![গরু-খাসির মাংস, পেঁয়াজের দাম কমলেও বেড়েছে ডিম-মুরগির](uploads/2023/12/15/1702621007.Bazar.jpg)
বাজারে রসুনের দাম বেড়েছে। কঠোর সরকারি নজরদারির কারণে পেঁয়াজের দাম কিছুটা কমলেও ডিম, মুরগির দাম বাড়তি। আটার দাম স্থিতিশীল রয়েছে। নতুন ধান উঠলেও চালের দাম কমেনি।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পর বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক অস্থিরতা দেখা দেয়। ডলারসংকট, টাকার অবমূল্যায়ন ও চাহিদামতো এলসি খুলতে না পারার প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ প্রভাবে দেশের বাজারে প্রায় সব ধরনের পণ্যের দাম বাড়তে থাকে। আর এতে সরকার সমালোচনার মুখে পড়ে। সরকারের অনেক দায়িত্বশীল মন্ত্রী পণ্যের দাম কমাতে অনেক উদ্যোগের কথা জানালেও খুব একটা সফল হতে দেখা যায়নি। আসন্ন নির্বাচনের আগে পণ্যের দাম বাড়ার কারণে নতুন বিতর্কে পড়তে চাচ্ছে না সরকার। আর এজন্য সতর্ক আছে।
রসুনের দাম ঠেকাতে মাঠে গোয়েন্দারা
চীন থেকে আমদানি করা রসুনের ওপর নির্ভরশীল মূলত এদেশের বাজার। আন্তর্জাতিক বাজারে রসুনের দাম প্রতি টন ৮০০/১০০০ ডলার থেকে বেড়ে ১২শ ডলার ছাড়িয়েছে। এদিকে বাজারে দেশি রসুন শেষের পথে। প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে ভারতে এবার রসুনের উৎপাদন কম হয়েছে। সরবরাহসংকটে ভারতের অনেক জায়গায় রসুনের দাম বেড়েছে। বাজার নিয়ন্ত্রণে ভারত সরকার রসুন রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার কথা ভাবছে। এসব কারণে দেশের বাজারে রসুনের দাম রাতারাতি বেড়ে যাওয়ার কথা না থাকলে বাস্তবতা হলো বেড়েছে।
সুযোগ সন্ধানী ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে সিন্ডিকেট করে পেঁয়াজের মতো রসুনের বাজারেও যেন অস্থিরতা তৈরি করতে না পারে সেজন্য গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে কঠোর নজরদারি বাড়াতে নির্দেশ দিয়েছেন খোদ সরকারপ্রধান।
গত বুধবার রাতেই স্বরাষ্ট্র, অর্থ ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে এসব নির্দেশ পাঠানো হয়েছে। এসব মন্ত্রণালয়কে বাজার নিয়ন্ত্রণে আরও মনোযোগী হতে বলা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ সামনে রেখে এরই মধ্যে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর গত ছয় মাসে কত দরে, কে বা কারা, কী পরিমাণ রসুন আমদানি করেছে তার তথ্য সংগ্রহে নেমেছে।
শুধু যে আমদানিকারকদের ওপর নজর রাখা হচ্ছে- তা নয়। আমদানির পর সবচেয়ে বেশি পরিমাণ রসুন কোন এলাকার কোন আড়তে মজুত রাখা হয়েছে, সে খবরও সংগ্রহ করছেন গোয়েন্দা কর্মকর্তারা। ক্রয় মূল্য ও বিক্রয় মূল্যের মধ্যে পার্থক্য খতিয়ে দেখবেন তারা।
দেশের অন্যতম রসুন আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান ফারুক ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের মালিক ফারুক আহমেদ খবরের কাগজকে বলেন, ‘আন্তর্জাতিক বাজারে রসুনের দাম বেড়েছে। প্রতি টনের দাম বেড়ে ১২শ ডলারের বেশি হয়েছে। এসব রসুন আমদানি করে বিক্রি করলে দেশের বাজারেও দাম বাড়বে।
রাজধানীর মোহাম্মদপুরের টাউন হল বাজারের মো. সোলাইমানসহ অন্য ব্যবসায়ীরা খবরের কাগজকে বলেন, রসুনের দাম বাড়তি। সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে ২০-৪০ টাকা বেড়েছে। গত সপ্তাহে বিদেশি রসুন ২০০ টাকা কেজি এবং দেশি রসুন ২৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করেছি। বর্তমানে দেশি রসুন নেই। বিদেশি রসুন ২৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মোকামের ব্যাপারীদের কাছেও নেই দেশি রসুন। পুরোটাই আমদানি করতে হচ্ছে। এ জন্য দামও বেশি। দেশি রসুন না ওঠা পর্যন্ত দাম কমবে না।
পেঁয়াজের দাম কমেছে
পেঁয়াজের দাম কেজিতে ২৫০ টাকা ওঠার পর সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপে কমতে শুরু করেছে। ছয় দিনের ব্যবধানে ১০০ টাকায় নেমে এসেছে দেশি নতুন পেঁয়াজের দাম। তবে পুরোনো পেঁয়াজ একটু বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। মানভেদে ১৪০-১৬০ টাকা এবং ভারতের পেঁয়াজ কেজি ১৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মৌসুম ঘনিয়ে আসায় আলুর দামও কমে কেজি ৫০-৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
একই বাজারের সবজি বিক্রেতা শরিফ জানান, ‘আগের মতোই বাঁধাকপি ও ফুলকপির দাম ৩৫-৪০ টাকা পিস, বেগুন, ঢ্যাঁড়শসহ প্রায় সবজিই ৬০ টাকার নিচে। টমেটোর দাম কমে ১২০-১৩০ টাকা, কাঁচামরিচ ১২০-১৫০ টাকা, গাজর, পটোল ও করলা ৬০-৮০ টাকা, শাকের আঁটি ১০-২০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে।’
গরুর মাংসের দাম বেড়ে ৬৫০ টাকা কেজি
মোহাম্মদপুর টাউন হলের আয়ান আলী গোশ্ত বিতানের গুড্ডু জানান, ‘রেটের বাইরে গরুর মাংস বেশি দামে বিক্রি করা যাবে না। তাই কেজি ৬৫০ টাকাতেই বিক্রি করছি।’ জহির নামে এক ক্রেতা বলেন, ‘গরুর মাংসের দাম কিছুটা কমায় ভালই লাগছে।’
অন্যদিকে খাসির মাংস বিক্রেতা আবিদ আলী বলেন, ‘আগে খাসির মাংস ১০৫০ থেকে ১১০০ টাকা কেজি বিক্রি করা হলেও কয়েক দিন ধরে ১০০০ টাকা কেজিতে বিক্রি করা হচ্ছে।’
বিসমিল্লাহ ডিমের আড়তের জহিরসহ অন্য ডিম ব্যবসায়ীরা জানান, গত সপ্তাহের চেয়ে ডিমের দাম ডজনে কিছুটা বেড়েছে। সাদা ডিমের ডজন ১২৫ টাকা ও লাল ডিম ১৩০ টাকা ডজন বিক্রি করা হচ্ছে।
মুরগির দামও সামান্য বেড়েছে। টাউন হলের পোলট্রি ভাণ্ডারের মো. বিল্লাল হোসেন ও প্যারাডাইস ব্রয়লার হাউসের জসিম এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘দাম সামান্য বেড়েছে। সপ্তাহের ব্যবধানে ১০ টাকা বেড়ে পোলট্রি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৮০-১৮৫ টাকা কেজি, পাকিস্তানি কক ২৯০-৩১০ টাকা ও দেশি মুরগি ৫০০-৫৩০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে মাছও আগের মতো দামে বিক্রি হচ্ছে বলে জানান বিক্রেতারা। মাছ ব্যবসায়ী রহিমসহ অন্যরা জানান, রুই, কাতলা মাছ আকারভেদে কেজিতে ২৬০-৪৫০ টাকা, চিংড়ি ৬০০-১০৫০ টাকা, শিং ৫০০-৬৫০ টাকা, মলা মাছ ৪০০-৫০০ টাকা, বাইন ৪০০-৬০০ টাকা, পাঙ্গাস ২০০, তেলাপিয়া ২৪০, কই ২৫০-৪০০ টাকা, ট্যাংরা ৪৫০-৭০০ টাকা, মাগুর ৪০০-৬০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
স্থিতিশীল আটার দাম
গত সপ্তাহে ২ কেজি আটার দাম ছিল ১৩০ টাকা। এ সপ্তাহেও একই দামে বিক্রি করা হচ্ছে বলে জানান কারওয়ান বাজারের মেসার্স ফরিদগঞ্জ স্টোরের জাহাঙ্গীর। তবে সরকার চিনির দাম বারবার বেঁধে দিলেও ওই দামে বিক্রি হচ্ছে না। অনেক দিন ধরে বাজারে খোলা চিনি নেই বললেই চলে। ১৪৮ টাকার প্যাকেট চিনি মাঝে মধ্যে পাওয়া যাচ্ছে। ডাল ১১০-১৩৫ টাকা কেজিতে বিক্রি করা হচ্ছে।
কমেনি চালের দাম
নতুন ধানের ভরা মৌসুম শুরু হলেও চালের বাজারে তেমন প্রভাব পড়েনি। আগের মতোই নতুন মোটা চাল ৪৮-৫০ টাকা ও ২৮ চাল ৫০-৫২ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে। মিনিকেটও আগের মতো ৬২-৬৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি করা হচ্ছে। তবে বিভিন্ন কোম্পানির প্যাকেটজাত চাল আরও বেশি ৯০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।