![ধাক্কা খেল বিজেপি, কংগ্রেসের চমক](uploads/2024/06/04/bjp vs congreskk-1717509091.jpg)
ভারতের রাজনীতিতে বলা হয়ে থাকে, শাসন ক্ষমতা দখল করতে হলে উত্তর প্রদেশকে কব্জা করতে হবে। উত্তর প্রদেশে যারা জিততে পারবে, তারাই দিল্লিতে সরকার গঠন করার লক্ষ্যে এগিয়ে থাকবে। এবারও তার কোনও ব্যতিক্রম হল না।
উত্তর প্রদেশে বড় ধাক্কা খেয়ে ভারতের লোকসভা নির্বাচনে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা থেকে বিজেপি এখনও অনেকটাই পিছিয়ে। সেখানে কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইন্ডিয়া জোট চমক দেখিয়েছে। বিজেপির চেয়ে বেশি আসনে এগিয়ে আছে। একই সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গেও বিপর্যস্ত হয়েছে মোদি-শাহের দল। এর পাশাপাশি কংগ্রেস একক দক্ষতায় ১০০ আসনের মাইল স্টোন ছুঁয়েছে। তবে এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত গণনা প্রবণতা থেকে স্পষ্ট, ভারতের মূল স্রোতের রাজনীতিতে কংগ্রেসের পুনরুত্থান ঘটতে চলেছে।
একই সঙ্গে স্পষ্ট হয়েছে আরও দুটি বিষয়। ঢক্কানিনাদ করে রামমন্দির এবং নতুন সংসদ ভবন উদ্বোধন করেও দেশ এমনকি উত্তরপ্রদেশের রাজনীতিতেও বিজেপি ভোটারদের আস্থা অর্জন করতে পারেনি। পশ্চিম বাংলার ক্ষেত্রে অবশ্য কংগ্রেস খুব ভালো কিছু করে উঠতে পারেনি। এমনকি প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর পেছাতে পেছাতে তিন নম্বরে চলে যাওয়া (৮৬ হাজার ভোটে পরাজিত) রীতিমতো উদ্বেগ তৈরি করেছে বাংলার রাজনৈতিক চলচিত্রে। প্রসঙ্গত, অধীর চৌধুরী লাগাতার গত পাঁচবারের এমপি ছিলেন। পশ্চিমবঙ্গে আশাতীত ভাল ফল করেছে তৃণমূল কংগ্রেস।
এখানে বলে রাখা দরকার ভোটের পর যাবতীয় এক্সিট পোল ভুল প্রমাণিত হয়েছে। শুধু ভুল নয়, এগুলো ছিল ভুয়া এবং বানোয়াট। সব জরিপই বিজেপিকে প্রায় ৩৮০ আসন পাইয়ে দিয়েছিল। কিন্তু বাস্তব পরিস্থিতি দেখেই আন্দাজ করা যাচ্ছিলো দিল্লির এন ডি এ সরকার এবার খুব স্বস্তিতে নেই।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি গুণে গুণে ১৮ বার পশ্চিমবঙ্গে প্রচারে এসেছেন। তার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহও এসেছেন প্রায় প্রতি সপ্তাহেই। প্রচারের শেষ পর্বে মোদী মন্তব্য করেছিলেন, ভারতের মধ্যে সবচেয়ে ভাল ফল করবে পশ্চিমবঙ্গ বিজেপি। অন্যদিকে অমিত শাহ বারবার এই রাজ্যে এসে সিএএ এবং এনআরসির হুমকি দিয়ে গেছেন। সোজাসুজি মেরুকরণের রাজনীতির পথে গিয়েছিলো বিজেপি। সি এ এ করবোই, কেউ ঠেকাতে পারবে না-এই হুঙ্কার শোনা গেছে মোদি-শাহের কণ্ঠে।
ফলে পশ্চিমবঙ্গের ভোট ভাগ হয়ে গিয়েছিল দুভাগে। একদিকে বিজেপির স্পষ্ট মেরুকরণ, অন্য দিকে তৃণমূলের পাইয়ে দেওয়ার রাজনীতি। লক্ষ্মীর ভাণ্ডার আর গুচ্ছ গুচ্ছ সুবিধেভোগী প্রকল্পের মাধ্যমে ডাইরেক্ট ক্যাশ ট্রান্সফারের রাজনীতি। গণনা প্রবণতাতেই স্পষ্ট, বাংলার মানুষ মেরুকরণের রাজনীতিকে প্রত্যাখ্যান করেছে।
অন্যদিকে রাহুল গান্ধীর নেতৃত্বে বিরোধী জোট একটা প্রশ্ন খুব স্বার্থকভাবে তুলে আনতে পেরেছে। তা হল, ২৭৭ আসন পেলেই যখন সরকার গড়া যায় তখন মোদি বাহিনী বারবার ৪০০ অতিক্রম করার হুঙ্কার দিচ্ছে কেন? কী এমন বাড়তি হাত-পা গজাবে ৪০০ আসন পেলে! বিদায়ী লোকসভায় বিজেপি ৩০৩ আসন নিয়ে তো পাঁচ বছর সরকার চালালো। তাহলে কী ৪০০ আসন পেলে বিজেপি সংবিধান বদলে দেবে? ভারতকে হিন্দু রাষ্ট্র ঘোষণা করবে?
সুচারুভাবে রাহুলের তোলা এই প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে মোদি নির্বাচনের শেষ পর্যায়ে অনেকখানি ব্যাকফুট চলে যান। তাকে বলতে হয়েছে, ৪০০ পারের কথাটা বিরোধীদের চাপে রাখার জন্য বলা। এমনকি এও বলতে হয়েছে, স্বয়ং বাবাসাহেব আম্বেদকর ফিরে আসলেও সংবিধান পাল্টাবে না। এমনকি দুনিয়াকে চমকে দিয়ে এও বলেছিলেন, আমি সাক্ষাৎ ঈশ্বরের সন্তান। নরেন্দ্র মোদির এই বেপরোয়া ডিফেন্সিভ স্টান্সই স্পষ্ট করে দিয়েছিল এনডিএ এবার চাপের মধ্যে আছে।
২০১৪ সালে সাকুল্যে ৪৪টি আসন জিতেছিল সোনিয়া গান্ধীর দল। ২০১৯ সালে গতবারের সঙ্গে যোগ হয়েছিল আরও ৮ আসন, অর্থাৎ গত লোকসভা ভোটে কংগ্রেস পেয়েছিল মোটে ৫২টি আসন। এইসঙ্গে শোচনীয় পরাজয় হয়েছিল ইউপিএ জোটের।
তবে এখনও পর্যন্ত অবশ্যই এনডিএ জোট অনেকটাই এগিয়ে। তারা বর্তমানে ২৯৭ আসনে এগিয়ে রয়েছে। অন্যান্যরা ২০ আসনে এগিয়ে। তবে আসল কথা কংগ্রেসের পুনর্জাগরণ।
বর্তমানে ৯৯ আসনে এগিয়ে রয়েছে রাহুলের নেতৃত্বাধীন কংগ্রেস। মাঝেমাঝেই একশো ডিঙিয়ে যাচ্ছে এগিয়ে থাকা আসনের সংখ্যা। আরও এক চমক বিজেপির ঘাঁটি উত্তরপ্রদেশে। সেখানে যোগী ম্যাজিক ফিকে করে অধিকাংশ আসনে এগিয়ে কংগ্রেস। এখনও পর্যন্ত ইন্ডিয়া জোট এগিয়ে ৪৩ আসনে। এনডিএ সেখানে রয়েছে ৩৬-এ। অন্যান্য ১।
রায়বরেলিতে বিপুল ভোটে এগিয়ে রয়েছেন রাহুল গান্ধী। কেরলের ওয়ানাড়েও ১ লক্ষের বেশি ভোটে এগিয়ে তিনি। দুই আসনে রাহুল জয় পেলে, ইন্ডিয়া জোট তথা কংগ্রেসের এই ট্রেন্ড দিনের শেষে ফলাফলে পরিণত হলে কৃতিত্ব দিতে হবে কংগ্রেসের যুবরাজকেই। ‘পাপ্পু’ কটাক্ষের জন্য আঙুল কামড়াতে হবে গেরুয়া শিবিরকে।