![সাতক্ষীরা মেডিকেলে বিকল মেশিন, বিপাকে কিডনি রোগীরা](uploads/2024/03/24/1711256951.Satkhira-Medical-College.jpg)
সাতক্ষীরা শহরের বাসিন্দা জহুরুল কবীর। পেশায় গণমাধ্যমকর্মী। তার স্ত্রী দীর্ঘদিন ধরে কিডনি রোগে আক্রান্ত। আর্থিক সচ্ছলতা না থাকায় জমি বিক্রি করে তার চিকিৎসা করাচ্ছিলেন। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী প্রতি সপ্তাহে তার তিনটি সেশনে ১২ ঘণ্টা করে ডায়ালাইসিস করা প্রয়োজন। কিন্তু সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ (সামেক) হাসপাতালের একাধিক মেশিন বিকল থাকায়, দুই সেশনে চার ঘণ্টা করে সপ্তাহে আট ঘণ্টা ডায়ালাইসিস করানো হতো। কম খরচে এই হাসপাতাল থেকে সেবা নিয়ে স্ত্রীকে কোনো রকমে বাঁচিয়ে রেখেছিলেন।
কিন্তু গত মঙ্গলবার হাসপাতাল থেকে আসা এক কলে তিনি চোখে-মুখে অন্ধকার দেখছেন। এখন থেকে তার স্ত্রীকে সপ্তাহে সবোর্চ্চ একবার ডায়ালাইসিস করার সুযোগ পাবেন। ১৯টির মধ্যে মাত্র তিনটি মেশিন এখন সচল রয়েছে। রোগীর চাপের কারণে সপ্তাহে একবারের বেশি ডায়ালাইসিস সেবা পাওয়া যাবে না। জহুরুল কবীর বলেন, ‘সপ্তাহে চার ঘণ্টা ডায়ালাইসিস করালে অধিকাংশ রোগীই বাঁচবে না। খবরটি শুনে অনেক কেঁদেছি।’ স্ত্রীকে বাঁচাতে তিনি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, ১৯টি ডায়ালাইসিস মেশিনের মধ্যে ১৬টি বিকল। একটি পুরোপুরি সক্রিয় থাকলেও দুটোর কাজ চলছে জোড়াতালি দিয়ে। ফলে নিয়মিত চিকিৎসা করা কিডনি রোগীরা দুর্ভোগে পড়ছেন। এ অবস্থায় তিনটি সচল মেশিন দিয়ে সপ্তাহে এক দিন রোগীদের ডায়ালাইসিস করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। অভিযোগ রয়েছে, অদক্ষ ব্যক্তি দিয়ে মেশিন পরিচালনা করায় হাসপাতালের ১৬টি ডায়ালাইসিস মেশিন নষ্ট হয়ে গেছে। বাকি তিনটিও নষ্ট হওয়ার পথে।
কিডনি ইউনিট সূত্রে জানা গেছে, সাতক্ষীরা ছাড়াও আশপাশের জেলার রোগীরা এখানে চিকিৎসা নেন। ইউনিটের চালু থাকা প্রতিটি যন্ত্র দিয়ে দিনে দুই থেকে তিনজন রোগীর ডায়ালাইসিস হতো। ইউনিটে গড়ে ৩৫-৪০ জন রোগীর প্রতিদিন নিয়মিত ডায়ালাইসিস হয়ে আসছিল। পর্যায়ক্রমে ৬০-৭০ জন সিরিয়ালে থাকতেন। একজন রোগীর সপ্তাহে দুদিন করে ডায়ালাইসিস হয়।
হাসপাতাল সূত্র জানায়, ডায়ালাইসিসের জন্য ২০০ টাকা ফি নেওয়া হয়। এতে সাধারণ ও দরিদ্র রোগীরা কম খরচে সেবা পান। জেলার বাইরের বিভিন্ন এলাকা থেকেও রোগী আসেন। কয়েক মাস আগেও ১৯টি যন্ত্রের সবগুলো চালু ছিল। কিন্তু কর্তৃপক্ষের অবহেলা ও সঠিক পরিচর্যার অভাবে একটি একটি করে যন্ত্রগুলো নষ্ট হতে থাকে। ফলে চাপ বাড়তে থাকে বাকি যন্ত্রগুলোর ওপর। অকেজো মেশিনগুলো সময়মতো মেরামত না করায় বর্তমানে তিনটি চালু আছে। তা দিয়ে তালিকাভুক্ত শতাধিক কিডনি রোগীকে ডায়ালাইসিস সেবা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। ফলে গত মঙ্গলবার হাসপাতাল থেকে রোগীদের ফোন করে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, ২০ মার্চ থেকে সপ্তাহে দুটির পরিবর্তে মাত্র একটি ডায়ালাইসিস করানো হবে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের এমন ঘোষণায় পর বিপাকে পড়েন রোগীরা। বর্তমানে আতঙ্কে ভুগছেন তারা।
প্রত্যন্ত শ্যামনগর উপজেলার বংশিপুরের আজিজ মোড়লের ছেলে জয়নাল বলেন, ‘মা ভিক্ষা করে আমার ডায়ালাইসিসের খরচ চালান। এখন যদি এখানে সেবা বন্ধ করে দেয়, তাহলে যেকোনো সময় আমার মৃত্যু হবে। কারণ প্রাইভেট হাসপাতাল বা ক্লিনিকে ডায়ালাইসিস করানোর সামর্থ্য আমার নেই।’.
হাসপাতালের কিডনি ডায়ালাইসিস ইউনিটের ইনচার্জ নমিতা রানী বলেন, ‘১৯টি মেশিনের মধ্যে একটি ভালো থাকলেও অপর দুটি মেশিনে জোড়াতালি দিয়ে রোগীদের ডায়ালাইসিস চলছে। ফলে এখন থেকে সপ্তাহে দুই অথবা তিনবার ডায়ালাইসিস দেওয়া সম্ভব হবে না।’
এ ব্যাপারে সামেক হাসপাতালের পরিচালক শীতল চৌধুরী বলেন, আমাদের মোট ডায়ালাইসিস মেশিন ১৯টি। যার মধ্যে বর্তমানে তিনটি সচল আছে। নষ্ট হওয়ার কারণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, অদক্ষ ব্যক্তি দিয়ে মেশিন পরিচালনা করায় মেশিনগুলো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
নষ্ট মেশিনগুলো মেরামত প্রক্রিয়া সম্পর্কে তিনি বলেন, এটা দীর্ঘ সময়ের ব্যাপার। মন্ত্রণালয়ে জানানো হয়েছে। মেরামতের জন্য কয়েক দফায় টেকনিশিয়ান এসেছেন। কিন্তু খুচরা যন্ত্রাংশ না পাওয়া যাওয়ায় মেশিনগুলো ঠিক করা সম্ভব হচ্ছে না। তবে নষ্ট মেশিনগুলো দ্রুত মেরামতের চেষ্টা করা হচ্ছে বলে দাবি করেন তিনি।