![রেলে-সড়কে নানা দুর্ভোগ নিয়ে ফিরছেন রাজধানীবাসী](uploads/2024/06/23/return-dhaka-1719123612.jpg)
পবিত্র ঈদুল আজহার ছুটি শেষে রাজধানীতে ফিরতে শুরু করেছে কর্মজীবী মানুষ। সপ্তাহের শুরু হিসাবে আজ রবিবার থেকে ঢাকা ফিরবে তার চিরচেনা রূপে। গতকাল শনিবার (২২ জুন) দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সড়ক, রেল ও নৌযোগে যারা রাজধানীতে ফিরেছেন, তাদের মধ্যে অনেকে জানিয়েছেন পরিবহনসংকট ও যাত্রীসেবায় নানা ভোগান্তির কথা। রাজধানীতে যানজট না থাকলেও মধ্য দুপুরের বৃষ্টি বেশ ভুগিয়েছে তাদের।
সড়কে ভোগান্তির নাম পরিবহনসংকট
ঈদুল আজহার আগে রাজধানী থেকে বিভিন্ন গন্তব্যে যেতে বাসসংকটের কথা জানিয়েছিলেন যাত্রীরা। উপায়ান্তর না দেখে অনেকে খোলা ট্রাক বা পিকআপে করে বাড়ি গিয়েছিলেন। ফিরতি যাত্রায় সেই একই চিত্র দেখা গেছে ঢাকামুখী বিভিন্ন মহাসড়কে। গতকাল সকালে গাবতলী আন্তজেলা বাস টার্মিনালে কথা হয় এমন কয়েকজন যাত্রীর সঙ্গে।
বগুড়ার ধুনট থেকে আসা গার্মেন্ট কর্মী ফাতেমা বলেন, ‘ঢাকা থেকে যাওয়ার সময় আমাদের কাছে থেকে অতিরিক্ত ২০০-৩০০ টাকা ভাড়া চেয়েছে। ফিরে আসার সময়ও বাসচালকরা অতিরিক্ত ভাড়া দাবি করছেন। আমরা গরিব মানুষ, এত টাকা পাব কই? পরে অনেকের সঙ্গে ট্রাকে চড়ে ফিরলাম। রাস্তায় ধুলাবালি খেতে হয়েছে প্রচুর। বগুড়া থেকে ঢাকা ফিরতে সব মিলিয়ে ৪৫০ টাকা লেগেছে। বাসে এলে তো হাজার টাকা লাগত।’
শেরপুরের নকলা থেকে আসা কলেজশিক্ষক আবু তাহের বলেন, ‘বাস খুব কম ছিল। ঢাকায় আসার বাসগুলো বেশ বিরতি নিয়ে ছেড়েছে। পরে অটোরিকশা, লেগুনায় করে অনেক কষ্টে ভালুকায় এসে ঢাকার বাস পেয়েছি।’ গাবতলী বাস টার্মিনালের পাশাপাশি কল্যাণপুর, শ্যামলীর বিভিন্ন বাস কাউন্টারের ব্যবস্থাপকরা স্বীকার করেছেন, ফিরতি যাত্রায় পরিবহনের সংকট ছিল। একই চিত্র ছিল রাজধানীর মহাখালী আন্তজেলা বাস টার্মিনালেও।
খবরের কাগজের রাজবাড়ী প্রতিনিধি জানান, গতকাল সকালে দৌলতদিয়া ঘাটে যানবাহনের বেশ চাপ ছিল। বিআইডব্লিউটিসি কর্তৃপক্ষ বাড়তি চাপ মোকাবিলায় দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে ১৮টি ফেরি ও ২০টি লঞ্চ চালু রেখেছিল। ঘাটে দুর্ভোগ না থাকলেও যাত্রীদের অভিযোগ, ঘাট পর্যন্ত আসতে তাদের বাড়তি ভাড়া গুনতে হচ্ছে। পদ্মা নদীতে তীব্র স্রোত থাকায় অনেকে লঞ্চে না উঠে ফেরিতে পারাপার হতে চান।
ফরিদপুরের মধুখালী থেকে আসা যাত্রী সাখাওয়াত বলেন, ‘সাভারের নবীনগর যাব। মধুখালী থেকে বাস না পেয়ে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় ঘাটে এসেছি। অন্য সময়ের থেকে দ্বিগুণের বেশি ভাড়া দিতে হয়েছে। আবার পাটুরিয়া ঘাট থেকেও দ্বিগুণ ভাড়া নিচ্ছে বাসে।’
এ বিষয়ে মহাখালী আন্তজেলা বাস টার্মিনাল বাস মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কালাম বলেন, ‘প্রতিবছর ঈদের পরে উভয়মুখী যাত্রী পাওয়া যায়। এবার ঢাকা থেকে বিভিন্ন গন্তব্যের যাত্রীর সংখ্যা নিতান্ত কম। একমুখী যাত্রায় গাড়ি চালিয়ে আমরা খরচের টাকা তুলতে পারি না। তাই অনেক বাসের মালিক সড়কে সব বাস নামাননি। আর এমনিতেও যাত্রী চাহিদার তুলনায় আমাদের বাস সংকট রয়েছে।’
গতকাল সকাল থেকে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টিপাত হয়েছে। এ বৃষ্টিতে ভোগান্তিতে পড়েন ঢাকায় ফিরে আসা যাত্রীরা। গাবতলী থেকে বাড্ডার বাসায় ফিরতে ভোগান্তিতে পড়েছিলেন একটি জাতীয় দৈনিকের সাংবাদিক আব্দুল্লাহ আল মামুন। চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে আসা মামুন বলেন, ‘চাঁপাই থেকে বাড্ডা রুটের বাস পেলাম না। বাধ্য হয়ে গাবতলীতে আসতে হয়েছে।
আমের-সবজির বস্তাসহ লাগেজ নিয়ে বাসায় যাব কী করে? বৃষ্টির মধ্যে সিএনজি অটোরিকশাচালকরাও বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। অতিরিক্ত ভাড়া তো আছেই, তাদের পছন্দমতো গন্তব্য ছাড়া যেতেই রাজি না।’
ট্রেনে অতিরিক্ত ভিড়
গতকাল সকালে ট্রেনে যারা ঢাকায় ফিরেছেন তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ফিরতি পথে ট্রেনে অতিরিক্ত যাত্রীদের ভিড় ছিল। অনেকে আগাম টিকিট কেটে রাখলেও বিনা টিকিটের যাত্রীদের কারণে ভোগান্তিতে পড়েন। লালমনিরহাট থেকে দুই ঘণ্টা দেরিতে ঢাকা এসে পৌঁছেছে বুড়িমারী এক্সপ্রেস ট্রেনটি।
সেই ট্রেনের যাত্রী সজীব হোসেন বলেন, ‘একে তো ফিরতি যাত্রা, প্রচুর যাত্রী। লালমনিরহাট থেকে বেশি স্ট্যান্ডিং যাত্রী না থাকলেও বগুড়া ও সান্তাহারের পর থেকে ট্রেনে বিনা টিকিটের যাত্রীদের ভিড় বেড়ে যায়। তারা এসি বগিতে এসেও দাঁড়িয়ে থাকেন। কেউ ওয়াশরুমে গেলে চট করে সেই সিটে বসে পড়েন। পুরো পথে তারা ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।’
কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে বের হওয়ার মুখে বেশ কজন বিনা টিকিটের যাত্রীকে আটক করে রেলওয়ে পুলিশ। পরে তাদের একজন বলেন, ‘বাসে গেলে ভাড়া বেশি। ট্রেনে বলে টিকিট নাই। আমরা তাহলে কি হেঁটে হেঁটে ঢাকায় আসব? ঢাকায় এসে জরিমানা দিচ্ছি। টিকিট ছেড়ে দেবে কালোবাজারিদের কাছে, আমরা টিকিট পাব কই?’
ঢাকা রেলওয়ে স্টেশনে শিডিউল বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, চিলাহাটিগামী নীলসাগর এক্সপ্রেস সকাল ৬টা ৪৫ মিনিটে ঢাকা স্টেশন ছেড়ে যাওয়ার কথা থাকলেও সেটি স্টেশন ছাড়ে সকাল ৯টায়।
লালমনিরহাটগামী বুড়িমারী এক্সপ্রেস সকাল সাড়ে ৮টায় ঢাকা ছেড়ে যাওয়ার কথা থাকলেও ট্রেনটি ঢাকাতেই পৌঁছেছে সকাল ৯টায়। দেওয়ানগঞ্জগামী দেওয়ানগঞ্জ ঈদ স্পেশাল সকাল ৯টা ২৫ মিনিটে ছেড়ে যাওয়ার কথা থাকলেও সেটি সময়মতো ছাড়েনি।
ঢাকা রেলওয়ে স্টেশনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গতকাল সকাল থেকে ঢাকামুখী ট্রেনগুলোতে যাত্রীদের অতিরিক্ত চাপ ছিল। সেই ট্রেনগুলো বিভিন্ন স্টেশনে অতিরিক্ত সময় দাঁড়িয়েছে। সেগুলো ঢাকায় ফিরে আসার পরে লোকোমোটিভ পরিবর্তন, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার পর সেটি প্ল্যাটফর্ম পাবে। তাই বিলম্ব হয়েছে।