![আচরণবিধি লঙ্ঘন ও ইসির বক্তব্য নিয়ে বিভ্রান্তি](uploads/2023/12/01/1701409668.EC.jpg)
নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার পর থেকে দেশের বিভিন্ন এলাকায় বিভিন্ন প্রার্থীর আচরণবিধি লঙ্ঘন নিয়ে চলছে অস্বস্তিকর পরিস্থিতি। প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ একাধিক কমিশনার ইতোমধ্যে কথা বলেছেন আচরণবিধি নিয়ে। ক্ষেত্রবিশেষে তারা বলছেন, কিছু কিছু বিষয় আচরণবিধি লঙ্ঘন নয়, আবার গত দুই দিনে বেশ কয়েকজন প্রার্থীকে শোকজ করা হয়েছে, কয়েকজনকে তলবও করা হয়েছে। ফলে কোনটায় আচরণবিধি লঙ্ঘন হচ্ছে, কোনটায় হচ্ছে না, তা নিয়েও ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে।
যদিও এসব বিষয়ে পরিষ্কার করে বলা আছে নির্বাচনী আইন ও বিধিতে। শোকজ বা কারণদর্শানো নোটিশে অভিযুক্তদের বলা হয়েছে, তারা সংসদ নির্বাচনে রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণবিধিমালা, ২০০৮-এর ৬ (ঘ), ৮ (ক), ১০ (ক) এবং ১২ ধারার বিধান লঙ্ঘন করেছেন।
২০০৮-এর ৬(ঘ) উপধারায় আছে, জনগণের চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি হতে পারে, এমন কোনো সড়কে জনসভা কিংবা পথসভা করতে পারবে না এবং প্রার্থীর পক্ষে অন্য কোনো ব্যক্তিও অনুরূপ জনসভা বা পথসভা করতে পারবে না। ৮-এর (ক) উপধারায় আছে- কোনো বাস, ট্রাক, মোটরসাইকেল, নৌযান, ট্রেন কিংবা অন্য কোনো যান্ত্রিক যানবাহন সহকারে মিছিল কিংবা মশাল মিছিল বের করেত পারবে না কিংবা অনুরূপ শোডাউন করতে পারবে না।
পাশাপাশি ২০০৮-এর ১২ ধারায় সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে, কোনো নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল কিংবা তার মনোনীত প্রার্থী বা স্বতন্ত্র প্রার্থী কিংবা তাদের পক্ষে অন্য কোনো ব্যক্তি ভোট গ্রহণের জন্য নির্ধারিত দিনের তিন সপ্তাহ আগে কোনো ধরনের নির্বাচনী প্রচার শুরু করতে পারবেন না। আচরণবিধি লঙ্ঘন হলে জরিমানা ও জেল দুই ধরনের শাস্তির ব্যবস্থাই রয়েছে।
অন্যদিকে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ অনুযায়ী, ‘রিটার্নিং বা সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে মনোনয়ন ফরম জমা বা কেনার সময় প্রার্থীরা কোনো ধরনের মিছিল বা শোডাউন করতে পারবে না।’
আইনে আচরণবিধি লঙ্ঘনকারীর অপরাধের ধরন অনুযায়ী ৫০ হাজার টাকা জরিমানা বা ৬ মাসের জেল হতে পারে। এসব বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের আইন অনুযায়ী শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া আছে।
গত ২৬ নভেম্বর রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘এখন যদি কোনো রাজনৈতিক দল লাঙ্গল নিয়ে, নৌকা নিয়ে, গরু নিয়ে, পাখি নিয়ে প্রচার চালান তাতে কোনোরকম বাধা নেই। প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত হওয়ার পর আমরা আচরণবিধি লঙ্ঘন হচ্ছে কি না, তা দেখে প্রয়োজনে ব্যবস্থা নেব।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা নিয়ন্ত্রণ করব চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের। আর প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী তখনই হবে যখন রিটার্নিং অফিসার চূড়ান্তভাবে তালিকা ঘোষণা করবেন। তখন আমরা প্রার্থীকে নিয়ন্ত্রণ করব। দেখব নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করছেন কি না।’
প্রার্থীদের আচরণবিধির লঙ্ঘন প্রসঙ্গে ইসি আলমগীর জানান, তফসিল ঘোষণার পর কোনো প্রার্থীর পক্ষে প্রতীক উল্লেখ করে ভোট চাওয়া আচরণবিধির লঙ্ঘন, তবে কোনো সভা-সমাবেশে দলের জন্য ভোট চাইতে আইনি বাধা নেই। কারণ প্রার্থিতা চূড়ান্ত হওয়ার আগে পার্টি অফিসে মিছিল-মিটিং, দলের পক্ষে ভোট চাওয়া আচরণবিধি লঙ্ঘন নয়। তবে তফসিলের পর গাড়ি নিয়ে নিজ নির্বাচনী এলাকায় কোনো প্রার্থী শোডাউন করতে পারবেন না। রিটার্নিং কর্মকর্তার অফিসে জমা দেওয়ার সময় কেউ শোডাউন করলেও সেটাও আচরণবিধির লঙ্ঘন। তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার এখতিয়ার রিটার্নিং কর্মকর্তার।
বৃহস্পতিবার (৩০ নভেম্বর) নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিব মো. জাহাংগীর আলম আচরণবিধি ভঙ্গের বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘কিছু কিছু জায়গায় প্রার্থীদের কার্যক্রমে মনে হয়েছে, আচরণবিধি লঙ্ঘিত হয়েছে। সে ক্ষেত্রে নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটিগুলো অনেকের কাছে ব্যাখ্যা তলব করেছেন এবং তারা তাদের কার্যক্রম গ্রহণ করেছেন। এ ছাড়াও রিটার্নিং অফিসারদের মাধ্যমে আচরণবিধি নিশ্চিতকরণের দায়িত্বে নিয়োজিত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরাও কাজ করছেন।’