![সপ্তাহ ঘুরতেই ঝুঁকিপূর্ণ আসন ৪ গুণ বেড়ে ১৩৭](uploads/2024/01/03/1704257827.Election-news.jpg)
প্রথমে ৩৫টি আসনে সংঘাত হওয়ার আশঙ্কা করা হয়েছিল। সপ্তাহ ঘুরতেই এই সংখ্যা বেড়ে এখন দাঁড়িয়েছে ১৩৭টিতে। নতুন এই আশঙ্কার কথা জানা গেছে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সূত্রে। তাদের দাবি, অনেক বিদ্রোহী প্রার্থীর অভিযোগ আমলে নিয়ে কাজ করছে না প্রশাসন। প্রার্থীদের ভার বুঝে প্রশাসনের কিছু কর্মকর্তা বিচার বিশ্লেষণ করে অভিযোগ আমলে নিচ্ছেন। যেটা নিয়ে বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠেছে।
সূত্র জানায়, নির্বাচনের দিন সারা দেশে সংঘাত ও সংঘর্ষের আশঙ্কা রয়েছে। এ জন্য নতুন করে সারা দেশে অতিরিক্ত নিরাপত্তা বলয় তৈরি করছে পুলিশ সদর দপ্তর।
সম্প্রতি গোয়েন্দা কর্মকর্তারা নির্বাচন কমিশন, পুলিশ সদর দপ্তর ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে একটি প্রতিবেদন দাখিল করেন। প্রতিবেদনে বলা হয়, সারা দেশের ১৩৭টি আসনে বড় ধরনের সংঘাত ও সংঘর্ষের আশঙ্কা রয়েছে। এসব প্রতিহত ও প্রতিরোধ করার কৌশলও তারা তুলে ধরেছেন।
সূত্র জানায়, গোয়েন্দাদের ওই তথ্যের ভিত্তিতে নতুন করে সংঘাত ও সংঘর্ষের কথা বিবেচনা করে অতিরিক্ত নিরাপত্তা ও নজরদারির পরিকল্পনা করা হয়েছে। এককভাবে মাঠপর্যায়ের প্রশাসনকেও বিষয়টি অবহিত করা হয়েছে।
হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটি (এইচ আর এস এস) জানায়, ২০২৩ সালে সারা দেশে রাজনৈতিক সহিংসতায় ৯৬ জন মানুষ হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন। পুলিশ সূত্র জানায়, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ২০২৩ সালের ২ ডিসেম্বর থেকে ২০২৪ সালের ২ জানুয়ারি পর্যন্ত সারা দেশে সংঘাত ও সংঘর্ষের ঘটনায় ৯ জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
সূত্র জানায়, গত এক মাসে সারা দেশে ৩৪টি জেলায় নির্বাচনি সহিংসতায় গুলিবিদ্ধসহ আহত হয়েছেন অন্তত ১৫৩ জন। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের ওপর হামলার ঘটনা যেমন বাড়ছে তেমনি নির্বাচনি অফিসেও ভাঙচুর চালানো হচ্ছে। আচরণবিধি মানানো ও সহিংসতা রোধে মাঠ পর্যায়ের প্রশাসনকে কঠোর হওয়ার নির্দেশ দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, যেকোনো ঘটনার অভিযোগ আমরা আমলে নিয়ে কাজ করছি। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকলে তা তদন্ত করে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সবাইকে লিখিত অভিযোগ দিতে হবে। কমিশন সভার সেরকমই নির্দেশনা রয়েছে। এর বাইরে অন্য কোনো ঘটনা ঘটলে সেসব বিষয় খতিয়ে দেখা এবং আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা রয়েছে।
সূত্র জানায়, নির্বাচন কমিশনে একাধিক প্রার্থী অভিযোগ করলেও তাতে তেমন কোনো সমাধান তারা পাননি। সহিংসতার ঘটনা দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। মনিটরিং ও নিয়ন্ত্রণে মাঠপর্যায়ের প্রশাসন রয়েছে। এত ব্যবস্থাপনা থাকার পরও মাঠপর্যায়ে সহিংসতা ও আচরণবিধি অধিকাংশই মানা হচ্ছে না। প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে অনেক জায়গায় প্রশ্ন উঠেছে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মাঠপর্যায়ের একাধিক কর্মকর্তা খবরের কাগজকে জানান, আগে যারা এমপি বা মন্ত্রী ছিলেন, তারা অনেকেই এবার স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে বিভিন্ন জায়গায় নির্বাচন করছেন। তারা অনেকেই খুব ক্ষমতাধর। এ জন্য ইচ্ছা থাকলেও তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া কঠিন হয়ে পড়ে।
এই বিষয়ে পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান, স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ক্ষমতাধর এবং এমপি বা মন্ত্রীর দায়িত্বে থাকার কারণে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে গেলে উল্টা সমস্যায় পড়তে হয়। অনেক সময় আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে গেলে শীর্ষ নেতাদের কেউ কেউ তাদের হয়ে সুপারিশ করেন। তখন বাধ্য হয়ে আইনি ব্যবস্থা থেকে সরে আসতে হয়।
একাধিক গোয়েন্দা কর্মকর্তা খবরের কাগজকে জানান, এবারের নির্বাচনে সারা দেশের ১৩৭ আসনে বড় সংঘর্ষের আশঙ্কা রয়েছে। এসব তথ্য মাঠপর্যায় ও শীর্ষ প্রশাসনকে জানানো হয়েছে। এ বিষয়ে পুলিশ সদর দপ্তরের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি-অপারেশন) মো. আনোয়ার হোসেন জানান, নির্বাচনের এই সময়ে পুলিশ সব প্রার্থীর অধিকার সমানভাবে দেখছে। সব প্রার্থী যাতে সমান সুযোগ পান, সেই নির্দেশনা পুলিশকে দেওয়া আছে। কেউ যদি পুলিশের কাছে অভিযোগ করেন, সেটা খতিয়ে দেখা হয় এবং আমলে নিয়েই কমিশনের নির্দেশে পুলিশ কাজ করে।
তিনি বলেন, যেসব এলাকায় সংঘর্ষ, সহিংসতার আশঙ্কা রয়েছে সেই সব এলাকায় বিজিবি, র্যাব, পুলিশসহ প্রশাসনের সমন্বিত নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হচ্ছে। যেখানে নিরাপত্তার সংকট রয়েছে বলে আমরা মনে করছি, সেখানে মোবাইল টিমসহ সর্বাত্মক ফোর্স কাজ করবে। যাতে কোথাও কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে বা ঘটলেও যথাযথ সময়ে যাতে মোকাবিলা করা যায়। কোনো আসনে সংঘাত-সংঘর্ষ যাতে না ঘটে, সে বিষয়ে আমরা সতর্ক এবং প্রস্তুত রয়েছি।
পুলিশ সদর দপ্তরের পুলিশ সুপার (মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স) ইনামুল হক সাগর বলেন, নির্বাচনের সময় কোথাও যেন সংঘাত ও সংঘর্ষ না হয়, সে ব্যাপারে আমরা সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে রয়েছি। আমরা অ্যাসেসমেন্ট অনুযায়ী নিরাপত্তা পরিকল্পনা করেছি। তা ছাড়া নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়েছি। গুরুত্বপূর্ণ ও বেশি গুরুত্বপূর্ণ স্থানসমূহে বাড়তি সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। বাড়ানো হয়েছে গোয়েন্দা নজরদারি। সার্বিক বিষয়ে পুলিশ পেশাদারিত্বের সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে।