![তিনবার রুটিন প্রকাশের নেপথ্যে ছুটির দিনে পরীক্ষা নিতে আপত্তি](uploads/2024/01/12/1705035702.National-uni.jpg)
তৃতীয়বারের মতো রুটিন প্রকাশ করা হয়েছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২২ সালের অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের পরীক্ষার রুটিন। ছুটির দিনে শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তাদের পরীক্ষাসংক্রান্ত কার্যক্রমে অংশ নেওয়া থেকে বিরত থাকার হুমকি আর নির্বাচনের কারণে বারবার রুটিন পরিবর্তন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক বদরুজ্জামান স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে অনিবার্য কারণ দেখিয়ে সর্বশেষ রুটিনে পরিবর্তন আনা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের ৬ নভেম্বর প্রথমবার পরীক্ষার রুটিন প্রকাশ করা হয়। এরপর ১৮ ডিসেম্বর আগের রুটিন পরিবর্তন করে দ্বিতীয়বার রুটিন প্রকাশ করা হয়। যেখানে চারটি শনিবারও পরীক্ষা নেওয়ার সূচি রাখা হয়। নতুন রুটিন অনুযায়ী, ১৮ ডিসেম্বর প্রকাশিত রুটিনের ১৩ জানুয়ারির পরীক্ষা ১৪ জানুয়ারি, ২০ জানুয়ারির পরীক্ষা ২১ জানুয়ারি, ২৭ জানুয়ারির পরীক্ষা ২৮ জানুয়ারি এবং ৩ ফেব্রুয়ারির পরীক্ষা ৪ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে।
বিসিএস শিক্ষা সমিতি সূত্র জানায়, সরকারি ছুটির দিনে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষাসংক্রান্ত কার্যক্রম রাখায় প্রথমে শিক্ষকরা অসন্তোষ জানান। বিষয়টি পরিবর্তন করতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে চিঠি পাঠানো হয়। এরপরেও সিদ্ধান্ত না আসায় সরকারি কলেজে কর্মরত শিক্ষা ক্যাডাররা নিজেরা অভ্যন্তরীণ সভা করেন। সেখানে সিদ্ধান্ত হয় ‘মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ কর্তৃক অনুমোদিত এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক জারিকৃত সরকারি ছুটির দিনে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা গ্রহণ, ফরমপূরণ, ভর্তি, রেজিস্ট্রেশন ও মৌখিক পরীক্ষসহ অন্যান্য কাজে অংশগ্রহণ থেকে বিরত থাকা।’ একই সঙ্গে নিজেদের অভ্যন্তরীণ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের গ্রুপগুলোতেও ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়। দাবি মানা না হলে আন্দোলনে যাওয়ারও পরিকল্পনা নেওয়া হয়।
ধামরাই সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ ড. মো. সেলিম মিয়া খবরের কাগজকে বলেন, ‘সব জায়গায় চিঠি লিখেছি আমরা পরীক্ষা নিব না। সমিতির সবাই সভা করেছি। অবকাশে কোনো পরীক্ষা হবে না। আমাদের দাবি মেনে নিয়ে তারা (জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ) রুটিনে পরিবর্তন আনছে। যদি দাবি মানা না হতো তাহলে আমরা কঠোর আন্দোলনে যেতাম। কারণ এটা মানবাধিকারের লঙ্ঘন।’
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক বদরুজ্জামান খবরের কাগজকে বলেন, ‘শনিবার কলেজগুলো বন্ধ থাকার কারণে পরিবর্তন আনা হয়েছে। এর আগে নির্বাচনের কারণে পরিবর্তন আনা হয়েছিল। আমরা চেয়েছিলাম পরীক্ষাটা দ্রুত হওয়ার জন্য। কারণ ১৩ ডিসেম্বর থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত কলেজগুলো ছুটি থাকায় এক মাস পিছিয়ে গেছি। ’
সেশনজটের আশঙ্কার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা একটু এগিয়ে আনার চেষ্টা করেছিলাম। শিক্ষার্থীদের জন্য সবসময় চিন্তা করি। এটা পেছানো মানে তৃতীয় বর্ষ পেছাবে। তৃতীয় বর্ষ পেছালে চতুর্থ বর্ষ পেছাবে। আবার এইচএসসি পরীক্ষা হলে তখনো বন্ধ থাকবে। সবসময় আমার ছাত্ররা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। যেহেতু সরকারি ছুটি আর সমিতি ও কলেজগুলো চিঠি দিয়েছে এ জন্য পরীক্ষার রুটিন পরিবর্তন করা হয়েছে।’
এদিকে বারবার রুটিন পরিবর্তনে শিক্ষার্থীরা মানসিকভাবে চাপ অনুভব করছেন। জয়পুরহাট সরকারি গার্লস কলেজের ছাত্রী শারমিন আক্তার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লেখেন, আর কত রুটিন পাল্টাবে? আরেক শিক্ষার্থী লিখেন, ‘অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের অতীতের সব রুটিন বাতিল। পরীক্ষার্থীরা কেন্দ্রে পরীক্ষা দিচ্ছে, অন্যদিকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় নতুন করে রুটিন প্রকাশ করে দিল। পরীক্ষা দিয়ে বাসায় যেতে না যেতে নতুন সারপ্রাইজ।’