো- দীর্ঘসময় ধরে পাল্টা প্রতিক্রিয়া দেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে কি না আমাদের, সে বিষয়টি।’
যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তা বলেন, ‘ইরান ইসরায়েলের সঙ্গে পুরোপুরি যুদ্ধে জড়াতে চায় না। তেহরান শুক্রবারের হামলাকে ততটা গুরুত্ব দেয়নি। তার পরও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পরিস্থিতি এখনো অননুমেয়, বিশেষ করে যত দিন হামাস-ইসরায়েল দ্বন্দ্ব থাকবে, তত দিন এটি চলবে।’
সেন্ট্রাল কমান্ডের প্রধান ও যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনীর জেনারেল মাইকেল ‘এরিক’ কুরিল্লা জানান, গত মাসে ওই অঞ্চলের জন্য আরও সেনা পাঠানোর অনুরোধ করেছেন তিনি। পেন্টাগন যত সেনা পাঠিয়েছে, তার চেয়েও বেশি সেনা চান কুরিল্লা। তবে বাইডেন প্রশাসন এ বিষয়টিকে সেভাবে অগ্রাধিকার দিচ্ছে না।
কুরিল্লা বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের ইন্টিলিজেন্স অ্যাসেট বিপজ্জনক হারে কমে গেছে। ইন্টিলিজেন্স অ্যাসেট বলতে সাধারণত গোয়েন্দা কর্মকাণ্ডে সহায়তা করে এমন ব্যক্তি বা বস্তুকে বুঝায়। রয়টার্সের প্রতিবেদনও বলছে, গাজা যুদ্ধের শুরু থেকে সৈন্য কমে যাওয়ার বিষয়টি মার্কিন কৌশলকে প্রভাবিত করেছে।
উদাহরণ হিসেবে বলা যায় হুতিদের কথা। ইরান সমর্থিত গোষ্ঠীটি লোহিত সাগরে আন্তর্জাতিক জাহাজ চলাচলের পথকে লক্ষ্য করে হামলা শুরু করার আগে যে অস্ত্র মজুদ করছে, সে বিষয়টির বিস্তারিত ছিল না যুক্তরাষ্ট্রের হাতে।
কর্মকর্তারা বলছেন, ‘মধ্যপ্রাচ্যে দীর্ঘমেয়াদে আরও মার্কিন সেনা পাঠানো ও ইন্টিলিজেন্স অ্যাসেট বৃদ্ধির কাজটি কঠিন হয়ে উঠতে পারে। নাম না প্রকাশের শর্তে বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে এক কর্মকর্তা বলেন, সেনারা ইউরোপজুড়ে ছড়িয়ে আছে এবং তাদের অতিরিক্ত কোনো ব্যবস্থাপনা চক্রের মধ্য দিয়ে যেতে হচ্ছে না। এখানে মূল মনোযোগ থাকার কথা এশিয়ায়।’
আরেক কর্মকর্তা বলেন, ‘উত্তেজনা বৃদ্ধি পাওয়া সত্ত্বেও এটি এখনো অস্পষ্ট যে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনী এশিয়া বা ইউরোপ থেকে মার্কিন সেনাদের সরিয়ে আনতে চায় কি না।’ সূত্র: রয়টার্স