![নতুন মেয়াদে ক্ষমতায় মোদি, যেসব প্রভাব ফেলতে পারে বিশ্বে](uploads/2024/06/10/modi-effect-1717984483.jpg)
লোকসভা নির্বাচনে টানা তৃতীয়বারের মতো বিজেপি জয়ী হওয়ার মধ্য দিয়ে নরেন্দ্র মোদি আবারও ভারতের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছেন। ইতোমধ্যে মোদি ভারত ও এর ক্রমবর্ধমান অর্থনীতিকে জলবায়ু পরিবর্তন ও উন্নয়নের মতো বৈশ্বিক ইস্যুগুলোতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার একটি পক্ষ করে তুলেছেন। আর নয়াদিল্লিকে যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম প্রধান নিরাপত্তা অংশীদার এবং গ্লোবাল সাউথের একজন উচ্চাকাঙ্ক্ষী নেতা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন মোদি।
তিনি যেভাবে বিশ্বমঞ্চে ভারতকে তুলে ধরেছেন তা সবচেয়ে জনবহুল দেশটির ইতোপূর্বে আর কোনো নেতা করতে পারেননি। ৭৩ বছর বয়সী মোদির এই বিজয় ও তার হিন্দু জাতীয়তাবাদী ভারতীয় জনতা পার্টিকে (বিজেপি) আরও পাঁচ বছর বিশ্বে ভারতের মর্যাদা বাড়ানোর সুযোগ দেবে। প্রভাবশালী এই নেতার আগামী যাত্রা বিশ্বে কেমন প্রভাব ফেলবে, বিশ্লেষকদের মতামতের ভিত্তিতে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে সিএনএন।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নতুন এ সময়কালে পারমাণবিক শক্তিধর প্রতিবেশী চীন ও পাকিস্তানের সঙ্গে বৈরী সম্পর্ক এবং বিরোধপূর্ণ সীমান্ত সামলানোর সুযোগ পাবেন মোদি।
তবে এক দশক ধরে মোদি যে প্রভাব নিয়ে ক্ষমতা উপভোগ করেছেন, এবারের নির্বাচনের ফলাফল তাকে পুরোপুরি ভিন্ন একটি অবস্থানে নিয়ে গেছে। বর্ণিল এই নেতা ও তার দল বিজেপি একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পাওয়ায় তাদের ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য জোটের অংশীদারদের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে।
বিশ্লেষকদের ধারণা, যখন নাগরিক স্বাধীনতা এবং তরুণদের বেকারত্ব বৃদ্ধির মতো সমস্যা সমাধান করার কথা, তখন ভারতে ধর্মীয় সহিংসতায় ইন্ধন জোগানোর ফলে নির্বাচনে বড় একটা ধাক্কা খেয়েছেন মোদি।
‘দ্য আনফিনিশড কোয়েস্ট: ইন্ডিয়াস সার্চ ফর মেজর পাওয়ার স্ট্যাটাস ফ্রম নেহরু টু মোদি’ বইয়ের লেখক টি ভি পাল বলেন, ‘এখন মোদিকে জোট সরকার ধরে রাখতে (অভ্যন্তরীণ বিষয়গুলোতে) অনেক সময় দিতে হবে। তার এ মেয়াদে বিশ্বমঞ্চে ভারতের প্রভাব দেখানোর ধারণাটি অনেক কম কার্যকর হতে পারে। লোকজন যতটা ভেবেছিল বৈদেশিক নীতির বিষয়গুলো (নির্বাচনে) সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে ততটা প্রভাব ফেলতে পারেনি।’
ক্ষমতার রাজনীতি
ওয়াশিংটনের সঙ্গে নয়াদিল্লির সম্পর্ক মোদিকে বিশ্বমঞ্চে একজন প্রভাবশালী প্রতিদ্বন্দ্বীতে পরিণত করেছে। জাপান ও অস্ট্রেলিয়ার পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের কোয়াড নিরাপত্তা জোটের একটি পিলার ভারত। ক্রমবর্ধমানভাবে শক্তিশালী ও দৃঢ় হয়ে ওঠা চীনের বিষয়ে একই ধরনের উদ্বেগের মুখে প্রতিরক্ষা ও উচ্চ প্রযুক্তি খাতে সহযোগিতা বিস্তৃত করে তুলছে যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত।
লোকসভা নির্বাচনে জয়ের পর মোদিকে অভিনন্দন জানিয়ে পাঠানো এক বার্তায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন যুক্তরাষ্ট্র-ভারতের বন্ধুত্বের সম্পর্ক টেনে বলেছেন, ‘আমরা সীমাহীন সম্ভাবনার একটি যৌথ ভবিষ্যতের দ্বার উন্মোচনের পর থেকে এ সম্পর্ক কেবল বাড়ছে।’
বিশ্লেষকদের মতে, অদূর ভবিষ্যতে এই সম্পর্ক আরও জোরদার হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
বদলে যাবে ভারত?
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নির্বাচনে মোদির নড়বড়ে জয়ের পর বিশেষভাবে লক্ষ রাখতে হবে, নতুন সরকার দক্ষিণ এশিয়ার প্রতিবেশীদের সঙ্গে ভারতের সম্পর্কের ওপর প্রভাব ফেলে নাকি নমনীয় অবস্থান নেয়।
গত এক দশকে হিন্দু জাতীয়তাবাদ কেবল দেশের অভ্যন্তরে বিভাজন ও সহিংসতা উসকে দেওয়াই নয়, বরং তারা দেখিয়েছে কীভাবে এই অঞ্চলে বিশেষত পাকিস্তানের সঙ্গে সংঘাত উসকে দিতে হয়। প্রায়ই বিজেপির উত্তপ্ত বাগাড়ম্বরের লক্ষ্যবস্তু হয়েছে পাকিস্তান।
এখন মোদির বিজেপিকে তার জোট মিত্রদের স্বার্থের জবাব দিতে হবে এবং পুনরুত্থিত বিরোধীদের কাছ থেকে আরও কঠোর জবাবের মুখোমুখি হতে হবে, যা তার হিন্দু জাতীয়তাবাদী এজেন্ডাকে ম্লান করতে পারে।
আর বিশ্লেষকরা জোর দিয়ে বলেছে, বিজেপি এই নতুন রাজনৈতিক বাস্তবতার ভিত্তিতে নীতিগত লক্ষ এবং বাগাড়ম্বরের ক্রমাঙ্ক কীভাবে করে তা দেখতে সময় লাগবে। সূত্র: সিএনএন