![স্ট্রোকসহ ৫ রোগে মৃত্যু বেড়েছে](uploads/2024/03/26/1711433863.tawfiq.jpg)
দেশে মানুষের পাঁচ রোগে মৃত্যু বেড়েছে। অন্যদিকে ২টি রোগে মৃত্যু সামান্য কমেছে এবং ৩টি রোগে মৃত্যু আগের বছরের মতোই রয়েছে। বাংলাদেশে মৃত্যুর জন্য দায়ী শীর্ষে থাকা ১০টি রোগের ৫ বছরের তুলনামূলক চিত্রে এ তথ্য পাওয়া গেছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো-বিবিএস তাদের বাংলাদেশ স্যাম্পল ভাইটাল স্ট্যাটিসটিক্স ২০২৩ শীর্ষক সর্বশেষ গবেষণার ফলাফলে এ তথ্য তুলে ধরেছে, যা গত রবিবার প্রকাশ করা হয়। রোগতত্ত্ববিদরা বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনায় নিয়ে একদিকে জনসচেনতা বৃদ্ধি, অন্যদিকে স্বাস্থ্যবিভাগকে আরও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার তাগিদ দিয়েছেন। এক্ষেত্রে রোগ প্রতিরোধ ও চিকিৎসায় নজর বাড়ানো জরুরি বলে তারা মনে করছেন।
রোগতত্ত্ববিদ ডা. মুশতাক হোসেন খবরের কাগজকে বলেন, ‘করোনা মহামারিতে যারা আক্রান্ত হয়েও প্রাণে বেঁচে গেছেন তাদের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা অনেকটাই কমে গেছে। ফলে অল্পতেই এসব মানুষ যেকোনো রোগে আক্রান্ত হতে পারেন। এ ছাড়া মানুষের মধ্যে দুশ্চিন্তা বেড়ে গেছে নানা কারণে। যার সঙ্গে স্ট্রোক ও উচ্চ রক্তচাপের সম্পর্ক রয়েছে। আবার বায়ুদূষণ বাড়ার ফলে শ্বাসতন্ত্রের রোগও বেড়েছে। তাই যেকোনো রোগে যত বেশি আক্রান্ত হবে মৃত্যুহারও তত বাড়বে।
ওই তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, দেশে মস্তিষ্কের রক্তক্ষরণে ( ব্রেইনস্ট্রোক) মৃত্যু গত ৫ বছরের তুলনায় ২০২৩ সালে ছিল সর্বোচ্চ ০ দশমিক ৬৪ শতাংশ। যা ২০২২ সালে ছিল ০ দশমিক ৫৩, ২০২১ সালে ছিল ০ দশমিক ৪৫, ২০২০ সালে ছিল ০ দশমিক ৫ ও ২০১৯ সালে ছিল ০ দশমিক ২৭ শতাংশ। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ মৃত্যু বেড়েছে উচ্চরক্তচাপে। যা ২০১৯ সালে ০ দশমিক ১৭ শতাংশ, ২০২০ সালে ০ দশমিক ১৬, ২০২১ সালে ছিল ০ দশমিক ২১, ২০২২ সালে ছিল ০ দশমিক ১৯ এবং ২০২৩ সালে যা বেড়ে হয় ০ দশমিক ২২ শতাংশ। এরপরই বেড়েছে শ্বাসতন্ত্রের রোগে মৃত্যু। ২০১৯ সালে এ রোগে মৃত্যুর হার ছিল ০ দশমিক ৩৩ শতাংশ, ২০২০ সালের ০ দশমিক ৪৪ শতাংশ, ২০২১ সালে ০ দশমিক ৫২ শতাংশ, ২০২২ সালে ০ দশমিক ৫৬ শতাংশ ও ২০২৩ সালে ০ দশমিক ৫৭ শতাংশ। ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু ২০১৯ সালে ছিল ০ দশমিক ১৩ শতাংশ, ২০২০ সালে ০ দশমিক ১৫ শতাংশ, ২০২১ সালে ০ দশমিক ১৬ শতাংশ, ২০২২ সালে ০ দশমিক ১৮ শতাংশ ও ২০২৩ সালে ০ দশমিক ২১ শতাংশ। যকৃতের ক্যানসারে মৃত্যুর হার ২০১৯ সালে ছিল ০ দশমিক ১৩ শতাংশ, ২০২০ সালে ০ দশমিক ১৮ শতাংশ, ২০২১ সালে ০ দশমিক ২১ শতাংশ, ২০২২ সালে ছিল ০ দশমিক ২৩ শতাংশ ও ২০২৩ সালে তা বেড়ে হয় ০ দশমিক ২৭ শতাংশ।
এই পরিসংখ্যান অনুসারে সর্বোচ্চ মৃত্যুর কারণ হিসাবে চিহ্নিত স্ট্রোকের বিষয়ে ন্যাশনাল নিওরোসায়েন্স ইনস্টিটিউট অ্যান্ড হসপিটালের যুগ্ম পরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. বদরুল আলম খবরের কাগজকে বলেন, ‘স্ট্রোকে মৃত্যুর জন্য যতগুলো কারণ দরকার তার সবগুলোই আমাদের দেশে শতভাগ বিদ্যমান। বিশেষ করে মানুষের উদ্বেগ ও দুশ্চিন্তা যেমন বেড়েছে তেমন অস্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার মাত্রা ব্যাপকভাবে বেড়ে গেছে। তৈলাক্ত ও ভারী মসলাযুক্ত খাবারে আসক্ত হয়ে পড়েছে মানুষ। লবণ খাওয়ার প্রবণতাও অনেক বেশি। ধূমপান ও নানা ধরনের মাদক গ্রহণের হারও বেড়েছে। অন্যদিকে মানুষ নিজের শরীর সম্পর্কে সচেতন হচ্ছেন না। চেকআপ করেন না। ফলে বাড়ছে স্ট্রোকে মৃত্যু।
এদিকে দেশে সর্বোচ্চ মৃত্যু হয় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে বা হার্ট অ্যাটাকে। হার্ট অ্যাটাকে মৃত্যুর হার ২০১৯ সালে ছিল ০ দশমিক ৮৮ শতাংশ। পরের বছর ২০২০ সালে তা বেড়ে উঠে যায় ১ দশমিক ০৬ শতাংশে, ২০২১ সালে তা সামান্য কমে হয় ১ দশমিক ০৩ শতাংশ, ২০২২ সালে হয় ১ দশমিক ০২ শতাংশ। সর্বশেষ ফলাফলে ২০২৩ সালেও থাকে ১ দশমিক ০২ শতাংশ।
নিউমোনিয়ায় মৃত্যুর হারও অপরিবর্তিত রয়েছে। ২০২৩ ও ২০২২ সালে হয় ০ দশমিক ২২ শতাংশ ছিল। যা ২০২১ সালে ছিল ০ দশমিক ২৪ শতাংশ এবং ২০২০ ও ২০১৯ সালে ছিল ০ দশমিক ২৫ শতাংশ। এ ছাড়া হার্টঅ্যাটাক ছাড়াও অন্যান্য হৃদরোগে মৃত্যু ২০২৩ ও ২০২২ সালে ছিল একই (০ দশমিক ২১ শতাংশ)। ২০২১ সালে যা ছিল ০ দশমিক ২৩ শতাংশ, ২০২০ সালে ০ দশমিক ২৫ ও ২০১৯ সালে ০ দশমিক ৪ শতাংশ ছিল।
তবে মৃত্যু কমেছে সাধারণ জ্বর ও অ্যাজমায়। এক্ষেত্রে সাধারণ জ্বরে ২০১৯ সালে মৃত্যু হার ছিল ০ দশমিক ১৪ শতাংশ, ২০২০ সালে ০ দশমিক ১৫, ২০২১ সালে ০ দশমিক ২ , ২০২২ সালে ০ দশমিক ২৭ থাকলে ২০২৩ সালে তা কমে হয় ০ দশমিক ২৩ শতাংশ। অন্যদিকে ২০১৯ সালে অ্যাজমায় মৃত্যুর হার ছিল ০ দশমিক ২৩, ২০২০ সালে ছিল ০ দশমিক ১৯, ২০২১ সালে ছিল ০ দশমিক ২৯ , ২০২২ সালে ০ দশমিক ২৮ থাকলেও ২০২৩ সালে তা হয় ০ দশমিক ২৭ শতাংশ।
জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা. আফজালুর রহমান খবরের কাগজকে বলেন, হার্ট অ্যাটাকের কারণগুলোর মধ্যে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে না থাকা, ডায়াবেটিস, অস্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার অভ্যাস, কায়িক পরিশ্রম না করা, বিষণ্নতা, ধূমপান, মাদক গ্রহণসহ আরও কারণ রয়েছে। অন্যদিকে অনেকে বুঝতে পারেন না নিজের হার্ট অ্যাটাকের বিষয়টি। অনেকে মনে করেন গ্যাস্ট্রিকের ব্যথা বা অন্য কোনো কারণে বুকে ব্যথা উঠেছে। এতে তারা দেরি করে হাসপাতালে যান। আবার সারা দেশে পর্যাপ্ত হার্ট কেয়ার সেন্টার ও জনবল নেই। ঢাকায় অনেক সেন্টার থাকলেও এখানে যানজট বড় এক সমস্যা হয়ে আছে হৃদরোগীদের জন্য। হার্ট অ্যাটাকের পর হাসপাতালে যেতে অনেক সময় পার হয়ে যায়। তাতে রোগীর মৃত্যু আরও ত্বরান্বিত হয়।