ঢাকা ১৯ আষাঢ় ১৪৩১, বুধবার, ০৩ জুলাই ২০২৪

যানবাহনে সিলিন্ডার যেন ‘চলন্ত বোমা’

প্রকাশ: ২৬ মার্চ ২০২৪, ১২:০৭ পিএম
আপডেট: ২৬ মার্চ ২০২৪, ১২:১৩ পিএম
যানবাহনে সিলিন্ডার যেন ‘চলন্ত বোমা’
ছবি : খবরের কাগজ

ফেনীর এক সিএনজি ফিলিং স্টেশনে সম্প্রতি একটি অটোরিকশাকে গ্যাস দিচ্ছিলেন সাইদুল ও রনি। হঠাৎ বিকট শব্দে সিলিন্ডারটি বিস্ফোরিত হয়। এতে ঘটনাস্থলেই মারা যান সাইদুল। গুরুতর আহত হন রনি। 

ফেনীতে ঘটে যাওয়া এমন ঘটনা যেন নিয়মে পরিণত হয়েছে গোটা দেশে। গাড়িতে ব্যবহৃত সিলিন্ডারকে ‘চলন্ত বোমা’র সঙ্গে তুলনা করা যায়। কারণ এটি বিস্ফোরিত হলে বোমার মতোই ভয়াবহ ঘটনা ঘটে। আর পেটে এমন ‘চলন্ত বোমা’ নিয়ে সারা দেশ দাপিয়ে বেড়াচ্ছে বাস, ট্রাক, প্রাইভেট কার, অটোরিকশাসহ ৫ লাখ ৯৩ হাজার যানবাহন। ফায়ার সার্ভিসের পরিসংখ্যান বলছে, ২০২৩ সালে দেশে ১২৫টি সিলিন্ডার বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। 

রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাস কোম্পানি লিমিটেডের (আরপিজিসিএল) হিসাব অনুযায়ী দেশে সিএনজিচালিত যানবাহনের সংখ্যা ৫ লাখ ৯৩ হাজারের মতো। অনেক গাড়িতে দুই বা ততধিক সিলিন্ডার থাকে। সেই হিসাবে সিলিন্ডারের সংখ্যা ১০ লাখের বেশি। 

এ প্রসঙ্গে আরপিজিসিএলের ব্যবস্থাপক (সিএনজি) প্রকৌশলী মো. মনোয়ারুল ইসলাম খবরের কাগজকে বলেন, ‘যদি কার্বন স্টিলের সিলিন্ডার হয়, তাহলে সেটি ২০ বছর ব্যবহার করা যায়। ব্যবহার না করে ২০ বছর ফেলে রাখলেও সেটি মেয়াদ ২০ বছর। উৎপাদনের তারিখ থেকে ২০ বছর। এই ২০ বছরর মধ্যে ৫ বছর অন্তর অন্তর হাইড্রোস্ট্যাটিক টেস্ট করাতে হবে। টেস্ট করার সময় উচ্চমাত্রায় সিলিন্ডারে পানির প্রেশার দেওয়া হয়। প্রেশার দিলে সিলিন্ডার প্রসারিত হয়। প্রেশার সরিয়ে নিলে সিলিন্ডার আগের অবস্থায় চলে আসে। যদি এই প্রসারণ ৫ শতাংশের বেশি হয়, তাহলে সেই সিলিন্ডার ব্যবহার উপযোগী না। নতুন সিলিন্ডার লাগাতে হবে।’ 

এক প্রশ্নের জবাবে প্রকৌশলী মনোয়ারুল বলেন, ‘সিএনজি সিলিন্ডার রিটেস্টিংয়ের জন্য অথরাইজড প্রতিষ্ঠান আছে। এটি বিস্ফোরক পরিদপ্তরও দেখভাল করে।’ 

বাংলাদেশ সিএনজি ফিলিং স্টেশন অ্যান্ড কনভার্সন ওয়ার্কশপ ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ফারহান নূর জানান, বাজারে নকল ও মেয়াদোত্তীর্ণ সিলিন্ডারের সংখ্যা দুই লাখ। এসব সিলিন্ডারের কারণেই দুর্ঘটনা ঘটছে। 

ফারহান নূর আরও জানান, যানবাহনে গ্যাস দেওয়ার সময় ফিটনেস সনদ দেখার ক্ষমতা আইনে ফিলিং স্টেশনগুলোকে দেওয়া হয়নি। এ ছাড়া ট্রাক-কাভার্ড ভ্যানে সিএনজি কনভার্সন বেআইনি বলেও জানান তিনি। 

সিলিন্ডার রিটেস্টিংয়ের ভুয়া সনদে ফিটনেস নবায়ন!

ইঞ্জিনচালিত যানবাহনের ফিটনেস দেখে থাকে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)। কিন্তু ফিটনেস নবায়ন করতে সিলিন্ডার রিটেস্টিংয়ের সার্টিফিকেট লাগে না। অনেক সময় ভুয়া সার্টিফিকেট দেওয়া হয় বলেও অভিযোগ উঠেছে। তা ছাড়া বিআরটিএ কর্মকর্তারা এসব দেখেও না দেখার ভান করে থাকেন। 

বিআরটিএর ওয়েবসাইটে দেখা যায়, যানবাহনের ফিটনেস নবায়ন করতে ছয় ধরনের কাগজ লাগে। তবে সেই ছয় ধরনের কাগজের মধ্যে নেই সিএনজি সিলিন্ডার রিটেস্টিংয়ের সনদ। 

যদিও ২০১৬ সালের ২৮ জুন একটি সার্কুলারে বিআরটিএ জানায়, আরপিজিসিএল অনুমোদিত সিএনজি সিলিন্ডার টেস্টিং প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে পরীক্ষা করে তা ব্যবহারের উপযুক্ত কি না বা মেয়াদ পেরিয়ে গেছে কি না, বিষয়ে নিশ্চিত হয়ে ফিটনেস সার্টিফিকেট দেওয়া আবশ্যক। কিন্তু অভিযোগ উঠেছে, বিআরটিএ কর্মকর্তা এই সার্কুলারের নির্দেশ না মেনে ফিটনেস সনদ দিয়ে দেন। 

বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে বিআরটিএ চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ মজুমদারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

রয়েছে তদারকি ও জনসচেতনতার অভাব

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিআরটিএ ও পুলিশের তদারকির অভাব এবং বিস্ফোরক পরিদপ্তরের নানা সীমাবদ্ধতার কারণে মাঝে মাঝে যানবাহনে সিলিন্ডার বিস্ফোরণের মতো ঘটনা ঘটছে। এ ছাড়া রয়েছে ব্যবহারকারীদের অসচেতনতা। এ কারণে গাড়ির গ্যাস সিলিন্ডার এক ধরনের আতঙ্কে রূপ নিয়েছে। 

আরপিজিসিএলের সিএনজি ডিভিশনের উপমহাব্যবস্থাপক মো. মনিরুজ্জামান খবরের কাগজকে বলেন, ‘বিষয়টি দেখতে নিয়মিত পরিদর্শক দল পরিদর্শন করে। এ ছাড়া জনসচেতনতা বাড়াতে মাঝে মাঝেই আমরা গণমাধ্যমে বিজ্ঞাপন প্রচার করি।’

সংশ্লিষ্টরা জানান, যানবাহনে ব্যবহৃত সিলিন্ডারে গ্যাসের চাপ ৩৫০০ পিএসআই থাকে। অর্থাৎ প্রতি ইঞ্চিতে সাড়ে তিন হাজার পাউন্ড ওজনের সমান চাপ। এটা যদি বিস্ফোরণ হয় তাহলে সেটা ভয়াবহ হবেই।

ডেপুটি স্পিকারপুত্র আসিফের আগ্রাসনে হাট-ঘাট ও স্বজন

প্রকাশ: ০৩ জুলাই ২০২৪, ১২:১৯ পিএম
আপডেট: ০৩ জুলাই ২০২৪, ১২:৩৩ পিএম
ডেপুটি স্পিকারপুত্র আসিফের আগ্রাসনে হাট-ঘাট ও স্বজন
ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকুর বড় ছেলে আসিফ শামসের রঞ্জন

কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘দুই বিঘা জমি’র ‘পেলে দুই বিঘে প্রস্থ ও দিঘে সমান হইবে টানা’ কথাটি যেন জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকুর বড় ছেলে এবং পাবনা জেলার বেড়া পৌরসভার মেয়র আসিফ শামসের রঞ্জনের জন্যই লেখা। কবিতার বাবু পরের জমি অপকৌশলে বেদখল করলেও আসিফ সত্তরোর্ধ্ব অবিবাহিত আপন জেঠাতো বোনের সম্পত্তি বেদখল করে বিস্তৃত করেছেন বসতভিটার চৌহদ্দি। তার বাবা গ্রামে গেলে এই বাড়িতেই থাকেন। আসিফও থাকেন এই বাড়িতে।

শুধু আপন স্বজন নয়, স্থানীয় হাটে-ঘাটেও তিনি নিজের বা বাবার ক্ষমতা কাজে লাগিয়ে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ আছে।

আসিফের জেঠাতো ভাই অর্থাৎ টুকুর বড় ভাইয়ের ছেলে আশরাফুল আলম (ছোটন) গতকাল মঙ্গলবার খবরের কাগজকে বলেন, ‘আমার দাদার বড় ছেলে ছিলেন আমার বাবা। তিনি জীবনের প্রথম আয় দিয়ে এই জমিটি কেনেন তার বাবার নামে। 

অর্থাৎ আমার দাদার নামে কেনেন জমিটি, এটা তার ভালো লাগা থেকে করেছেন। দাদা মারা যাওয়ার পর আমার বাবা এবং টুকু চাচাসহ দাদার সন্তানরা এই জমির মালিক হন। বাবা আমার এই বোনকে বিয়ে দিয়ে যেতে পারেননি। তাই তিনি জমিটি আমার বোন জেসমিন আরা পেয়ারা এবং প্রবাসী সহোদর ভাই গোলাম মোস্তফার নামে লিখে দিয়ে যান।

তার স্বপ্ন ছিল আমার বোনটির যেহেতু বিয়ে হয়নি তাই ভাইরা এই জমিতে একটি বাড়ি করলে, ভাই-বোনদের যে যেখানেই থাকুক, সবাই এখানেই একত্রিত হবে। আসিফরা অন্যান্য চাচাদের অংশ কীভাবে যেন নিয়ে নিয়েছেন। কিন্তু আমাদেরটা আমরা দেইনি। এখন আমার বয়ঃবৃদ্ধ বোনটি অন্য ভাই-বোনদের বাড়ি থাকছেন। অথচ তিনি যেন সম্মানের সঙ্গে জীবনযাপন করতে পারেন বাবা সেই ব্যবস্থা করে গিয়েছিলেন।

আমি পাসপোর্ট অফিসে চাকরি করি। জমি নিয়ে আমি প্রতিবাদ করি বলে টুকু চাচা স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী থাকা অবস্থায় আসিফ তার বাবাকে দিয়ে আমাকে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বদলি করায়, যেন এলাকায় থাকতে না পারি। এই শোকে আমার মা মারা যান।

এক প্রশ্নের জবাবে আশরাফ বলেন, ‘আসিফ মেয়র, তার বাবা ডেপুটি স্পিকার, আমি আইনি প্রতিকার পাব না। মামলায় যাইনি। তাই ডেপুটি স্পিকারকে উদ্দেশ্য করে ফেসবুকে এর প্রতিবাদ করে লিখেছি। বলেছি যে, যাই কর, এই জমি দেব না। এখন পাসপোর্ট অফিস থেকে আমার নামে শো-কজ লেটার ইস্যু করিয়েছে।’

তিনি বলেন, জমির ওপর ২০২১ সালের দিকে স্কুলের একটা নাম দিয়ে প্রথম সাইনবোর্ড লাগিয়েছিল। পরে দেখলাম স্কুলের কোনো কার্যক্রম নেই। এরপর ‘আশনা’ নামে একটি এনজিও এখন সাইনবোর্ড টানিয়ে রেখেছে।

তবে স্বজন ছাড়িয়ে আসিফের কুকর্মের কথা বেড়া পৌরসভার মানুষের মুখে মুখে। জানা গেছে, তার অত্যাচারে অতিষ্ঠ এলাকার কৃষকরা। চতুরহাটে কৃষকরা কৃষিপণ্য বিক্রি করতে আসেন, তাদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টোল আদায় করা হয়। ‘প্রতি মণ’ (৪০ কেজি) ফসলে তিন কেজির বেশি অর্থাৎ ৪৩ কেজি পণ্য নেওয়া হয়। যেমন ধান, পেঁয়াজ, মরিচ, তিল, সরিষা, পাট, যব, গম ইত্যাদি। এই জুলুমের প্রতিবাদে হাটে আসা কৃষকরা দুই দফা প্রতিবাদ মিছিল করেন। কিন্তু তাতে কোনো প্রতিকার হয়নি।

এই চতুরহাট ইজারা নিয়েও চলে কারচুপি। হাট ইজারায় টেন্ডারে কাউকে অংশ নিতে দেওয়া হয় না। নিজেরাই কয়েকটি শিডিউল কিনে ‘নেগোসিয়েশন’ করে নামমাত্র মূল্যে হাট ইজারা নেওয়া হয় মেয়র আসিফের নিজস্ব লোকের নামে। এতে প্রতিবছর সরকার কোটি টাকারও বেশি রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হয়। 

অভিযোগ আছে, বেড়া পৌরসভার পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া হুরা সাগর নদীতে যত বালু ও মাটি কাটা হয় তার সবই বিক্রি করেন আসিফ। বাঘাবাড়ি বন্দর চালু রাখার জন্য এই নদী প্রতিবছর খনন করতে হয়। এই খননের সময় যে বালু উত্তোলন করা হয় তা নদী তীরে সংরক্ষণ করে রাখা হয়। পানি উন্নয়ন বোর্ড সেই স্তূপ করা বালু টেন্ডারে বিক্রি করে। 

বেড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) সবুর আলী গত বছর ৪ কোটি ৭০ লাখ ঘনফুট বালু সরকারি টেন্ডারে পানি উন্নয়ন বোর্ডের মাধ্যমে টেন্ডারে বিক্রি করার প্রক্রিয়া করলে আসিফ তাকে বাধা দেন। পরে আসিফ তার বাবা ডেপুটি স্পিকারের ক্ষমতা কাজে লাগিয়ে ইউএনওকে অন্যখানে বদলি করে দেন।

বেড়ার বিপ্লব নামের এক ব্যক্তি মেয়র আসিফের পক্ষে বালু বিক্রি করেন বলে অভিযোগ আছে। ট্রাকপ্রতি মেয়রকে দিতে হয় ২০০ টাকা। প্রতিবছর প্রায় ৫০ হাজার ট্রাক বালু এখান থেকে বিক্রি হয়। উল্লেখ্য, নদীর তীরবর্তী খাস জমির কোটি কোটি ঘনফুট মাটি কেটে বিক্রি করা হয়েছে এবং এখনো হচ্ছে।

বড় পায়না মৌজার ৩৯ বিঘা খাস জমি ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের জমি (হুরাসাগর নদী তীর বরাবর) বেদখলে রেখেছেন আসিফ। উঁচু দেয়াল দিয়ে ঘিরে রাখা হয়েছে জমিটি। সেখানে রাখা স্তূপ করা বালু ও মাটি বিক্রি করা হচ্ছে।

এদিকে বেড়ার বৃশালিখায় নানা কৌশলে ঘাট দখলে রেখে মালামাল লোড আনলোড করে সরকারের কোটি কোটি টাকার রাজস্ব হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগও আছে আসিফের বিরুদ্ধে। সম্প্রতি, সরকার প্রজ্ঞাপন জারি করে বিআইডব্লিউটিএর নিয়ন্ত্রণে নেয় ঘাটটি। ইজারা চূড়ান্ত হওয়ার পরে আইনি জটিলতা সৃষ্টি করে ইজারাদারকে ঘাট পরিচালনায় বাধাও দিচ্ছেন তিনি।

সর্বশেষ বিআইডব্লিউটিএর কাছ থেকে ঘাটটি ইজারা নেন মো. নজরুল ইসলাম। গত রাতে খবরের কাগজকে তিনি বলেন, ‘পয়লা জুলাই থেকে ঘাটটি আমার দখলে আসার কথা ছিল। আগের দিন থানার ওসির কাছে গেলাম, ঘাটের দখল নিতে সহযোগিতা করার জন্য। তখন ওসি আমাকে উকিলের একটি সার্টিফিকেট ধরিয়ে দেন। যাতে লেখা আছে আদালত থেকে এর ওপর স্থগিতাদেশ দেওয়া হয়েছে।’

সার্টিফিকেট দেওয়া আইনজীবী মো. একরামুল হক খবরের কাগজকে বলেন, হাইকোর্ট থেকে তিন মাসের জন্য এই স্থগিতাদেশ দিয়েছে। একই সঙ্গে রুলও জারি করেছেন আদালত।

নজরুল বলেন, ‘গতবারও একজন ঘাট টেন্ডারে নিয়েছিলেন, কিন্তু তাকে হুমকি-ধমকি দিয়ে তাড়িয়ে দিয়েছিলেন মেয়র। কিন্তু আমিও বেড়া পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। তাই আমাকে তো আর হুমকি-ধমকি দিয়ে টলাতে পারে না। আমি ২১ বছর ধরে বারবার নির্বাচিত হয়ে টানা এই পদে আছি। না হয় কবেই আমার নামে রাজাকার তকমা লাগিয়ে ঘায়েল করে দিত। কোনোভাবে না পেরে এখন আইনিভাবে আমাকে রুখতে চায়।’

এসব অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে কথা বলার জন্য গতকাল মেয়র আসিফের ফোনে কল দেওয়া হয়। তবে তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। গত সোমবারও কয়েকবার ফোন দিয়ে তার ফোন নম্বর বন্ধ পাওয়া যায়। জানা গেছে, তার বিরুদ্ধে প্রায় ২০০ কোটি টাকা রাজস্ব ফাঁকির অভিযোগে দুই বছর আগে একটি গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়। পুলিশ পরোয়ানাটি কার্যকরের উদ্যোগ নেওয়ার খবর পেয়ে সপরিবারে তিনি দেশ ছেড়েছেন বলে জানা গেছে। 

আরও পড়ুন:

> ডেপুটি স্পিকারপুত্র আসিফের দেশত্যাগ!

কিলিং মিশন শেষে সিয়ামের সঙ্গে নেপাল গিয়েছিলেন ফয়সাল

প্রকাশ: ০৩ জুলাই ২০২৪, ১১:০৯ এএম
আপডেট: ০৩ জুলাই ২০২৪, ১১:১৭ এএম
কিলিং মিশন শেষে সিয়ামের সঙ্গে নেপাল গিয়েছিলেন ফয়সাল
মোস্তাফিজুর রহমান-ফয়সাল আলী সাহাজী-সিয়াম

কলকাতার সঞ্জিবা গার্ডেনে ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনারকে নৃশংসভাবে হত্যা করার পর বিভিন্ন স্থানে গা-ঢাকা দেন খুনিরা। এ খুনের মাস্টারমাইন্ড আকতারুজ্জামান শাহীন যুক্তরাষ্ট্রে পালিয়ে যান। অপর কিলার জিহাদ কলকাতায় গা-ঢাকা দেন। বাকিরা পালিয়ে আসেন বাংলাদেশে। খুনের পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাত থেকে গ্রেপ্তার এড়াতে সিয়াম নেপালে পালিয়ে যান। এ সময় চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড থেকে গ্রেপ্তার হওয়া ফয়সাল সাহাজীও নেপালে সিয়ামের সঙ্গে পালিয়ে গিয়েছিলেন বলে তিনি পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছেন। 

নেপালের ‘গন্ডকীর দুলিয়া’ নামক এলাকায় সিয়াম তার এক পূর্ব পরিচিত সুপারি ব্যবসায়ীর বাড়িতে আশ্রয় নেন। সিয়াম ওই ব্যবসায়ীকে বলেছিলেন যে, ফয়সাল তার বন্ধু। তার কাছে বেড়াতে এসেছে। এতে ওই ব্যবসায়ী কিছুই বুঝতে পারেননি। নেপালে যাওয়ার পর সিয়ামের অর্থ ফুরিয়ে এসেছিল। সিয়াম তখন ফয়সালকে কলকাতা ফেরত যাওয়ার নিদের্শ দেন। 

পরে ফয়সাল কলকাতায় এসে তার সঙ্গে গ্রেপ্তার হওয়া মোস্তাফিজুর রহমান ফকিরের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। পরে মোস্তাফিজুর রহমান ও ফয়সাল বাংলাদেশে পালিয়ে আসেন। বাংলাদেশে এসে প্রথমে ঝালকাঠি এবং পরে সীতাকুণ্ডের একটি মন্দিরে আত্মগোপন করেন। পরে ঢাকার ডিবি পুলিশ প্রযুক্তির সহযোগিতায় তাদের দুইজনকে গ্রেপ্তার করে। এর আগে নেপাল পুলিশ সিয়ামকে গ্রেপ্তার করে ভারতীয় পুলিশের হাতে তুলে দেয়। সিয়াম এখন কলকাতার জেল-হাজতে রয়েছেন। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
 
গত ১৩ মে কলকাতার একটি ফ্ল্যাটে খুন হন এমপি আনার। ২২ মে আনোয়ারুল আজীম আনারকে হত্যার উদ্দেশে অপহরণের অভিযোগে তার মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস ডরিন বাদী হয়ে রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানায় মামলা করেন। অন্যদিকে কলকাতায় একটি হত্যা মামলা হয়েছে। 

এ দুটি মামলায় ঢাকা, কলকাতাসহ বিভিন্ন স্থান থেকে বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাংলাদেশে গ্রেপ্তার হয়েছেন ৭ জন। তারা হলেন- শিলাস্তি রহমান, আমানুল্লাহ ওরফে শিমুল ভূঁইয়া, তানভীর ভুঁইয়া ওরফে ফয়সাল সাজি, ঝিনাইদহ জেলার আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুল করিম মিন্টু, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণবিষয়ক সম্পাদক কাজী কামাল আহমেদ বাবু ওরফে গ্যাস বাবু, মোস্তাফিজুর রহমান ও ফয়সাল সাহাজী। 

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সূত্রে জানা গেছে, আনার হত্যার ঘটনা ঘটেছে কলকাতায়। যেহেতু এই মামলার পিও (ঘটনাস্থল) কলকাতা, সেহেতু এই মামলার মূল তদন্ত করছে কলকাতা পুলিশ। যেহেতু বাংলাদেশের নাগরিক কলকাতায় খুন হয়েছেন এ জন্য ডিবি পুলিশ শুধু ছায়া তদন্ত করছে। তাই খুনের মোটিভ কী আসে এর জন্য কলকাতা পুলিশের দিকে লক্ষ রয়েছে বাংলাদেশের গোয়েন্দাদের। এ ছাড়াও আনারের পরিবার কলকাতায় যাওয়ার পর ডিএনএ পরীক্ষার কী ফল আসে তার দিকেও নজর রয়েছে ডিবির তদন্তকারী কর্মকর্তাদের। 

সূত্র জানায়, কলকাতায় আনার হত্যার পর ঢাকার ডিবির পক্ষ থেকে ছায়া তদন্ত শুরু হয়। শেরেবাংলা নগর থানায় অপহরণ মামলা হওয়ার পর এই তদন্ত শুরু হয়। তদন্ত শেষ পর্যায়ে রয়েছে বলে জানিয়েছেন মামলার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। তাদের খুব শিগগির আবার কলকাতায় যাওয়ার কথা রয়েছে। ডিবির দল কলকাতায় গিয়ে বাংলাদেশে আনার হত্যাকাণ্ডের ছায়া তদন্তের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য কলকাতায় পুলিশ অবহিত করবে। 

মোস্তাফিজুরের দায় স্বীকার

হত্যার উদ্দেশ্যে অপহরণের অভিযোগে করা মামলার অন্যতম আসামি মোস্তাফিজুর রহমান আদালতে দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন। গতকাল এই জবানবন্দি দেন তিনি। ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট তোফাজ্জল হোসেন আসামির জবানবন্দি রেকর্ড করে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

গ্রেপ্তার মোস্তাফিজুর রহমান স্বেচ্ছায় জবানবন্দি দিতে সম্মত হওয়ায় পুলিশ এদিন আদালতে তাকে হাজির করে। এরপর মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সহকারী কমিশনার মাহফুজুর রহমান তা রেকর্ড করার জন্য আদালতে আবেদন করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে জবানবন্দি রেকর্ড করেন আদালত। এ নিয়ে এই মামলায় এখন পর্যন্ত পাঁচজন আদালতে জবানবন্দি দিলেন।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল গত ২৬ জুন আনার হত্যায় জড়িত ফয়সাল আলী সাহাজী ও মোস্তাফিজুর রহমানকে গ্রেপ্তার করে। পরের দিন ২৭ জুন আদালত তাদের ছয় দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। 

রাজধানীর জলাবদ্ধতা নিরসন: সব রয়ে গেছে পরিকল্পনা পর্যায়ে

প্রকাশ: ০৩ জুলাই ২০২৪, ১০:৩০ এএম
আপডেট: ০৩ জুলাই ২০২৪, ১০:৩২ এএম
রাজধানীর জলাবদ্ধতা নিরসন: সব রয়ে গেছে পরিকল্পনা পর্যায়ে
মাঝারি বৃষ্টিতে মহাসড়কে জলাবদ্ধতা। ছবি: খবরের কাগজ

দায়িত্ব নেওয়ার পর চার বছরে শুধু পরিকল্পনা পর্যায়েই রয়ে গেছে ঢাকা উত্তর ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি ও ডিএসসিসি) যাবতীয় কার্যক্রম। যেসব পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে সেগুলোও কবে বাস্তবায়ন হবে তা বলতে পারেন না সংশ্লিষ্টরা। 

২০২০ সালে ঢাকা ওয়াসার কাছ থেকে দুই সিটি করপোরেশন বুঝে নেওয়ার পর চার বছর পার হলেও রাজধানীর জলাবদ্ধতার উন্নতি হয়নি বলেই মনে করেন নগরবাসী। ফলে সামান্য বৃষ্টি হলেই এখনো রাজধানীতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। সম্প্রতি আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাসে আগামী শুক্রবার পর্যন্ত ভারী বৃষ্টির কথা বলা হয়েছে। ফলে নগরবাসী নতুন করে জলাবদ্ধতার শিকার হতে যাচ্ছেন বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। 

গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইনস্টিটিউট ফর প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (আইপিডি) নির্বাহী পরিচালক এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক ড. আদিল মুহাম্মদ খান এ প্রসঙ্গে খবরের কাগজকে বলেন, ‘জলাবদ্ধতার স্থায়ী সমাধানের জন্য পরিকল্পনা ও তার বাস্তবায়ন দরকার। পূর্ণাঙ্গ ড্রেনেজ নেটওয়ার্ক তৈরি করতে হবে। সেটা না করে যেটুকু প্রাকৃতিক ব্যবস্থা ছিল, তাও ধ্বংস করা হয়েছে।’

২০২০ সালে ঢাকা ওয়াসা খাল হস্তান্তরের সময় জানা যায়, রাজধানীতে মাত্র ২৬টি খাল রয়েছে। কিন্তু পরবর্তী সময়ে ডিএনসিসির ৩০টি এবং ডিএসসিসির ৩৯টি মিলিয়ে মোট ৬৯টি খালের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। আর দুই সিটি করপোরেশনের নর্দমা রয়েছে প্রায় তিন হাজার কিলোমিটার। 

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, খালগুলোর দায়িত্ব নেওয়ার পর রুটিনমাফিক উচ্ছেদে কিছু অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। তা ছাড়া শুষ্ক মৌসুমে খাল-নর্দমা পরিষ্কার করা হয়। 

তবে দুই মেয়র প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের বাইরে নগরবাসীর দায়িত্বহীনতাকে দায়ী করছেন। তারা বলছেন, খালে বর্জ্য ফেলে নগরবাসী। নির্বিচারে খাল দখল করে। এগুলোর অবসান হওয়ার দরকার। 

ডিএনসিসির মেয়র আতিকুল ইসলাম খাল উদ্ধারে ‘কলাগাছ থেরাপি’র কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘বাড়ির বর্জ্য যেসব পাইপের মধ্য দিয়ে খালে ফেলা হয়, সেই প্রতিটি পাইপে কলাগাছ ঢুকাতে পারলে মনে শান্তি পেতাম। আমার ব্যর্থতা এখানে। কারণ কীভাবে বারিধারা, গুলশানের লোকেরা খালের মধ্যে কালো বর্জ্য দিয়ে দিচ্ছে। এটি অত্যন্ত কষ্ট লাগে আমার।’

ডিএসসিসি মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, ‘খাল দখলের সময় খেয়াল থাকে। জলাশয় আইন অনুযায়ী দখল হওয়া খালের জায়গা উদ্ধার করতে গেলে মানুষের কান্নার রোল পড়ে যাবে। লাঠিপেটা বা তদারকি করে দুর্নীতিমুক্ত হওয়া যায় না। একজন নাগরিক হিসেবে যদি দুর্নীতিমুক্ত হতে না পারি, তাহলে কিছুই হবে না।’

ডিএনসিসির যত পরিকল্পনা

খালের দায়িত্ব বুঝে নেওয়ার পর প্রথমেই সীমানা নির্ধারণের উদ্যোগ নেয় ডিএনসিসি। এই কাজ দেওয়া হয় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে। কিন্তু কোন পদ্ধতিতে সীমানা নির্ধারণ করা হবে তা নিয়ে দ্বিধা তৈরি হয়। সিএস, আরএস আবার কোথাও মহানগর জরিপ ধরে খালের সীমানা নির্ধারণ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়। এ অবস্থায় একটি টাস্কফোর্স গঠন করেছে ডিএনসিসি। টাস্কফোর্স কয়েকটি সভাও করেছে। এখনো সীমানা নির্ধারণের কাজ শুরু হয়নি। 

ঢাকা ওয়াসা থেকে খাল বুঝে নেওয়া পর ওয়াসার আগের কিছু জনবল নিয়েছিল ডিএনসিসি। কিন্তু অন্তর্কোন্দল দেখা দেওয়ায় এসব জনবল ওয়াসায় ফেরত পাঠানো হয়েছে। এরপর ড্রেনেজ সার্কেল গঠন করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে পদ সৃষ্টির প্রস্তাব দেয় ডিএনসিসি। সেই প্রস্তাব নিয়ে মন্ত্রণালয় কোনো ফিডব্যাক এখনো দেয়নি। এ ছাড়া ডিএনসিসি খালগুলোর আধুনিকায়নেও একটি প্রস্তাব দিয়ে রেখেছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে। সেই প্রস্তাবও মন্ত্রণালয়ে পড়ে আছে। 

ডিএসসিসির যত পরিকল্পনা

ডিএসসিসির ৩৯টি খালের মধ্যে ডিএনডি এলাকায় আছে ১৫টি। এগুলো পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হয়। এই খালগুলোও ডিএসসিসিকে হস্তান্তরের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। 

ঢাকার বড় একটি অংশের বৃষ্টির পানি মান্ডা, জিরানী, শ্যামপুর ও কালুনগর খাল হয়ে নিষ্কাশন হয়। ২০ কিলোমিটার দীর্ঘ এ খালগুলো আসলে বাস্তবে নেই। আছে কাগজে-কলমে। এসব খাল উদ্ধারে ৮৯৮ কোটি টাকার একটি প্রকল্প অনুমোদন করেছে সরকার। প্রকল্পের কাজ কোথাও কোথাও শুরুও হয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানান। 

ডিএসসিসির সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ঢাকা ওয়াসার কাছ থেকে ১৮টি খাল বুঝে নেওয়ার পর মাত্র চারটি খাল নিয়ে পরিকল্পনা করে এগিয়েছে সংস্থাটি। বাকি খালগুলোর সংস্কার ও উন্নয়ন করেছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। তবে রুটিন পরিচর্যা না হওয়ায় সেই খালগুলোও আবর্জনায় ভরাট হয়ে গেছে। বুড়িগঙ্গার আদি চ্যানেলে উদ্ধার ও খনন ডিএসসিসির ভালো একটি কাজ বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। অন্যান্য খালের সীমানা নির্ধারণ, দখলমুক্তকরণ এবং অন্যান্য কাজ কবে শেষ হবে তা সংশ্লিষ্টরা বলতে পারছেন না। 

ডিএসসিসি নর্দমা ও খালের সঙ্গে নদীর সংযোগ স্থাপনের পাশাপাশি প্রয়োজনের আলোকে মাস্টার ড্রেন তৈরির পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। যেটা পানি নিষ্কাশনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। প্রাথমিকভাবে নিউ মার্কেট থেকে পিলখানায় বিজিবির সদর দপ্তর প্রাঙ্গণের ভেতর দিয়ে বুড়িগঙ্গার আদি চ্যানেল, বংশাল এলাকা দিয়ে বুড়িগঙ্গা, জুরাইন ও শ্যামপুর এলাকায় মাস্টার ড্রেন তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। 

ডিএনসিসির মতো ডিএসসিসিও দায়িত্ব নেওয়ার চার বছরেও ড্রেনেজ সার্কেল তৈরি করতে পারেনি। এ-সংক্রান্ত প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে আটকে আছে।

সরকারি কর্মকর্তাদের তথ্য গোপন ঠেকাতে টাস্কফোর্স গঠন

প্রকাশ: ০৩ জুলাই ২০২৪, ০৯:৫৮ এএম
আপডেট: ০৩ জুলাই ২০২৪, ০৯:৫৮ এএম
সরকারি কর্মকর্তাদের তথ্য গোপন ঠেকাতে টাস্কফোর্স গঠন

মতিউর, ফয়সালকাণ্ডের পর সরকারের ওপরের মহল থেকে সরকারি কর্মকর্তাদের সততা নিশ্চিতে নতুন করে পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। আয়, ব্যয় ও সম্পদের তথ্য গোপনের প্রমাণ পাওয়া গেলে করণীয় নির্ধারণের জন্য এরই মধ্যে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের নিয়ে গঠন করা হয়েছে বিশেষ ক্ষমতা সম্পন্ন টাস্কফোর্স কমিটি।

আজ বুধবার (৩ জুলাই) জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) থেকে সরকারি কর্মকর্তাদের রিটার্নের তথ্য খতিয়ে দেখার কাজ শুরু হচ্ছে। কোনো রিটার্নে গরমিল পাওয়া গেলে তা আরও বিস্তারিত তদন্তের জন্য এনবিআরের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা শাখা সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স সেলে (সিআইসি) পাঠানো হবে। এখানে প্রাথমিক তদন্ত শেষে টাস্কফোর্স কমিটির সুপারিশে পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করা হবে। 

এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আবদুল মজিদ খবরের কাগজকে বলেন, ‘সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারীরা রাষ্ট্রের সেবক হিসেবে কাজ করে থাকেন। তারা সেবা করার অঙ্গীকার করেই কাজ শুরু করেন। সরকারের প্রতিনিধি তারাই। এখানে কেউ যদি দুর্নীতি করে সম্পদের পাহাড় গড়ে তোলেন তবে তার শাস্তি হওয়া প্রয়োজন।’ 

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা এ বি মো. মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম খবরের কাগজকে বলেন, ‘মনে রাখতে হবে সাধারণ মানুষের করের টাকায় সরকারি কর্মকর্তাদের বেতন-ভাতা হয়। এ ছাড়া তারা অন্যান্য সুবিধা পান। তাই সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কেউ যদি দুর্নীতি করে তবে তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া প্রয়োজন। 

উচ্চ পর্যায়ের টাস্কফোর্স কমিটি গঠন: 

নজরদারিতে নিয়োজিত বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের উচ্চ পর্যায়ের দক্ষ ও সৎ হিসেবে পরিচিত এমন কর্মকর্তাদের নিয়ে সরকারের ওপরের মহলের নির্দেশে বিশেষ ক্ষমতাসম্পন্ন টাস্কফোর্স কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটিতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, স্বরাষ্ট্র, অর্থ, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, আর্থিক বিভাগ, বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ), দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), এনবিআরসহ অন্যান্য সরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা আছেন। 

এই কমিটি তদন্তের প্রয়োজনে টাস্কফোর্স যেকোনো দেশে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসের কর্মকর্তাদের এই কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করতে পারবে। এনবিআরের তিন গোয়ন্দা শাখা সিআইসি, ভ্যাট নিরীক্ষা গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর, শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের কর্মকর্তারাও এই কমিটিতে আছেন। 

হিসাব জব্দ ও সম্পদ ক্রোক: 

স্বনির্ধারণী পদ্ধতিতে সরকারি কর্মকর্তারা রিটার্ন জমা দিয়ে থাকেন। অর্থাৎ একজন সরকারি কর্মকর্তা নিজে বা তার পক্ষে তার আইনজীবী হিসাব কষে আয়, ব্যয় ও সম্পদের পরিমাণ নির্ধারণ করে রিটার্নে উল্লেখ করেন। হিসাব মতো কর পরিশোধ করেন। রিটার্ন জমার পর আয়কর আইন অনুযায়ী দেওয়ার তথ্য খতিয়ে দেখার আইনি সুযোগ আছে। গরমিল পাওয়া গেলে টাস্কফোর্স কমিটির সুপারিশে এনবিআর, বিএফআইইউ হিসাব জব্দ করবে। 

পাচার করা অর্থ ফেরত আনতেও পদক্ষেপ নেবে। প্রয়োজনে পাচার করা অর্থ উদ্ধারে ওই দেশের বাংলাদেশ দূতাবাসের সহযোগিতা নেওয়া হবে। দ্বৈত কর চুক্তির আওতায় যে দেশে অর্থপাচার হবে সে দেশের বিভিন্ন কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ ও অন্যান্য সহযোগিতাও নেওয়া হবে। অন্যদিকে আদালতের মাধ্যমে স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ ক্রোকের জন্য পদক্ষেপ নেওয়া হবে। 

পরবর্তী সময়ে সব আইনি প্রক্রিয়া শেষে সম্পদ রাষ্ট্রের অনুকূলে আনা হবে। যে ব্যক্তি এ ধরনের অপকর্ম করবে তাকে জেল জরিমানার মতো শাস্তির আওতায় আনতেও টাস্কফোর্সের সুপারিশে পদক্ষেপ নেওয়া হবে। টাস্কফোর্সের সুপারিশে মামলা করা হবে। আদালতে মামলা চলাকালে দেশ-বিদেশ থেকে প্রয়োজনী তথ্য প্রমাণ সংগ্রহের ক্ষেত্রে টাস্কফোর্সকে সরাসরি কাজ করার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। 

কর দেন গড়ে ৬ লাখ: 

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একটি হিসাব অনুযায়ী দেশে সরকারি কর্মচারী ১৪ লাখ। বিভিন্ন করপোরেশন এবং এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের নিয়ে হিসাব করলে প্রায় ২২ লাখ। সরকারি চাকরিতে ২০টি ধাপ (গ্রেড) রয়েছে। প্রথম ধাপে বেতন-ভাতা পান সচিবেরা। প্রথম থেকে নবম গ্রেড প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তা হিসাবে, ১০ম গ্রেড দ্বিতীয় শ্রেণি, ১১ থেকে ১৬তম গ্রেড তৃতীয় শ্রেণি এবং ১৭ থেকে ২০তম গ্রেড ৪র্থ শ্রেণি হিসেবে ধরা হয়। 

সাধারণত মূল বেতন ১৬ হাজার টাকা হলে প্রতি করবর্ষে বাধ্যতামূলক কর এবং আয়কর রিটার্ন জমা দিতে হয়। সাধরণত গ্রেড ১০ পর্যন্ত কর্মকর্তারা করের আওতায় পড়েন। গড়ে প্রতি করবর্ষে ৬ লাখ সরকারি কর্মকর্তারা রিটার্ন দিয়ে থাকেন। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের তথ্য প্রধান পর্যায়ে খতিয়ে দেখা হবে। 

বিদেশে সম্পদের খোঁজ পেলে জরিমানা: 

সরকারি কর্মকর্তাদের রিটার্নে অপ্রদর্শিত অর্থ দিয়ে বিদেশে অবৈধভাবে সম্পদ গড়ে তোলা এবং অর্থপাচারের প্রমাণ পাওয়া গেলে টাস্কফোর্সের সুপারিশে মোটা অঙ্কের জরিমানা করা হবে। এক্ষেত্রে বিদেশে সম্পত্তির ন্যায্য বাজার মূল্যের সমপরিমাণ অর্থ জরিমানা করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। চলমান আয়কর আইনেও এমন বিধান থাকছে।

বর্তমান কর্মকর্তাদের পশাপাশি সাবেকদেরও তথ্য দেখা যাবে: 

টাস্কফোর্সের সুপারিশে বর্তমান কর্মরতদের পশাপাশি সাবেক সরকারি কর্মকর্তাদের রিটার্নের তথ্যও খতিয়ে দেখা হবে। 

করবর্ষ শেষ: 

৩০ জুন ২০২৩-২৪ করবর্ষ শেষ হয়েছে। নতুন অর্থবছর ১ জুলাই শুরু হয়েছে। শুধু সরকারি কর্মকর্তাদের না, এনবিআর বেসরকারি খাতের করদাতাদেরও রিটার্নের তথ্য খতিয়ে দেখার কাজ শুরু করেছে। 

রাজস্ব আইনে ইচ্ছাকৃতভাবে আয়কর ফাঁকি দিলে বা এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে বড় অঙ্কের জরিমানার পাশাপাশি সর্বোচ্চ ৫ বছর করাদণ্ডে দণ্ডিত করার বিধান আছে। এ ছাড়া পাচার করা অর্থের সমপরিমাণ অর্থ জরিমানা, সম্পদ ক্রোক ও ব্যাংকের সব হিসাব জব্দ করা যাবে। 

বরিশাল সদর সাব-রেজিস্ট্রার অসীমের সীমাহীন সম্পদ

প্রকাশ: ০৩ জুলাই ২০২৪, ০৯:১৭ এএম
আপডেট: ০৩ জুলাই ২০২৪, ০৯:২৯ এএম
সাব-রেজিস্ট্রার অসীমের সীমাহীন সম্পদ
ছবি: খবরের কাগজ

বরিশাল সদর উপজেলার সাব-রেজিস্ট্রার অসীম কল্লোল। সর্বশেষ সরকারি বেতন স্কেলে নবম গ্রেডের কর্মকর্তা তিনি। ৩৪ বছর ধরে ভূমি মন্ত্রণালয়ের অধীনে বিভিন্ন পদে কর্মরত ছিলেন। বর্তমানে সাব-রেজিস্ট্রার পদে বরিশাল সদর উপজেলায় কর্মরত। নবম গ্রেডের সর্বোচ্চ বেতনের হিসাব ধরলে ৩৪ বছর চাকরি জীবনে তার আয় আড়াই কোটি টাকার বেশি নয়। কিন্তু অসীম কল্লোলের বরিশাল ও ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় নামে-বেনামে রয়েছে শতকোটি টাকার বেশি সম্পদ। এমনকি তার স্ত্রী সন্তানদের রয়েছে বাড়ি গাড়ি। সাব-রেজিস্ট্রার পদে চাকরি করে বিপুল পরিমাণ সম্পদ গড়ার উৎস খতিয়ে দেখার দাবি জানিয়েছেন নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা।

এদিকে বরিশাল সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে যোগদানের পর থেকে অসীম কল্লোলের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, অনিয়ম এবং ঘুষ গ্রহণসহ নানা অভিযোগ ওঠে। এ নিয়ে আগেও কয়েকবার বিভিন্ন গণমাধ্যমের শিরোনাম হয়েছেন তিনি। 

এর মধ্যে রয়েছে বরিশাল সদর উপজেলায় ১ একর ২৫ শতাংশ জমির ওপর সোনার বাংলা মৎস্য খামার ও অ্যাগ্রো ফার্ম নামে একটি প্রতিষ্ঠান। সদর উপজেলার কাগাসুরা মুকুন্দপট্টি রাস্তার দুই পাশে ৮০ শতাংশ জমির ওপরে সুগন্ধা অ্যাগ্রো অ্যান্ড ফিশারিজ নামে মাছের ঘের। কাগাসুরা বাজারসংলগ্ন এক একর জমির ওপরে মালটা বাগান, নগরীর ৪নং ওয়ার্ড ১২ শতাংশের একটি প্লট। লাকুটিয়া এলাকায় ২০ শতাংশ জমির ওপরে সুগন্ধা পোলট্রি খামার নামে মুরগির ফার্ম, নগরীর পোর্ট রোডে ৫ তলার ভবন। নগরীর হাসপাতাল রোডে অগ্রণী হাউজিং লিমিটেডের ‘ড্রিম প্যালেসে’ কোটি টাকা মূল্যের ফ্ল্যাট (ফ্ল্যাট নং-৩/এ)। 

এ ছাড়া পরিবারের সদস্যদের চলাচলের জন্য রয়েছে ঢাকা মেট্রো-ঘ-১৩-৬৪৮১ নম্বরের টয়োটা ব্র্যান্ডের গাড়ি। স্ত্রীর নামে সদর উপজেলার তালতলী বাজারে ইট, বালু ও রড-সিমেন্টের ব্যবসা। তার ঘনিষ্ঠজনরা জানিয়েছেন অসীম কল্লোল এলাকায় চাকরি করেছেন সেসব এলাকায় কিনেছেন জমি ও ফ্ল্যাট। তার এসব সম্পত্তির বর্তমান বাজার মূল্য রয়েছে শতকোটি টাকার ওপরে। 

সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) সাবেক সভাপতি প্রফেসর শাহ সাজেদা বলেন, ‘সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন স্কেল অনুযায়ী একজন সাব-রেজিস্ট্রার ৯ম গ্রেডের বেতন প্রাপ্ত হন। ২২ হাজার থেকে শুরু করে চাকরির শেষ সময়ে এসে মাসে সর্বোচ্চ বেতন দাঁড়ায় ৫৩ হাজার ৬০ টাকায়। সর্বশেষ বেতন অনুযায়ী ৩৪ বছর চাকরি জীবন হিসাব করলে ২ কোটি ১৬ লাখ ৪৮ হাজার টাকা আয় করেছেন তিনি।’

সেই আয় দিয়ে সংসার পরিচালনা, ছেলে-মেয়েদের পড়াশোনাসহ আনুষঙ্গিক খরচ মিটিয়ে লাখ দশেক টাকার বেশি সম্পদ গড়া কোনোভাবেই সম্ভব নয়। তবে সাব-রেজিস্ট্রার অসীম কল্লোল এবং তার পরিবারের যে সম্পদের কথা শোনা যায় তার মূল্য রয়েছে শতকোটি টাকার বেশি, যা আয়ের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। একজন সাব-রেজিস্ট্রারের এত সম্পত্তির উৎস সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের খতিয়ে দেখা দরকার।

কাগাসুরা এলাকার বাসিন্দা শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘কাগাসুরার মুকুন্দপট্টি সুগন্ধা অ্যাগ্রো অ্যান্ড ফিশারিজ, বাজারসংলগ্ন মালটা বাগান, লাকুটিয়া এলাকায় সুগন্ধা পোলট্রি খামার নামে মুরগির ফার্ম, সদর উপজেলার সাব-রেজিস্ট্রারের বলে আমরা জানি। ওই বাগান দেখাশোনার জন্য একজন লোক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।’ 

সুগন্ধা অ্যাগ্রো অ্যান্ড ফিশারিজ ও মালটা বাগান দেখভালের দায়িত্বে থাকা আসমত আলী খান বলেন, ‘আমি যতদূর জানি মালটা বাগান ও মাছের ঘের ও তার জমির মালিক সাব-রেজিস্ট্রার। তিনি মাঝেমধ্যে এখানে এসে ঘুরে যান। এ ছাড়া এই এলাকায় তার আরও কয়েকটি জমি রয়েছে বলে শুনেছি।’

তালতলী এলাকার বাসিন্দা আবদুল মান্নান বলেন, ‘এই বাজারে ইট, সিমেন্ট ও বালু বিক্রির প্রতিষ্ঠানের মূল মালিক সাব-রেজিস্ট্রার কল্লোল। তবে কাগজে-কলমে এই প্রতিষ্ঠানের মালিক তার স্ত্রী।’

এ বিষয়ে অসীম কল্লোল বলেন, ‘বরিশাল সদর উপজেলার কাগাসুরায় আমার কোনো জমি নেই। সেখানে সম্বন্ধি (স্ত্রীর বড় ভাই) গোলাম রাব্বানীর নামে ৬০ শতক জমি আছে। তিনি ময়মনসিংহ জেলায় থাকেন। তার অসুস্থতার কারণে ওই সম্পত্তি আমি দেখাশোনা করি। নগরীর উত্তর মল্লিক রোড এলাকায় ড্রিম প্যালেস নামে ৯১০ ফুটের একটি ফ্ল্যাট রয়েছে। পোর্ট রোড এলাকায় সরকারি খাস জমিতে ৫তলা ভবন নির্মাণের অভিযোগ সত্য নয়। ওই এলাকায় আমার বাবার নামে একটি বাড়ি আছে। যেখানে আমরা ৪ ভাই একসঙ্গে থাকি।’ 

তবে ঢাকায় দুটি ফ্ল্যাট থাকার সত্যতা স্বীকার করে অসীম কল্লোল বলেন, ‘ডিবিএইচ থেকে ৮৫ লাখ টাকার লোন নিয়ে দুটি ফ্ল্যাট কিনেছি। এ ছাড়া সদর উপজেলার শায়েস্তাবাদে ১ একর ২৫ শতাংশ জমি স্ত্রীর নামে রয়েছে, যা হেবা দলিল মূলে কেনা হয়েছে। এর বাইরে আমার এবং আমার পরিবারের কোনো সম্পদ নেই। ইনকাম ট্যাক্স ফাইলে হিসাব দেওয়া আছে।’

তিনি আরও বলেন, বরিশাল সদর উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রার হিসেবে যোগদানের পর এখানকার কিছু অসাধু দলিল লেখক এবং অফিসের কিছু কর্মচারী আমার কাছ থেকে অবৈধ সুযোগ নিতে চেয়েছে। আমি তাদের কথামতো কাজ না করায় ওই চক্রটি বিভিন্নভাবে আমাকে হয়রানি ও হেয়প্রতিপন্ন করার চেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে। তারাই আমার বিরুদ্ধে এসব মিথ্যা, বানোয়াট ও মনগড়া তথ্য দিচ্ছে।’