![সমুদ্রপথে চলে দেশের পতাকাবাহী ৯৬ জাহাজ, নিরাপত্তা জোরদার](uploads/2024/03/21/1711004263.ship.jpg)
সরকারি ৭টিসহ দেশীয় ১৪টি শিল্প গ্রুপের বহরে লাল-সবুজের পতাকাবাহী ৯৬টি জাহাজ চলছে বিশ্বের সমুদ্রপথে। সমুদ্রপথে মাথা উঁচু করেই এসব জাহাজ চলছে। এশিয়া, আফ্রিকা, ইউরোপ, আমেরিকার বিভিন্ন দেশে- যে সময় যেদিকে ভাড়া পাওয়া যায় সেদিকে চলে এই জাহাজগুলো। পণ্য পরিবহনের মাধ্যমে এসব জাহাজ সমুদ্রে লাল-সবুজের নেতৃত্ব দিচ্ছে। প্রায় ৫০ লাখ মেট্রিক টন পণ্য পরিবহনের সক্ষমতা রয়েছে এগুলোর। যদিও সম্প্রতি এসআর শিপিংয়ের একটি জাহাজ সোমালিয়ায় জিম্মি হওয়ায় অন্য জাহাজে থাকা নাবিক ও স্বজনদের মনে ভয়ভীতির সঞ্চার হয়েছে। তবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বলছে, অন্যান্য জাহাজে নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।
জানা গেছে, সমুদ্রপথে চলা সরকারি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের (বিএসসি) জাহাজ রয়েছে ৭টি। এ ছাড়া সোমালিয়ান জলদস্যুদের হাতে জিম্মি থাকা এমভি আবদুল্লাহসহ কবির গ্রুপের এসআর শিপিংয়ের জাহাজ রয়েছে ২৩টি, মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের (এমজিআই) জাহাজ আছে ২২টি, আকিজ গ্রুপের জাহাজের সংখ্যা ১০টি, বিএসএ গ্রুপের ৭টি, কর্ণফুলী লিমিটেডের জাহাজের সংখ্যা ৬টি, বসুন্ধরা গ্রুপের ৭টি, ওরিয়ন গ্রুপ ও এমজেএলের বহরে একটি করে জাহাজ রয়েছে। এ ছাড়া সমুদ্রগামী জাহাজ পরিচালনায় নামছে নতুন নতুন প্রতিষ্ঠান। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে সানশাইন নেভিগেশন লিমিটেড, পিএনএন শিপিং লাইনস, পিএইচ নেভিগেশন, দরিয়া শিপিং লিমিটেড ও ডরিন শিপিং লাইনস।
আন্তর্জাতিক সমুদ্রপথে হাই রিস্ক এরিয়া বা এইচআরআই রুটে অতিরিক্ত নিরাপত্তাব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। সোমালিয়ায় এসআর শিপিংয়ের একটি জাহাজ জিম্মি হওয়ায় নড়েচড়ে বসেছে দেশের শিপিং সেক্টর।
সূত্রমতে, কবির গ্রুপের এসআর শিপিং লিমিটেড ২০০৪ সাল থেকে জাহাজ পরিচালনা করে আসছে। জাহাজের সংখ্যায় শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে এই গ্রুপটি। গত ১২ মার্চ সোমালিয়ান জলদস্যুদের হাতে ২৩ নাবিকসহ এমভি আবদুল্লাহ জাহাজটি জিন্মি হওয়ায় আবারও বিশ্বব্যাপী আলোচনায় আসে এই শিল্প গ্রুপের নাম। এ গ্রুপের অন্য জাহাজেও পড়েছে এর প্রভাব।
জাহাজ ব্যবসায় এমজিআইয়ের পথচলা শুরু হয় ২০১১ সালে। তবে ২০১৯ থেকে গ্রুপটি ব্যাপকতা বাড়ায় জাহাজে। গ্রুপটির বহরে থাকা দুটি তেল পরিবহনকারী জাহাজ ছাড়া সব কটির পণ্য পরিবহনক্ষমতা গড়ে ৬০ হাজার টন। এই খাতে গ্রুপটির বিনিয়োগ প্রায় ৪৫ কোটি ডলারে।
এদিকে আকিজ গ্রুপ সমুদ্রগামী জাহাজ পরিচালনায় যুক্ত হয় ২০১১ সালে। গ্রুপটির বহরে থাকা ১০টি জাহাজের পণ্য পরিবহনক্ষমতা ৫ লাখ ৬০ হাজার টন। সবচেয়ে বেশি পণ্য পরিবহনক্ষমতার বাল্ক জাহাজটি আকিজ গ্রুপের হাতে। এমভি আকিজ গ্লোরি নামের জাহাজটির পণ্য পরিবহনক্ষমতা প্রায় ৭৬ হাজার টন।
বাংলাদেশের পতাকাবাহী ৯৬টি জাহাজের মধ্যে ৭৫টি খোলা পণ্য পরিবহনকারী বাল্ক জাহাজ। এ ছাড়া তেল পরিবহনকারী ট্যাংকার রয়েছে ১০টি, এলপিজি পরিবহনকারী ট্যাংকার ৩টি এবং কনটেইনার পরিবহনকারী ৮টি জাহাজ রয়েছে।
বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের (বিএসসি) জেনারেল ম্যানেজার (যুগ্ম সচিব) মোহাম্মদ আশরাফুল আমিন খবরের কাগজকে বলেন, ‘সরকারি জাহাজগুলো নিরাপদে চলছে। আমরা সব সময় নিরাপত্তার দিকটা বিবেচনা করি। ফলে সরকারি জাহাজগুলো স্বাভাবিকভাবে চলছে।’
এসআর শিপিংয়ের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মেহেরুল করিম বলেন, ‘আমাদের অন্য জাহাজগুলো ভালোভাবেই চলছে। আমরা চাই একটি জাহাজে যে ঝামেলা হয়েছে, সেটি সুষ্ঠুভাবে সমাধান করতে। তবে আমাদের চেষ্টার কোনো ত্রুটি রাখছি না।’
মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) আবু তাহের খবরের কাগজকে বলেন, ‘আন্তর্জাতিক সমুদ্রপথে যে রুটে যে ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া দরকার সেভাবেই অতিরিক্ত নিরাপত্তাব্যবস্থা নিয়েই চলছে আমাদের জাহাজ। সোমালিয়ায় একটি জাহাজ জিম্মি হওয়ায় আমরা সতর্ক হয়েছি। এ রুটে ঘটনার কয়েক দিন আগেও আমাদের জাহাজ গিয়েছিল। তবে এ ঘটনায় আন্তর্জাতিক শিপিং সেক্টর সতর্ক হয়েছে।’
বাংলাদেশ শিপিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সৈয়দ মোহাম্মদ আরিফ বলেন, ‘একটি জাহাজের কারণে অন্য জাহাজেও সন্ত্রাসী ঘটনা ঘটবে তা নয়। তবু অন্য জাহাজে নাবিক যারা রয়েছেন, তাদের মনে হয়তো একটু শঙ্কা সৃষ্টি হতে পারে, স্বজনরাও আতঙ্কে থাকতে পারেন। এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটবে, তা আমি মনে করি না। তবে যেসব রুটে শঙ্কা আছে, সেখানে অতিরিক্ত নিরাপত্তাব্যবস্থা রাখা যায়।’
ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন দ্য ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) সভাপতি মো. মাহবুবুল আলম খবরের কাগজকে বলেন, ‘সোমালিয়ান জলদস্যুদের হাতে আমাদের নাবিক ও জাহাজ জিম্মি থাকায় আমরা অবশ্যই আতঙ্কিত। এর প্রভাব আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্যেও পড়ছে। যদিও এটি বিশ্বব্যাপী একটি ইস্যু। জাহাজ চলাচলে আমাদের আরও সতর্ক অবস্থায় চলতে হবে। আমরা যেন ব্যবসায়িকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত না হই, সে চিন্তা করে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।’
দেশের ইতিহাসে ১৯৭২ সালে ‘এমভি বাংলার দূত’ জাহাজে সমুদ্রপথে পণ্য পরিবহন শুরু করে বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন। পর্যায়ক্রমে ৩৮টি জাহাজ যুক্ত হয় সরকারি বহরে। বর্তমানে এই বহরে ৭টি জাহাজ রয়েছে।
অন্যদিকে ১৯৭৮ সালে অ্যাটলাস শিপিং লাইনস লিমিটেডের প্রতিষ্ঠাতা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক সানাউল্লাহ চৌধুরী বেসরকারি খাতে ‘এমভি আল সালমা’ দিয়েই ব্যবসার যাত্রা শুরু করেন। বর্তমানে সমুদ্রগামী জাহাজ পরিচালনা শিল্প থেকে সরে আসে প্রতিষ্ঠানটি।