![পদ্মা ব্যাংকের গ্রাহকদের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা কেটে গেছে](uploads/2024/03/21/1711012371.Padma_Bank.jpg)
এক্সিম ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হওয়ার সংবাদে পদ্মা ব্যাংকের শাখায় শাখায় আমানতকারীরা টাকা তুলতে ভিড় করলেও শেষ পর্যন্ত তা করেননি। পদ্মা ব্যাংক না থাকার উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা শেষ পর্যন্ত কেটে গেছে। কারণ, শাখা পর্যায়ের কর্মীরা গ্রাহকদের বোঝাতে সক্ষম হয়েছেন যে একটি শক্তিশালী ব্যাংকের সঙ্গে পদ্মা ব্যাংক একীভূত হতে যাচ্ছে।
এতে গ্রাহকদের মাঝে এই আত্মবিশ্বাস এসেছে যে ব্যাংকটি আগামীতে ভালো করবে। এ ছাড়াও, এক্সিম শরীয়াহ ব্যাংকিং করে বলে আমানত সুরক্ষিত থাকবে ও মুনাফা ভালো পাওয়া যাবে। গ্রাহকরা এটাও আশ্বস্ত হয়েছেন যে পদ্মা ও এক্সিম ব্যাংক একীভূত হলে পদ্মার গ্রাহকরা এক্সিম ব্যাংকের গ্রাহক হিসেবে আইনগত অধিকার পাবেন এবং নিয়মিত লেনদেনসহ যাবতীয় ব্যাংকিং সেবা পাবেন। এরপর শাখায় শাখায় ভিড় করা গ্রাহকরা ফিরে গেছেন হাসিমুখে।
বুধবার (২০ মার্চ) রাজধানীর মতিঝিলের জামান কোর্ট শাখা ও এলিফ্যান্ট রোডের উপশাখায় সরেজমিনে গিয়ে যারা নিয়মিত লেনদেন করেন, তাদের উপস্থিতি দেখা গেছে। এলিফ্যান্ট রোড উপশাখার গ্রাহক একই এলাকার জুতার দোকান মালিক মো. শফিকুল ইসলাম জনি বলেন, প্রথমে ভয় পেয়েছিলাম। শাখার সবাই বন্ধুর মতো। খোঁজ নিতে এসে জানলাম, দুই ব্যাংক এক হলে আমাদের কোনো সমস্যা হবে না। জেনে আমি খুশি। জনি বলেন, আমি ব্যবসার নগদ লেনদেন করি এখানে। আর ২টা ডিপোজিট আছে। মাসে মাসে কিছু টাকা জমা করি।
উপ-শাখার কর্মকর্তা নাজমুল জানান, এখানে চলতি হিসাব বেশি। ব্যবসায়ীদের নগদ লেনদেন হয়। আর কিছু মেয়াদি আমানত আছে। এফডিআরও আছে। আমরা গ্রাহকদের বলেছি, অযথা ভয় পাবেন না।
গত ১৭ মার্চ সোমবার এক্সিম ও পদ্মা ব্যাংক একীভূত হতে বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নরের উপস্থিতিতে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হয়। পরদিন মঙ্গলবার রাজধানীতে ও ঢাকার বাইরে পদ্মা ব্যাংকের গ্রাহকরা উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা নিয়ে শাখায় শাখায় ভিড় করেন।
পদ্মা ব্যাংকে তারল্য সংকট ও খেলাপি ঋণ পরিস্থিতি চরমভাবে খারাপ হয়ে পড়ায় এ ব্যাংকটির আমানতকারীরা তাদের টাকা ফেরত পাবেন কি না, সে বিষয়ে অনিশ্চয়তার মধ্যে ছিলেন। এমন সময়ে এক্সিম ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হয়ে যাওয়ার ফলে আমানতকারীদের অর্থ ফেরত পাওয়ার নিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।
পদ্মা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার (সিইও) তারিক রিয়াজ খান খবরের কাগজকে বলেন, ‘২০২২ সালের ডিসেম্বর থেকে আমরা গুরুতর তারল্য সংকটে ছিলাম। তারপরও সিনিয়র ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের উদ্যম ও অভিনব প্রচেষ্টা হিসেবে শেষ পর্যন্ত একটি সবল ব্যাংকের সঙ্গে আমাদের মার্জার হচ্ছে। দুই ব্যাংকের পর্ষদ এক্ষেত্রে খুবই উৎসাহব্যঞ্জক সায় দিয়েছেন। আমি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি পদ্মা ও এক্সিম ব্যাংকের পর্ষদের প্রতি।’ ব্যাংকের সিইও হিসেবে এটিই আমার সাফল্য যে আমানতকারীদের সব সুরক্ষা একটি ভালো ব্যাংকে দিয়ে যেতে পারছি। পদ্মার গ্রাহকরা এক্সিম ব্যাংকে ভালো থাকবেন।
তিনি বলেন, প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হয়ে যাবে খুব শিগগির। পদ্মা ও এক্সিম ব্যাংকের গ্রাহকরা দুই ব্যাংকের যে কোনো শাখায় ব্যাংকিং সেবা পাবেন। একীভূত হওয়ার কাজ চূড়ান্তভাবে সম্পন্ন হতে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদনের পর উচ্চ আদালতের একটি অনুমোদন দরকার হবে। আদালত দুই ব্যাংকের ব্যালেন্সশিট অনুমোদন দেবে।
ঢাকার বাইরে চট্টগ্রাম ও জামালপুরে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পত্রিকা ও টিভি চ্যানেলগুলোতে ‘পদ্মা ব্যাংক থাকছে না’ শীর্ষক খবরে গ্রাহকদের মধ্যে উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা ছড়িয়ে পড়ে। পরিচিতদের কাছে জানার চেষ্টা করে প্রকৃত ঘটনা। পরদিন মঙ্গলবার ব্যাংকটির শাখায় ছুটে যান অনেক গ্রাহক। ব্যাংকটির শাখা পর্যায়ের কর্মকর্তারা জানান, পরিস্থিতি এমন বিব্রতকর হতে পারে সেজন্য আগে থেকেই মানসিক প্রস্তুতি তাদের ছিল। তাই মার্জারের খবরকে কেন্দ্র করে গ্রাহকদের মধ্যে সৃষ্ট উদ্বেগ উৎকণ্ঠা দূর করতে আগে থেকেই প্রধান কার্যালয়ের নির্দেশ ছিল। সে নির্দেশনা মোতাবেক শাখার কর্মীরা গ্রাহকদের বুঝিয়েছেন যে, মার্জার বা একীভূত হওয়া মানে ব্যাংকটির শেষ হয়ে যাওয়া নয়। মার্জার সম্পন্ন হয়ে গেলে চূড়ান্ত ঘোষণা আসবে এবং এক্ষেত্রে পদ্মা ব্যাংকের সকল দায় ও আমানতের জিম্মাদার হবে এক্সিম ব্যাংক। গ্রাহকরা আগের মতোই লেনদেন করতে পারবেন। নগদ টাকাও তুলতে পারবেন।
মতিঝিল শাখার এক কর্মকর্তা খবরের কাগজকে বলেন, আমরা গ্রাহকদের একটা চাপের মুখোমুখি হয়েছি সত্য। তবে, শেষ পর্যন্ত আমরা গ্রাহকদের বোঝাতে সক্ষম হয়েছি যে, ‘আপনাদের জমা রাখা টাকা যে কোনো সময় তুলে নিতে পারবেন। দুই ব্যাংকের শেয়ারধারী মালিকরা একীভূত হতে একমত হয়েছেন। সে ঐকমত্যের ভিত্তিতে চুক্তিও স্বাক্ষর হয়েছে। কিন্তু একীভূত হবার প্রক্রিয়াটা একটু দীর্ঘ। সেটি সম্পন্ন হয়ে গেলে পদ্মা ব্যাংকের গ্রাহকরা এক্সিম ব্যাংকের গ্রাহক হিসেবে সব সেবা পাবেন। বরং এক্সিম ব্যাংক ভালো একটি ব্যাংক। এ ব্যাংকটি আর্থিকভাবে পদ্মার চেয়ে ৬-৭ গুণ বেশি শক্তিশালী। এরপর গ্রাহকদের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা দূর হয় এবং তারা হাসিমুখে ফিরে গেছেন। সামনে ঈদ। তাই কেউ কেউ প্রয়োজনীয় নগদ অর্থ তুলে নিচ্ছেন। এটি নিয়মিত প্রক্রিয়া। অস্বাভাবিক কিছু নয়।
যোগাযোগ করা হলে ব্যাংকটির প্রধান কার্যালয়ের উপ ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফয়সাল আহমদ চৌধুরী খবরের কাগজকে বলেন, ‘আমরা স্বীকার করি মার্জারের খবরে গ্রাহকদের মাঝে একটু প্যানিক বা আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। কিন্ত গ্রাহকরা আমাদের সঙ্গে কথা বলার পর সে আতঙ্ক দূর হয়ে গেছে।’
মার্জারের খবরের পর গ্রাহকের চাহিদা অনুযায়ী টাকা দিতে পারেনি এমন কোনো ঘটনা পদ্মা ব্যাংকের কোনো শাখায় ঘটেছে কি না- এ প্রশ্নের জবাবে শীর্ষ পর্যায়ের ওই কর্মকর্তা বলেন, তা ঘটেনি। এমন ঘটনা হলে তা অনেক বড় ইস্যু হতো। তবে, সামনে ঈদ। প্রতিবছরই এসময়ে বাড়তি টাকার চাহিদা সৃষ্টি হয়। কোনো কোনো শাখায় হয়তো নগদ অর্থের চাহিদা তাৎক্ষণিক পূরণ করা সম্ভব হয়নি। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশ আছে কোনো গ্রাহক যদি ২ লাখ টাকার ওপরে নগদ উত্তোলন করতে চান, তাহলে আগে নোটিশ দিতে হবে। আমরা সেই নির্দেশের বাইরে যেতে পারি না। তারপরও ভালো গ্রাহকের প্রয়োজনকে আমরা অগ্রাধিকার দিয়ে থাকি।