২০১৭ সালে শুরু করে নির্ধারিত ৩ বছরে হয়নি। বিভিন্ন অজুহাতে পাঁচবার সংশোধন করে ২০২৪ সালের জুনে শেষ হচ্ছে ‘জেলা রেজিস্ট্রি অফিস ও উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রি অফিস ভবন নির্মাণ’ প্রকল্পের কাজ। কিন্তু শুরু হয়নি নেত্রকোনা জেলা রেজিস্ট্রি অফিস, লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ, সিলেটের দক্ষিণ সুরমা ও নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ সাব-রেজিস্ট্রি অফিস নির্মাণকাজ।
খুলনা জেলা রেজিস্ট্রি অফিস ভবনেরও একই দশা। কোনো কাজই শুরু হয়নি। এসব রেজিস্ট্রি ও সাব-রেজিস্ট্রি অফিস ভবন বাদ দেওয়ার জন্য প্রকল্পটি সংশোধন করা হচ্ছে। সংশোধনের জন্য প্রকল্পটি পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হলে তা যাচাই-বাছাই করতে সম্প্রতি প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
জনগণের সেবার মান বৃদ্ধি, কর্মকর্তাদের দাপ্তরিক সুবিধা বৃদ্ধি ও গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র সংরক্ষণের জন্য ২০১৭ সালের ৪ এপ্রিল একনেক সভায় প্রকল্পটির অনুমোদন দেওয়া হয়। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে আইন ও বিচার বিভাগ এবং গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের আওতায় গণপূর্ত অধিদপ্তর।
সংশোধনের ব্যাপারে আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট উপ-সচিব মোহাম্মদ মেহেদী হাসান খবরের কাগজকে বলেন, ‘প্রকল্পের কাজ সরকারের নিয়মে করতে হয়। প্রকল্পে কোনো কিছু সংযোজন করতে হলে সংশোধন করতে হয়। অনুরূপভাবে কিছু বাদ দিতে হলেও প্রকল্প সংশোধন করতে হয়। ভূমির সমস্যাসহ বিভিন্ন কারণে কয়েকটি জেলা রেজিস্ট্রি অফিস ও সাব-রেজিস্ট্রি অফিস বিল্ডিং করা যাচ্ছে না। খরচ কমছে ১৫ কোটি ৫০ লাখ টাকা। এ জন্য প্রকল্পটি সংশোধন করা হচ্ছে।’
দীর্ঘ সময়েও অগ্রগতি না হওয়ার ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘প্রকল্পটি পরিকল্পনা কমিশনে সংশোধনের জন্য পাঠানোর সময় গত বছরের জুন পর্যন্ত খরচ হয়েছিল ২২৯ কোটি টাকা ও কাজ হয়েছিল ৭০ শতাংশ। এরপর কাজ হয়েছে। এ বছরের মার্চ-এপ্রিল পর্যন্ত অগ্রগতি হয়েছে ৮৮ শতাংশ। পিইসি সভায় আলোচনা হয়েছে যেহেতু আজ ৩০ জুন প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হচ্ছে। তাই আর সময় বাড়ানো যাবে না।
পরিকল্পনা কমিশন ও গণপূর্ত অধিদপ্তর সূত্রে মতে, ২০১৭ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৯ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রকল্পটি বাস্তবায়নের সময় ধরা হয়। তখন খরচ ধরা হয়েছিল ৩৬৬ কোটি টাকা। প্রকল্পের প্রধান প্রধান কাজের মধ্যে বিভিন্ন বিল্ডিং নির্মাণে ভূমি অধিগ্রহণের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ৮ দশমিক ৫১ একর। এতে খরচ ধরা হয় প্রায় ৫৭ কোটি টাকা। এ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য স্থাপনা নির্মাণকাজে ২৫৮ কোটি ২৯ লাখ টাকা ব্যয় ধরা হয়। সীমানাপ্রাচীর, প্রধান ফটক ও গার্ডরুম নির্মাণে খরচ ধরা হয় প্রায় ১৫ কোটি টাকা।
৩ বছরে তেমন কোনো কাজ না হওয়ায় ব্যয় না বাড়িয়ে প্রথমে সময় বাড়ানো হয় ৬ মাস। তাতেও কোনো কাজ না হলে আবার ১ বছর সময় বাড়িয়ে ২০২১ সালের জুন করা হয়। এরপর করোনা শুরু হলে সেই অজুহাতে আবার ১ বছর সময় বাড়ানো হয়।
তার পরও কাজের গতি বাড়েনি। আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয় ২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি বিশেষ প্রথম সংশোধনী ডিপিপির অনুমোদন দেয়। তাতে সময় বাড়ানো হয় ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত। কিন্তু জমি অধিগ্রহণসহ বিভিন্ন জটিলতায় আটকে যায় খুলনা, নেত্রকোনা, নারায়ণগঞ্জ, লক্ষ্মীপুরের রেজিস্ট্রি অফিস ভবন নির্মাণের কাজ।
এই সংশোধনের মাধ্যমে ১০ জেলা রেজিস্ট্রি অফিস নির্মাণ, ২টি জেলা অফিসের ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণ, ৬৪ উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রি অফিস নির্মাণ, ১টি উপজেলা অফিসের ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণ, ৫ জেলায় জেলা রেজিস্ট্রি অফিস নির্মাণের লক্ষ্যে জমি অধিগ্রহণ ও ৪৪টি উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রি অফিস নির্মাণের লক্ষ্যে ভূমি অধিগ্রহণ অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এসব কাজ করার জন্য সময়ও বাড়ানো হয় দেড় বছর অর্থাৎ, ২০২৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত।
উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবে (ডিপিপি) ঢাকা বিভাগের গাজীপুর রেজিস্ট্রি অফিস ভবন, রাজবাড়ী ও নারায়ণগঞ্জ রেজিস্ট্রি অফিস ভবন, রাজশাহীর পাবনা, নওগাঁ ও বগুড়া, রংপুরের ঠাকুরগাঁও ও নীলফামারী এবং খুলনা বিভাগের চুয়াডাঙ্গা ও বরিশাল রেজিস্ট্রি অফিস ভবন নির্মাণের সিদ্ধান্ত হয়।
এ ছাড়া যেসব সাব-রেজিস্ট্রি অফিস ভবন নির্মাণ করার কথা তা হলো- ফরিদপুরের সদরপুর, টাঙ্গাইলের মধুপুর, টাঙ্গাইল সদর ও ধনবাড়ী, ঢাকার কামালপুর, মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইর ও শরীয়তপুরের জাজিরা। জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ ও বকশীগঞ্জ, ময়মনসিংহের ধোবাউরা, কান্দিপাড়া ও নান্দাইল উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রি অফিস। এ ছাড়া নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ, আটপাড়া ও কলমাকান্দা সাব-রেজিস্ট্রি করার কথা।
নোয়াখালী সদর, বসুরহাট ও সেনবাগ, চাঁদপুরের মতলব উত্তর ও দক্ষিণ (মোহনগঞ্জ), ব্রাক্ষণবাড়িয়ার কসবা, নাসিরনগর, চট্টগ্রামের জোড়ারগঞ্জ। প্রকল্পের আওতায় বগুড়ার শেরপুর ও শিবগঞ্জ, সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া, পাবনার চাটমোহর, সুজানগর ও বেড়া। এ ছাড়া জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল, গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ, সাঘাটা ও ফুলছড়ি, দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট, ফুলবাড়ী, খানসামা ও বিরামপুর, ঠাকুরগাঁয়ের বুল্লিবাজার, সাতক্ষীরার ইসলামকাঠি ও শ্যামনগর, খুলনার পাইকগাছা, নড়াইলের কালিয়া, মাগুরার শালিখা ও মোহাম্মদপুর, ঝিনাইদহের শৈলকুপা, মহেশপুর ও কালীগঞ্জ, মেহেরপুরের গাংনী, বরিশালের মুলাদী ও রহমতপুর, পিরোজপুরের ইন্দরকানি ও মঠবাড়িয়া, বরগুনার আমতলী, তালতলী ও বেতাগী, পটুয়াখালীর খেপুপাড়া ও গলাচিপা, ভোলার তজুমদ্দিন, সিলেটের বিশ্বনাথ ও হবিগঞ্জে সাব-রেজিস্ট্রি অফিস ভবন নির্মাণ করার কথা বলা হয়।
এ ছাড়া ১৭টি সাব-রেজিস্ট্রি অফিস ভবন নির্মাণের জন্য ভূমি অধিগ্রহণেরও সিদ্ধান্ত হয়। সেগুলো হলো-নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ, শরীয়তপুরের জাজিরা, টাঙ্গাইলের ধনবাড়ী ও গোপালপুর, মানিকগঞ্জের সিংগাইর ও দৌলতপুর, চট্টগ্রামের জোড়ারগঞ্জ, ব্রাক্ষণবাড়িয়ার আখাউড়া, ফেনীর দাগনভূঁইয়া, পাবনার ঈশ্বরদী, বাগেরহাটের মোড়লগঞ্জ, ঝিনাইদহের মহেশপুর, শৈলকুপা ও কালীগঞ্জ, মাগুরার শালিখা, মেহেরপুরের গাংনী, গাইবান্ধার ফুলছড়ি, নীলফামারীর ডিমলা, কুড়িগ্রামের চররাজিবপুর, লালমনিরহাটের আদিতমারী, পাটগ্রাম ও সিলেটের দক্ষিণ সুরমা সাব-রেজিস্ট্রি অফিস ভবন নির্মাণের জন্য ভূমি অধিগ্রহণের সিদ্ধান্ত হয়।
প্রকল্পটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হলেও বাস্তবায়নে গতি বাড়েনি। তাই গত ২০২৩ সালের ১১ আগষ্ট প্রকল্প স্টেয়ারিং কমিটির (পিএসসি) সভায় দ্বিতীয় সংশোধনীর সিদ্ধান্ত হয়। কারণ শুরু হয়নি নেত্রকোনা জেলা রেজিস্ট্রি অফিসের কাজ, পুরোনো স্থাপনা থাকায় খুলনা জেলা রেজিস্ট্রি অফিসের কাজও শুরু করা যায়নি। দীর্ঘ এ সময়ে জমি অধিগ্রহণ হয়েছে ৩৬ রেজিস্ট্রি অফিস নির্মাণ ও ৭টি সাব-রেজিস্ট্রি অফিস ভবন নির্মাণের।
সিংগাইর সাব-রেজিস্ট্রি অফিস সাইট এলাকাটি ১৩ ফুট গভীরে হওয়ায় অতিরিক্ত খরচ বাড়ছে। সংশোধনীতে তা আনা হয়েছে। সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে প্রকল্পটি মেয়াদ ধরা হয়েছে আজ ৩০ জুন পর্যন্ত। পিইসি সভায় সময় বাড়ানো হবে কি না, সে ব্যাপারে আলোচনা হলে কোনো সময় বাড়ানো হবে না বলে সিদ্ধান্ত হয়েছে।