![আবার করোনার ঝুঁকি!](uploads/2023/12/22/1703216983.Covid.jpg)
কয়েকটি দেশে করোনাভাইরাসের নতুন জেএন-ওয়ান সাব-ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হওয়ার পর গত অক্টোবরে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা পূর্বাভাস দিয়েছিল, এবার শীতে করোনাসংক্রমণ আবার বাড়তে পারে। দুই মাসের ব্যবধানে আমেরিকা ও চীনে এর প্রতিফলনও দেখা যায়। তখন থেকেই বাংলাদেশ এদিকে নজর রাখছে। তবে এবার পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের কেরালায় একজন নারীর শরীরে করোনাভাইরাসের নতুন জেএন-ওয়ান সাব-ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হওয়ার পর বাংলাদেশে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। সার্বক্ষণিক সিকোয়েন্সিংয়ে নজর রাখা হচ্ছে।
মেডিসিন বিশেষজ্ঞ, প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও ইমেরিটাস অধ্যাপক ডা. এ বি এম আব্দুল্লাহ খবরের কাগজকে বলেন, ‘নতুন সাব-ভ্যারিয়েন্টটির সঠিক গতিপ্রকৃতি সম্পর্কে এখনো আমরা পুরোটা জানতে পারিনি। তবে এটার বিস্তার বিভিন্ন দেশে ঘটছে। এমনকি ভারতের কেরালায়ও ওই ভ্যারিয়েন্ট মিলেছে। ফলে আমাদের আবারও সতর্ক হতে হবে।’
এ বি এম আব্দুল্লাহ আরও বলেন, ‘এখন পর্যন্ত যতটা প্রকাশ পেয়েছে তাতে এটা যে খুব বেশি বিপজ্জনক, সেটা মনে হয় না। তবে এটা ঠিক, যদি বেশি মানুষ আক্রান্ত হয় তবে কিন্তু মৃত্যুও বাড়বে। তাই সবারই আবার মাস্ক ব্যবহার, হাত ধোয়ার চর্চায় ফেরা জরুরি।’
রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) উপদেষ্টা ডা. মুশতাক হোসেন খবরের কাগজকে বলেন, ‘বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বার্তা অনুসারে জেএন-১ এখনো ভ্যারিয়েন্ট অব ইন্টারেস্ট (ভিওআই)। এটা ভ্যারিয়েন্ট অব কনসার্ন (ভিওসি) ঘোষণা করা হলেই বড় উদ্বেগের কারণ হবে।’
ওই রোগতত্ত্ববিদ বলেন, সবাইর সতর্ক থাকা ভালো। কারণ এটি অমিক্রনের একটি সাব-ভ্যারিয়েন্ট, যা আগের মতোই দ্রুত ছড়াতে পারে। আক্রান্তদের মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ মানুষের জন্য অবশ্যই তা ভয়ের ব্যাপার হবে। ফলে বুস্টার টিকা নিতে হবে। মাস্ক পরা বাড়াতে হবে।
আইইডিসিআরের পরিচালক অধ্যাপক ড. তাহমিনা শিরীন খবরের কাগজকে বলেন, ‘করোনাভাইরাসের অমিক্রন ভ্যারিয়েন্টের সাব-ভ্যারিয়েন্ট জেএন-ওয়ান আমেরিকা ও চীনে শনাক্ত হওয়ার পর আমরা সেদিকে খেয়াল রাখছি। ভারতে কেস ধরা পড়ার পর আমরা আরও সতর্ক হয়েছি। আমরা এখন সার্বক্ষণিক সিকোয়েন্সিংয়ে নজর রাখছি।’
ওই বিশেষজ্ঞ কর্মকর্তা বলেন, ‘আমাদের আগাম কিছু প্রস্তুতিও আছে। আমরা কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে পারব আশা করি।’
এদিকে সিডিসি (আটলান্টা) তথ্য অনুসারে গত সেপ্টেম্বরে অমিক্রনের এই সাব-ভ্যারিয়েন্ট জেএন-ওয়ান শনাক্ত হয় নিয়মিত সিকোয়েন্সিংয়ে। এরপর অক্টোবর ও নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন জায়গায় তা ছড়িয়ে পড়ে। চলতি মাসে চীনসহ আরও কিছু দেশে এর বিস্তার ঘটে।’
এদিকে প্রতিবেশী দেশে ভারতে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, চলতি সপ্তাহে জিনোম সিকোয়েন্স করে করোনা আক্রান্তদের মধ্যে ২১ জনের নমুনায় জেএন-১-এর অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। তাদের মধ্যে ১৯ জনই গোয়ার। মহারাষ্ট্র ও কেরালায় একজন করে শনাক্ত হন। তবে কেরালা, মহারাষ্ট্র, ঝাড়খণ্ড এবং কর্নাটকেও আক্রান্তের সংখ্যা ঊর্ধ্বমুখী বলে জানায় ভারতের গণমাধ্যমগুলো।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুসারে ২০১৯ থেকে শুরু করে এ পর্যন্ত দেশে করোনায় আক্রান্ত মোট রোগীর সংখ্যা ২০ লাখ ৪৬ হাজার ১৮৮ জন। এর মধ্যে মারা গেছেন ২৯ হাজার ৪৭৭ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছেন ৮ জন।
ওই সূত্রমতে, এখনো প্রতিদিন উপসর্গ নিয়ে মানুষ বিভিন্ন পরীক্ষাগারে যান নমুনা দিতে। শুরু থেকে এ পর্যন্ত দেশে কোভিড টেস্ট করা হয়েছে ১ কোটি ৫৬ লাখ ২৬ হাজার ২০১টি। গত ২৪ ঘণ্টায় টেস্ট করা হয় ৫৯১টি নমুনার। দেশের ৮৮৫টি সরকারি-বেসরকারি পরীক্ষাগারে এখন করোনা টেস্ট করা হয় বলেও জানায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্র।
অন্যদিকে দেশে এ পর্যন্ত করোনায় মৃত ২৯ হাজার ৪৭৭ জনের মধ্যে ১৮ হাজার ৮৫০ জন পুরুষ ও ১০ হাজার ৬৭২ জন নারী। মৃতদের মধ্যে সর্বোচ্চ ৩০ দশমিক ৯১ শতাংশের বয়স ৬১-৭০ বছর।