ঢাকা ১৯ আষাঢ় ১৪৩১, বুধবার, ০৩ জুলাই ২০২৪

দামি পানির গোপন রহস্য

প্রকাশ: ২৫ মে ২০২৪, ০১:২৬ পিএম
আপডেট: ২৫ মে ২০২৪, ০১:২৬ পিএম
দামি পানির গোপন রহস্য
সব ধরনের পানি সবার ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে নেই। পানিতে মিনারেলস যেন যথাযথ থাকে, খাওয়ার আগে এটুকু দেখে নিলেই যথেষ্ট । (সংগৃহীত)


মানুষ কিংবা অন্য কোনো প্রাণী পানি ছাড়া বেঁচে থাকতে পারে না। তাই পানির অপর নাম জীবন। সব ধরনের প্রাণের বেঁচে থাকার জন্য পানি অপরিহার্য। পৃথিবীতে ৭০ দশমিক ৯ শতাংশ অংশ জুড়ে পানির অস্তিত্ব রয়েছে। দেশে এক লিটার পানি কিনতে খরচ হয় ২৫ থেকে ৪০ টাকা। শুনলে অবাক হবেন বিশ্বের এমন পানিও আছে, যার এক বোতলের দাম লাখ লাখ টাকা!

প্রকৃতির দান পানির কেন এত দাম হবে, তা নিয়ে কৌতূহলের শেষ নেই সাধারণ মানুষের। এমন কী আছে হাইড্রোজেন আর অক্সিজেনের এই মিশেলে, যার জন্য আকাশছোঁয়া দাম? এই বিলাসী পানি কখনো হয়তো সংগ্রহ করা হয়েছে হাওয়াই দ্বীপের ভলকানিক পাথর থেকে, কোনো ক্ষেত্রে তা সংগৃহীত নরওয়ের কোনো গলিত হিমবাহ থেকে বা তাসমানিয়ায় ঘাসে জমা শিশিরবিন্দু থেকে। এ ধরনের পানিকে বলা হয় ‘পিয়োরেস্ট অব পিয়োর’। তবে এসব দামি পানির বিশেষ গুণও রয়েছে। তাই তার এত কদর। প্রকৃতির দান পানির কেন এত দাম হবে, তা নিয়ে কৌতূহলের শেষ নেই সাধারণ মানুষের। জেনে নিন বিশ্বের সবচেয়ে দামি পানির রহস্য ও উপকারিতা কী কী রয়েছে-

স্প্রিং ওয়াটার
স্প্রিং ওয়াটার। এ পানির নাম যেমন সুন্দর তেমনি এর দামও আকাশছোঁয়া। এই পানি সংগ্রহ করা হয় নদী বা ঝরনার উৎসমুখ থেকে অর্থাৎ তা হিমবাহের বরফগলা পানি, যাতে সেরা মিনারেলস পাওয়া যায় এবং তা বিশুদ্ধ। স্প্রিং ওয়াটার সংগ্রহের বেশ কিছু নিয়ম আছে। সেই জায়গায় ওই অবস্থায় তা সংগ্রহ করতে হবে এবং বোতলবন্দিও সেখানেই করা হবে। তাই যথাযথভাবে নিয়ম মেনে স্প্রিং ওয়াটার সংগ্রহ করা হচ্ছে কি না এবং তা প্রকৃতই স্প্রিং ওয়াটার কি না সেটা বলা সম্ভব নয়, যদি না তা খুবই বিখ্যাত কোনো সংস্থার হয়, যারা সব সময় নিজেদের মান সম্পর্কে সচেতন। পুষ্টিবিদদের মতে, এই পানি অবশ্যই শরীরের জন্য খুব ভালো।

অ্যাকোয়া দ্য ক্রিন্তালো ট্রিবুতো আ মোদিগিলানি
বিশ্বের সবচেয়ে দামি পানি মনে করা হয় ‘অ্যাকোয়া দ্য ক্রিন্তালো ট্রিবুতো আ মোদিগিলানি’কে। কারণ, এতে লুকিয়ে রয়েছে হাজারো রহস্য। এই পানিতে নাকি মেশানো রয়েছে ৫ গ্রাম ২৪ ক্যারেটের খাঁটি সোনা। এতে পানিতে ক্ষারের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। তাছাড়া এর পানি সংগ্রহ করা হয় পৃথিবীর তিনটি স্থান যেমন- ফ্রান্সের একটি ঝরনা, ফিজি দ্বীপের একটি প্রস্রবণ এবং আইসল্যান্ডের হিমবাহ থেকে। শুধু পানি নয়, ৭৫০ মিলিলিটার পানির বোতলেও রয়েছে চমক।

কারণ, এ পানির বোতল তৈরি করা হয়েছে ২৪ ক্যারেটের সোনা দিয়ে। বোতলটির নকশা করেছেন ফার্নান্দো আলতামিরানো নামে একজন জনপ্রিয় শিল্পী। এক দশক আগে এ পানির বোতলের দাম ছাড়িয়ে যায় বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৬০ লাখ। এখন এর দাম আরও বেড়েছে। তাহলে বোঝাই যাচ্ছে, সাধারণ মানুষের সাধ্যের অনেকটা বাইরে এই পানি। এই জলের দামের আর এক কারণ অবশ্য তার বোতলের ডিজাইন এবং প্যাকেজিং। প্ল্যাটিনামে মোড়া সীমিত সংস্করণের অসাধারণ দেখতে এই বোতলে ছয় হাজার হীরা খচিত। পানিতে মিশ্রিত রয়েছে ২৩ ক্যারেটের পাঁচ গ্রাম সোনার ভস্ম। অতএব বোঝাই যাচ্ছে দামের কারণ।

নিগারি
মানুষের ওজন কমাতে, শক্তি জোগাতে এবং ত্বকের গুণমান সমুন্নত রাখতে সাহায্য করে নিগারি পানি। এ পানি সম্পর্কে এমনটাই বলা হয়ে থাকে। সমুদ্রপৃষ্ঠের এক হাজার ফুট নিচে হাওয়াই দ্বীপ থেকে এ পানি সংগ্রহ করা হয়। এ পানি অন্যান্য ব্যয়বহুল বোতলজাত পানির চেয়ে বেশি তৃষ্ণা মেটাতে সক্ষম, এ পানি আরও বেশি তৃপ্তিদায়ক বলে বিবেচনা করা হয়। অনেক প্রখ্যাত চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ এবং ফিটনেস প্রশিক্ষক এ পানি পান করতে সুপারিশ করে থাকেন। ৭৫০ মিলিলিটারের এক বোতল পানি ৪০২ ডলারে বিক্রি হয়।

ফিলিকো
পানিও যে সুস্বাদু হয় তা ফিলিকো পানি পান করলেই বোঝা যায়। দাবা খেলার গুটির সঙ্গে পরিচয় থাকলে খুব সহজেই ফিলিকোর বিশেষভাবে ডিজাইন করা বোতলগুলো চেনা যাবে। নকশায় রাজকীয় ভাব রাখতে এর বোতলের নকশা করা হয়েছে দাবার রাজা এবং রানির গুটির মতো করে। স্বরভস্কি ক্রিস্টালের কাচের বোতল দেখতে বেশ মার্জিত এবং এর পানিও খুব সুস্বাদু। এ পানি সংগ্রহ করা হয় জাপানের কোবের নুনোবিকি নামে পরিচিত অতি বিশুদ্ধ ঝরনা থেকে। এ পানির ৭৫০ মিলিমিটারের বোতলের দাম রাখা হয়েছে ২১৯ ডলার।

ব্লিং এইচ২০
আরেকটি দামি পানির নাম ব্লিং এইচ২০। এ পানি অত্যাধুনিক রেস্তোরাঁয় পাওয়া যায়। ব্লিং ওয়াটার যেখান থেকে আসে ঠিক সেখানেই বোতলজাত করা হয়। টেনেসির গ্রেট স্মোকি পর্বতমালার গোড়ায় অবস্থিত ইংলিশ মাউন্টেন ঝরনা থেকে এ পানি সংগ্রহ করা হয়। এ পানির স্বাদ অক্ষুণ্ন রাখতে ৯টি পর্যায়ে পরিশোধন করা হয়। এ পানি অত্যাধুনিক রেস্তোরাঁ, স্পাগুলোয় পরিবেশন করা হয়। ব্লিংয়ের বোতল খোলার অভিজ্ঞতা অনেকটা দামি শ্যাম্পেইনের বোতল খোলার মতো। এর প্রতিটি ৭৫০ মিলিলিটার বোতলের দাম রাখা হয়েছে ৪০ ডলার।

ভিন
ভিনের পানি এসেছে ফিনল্যান্ড থেকে। একে বিশ্বের সবচেয়ে বিশুদ্ধ এবং সতেজ পানির অন্যতম হিসেবে বিবেচনা করা হয়। যে ঝরনা থেকে এ পানি সংগ্রহ করা হয় সেটি ফিনিশ ল্যাপল্যান্ডের কাছে অবস্থিত। ফিনল্যান্ডের প্রাকৃতিক আর্কটিক অঞ্চল বলে পরিচিত কোনিসাজো ঝরনায় পৌঁছানোর আগে এ পানি প্রাকৃতিকভাবে বেশ শীতল পরিবেশের মধ্য দিয়ে ফিল্টার করা হয়। এরপর এ পানি সংগ্রহ করা হয়। তৃষ্ণা মেটাতে এর অস্বাভাবিক গুণসহ আরও বেশকিছু কারণে এ পানিকে বিশেষ স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। এর ৭৫০ মিলিলিটারের বোতলের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ২৫ ডলার।

অ্যাকোয়া ডেকো
অ্যাকোয়া ডেকো অন্যতম ব্যয়বহুল পানি। ডেকো শব্দের অর্থ শৈল্পিক। পানির বোতল হিসেবে এ বোতলের শৈল্পিক সৌন্দর্য সেটাই প্রমাণ করে। মানুষের হাতের ছোঁয়া কানাডার একটি বিশুদ্ধ ঝরনা থেকে এ পানি দৃষ্টিনন্দন চমৎকার এ বোতলে সংগ্রহ করা হয়।

২০০৭ সালে এ পানি সেরা নন-কার্বনেটেড পানীয়র স্বীকৃতি হিসেবে স্বর্ণপদক জয় করেছিল। বিলাসী পানি পায়ীদের কাছে এ পানির বিশেষ কদর রয়েছে। বিলাসবহুল রেস্তোরাঁ, হোটেল এবং স্পাতে বিক্রি হওয়া বিশ্বের সবচেয়ে ব্যয়বহুল ৭৫০ মিলিলিটারের বোতলজাত এ পানির দাম রাখা হয়েছে ১২ মার্কিন ডলার।

ডিস্টিলড ওয়াটার
ডিস্টিলড ওয়াটার পানি ফুটিয়ে বাষ্পে পরিণত করা হয়। তারপর সেই বাষ্পকে ফের পানিতে পরিবর্তিত করা হয়। ফলে এর মধ্যে কোনো মিনারেলস থাকে না। এই পানি খেলে কোনো রকম পেটের সমস্যা হবে না। কিন্তু ক্রমাগত যদি শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় খনিজবিহীন ডিস্টিলড ওয়াটার খাওয়া হয়, তা শরীরের জন্য উপযোগী নয়।

অ্যালক্যালাইন ওয়াটার
অ্যালক্যালাইন ওয়াটার ইদানীং খুবই জনপ্রিয় হয়েছে সেলেব্রিটিদের সুবাদে। সাধারণ পানির পিএইচ লেভেলের চেয়ে অ্যালক্যালাইন ওয়াটারের পিএইচ লেভেল বেশি থাকে। তাই মনে করা হয় যাদের অ্যাসিডিটির সমস্যা খুব বেশি তারা অ্যালক্যালাইন ওয়াটার খেলে ভালো থাকবেন। রিসার্চ বলছে না যে দীর্ঘদিন ধরে অ্যালকালাইন ওয়াটার খাওয়া শরীরের জন্য ভালো। এতে কিছুটা হলেও মিনারেলস থাকে, তবে তা যে শরীরের জন্য ১০০ শতাংশ ভালো, তা বলা যায় না। আবার অনেকে ভাবেন অ্যালক্যালাইন ওয়াটার ক্যানসারের সম্ভাবনা কমিয়ে দেয় এবং তা বয়স ধরে রাখে—এর কোনোটিই কিন্তু এখন পর্যন্ত প্রমাণিত নয়। অ্যালক্যালাইন ওয়াটারে মিনারেলস ইনফিউজ করা হলে তাকে ব্ল্যাক ওয়াটার বলা হয়। এই পানিও খুব দামি।

সব ধরনের পানি সবার ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে নেই। পানি যেন পরিস্রুত হয় এবং তাতে মিনারেলস যেন যথাযথ থাকে, খাওয়ার আগে এটুকু দেখে নিলেই যথেষ্ট। এতে পেটের গোলমাল বা অন্য রোগের ভয় থাকে না।

পানি বিশুদ্ধ করার সবচেয়ে পুরোনো ও কার্যকর পদ্ধতির একটি হলো সেটা ফুটিয়ে নেওয়া। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের (সিডিসি) নির্দেশনা হলো, পানিতে বলক এসে ফুটতে শুরু হওয়ার পর মাত্র ১ মিনিট জ্বালালেই পানিতে থাকা ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া ও প্রোটোজোয়া নিষ্ক্রিয় হয়। পানি ফোটানোর মাধ্যমেই ক্ষতিকর জীবাণু দূর করা সম্ভব হলেও পুরোপুরি আশঙ্কামুক্ত থাকতে ফিল্টারের মাধ্যমে বিশুদ্ধ করা যেতে পারে।

কলি

বিশ্বের সবচেয়ে বড় গরুর খামার

প্রকাশ: ২৯ জুন ২০২৪, ০৭:১৭ পিএম
আপডেট: ২৯ জুন ২০২৪, ০৭:১৭ পিএম
বিশ্বের সবচেয়ে বড় গরুর খামার
ছবি: সংগৃহীত

প্রাচীনকাল থেকেই মানুষ এবং কৃষিকাজ ওতপ্রোতভাবে জড়িত। কৃষিকাজের মাধ্যমেই জীবিকা নির্বাহ করত মানুষ। কৃষিকাজের সুবাদে মানুষ তৈরি করেছে খামার। এককালে গ্রামাঞ্চলে প্রায় প্রত্যেক বাড়িতে খামার দেখতে পাওয়া যেত। গরুর, ছাগল কিংবা হাঁস-মুরগির খামার ছিল কৃষকদের বাড়ির অংশ। বর্তমানে গ্রামাঞ্চলে খামার তেমন দেখা না গেলেও বিভিন্ন রূপে প্রাতিষ্ঠানিক রূপে দেখা মেলে খামারের।

বিভিন্ন কোম্পানি অর্থনৈতিক খামার তৈরি করে। যা ডেইরি ফার্ম নামেও পরিচিত। বর্তমানে ডেইরি ফার্ম থেকে আমিষ উপাদানের একটা বিরাট অংশ পাওয়া যায়। আজকে আমরা জানব বিশ্বের সবচেয়ে বড় খামার সম্পর্কে। যা অন্যতম বৃহত্তম দেশ চীনে অবস্থিত।

বিশ্বের বড় বড় স্থাপনা, বাঁধ, বিল্ডিং নির্মাণে চীনের জুড়ি মেলা ভার। বিশাল উঁচু উঁচু বাঁধ কিংবা কৃত্রিম সূর্য বানানো চীন তৈরি করেছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় খামার। চীনের উত্তর-পূর্বে অবস্থিত মুদানজিয়াং সিটি মেগা ফার্ম বিশ্বের সবচেয়ে বড় ডেইরি ফার্ম এবং অন্যতম বৃহত্তম কৃষি খামার। প্রায় ২২ লাখ ৫০ হাজার একর জমিতে অবস্থিত এই খামার মূলত ডেইরি ফার্ম। দুগ্ধজাত পণ্য উৎপাদনে নির্মাণ করা হয়েছে বিশাল এই খামার।

২০১৫ সালে রাশিয়ান দুগ্ধজাত পণ্যের ওপর যখন ইউরোপীয় ইউনিয়ন নিষেধাজ্ঞা দেয় তখন রাশিয়ান এবং চীনা বিনিয়োগকারীরা চুক্তি করে গড়ে তুলে বিশাল এই খামার। রাশিয়া এবং চীনের বিশালসংখ্যক দুধ এবং দুগ্ধজাত পণ্যের চাহিদা মেটাতে সাহায্য করে এই খামার।

মুদানজিয়াং সিটি মেগা ফার্মে প্রায় ১ লক্ষাধিক গরু রয়েছে। যেখানে থেকে প্রায় ৮০০ মিলিয়ন লিটার দুধ উৎপাদন করা হয়। অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড এবং উরুগুয়ে থেকে দুগ্ধজাত গরু এই খামারে আমদানি করা হয়। গরুগুলোকে শস্য ও পশুখাদ্যের মিশ্রণ খাওয়ানো হয়। গরুগুলোকে মাঠে চরানোর পরিবর্তে ঘরের ভেতর রাখা হয়। বিশাল জমির ওপর সারি সারি ঘর। আর সেইসব ঘরের ভেতর গরু রাখা হয় আমেরিকান পদ্ধতিতে।

যেখানে খুব সীমিত সূর্যের আলো এবং পর্যাপ্ত বাতাস পাওয়া যায়। গরুগুলোর থাকার বিছানা দিনে দুবার পরিবর্তন করা হয়। গাভিগুলো বিশেষ প্রক্রিয়ায় দিনে তিনবার দুধ দেয়। গাভির সংখ্যা বৃদ্ধি এবং অধিক দুধ দোহনে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়। বর্তমানে এই খামার যুক্তরাজ্যের বৃহত্তম খামার থেকে ৫০ গুণ বড়।

শুধু রাশিয়া নয় চীনের জনগনের প্রাণিজ আমিষের চাহিদা পূরণে সাহায্য করছে। প্রতি বছর এখানে গাভি উৎপাদন ৩০ শতাংশ করে বৃদ্ধি পাচ্ছে। যা রাশিয়ার আগের আমদানির তুলনায় বেশি। বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম গরুর খামারটিও চীনে অবস্থিত। চীনের আনহুইতে অবস্থিত খামারটি সিটি মেগা ফার্মের প্রায় অর্ধেক। 
সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া, এগ্রিকালচার ডেইরি, ডেইলি মেইল

/আবরার জাহিন

নারীদের ভয়ে ঘরে বন্দি ৫৫ বছর!

প্রকাশ: ২৯ জুন ২০২৪, ০৭:১০ পিএম
আপডেট: ২৯ জুন ২০২৪, ০৭:১০ পিএম
নারীদের ভয়ে ঘরে বন্দি ৫৫ বছর!
ছবি: সংগৃহীত

স্বভাবতই মানুষ বিপরীত লিঙ্গের প্রতি বেশি আকর্ষণ অনুভব করে। কিছু ব্যতিক্রম বাদ দিলে এটাই স্বাভাবিক। পুরুষরা নারীদের প্রতি এবং নারীরা পুরুষদের প্রতি আকর্ষণ বোধ করে কিন্তু আফ্রিকান শহর রুয়ান্ডার এক ব্যক্তি তার জীবনের ৫৫ বছর নারীদের ভয়ে একটি ঘরে কাটিয়েছেন! ভাবা যায়!

কলিটক্সে নজামউইতা (Callitxe Nzamwita) নামের ৭১ বছর বয়সী সেই পুরুষ জানিয়েছেন, তিনি নারীদের দেখলে আতঙ্কিত হন এবং ভীষণ ভয় পান। তাই ৫৫ বছর ধরে কোনো নারীকে দেখেননি তিনি এবং এটা তিনি করেছেন নিজের ইচ্ছাতেই! তার এই নারী আতঙ্কের কারণে তিনি ৫৫ বছর ধরে নিজেকে এমনভাবে বন্দি করে ফেলেছেন, যাতে তাকে নারীদের মুখোমুখি না হতে হয়। নারীদের দেখবেন না বলে এই ব্যক্তি প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।

আর এজন্য কলিটক্সে নজামউইতা প্রায় ১৫ ফিট উচ্চতায় নিজের জন্য বাড়ি তৈরি করেছেন। নারীদের দেখবেন না বলে এই ব্যক্তি সর্বদাই সচেতন থাকেন। তাই সেখানকার নারীরা তার ঘরের দিকে বিভিন্ন ধরনের খাবার এবং এবং পোশাক নিক্ষেপ করলেও তিনি তাতে সাড়া দেন না। তার ঘরের দরজাও খোলেন না। যখন সবাই চলে যায় তখন বাইরে ফেলা খাবার এবং পোশাক তিনি ঘরের ভেতরে নিয়ে যান এবং ব্যবহার করেন।

কলিটক্সে জানান, আমি নিজেকে আলাদা করে রেখেছি এবং আমার বাড়িতে বেড়া দেওয়া আছে কারণ আমি নিশ্চিত করতে চাই যেন নারীরা আমার কাছাকাছি না আসে। প্রতিবেশীরা জানান, যখনই তিনি তার বাড়ির আশপাশে কোনো নারী আছেন এমন অনুভব করেন, তখনই তিনি বাড়ির ভেতরে চলে যান এবং নিজেকে তালাবদ্ধ করে রাখেন। চিকিৎসকদের ভাষ্যমতে, কলিটক্সে গাইনোফোবিয়া নামক একটি মানসিক রোগে ভুগছেন, যেখানে নারীদের প্রতি ভয় তৈরি হয় একজন পুরুষের মনে।

মূলত গাইনোফোবিয়া বা গাইনেফোবিয়া হলো নারীদের একটি রোগাক্রান্ত এবং অযৌক্তিক ভয়, এক ধরনের নির্দিষ্ট সামাজিক ফোবিয়া। এটি প্রাচীন পৌরাণিক কাহিনির পাশাপাশি আধুনিক ক্ষেত্রেও পাওয়া যায়। অল্পসংখ্যক গবেষক এবং লেখক গাইনোফোবিয়ার সম্ভাব্য কারণগুলো উপস্থাপন করার চেষ্টা করেছেন। প্রাচীন পৌরাণিক কাহিনিতে রহস্যময়, জাদুকর দেহ-পাত্র বা ভীতি প্রদর্শনকারী মহান দেবী হিসেবে নারীর ধারণা প্রচলিত।

ভারতে দেবী কালী দ্য টেরিবল হলেন বিশ্বের মাতা এবং মানবজীবনের ভয়ংকর, বিভীষিকাময় এবং রক্তপিপাসু ধ্বংসকারী। তিনি নারী অবতারের বিস্তৃত অ্যারের মাধ্যমে তার ধ্বংসকে আংশিকভাবে প্রকাশ করেন এবং মহান দেবী হিসেবে নারীকে প্রায়শই প্রাচীন গ্রিক পুরাণে মৃত্যুর দেবী হিসেবে চিত্রিত করা হয়েছিল। উদাহরণস্বরূপ, প্রাচীন গ্রিক পৌরাণিক কাহিনিতে কমপক্ষে সাতজন নারী দেবীকে স্তন্যদানকারী মা এবং মৃতদের রানি হিসেবে চিত্রিত করা হয়েছে।

নারীকে ভয় পাওয়া প্রাচীন পৌরাণিক কাহিনির পাশাপাশি আধুনিক ক্ষেত্রেও পাওয়া যায় আর তা ডাক্তারদের ভাষ্যমতে গাইনোফোবিয়া নামক এক ধরনের মানসিক রোগ। আর কলিটক্সে নজামউইতা গাইনোফোবিয়ায় আক্রান্ত। কলিটক্সে নজামউইতা জানান, কীভাবে বিপরীত লিঙ্গের মানুষ অর্থাৎ নারীরা তার ভয়ের কারণ হয়ে ওঠে। ১৬ বছর বয়সে তিনি অনুভব করেন যে, নারী ঘনিষ্ঠতার ভয় সহ্য করা খুব বেশি কঠিন। আর তখনই তিনি সিদ্ধান্ত নেন যে, যেহেতু তিনি তার চারপাশের নারীদের সহ্য করতে পারেন না তাই তিনি তার বাড়ির চারপাশে একটি কাঠের বেড়া তৈরি করেন এবং তারপর থেকে ৫৫ বছর তার বাড়ির বাইরে পা রাখেননি। নারীদের ভয় পাওয়ার কারণেই তিনি নিঃসঙ্গ থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

/আবরার জাহিন

 

এক টুকরো গোশত

প্রকাশ: ২৯ জুন ২০২৪, ০৭:০৭ পিএম
আপডেট: ২৯ জুন ২০২৪, ০৭:০৭ পিএম
এক টুকরো গোশত
ছবি: খবরের কাগজ

দুই হাঁটু একপ্রকার বাঁকা হয়ে ছেলেটি হাঁটছে। ছেলেটির দুই হাতের তালু একসঙ্গে যেন লাগানো। বয়সের চোখে হাসিবের দিকে তাকালে বলতে হবে ১৫ বছরের এক কিশোর। হাসিবের অদ্ভুত চলনে কারও ভ্রূক্ষেপ নেই।

হাসিব তার চিরাচরিত নিয়মানুযায়ী বাহাদুর শাহ পার্ক চক্কর দিচ্ছে। হঠাৎ করেই হাসিব পার্কের মেঝেতে বসে পড়ল। তার বাঁ চোখ থেকে ঝরঝর করে পানি পড়ছে। চোখের পানির সঙ্গে গালে থাকা বালুগুলো নিচে পড়ছে। প্রতিটি মানুষের হরেক রকম বিশেষণ থাকলেও হাসিবের একরকম বিশেষণ। তা হলো অদ্ভুত। যেমন- হাসিব কখনো কান্না করে না। তবে খুব দুঃখবোধ যখন হাসিবকে কাঁদায়, তখন শুধু বাম চোখ দিয়ে কান্না করে।

হঠাৎ গরুর হাম্বা শব্দটি হাসিবকে কাঁপিয়ে তুলল। মেইন রাস্তার অনেকগুলো ট্রাক থেকে একপ্রকার গগনবিদারী আওয়াজ হলো। হাসিব ঘাড় ঘুরিয়ে দেখতে পেল, প্রায় ১০টি ট্রাকে গরু আর গরু। এমন পরিবেশ দর্শনে উপস্থিত সবাই আনন্দে চিৎকার শুরু করল। আর হাসিব হাসতে শুরু করল। হাসিব নিজেও জানে না এ হাসির কারণ।

রাত নামল। সেই সঙ্গে হাসিবের চোখে ঘুমও নামল। ঘড়ির কাঁটা বলছে, এখন রাত ৯টা বাজে। হঠাৎ আকাশে কীসের যেন আওয়াজ হলো। এ ভয়ংকর আওয়াজে হাসিব থতমত খেয়ে ঘুম থেকে জেগে উঠল। হাসিব চোখ কচলাতে কচলাতে দেখতে পেল, এ শহর আতশবাজির আর্তনাদে মিথ্যা আনন্দে মত্ত। হাসিব পাশে থাকা একটি ছেলেকে বলল, ‘ভাই এইল্লা না ফুটাইয়া টেহাডা বালা কামে লাগাইলে অয় না?’ ছেলেটি এ কথা শুনে একটি বাজিতে আগুন লাগিয়ে হাসিবের দিকে নিক্ষেপ করল। বাজির বিকট আওয়াজে হাসিব ‘ও মাগো’ বলতে ভুল করল না। সে কিছু না বলে ভয়ে ঘুমিয়ে পড়ল। এভাবেই রাতের আকাশে অজস্র টাকা আতশবাজির রূপে নিঃশেষ হলো।

পবিত্র ঈদুল আজহার সালাত আদায়ে সবাই ঈদগাহে সমবেত হয়েছে। সম্মানিত ইমাম সালাম ফিরানোর পর খুতবা পেশ করলেন। সবাই বুকে বুক মিলিয়ে প্রশান্তির প্রশ্বাসে বলছে, ঈদ মোবারক।

হাসিব সালাত শেষে বাহাদুর শাহ পার্কে আসল। পার্কে এসে দেখতে পেল, অনেকেই পশু জবাই করেছে। নিচে পড়ে থাকা একটা পলিথিন নিয়ে হাসিব ভাবতে লাগল, সবাই দেখি গোশত সংগ্রহ করতেছে, তাইলে আমিও শুরু করি। যেই ভাবা সেই কাজ। হাসিব পলিথিন নিয়ে একটি জবাই করা গরুর মালিককে বলল, ‘ভাই কয়েক টুকরো গরুর গোশত দিবেন’। গরুর মালিক এক টুকরো গোশত দিয়ে বলল, ‘বোকা! কয়েক টুকরো নয়; বলবি এক টুকরো গোশত দেন। যে কথা বললে গোশত পাবি, সে কথাটা বলবি’।

এবার হাসিব বাহাদুর শাহ পার্কের বাইরে রাস্তার পাশে জবাই করা গরুর মালিককে বলল, ‘ভাই এক টুকরো গোশত দিবেন’? এ কথা শোনামাত্র লোকটি বিরক্তির সঙ্গে ধাক্কা দিয়ে বলল, ‘সর তো পাগল ছাগল’। এমন আচমকা ধাক্কায় জিপ গাড়ির চাকার নিচে হাসিবের মাথা চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে গেল।

বাহাদুর শাহ পার্কের দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশরা পার্কের একটি ফাঁকা স্থানে হাসিবের লাশ দাফন করল। হঠাৎ একদিন কবরের উপরে একটি ফেস্টুন দেখা গেল। সেখানে লেখা ছিল ‘এক টুকরো গোশত’। আমি এ কবরের দিকে তাকিয়ে বললাম, ‘হাসিব তুমি জানবে না, কেউ তোমার কাহিনিটা সমাজের কাছে পৌঁছে দিয়েছে’। হঠাৎ করে অনুভব করি, আমার বা চোখ থেকে পানি ঝরছে। 


লেখক: ইবনু মাসউদ, দেবিদ্বার, কুমিল্লা /আবরার জাহিন

পকেট মোমবাতি

প্রকাশ: ২৯ জুন ২০২৪, ০৭:০৩ পিএম
আপডেট: ২৯ জুন ২০২৪, ০৭:০৩ পিএম
পকেট মোমবাতি
ছবি: সংগৃহীত

১৯ শতকের শেষ দিকে ও ২০ শতকের শুরুতে ইউরোপীয় পতিতালয়গুলোয় এক ধরনের ছোট মোমবাতি ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হতো। ‘বুগিস দে পোচে’ (পকেট মোমবাতি) নামের এ মোমবাতিগুলো পতিতালয়ের মোমবাতি হিসেবে পরিচিতি পেয়েছিল। বিশেষ কারণে এটি ব্যবহারের জন্য এ নামে ডাকা হতো।

বলছি ভিক্টোরিয়ান যুগের কথা। সে সময় ইউরোপে স্কুলের চেয়ে বেশি ছিল পতিতালয়ের সংখ্যা। তবে সমাজের ঊর্ধ্বস্থ নারীরা এ ধরনের পেশার সঙ্গে কখনোই জড়াতেন না। যে সময়ের ঘটনা, তখন নারীরা এত বেশি বৈষম্যের শিকার হতেন যে, পতিতাবৃত্তি ছাড়া অন্য কোনো উপায়ে তারা তেমন উপার্জন করতে পারতেন না।

পতিতা নাম দিয়ে এ গোষ্ঠীকে বোঝানো হতো যে তারা অত্যন্ত নিচু শ্রেণির। সমাজের উত্তম ও ঊর্ধ্বস্থ নারীরা কখনোই এ ধরনের পেশার সঙ্গে জড়িত হতেন না। যেসব নারী এ কাজের সঙ্গে যুক্ত হতেন, তাদের বলা হতো ‘ফলেন উইমেন’ অর্থাৎ ‘পতিত নারী’। সে সময় ইউরোপে পতিতাবৃত্তি সম্পূর্ণরূপে বৈধ ছিল। এমনকি পুরুষদের এতে উৎসাহিত করা হতো। সে যুগের পুরুষরা যৌন ইচ্ছার জন্য একটি প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর প্রয়োজন বলে মনে করতেন, যাতে তারা তাদের দৈনন্দিন জীবনের নানা মানসিক চাপ থেকে বেরিয়ে আসতে পারেন। এমনকি বর্তমান সময়েও ইউরোপের প্রায় সব দেশেই পতিতাবৃত্তি আইনত বৈধ রয়েছে।

বিশ্বের সবচেয়ে প্রাচীনতম পেশাগুলোর একটি হলো পতিতাবৃত্তি। তবে কোনোকালে কোনো দেশের মানুষই বিষয়টি নিয়ে তেমন স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেনি। ১৮৮০ থেকে ১৯০৫ সালের মধ্যে ‘বুগিস দে পোচে’ নামের ম্যাচবক্সের মতো বাক্সে ছোট এক ধরনের মোমবাতি পাওয়া যেত। বাক্সের কভারে থাকত কোনো নারীর ছবি। বাক্সের একপাশে থাকা একটি ছোট গর্তে রেখে মোমবাতিগুলো ব্যবহার করা হতো। ফ্যাকাশে সাদা এসব মোমবাতি সর্বোচ্চ ৫ থেকে ৭ মিনিট জ্বলতে পারত।

মূলত মোমবাতিগুলো টাইমার হিসেবে ব্যবহার করতেন তখনকার যৌনকর্মীরা। খদ্দের পতিতার ঘরে অবস্থানের পরপরই একটি মোমবাতি জ্বালানো হতো। মোমবাতি না নেভা পর্যন্ত সময় পাবে খদ্দের। অনেক সময় কেউ কেউ মোমবাতির সুতা এমনভাবে ছেঁটে রাখতেন, যাতে কম সময়ে নিভে যায়। তবে পতিতালয়ে এভাবে মোমবাতি ব্যবহারের ঘটনাটির সত্যতা উদঘাটন করতে গিয়ে কেউ কেউ বলছেন, এটি আসলে একটি গুজব ছাড়া কিছুই নয়। ‘পকেট মোমবাতি’ কথাটির চেয়ে ‘পতিতালয়ের মোমবাতি’ অনেক বেশি মনোযোগ আকর্ষণ করতে সক্ষম। তাই এমন একটি মুখোরচক ইতিহাস রচনার মাধ্যমে এ পণ্যটি প্রচার এবং বিক্রি বাড়ানোর চেষ্টা করা হয়।

ছোট মোমবাতিগুলো ব্যবহার করা হতো যখন একটি ম্যাচের কাঠির চেয়ে আরেকটু বেশি সময় আলোর প্রয়োজন পড়ে। আরও জানা গেছে, গোল্ড রাশ বছরগুলোয় এ ধরনের মোমবাতি পশ্চিম মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে জনপ্রিয় ছিল। তখন এ মোমবাতিগুলো ঠিক ৭ মিনিটের জন্য জ্বলেছিল। ১৮৬৭ সালের ফরাসি বই ‘Le dernier mot de Rocambole’-এ ‘Bougies de poche anglaise’ এর উল্লেখ রয়েছে। তারা এগুলো ইংরেজি পকেট মোমবাতি হিসেবে জানত। তবে সেগুলো মাত্র ৩ মিনিটের জন্য পুড়েছে।
কারও কাছে তেল না থাকলে বা অস্থায়ী আলো পেতে এগুলো ব্যবহৃত হতো। আবার কারও কারও কাছে ফসফরাস ডোবানো ডগা ছিল, যাতে মোমবাতিগুলো ম্যাচস্টিকের মতো আলোকিত হতে পারে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ডয়েচেস হিস্টোরিচেস মিউজিয়ামের অ্যাকাউন্টে এ ধরনের মোমবাতির কিছু ছবি পাওয়া গেছে। সেখানে তারা এমন কিছু তথ্য জানিয়েছে, যার মধ্যে সংশ্লিষ্ট ঘটনার সঙ্গে বেশ সাদৃশ্য রয়েছে। ছবিগুলোয় দেখা গাছে, ম্যাচবক্সের মতো দেখতে ছোট মোমবাতির বাক্সের কোনোটির গায়ে চমৎকার একজন নারীর ছবি। কোনোটিতে নাইট, পুরুষ, এমনকি ঝুড়িওয়ালা নারীকেও দেখা গেছে। একটি ওয়েবসাইট ‘Worthpoint.com’-এ এসব মোমবাতির কিছু বিজ্ঞাপন রয়েছে, যেখানে তারা এগুলো বিক্রি করে থাকে।

অপর এক ইতিহাস বলছে, প্রাচীন রোমে নারী ক্রীতদাসদের সেনাদের জন্য যৌন পরিষেবা দিতে বাধ্য করা হতো। সেখানে পতিতালয়গুলো ব্যারাক ও শহরের দেয়ালের কাছাকাছি ছিল। তখন প্রথাটি এমন ছিল, পতিতার ঘর খোলা আছে তা বোঝাতে সেখানে প্রজ্বলিত মোমবাতি প্রদর্শন করা হতো।

/আবরার জাহিন

রাসেলস ভাইপারে আতঙ্ক নয়

প্রকাশ: ২৯ জুন ২০২৪, ০৬:৫৮ পিএম
আপডেট: ২৯ জুন ২০২৪, ০৬:৫৮ পিএম
রাসেলস ভাইপারে আতঙ্ক নয়
রাসেলস ভাইপার। ছবি: সংগৃহীত

রাসেলস ভাইপার। বর্তমান সময়ে আলোচিত এক সাপের নাম। রাসেলস ভাইপারের দংশনে মানুষের মৃত্যু হবেই এমনটা ভাবার কোনো কারণ নেই। মৃত্যু হয় অবহেলায়। সর্পদংশনের পর সঠিক চিকিৎসা করালে এটাকে পাত্তা দেওয়ার কিছুই নেই।

কিন্তু হঠাৎ করে এ সাপের উৎপাত কেন শুরু হলো? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাসেলস ভাইপার সবসময়ই কমবেশি ছিল। কিন্তু খাদ্যের অভাবে সেভাবে বংশবিস্তার করতে পারেনি। এখন জমিতে একাধিকবার ফসল হচ্ছে। ফলে বাড়ছে ইঁদুর। এই ইঁদুর খেয়েই সাপ বংশবিস্তার করতে পারছে। আবার এখন মোবাইলে সাপের ছবি তুলে তা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া যাচ্ছে। মানুষ সহজেই জানতে পারছে। এমন ব্যবস্থা আগে সেভাবে ছিল না বললেই চলে। ফলে রাসেলস ভাইপার থাকলেও মানুষ তা জানত না।

এই সাপের গায়ের রং এবং প্যাটার্নের সঙ্গে মিল থাকায় অনেকেই বিষহীন বালুবোড়া সাপের সঙ্গে বিষাক্ত রাসেলস ভাইপারকে গুলিয়ে ফেলেন। আবার অনেকে চিনেনই না। ঝোপঝাড়, পরিত্যক্ত জমি কমে যাওয়ায় এই সাপ জমিতে, আইলে বসবাস করছে। আর এর নির্মমতার প্রথম শিকার হচ্ছে কৃষকরা। নদনদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় এই সাপ পার্শ্ববর্তী কোনো দেশ থেকে আসতে পারে। এমনটাও বলেছেন অনেকে।

যুক্তরাষ্ট্রের অশোকা ফেলো, বন্যপ্রাণী ও সাপ বিশেষজ্ঞ আবু সাইদ। বাংলাদেশের সাপ ও সর্পদংশন প্রতিরোধ ও চিকিৎসাবিষয়ক বইয়ের অন্যতম লেখক তিনি। রাসেলস ভাইপার সম্পর্কে তিনি বলেন, স্বাধীনতার পর বাংলাদেশে মধুপুরের শালবন, চট্টগ্রামের পটিয়া, খুলনা, রাজশাহীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে রাসেলস ভাইপার বা চন্দ্রবোড়া সাপের বিস্তৃতি ছিল। ২০০২ সালে সর্বশেষ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে দুটি সাপ মারা হয়, যা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের জাদুঘরে আছে। এরপর ২০০২ থেকে ২০১৩ পর্যন্ত বাংলাদেশে কোনো রাসেলস ভাইপার বা চন্দ্রবোড়া সাপের খবর পাওয়া যায়নি। এমনকি স্বাধীনতার পর বাংলাদেশে কোনো রাসেলস ভাইপার দংশিত রোগীর সন্ধানও পাওয়া যায়নি।

২০১৩ সালে রাজশাহীর আমনুরা উপজেলার ২২ বছরের এক ছাত্র বাড়ির পাশের জঙ্গলে অজগরের বাচ্চা ভেবে সাপ ধরতে গিয়ে হাতে দংশিত হয়। পরে সাপটি মেরে রাজশাহী মেডিকেল কলেজে গেলে সেই ছবি আমাদের কাছে পাঠালে সেটিকে চন্দ্রবোড়ার বাচ্চা বলে শনাক্ত করা হয়। সেটি ছিল বাংলাদেশের রাসেলস ভাইপার বা চন্দ্রবোড়া সর্পদংশিত রোগীর হাসপাতালে যাওয়ার প্রথম রেকর্ড। পাঁচ ডোজ অ্যান্টিভেনম দিলেও ১৪ দিন পরে ছেলেটি মারা যায়। তারপরই আমরা বন্যপ্রাণী গবেষক এবং চিকিৎসকরা চন্দ্রবোড়া সাপ নিয়ে ব্যাপক গবেষণা শুরু করি।

রাসেলস ভাইপার বা চন্দ্রবোড়া সাপটি মূলত পদ্মা নদী এবং এর বিভিন্ন শাখা নদী দিয়ে বিভিন্ন জেলার চরাঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে। এখন পর্যন্ত দেশের ২৮টি জেলায় রাসেলস ভাইপারের অবস্থান, দংশন, মৃত্যু ও হতাহতের খবর পাওয়া গেছে।

চন্দ্রবোড়া সাপ ডিম পাড়ে না, এটি সরাসরি বাচ্চা দেয়। সাধারণত ২০ থেকে ৪৫টি বাচ্চা দেয়, তবে সর্বোচ্চ ৭৫টি বাচ্চার রেকর্ড রয়েছে। বাচ্চাগুলো বাঁচার হার অনেক বেশি, সেজন্য এরা দ্রুত বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ছে। তাছাড়া রাসেলস ভাইপার বা চন্দ্রবোড়া ভালো সাঁতার কাটতে পারে।

তবে এতদিন নদীর চরাঞ্চল এলাকায় রাসেলস ভাইপারের উপস্থিতি থাকলে এখন তা লোকালয়ে ছড়িয়ে পড়েছে। বাংলাদেশে যেসব রাসেলস ভাইপারের বাচ্চা জন্ম নিচ্ছে তার সিংহভাগই স্ত্রী প্রজাতির। সাপ বিশেষজ্ঞ বোরহান বিশ্বাস রোমন বলেন, আমরা পদ্মাকেন্দ্রিক ৭-৮ বছরের ডেটা কালেক্ট করেছি। দেখা যাচ্ছে, রাসেলস ভাইপারের জুভেনাইল বেবিদের (দেশে জন্ম নেওয়া এবং বছরের বাচ্চা বা গত বছরের বাচ্চা) মধ্যে ৭৮ ভাগই স্ত্রী প্রজাতির।

রাসেল ভাইপারের বিষ দাঁত অনেক বড় প্রায় এক ইঞ্চি লম্বা এবং এরা প্রচণ্ড তীব্র গতিতে অর্থাৎ ১ সেকেন্ডের ১৬ ভাগের এক ভাগ সময়ের মধ্যে দংশন করতে পারে। এরা সাধারণত স্প্রিংয়ের মতো লাফিয়ে দংশন করে। সাপ যতটা লম্বা তার তিন ভাগের দুই ভাগ দূরত্বে গিয়ে দংশন করতে পারে।

বাংলাদেশে বর্তমানে যে অ্যান্টিভেনম দিয়ে সর্পদংশিত রোগীর চিকিৎসা করা হয় সেটি ভারত থেকে আমদানি করা। এটি পলিভ্যালেন্ট অ্যান্টিভেনম অর্থাৎ এটি দিয়ে বাংলাদেশের ২ প্রজাতির গোখরা (Cobra), ৫ প্রজাতির কেউটে (Krait) এবং রাসেলস ভাইপার (Russells viper) সাপের চিকিৎসা করা হয়। সময়মতো হাসপাতালে গেলে এবং চিকিৎসা হলে রাসেলস ভাইপার দংশন করা রোগী বেঁচে যাওয়ার সম্ভাবনা অনেক।

রাসেলস ভাইপারকে চন্দ্রবোড়া, উলুবোড়াও বলা হয়। ঘাস, ঝোপ, বন, ম্যানগ্রোভ ও ফসলের খেতে বাস করে। এরা ফোস ফোস শব্দ করে। দংশন করেও জায়গা ছেড়ে যেতে চায় না। রাসেলস ভাইপার দংশন করার পর দংশিত স্থানে প্রচণ্ড ব্যথা অনুভব হয় এবং ফুলে যায়। সেই সঙ্গে ঘণ্টা খানেকের মধ্যে এর আশপাশের কিছু জায়গাও ফুলে যায়। এ ছাড়া দংশিত অংশে বিষ ছড়িয়ে অঙ্গহানি, ক্রমাগত রক্তপাত, রক্ত জমাট বাঁধা, স্নায়ু বৈকল্য, চোখ ভারী হয়ে যাওয়া, পক্ষাঘাত, কিডনির ক্ষতিসহ বিভিন্ন রকম শারীরিক উপসর্গ দেখা যেতে পারে।

রাসেলস ভাইপার সাপের বিষ তীব্র রক্ত ধ্বংসকারী বা হোমটক্সিন প্রকৃতির। এই বিষে শরীরের রক্ত জমাট বাঁধতে শুরু করে। ফলে ফুসফুস বা কিডনি বিকলের কারণে রোগী মারা যেতে পারে। উপযুক্ত চিকিৎসা না করালে দংশনের ১ থেকে ১৪ দিনের মধ্যেও রোগীর মৃত্যু হতে পারে। এমনকি ২১ দিনের মাথায়ও মৃত্যুর নজির আছে। রাসেলস ভাইপারের বিষ শরীর থেকে মুক্ত হলেও চিকিৎসাধীন থাকতে হয়। কারণ বিষ যতক্ষণ শরীরে থাকে ততক্ষণে লিভার, কিডনি ইত্যাদি অঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত করে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অসংক্রামক রোগনিয়ন্ত্রণ শাখার (এনসিডিসি) ২০২৩ সালের এক গবেষণা বলছে, দেশে প্রতি বছর প্রায় ৪ লাখ ৩ হাজার মানুষ সাপের দংশনের শিকার হন। সাপ দংশনের প্রথম ১০০ মিনিট খুব গুরুত্বপূর্ণ। এই সময়ের মধ্যে চিকিৎসা নিতে হবে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক ও বাংলাদেশ টক্সিকোলজি সোসাইটির সভাপতি এম এ ফয়েজ। সাপের দংশন ও এর ওপর চিকিৎসা নিয়ে বই লিখেছেন তিনি। তার মতে, গোখরা সাপের দংশনের গড় ৮ ঘণ্টা পর, কেউটে সাপ দংশনের গড় ১৮ ঘণ্টা পর ও চন্দ্রবোড়া (রাসেলস ভাইপার) সাপের দংশনের গড় ৭২ ঘণ্টা বা তিন দিন পর রোগীর মৃত্যু হতে পারে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এই সময়সীমার মধ্যে অ্যান্টিভেনম প্রয়োগ করা জরুরি। 

সর্পদংশনে করণীয়

সাপ দংশন করলে আতঙ্কিত হওয়া যাবে না। এর প্রাথমিক চিকিৎসার বিষয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডাক্তার আয়ান সিমপসং বলেছেন- Do it Right অর্থাৎ সঠিক কাজটি করতে হবে। R- Reassure, I- Immobilise, GH- Go to Hospital, T- Tell the Doctor.

সর্পদংশনের পর রোগীকে সাহস দিতে হবে। শান্ত রাখতে হবে। সর্পদংশিত অঙ্গের নড়াচড়া বন্ধ রাখা, যাতে বিষ শরীরে দ্রত ছড়িয়ে না পড়ে। অধিকাংশ সাপ হাতে বা পায়ে দংশন করে, দংশিত অঙ্গ নড়াচড়া না করার ফলে শরীরে বিষ ছড়াতে সময় লাগে। পায়ে দংশন করলে লাঠি বেঁধে পা সোজা করে স্ট্রেচারে শুইয়ে দ্রত চিকিৎসাকেন্দ্রে নিতে হবে। চিকিৎসককে সব খুলে বলতে হবে। উল্লেখ্য, যেকোনো ধরনের বাঁধনে সাপের বিষ আটকাতে পারে না। এতে রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে হাত-পা চিরতরে পঙ্গু হয়ে যেতে পারে। বিশেষ করে চন্দ্রবোড়া ও সবুজবোড়া সর্পদংশনে বাঁধন মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে।

রাসেলস ভাইপার থেকে বাঁচতে করণীয়

  • জমিতে কাজের সময় অবশ্যই গামবুট পরতে হবে। সম্ভব হলে হাতে গ্লাভস থাকা উত্তম।
  • রাতে লাইট নিয়ে চলাফেরা করতে হবে। রাতে জমিতে কাজ না করা ভালো। জমি এবং জমির আইলে হাঁটার সময় সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে।
  • জমির ধান, ভুট্টাসহ নানা ফসল কাটার জন্য যান্ত্রিক মেশিন ব্যবহার করতে পারলে ভালো হয়। জমির আইল দিয়ে হাঁটার সময় সচেতন থাকা দরকার।
  • রাসেলস ভাইপার হিস হিস শব্দ করে। যা কানে বেশ জোড়েই শোনা যায়। এ কারণে হিস হিস শব্দ শুনলে সাবধান হতে হবে। 
    কাজ করার সময় মাটিতে শব্দ করা যেতে পারে। যাতে সামান্য হলেও কম্পন সৃষ্টি হয়। রাসেলস ভাইপার কম্পন বুঝতে পারে।

ভুল ধারণা

রাসেলস ভাইপার দ্রুত দংশন করতে পারে। কিন্তু এরা তেড়ে এসে দংশন করে না। এরা খুব অলস প্রকৃতির সাপ। কুণ্ডলি পাকিয়ে বসে থাকে। রাসেলস ভাইপারের দংশনের সঠিক চিকিৎসা বাংলাদেশে নেই এমনটা মনে করার কোনো কারণ নেই। আমাদের দেশে সঠিক চিকিৎসা আছে।

/আবরার জাহিন