দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে সবচেয়ে বেশি আলোচিত বিষয় হচ্ছে ‘গ্রহণযোগ্যতা’। শুধু দেশের ভেতরেই নয়, বিশ্বের বিভিন্ন দেশও বাংলাদেশে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন দেখতে চায়। পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে যে শুধু নির্বাচন অনুষ্ঠানই শেষ কথা নয়। দেশে-বিদেশে তা গ্রহণযোগ্য হতে হবে। এই নির্বাচনকে গ্রহণযোগ্য করার চ্যালেঞ্জ নিয়েই আজ রবিবার (৭ জানুয়ারি) ভোট গ্রহণ হচ্ছে। সকাল ৮টা থেকে শুরু হবে। বিরতি ছাড়াই চলবে বিকেল ৪টা পর্যন্ত।
ভোট গ্রহণ শেষে ১ ঘণ্টা বিরতির পর গণনা শুরু হবে। গণনা শেষে ফলাফল ঘোষণা হবে। নির্বাচন কমিশন আশা করছে, এই নির্বাচন সুষ্ঠু হবে এবং দেশে-বিদেশে গ্রহণযোগ্যতা পাবে।
একটি আসনে ভোট হচ্ছে না আজ
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে নওগাঁ-২ (পত্নীতলা-ধামইরহাট) আসনের যাবতীয় কার্যক্রম স্থগিত রেখেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। আসনটির স্বতন্ত্র প্রার্থী আমিনুল হকের মৃত্যুতে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। আবার তফসিল ঘোষণা করা হবে। বর্তমানে বৈধ প্রার্থীদের প্রার্থিতা বহাল থাকবে। তাদের নতুন করে মনোনয়নপত্র দাখিল করতে হবে না। আবারও তফসিল হলে নতুন করে অন্যরা মনোনয়নপত্র দাখিল করতে পারবেন। কবে ভোট নেওয়া হবে, পরে সে সিদ্ধান্ত নেবে ইসি।
গত ২৯ ডিসেম্বর মৃত্যুবরণ করেন আমিনুল হক। তিনি নওগাঁ জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক বন ও পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক। ২০০৬ সালে নওগাঁর পত্নীতলা উপজেলার নজিপুর পৌরসভার মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি।
আজকের নির্বাচনে ২৯৯ আসনে মোট ৪৪টি নিবন্ধিত দলের মধ্যে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগসহ ২৮টি দল নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। আবার নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকারের অধীন নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবিতে বিএনপিসহ নিবন্ধিত ১৬টি দল ভোট বর্জন করেছে। ফলে ভোটারদের একটি বড় অংশ এই ভোটের বাইরে থাকবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি বাড়াতে প্রায় সব আসনেই স্বতন্ত্র প্রার্থী রেখেছে। এর পরও কেন্দ্রে আশানুরূপ ভোটার উপস্থিতি না হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। অন্যদিকে আন্দোলনরত বিএনপি ও তাদের সমমনা দলগুলো চাইছে ভোটাররা যেন ভোট দিতে না যান।
রাজনৈতিক দুই পক্ষের বিপরীতমুখী অবস্থানের মধ্যেই অবাধ, সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানে যেসব চ্যালেঞ্জ চিহ্নিত করা হয়েছে, তা মোকাবিলায় নির্বাচন কমিশন প্রস্তুত বলে ইতোমধ্যে ঘোষণা করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার। এর মধ্যে প্রধান চ্যালেঞ্জ হলো দেশে ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন উপহার দেওয়া। এ ছাড়া আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণসহ অন্যান্য চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপও নিয়েছে ইসি। শেষ পর্যন্ত কতটা সফল হয়, সেটা দেখার জন্য আজ ভোট গ্রহণ ও ফলাফল ঘোষণা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। তবে নির্বাচন কমিশন দাবি করছে, এ নির্বাচন দেশে-বিদেশে গ্রহণযোগ্যতা পাবে।
গতকাল শনিবার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে মিট দ্য প্রেসে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘ভোট হবে সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ। তবে গ্রহণযোগ্যতার কোনো মানদণ্ড থাকে না, এটা আপেক্ষিক বিষয়। কিন্তু আমরা চাইব, নির্বাচনকে সর্বাধিক গ্রহণযোগ্য করতে। যে কারণে এখানে বিদেশি পর্যবেক্ষক ও সংবাদকর্মীরা এসেছেন। তারা বিষয়টিকে ফুটিয়ে তুলবেন। আমরা আশাবাদী, এবারের নির্বাচন দেশ ও বিদেশে গ্রহণযোগ্যতা পাবে। বিরোধিতা থাকা সত্ত্বেও জনগণ ভোট দিয়ে নির্বাচনকে গ্রহণযোগ্য করে তুলবেন বলে আশা রাখছি।’
এবারের নির্বাচনে মোট ১ হাজার ৯৭০ জন প্রার্থী অংশ নিয়েছেন। এর মধ্যে ২৬৬ আসনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা নৌকা প্রতীক নিয়ে লড়ছেন। যে ২৮টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল নির্বাচনে অংশ নিয়েছে, তার মধ্যে ক্ষমতাসীন দলই সবচেয়ে বেশি আসনে প্রার্থী দিয়েছে। আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোট বেঁধে নির্বাচনে অংশ নেওয়া জাতীয় পার্টি ২৬৫ আসনে প্রার্থী দিয়েছে। ২৬টি আসনে জাতীয় পার্টিকে সমর্থন দিয়েছে আওয়ামী লীগ। অন্য আসনগুলোতে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির প্রার্থীরা একে অন্যের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। এবারের নির্বাচনে তৃতীয় সর্বোচ্চ প্রার্থী দিয়েছে তৃণমূল বিএনপি। দলটির ১৩৫ জন প্রার্থী ‘সোনালী আঁশ’ প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। নির্বাচনে অংশ নেওয়া অন্য দলগুলোর মধ্যে জাকের পার্টির ২১ জন প্রার্থী গোলাপ ফুল প্রতীকে, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির ১২২ জন আম প্রতীকে, বাংলাদেশ কংগ্রেসের ৯৬ জন ডাব প্রতীক নিয়ে, জাসদের ৬৬ জন মশাল প্রতীক নিয়ে, বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির (বিএসপি) ৭৯ জন একতারা প্রতীকে, বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোটের ৬৩ জন ছড়ি প্রতীক নিয়ে, বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্টের (বিএনএফ) ৪৫ জন টেলিভিশন প্রতীকে, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের (বিএনএম) ৫৬ জন নোঙ্গর প্রতীক নিয়ে, বাংলাদেশ তরীকত ফেডারেশনের ৩৮ জন ফুলের মালা প্রতীক নিয়ে লড়ছেন।
নির্বাচনে অংশ নেওয়া ইসলামী ঐক্যজোটের ৪২ জন মিনার প্রতীক, ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ ৩৯ জন চেয়ার প্রতীক, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের ৩৭ জন মোমবাতি প্রতীক, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ ৩০ জন গামছা প্রতীক, ওয়ার্কার্স পার্টির ২৬ জন হাতুড়ি প্রতীক, গণফ্রন্টের ২১ জন মাছ প্রতীক, জাতীয় পার্টির (জেপি) ১৩ জন বাইসাইকেল প্রতীক নিয়ে ভোটের লড়াই করছেন।
বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির ১৬ জন হাতঘড়ি, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের ১১ জন বটগাছ, বিকল্পধারা বাংলাদেশের ১০ জন কুলা, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির ৫ জন কাঁঠাল, গণতন্ত্রী পার্টির ১০ জন কবুতর, গণফোরামের ৯ জন উদীয়মান সূর্য, বাংলাদেশ সাম্যবাদী দলের ৪ জন চাকা, ন্যাপের ৫ জন কুঁড়েঘর, বাংলাদেশ মুসলিম লীগের (বিএমএল) ৪ জন হাত-পাঞ্জা প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন মোট ৪৩৬ জন। এর মধ্যে একজন তৃতীয় লিঙ্গের। প্রার্থিতা চূড়ান্ত হওয়ার পর ঘোষণা দিয়ে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন শতাধিক প্রার্থী। এরা প্রধানত জাতীয় পার্টি এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী ছিলেন। ৭ জানুয়ারি ভোট গ্রহণের দিনক্ষণ ধার্য করে গত ১৫ নভেম্বর তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন ছিল ৩০ নভেম্বর। বাছাই করা হয় ১ থেকে ৪ ডিসেম্বর। মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন ছিল ১৭ ডিসেম্বর। ১৮ ডিসেম্বর প্রতীক বরাদ্দের পর প্রার্থীদের প্রচার ও গণসংযোগ শুরু হয়। প্রচার ও গণসংযোগে কিছু এলাকায় প্রতিপক্ষের সমর্থকদের সঙ্গে সংঘর্ষ ও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলেও দেশের বেশির ভাগ এলাকা ছিল শান্তিপূর্ণ। ১৮ দিনের প্রচার ও গণসংযোগ শেষ হয় গত শুক্রবার সকাল ৮টায়।